Discover postsExplore captivating content and diverse perspectives on our Discover page. Uncover fresh ideas and engage in meaningful conversations
২ বছরের রিলেশন ছিল, ডিপ রিলেশন। ওয়াদা করেছিলাম মেয়েটাকে যে বিয়ে করবো তাকে। কিন্তু একটা সময় তাকে বিরক্ত লাগতে থাকে। আমি হঠাত তাকে সহ্য করতে পারিনা। একদিন কোনো কথা ছাড়াই আমি রাতারাতি তাকে ছেড়ে দিলাম। কেন ছাড়লাম আজও জানিনা, সহ্য করতে পারতাম না তাকে।
ঐ অনেক কান্না করেছিল, আমার পা ধরেছিল যেন না ছাড়ি তাকে। ওর মত যত্ন, ভালোবাসা আর কেয়ার আমাকে কখনো কেউ করেনি। আমার ফ্যামিলি ও না। যখন আমার কিছু ছিলনা তখন ঐ ছিল, ২ বছর পর আমার সরকারি জব হলো, তখনও ওর চাওয়া পাওয়া ছিলনা। শুধু বিয়ে বসতে চাইতো মেয়েটা, ওর অনেক সখ ছিল আমার বৌ সাজার। তবুও কেন ছাড়লাম জানিনা।
হয়তো আমার লায়েক মনে করতাম না তাকে। সরকারি জব পাবার পর তার প্রতি অনীহা চলে আসছিল। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যাংকার মেয়েদের বিয়ের প্রস্তাবের সামনে আমার ছোট্ট, কম বয়সের কলেজ পাশ, এতিম মেয়েটাকে ফ্যাকাশে লাগছিল।
মা বললেন, তোকে পড়াইতে অনেক টাকা খরচ করেছি, ছোট ঘরের, এতিম মেয়ে বিয়ে করলে পোষাবে? আমাদের স্টাটাসের সাথে যাবে না। আর এই মেয়ে আমার পছন্দও না। দেখতে মোটা, অসুন্দর, এতিম আর তোর সাথেও মানায় না।
ছেড়ে দিলাম মায়ের কথায়। সবার আগে মা। উনি আমাকে পড়ালেখা করাইছেন, উনার হক আছে আমার বৌ নির্বাচন করার।
তারপর মা আর পরিবারের সবাই মিলে একজন প্রতিষ্ঠিত মেয়ে বিয়ে করলাম। টাকা পয়সা আরাম আয়েশ সবাছে জীবনে। সামাজিক স্টাটাস আছে, যে কেউ দেখলে খুব তারিফ করে বলে, অনেক শিক্ষিত আর প্রতিষ্ঠিত বৌ বিয়ে করেছি।
অথচ দিনশেষে আমি সুখী না, বৌয়ের অনেক বাজে আচরণ সহ্য করে যাই, কোনভাবেই তার মন পাইনা। তার চাওয়া পাওয়া, ডিমান্ড, নিজের বাবার পরিবার নিয়ে বেশি ইনভল্ব থাকা, আমাকে তার চোখে হ্যান্ডসাম না লাগা,,, আমার জন্য বিশেষ কিছু রান্না না করা, করতে বললে কাজ আছে, টায়ার্ড এসব বলে এভয়েড করা।
কখনো রান্না করলেও সেগুলো অফিসে নিয়ে যাওয়া। ঘন ঘন ঘুরতে বের হওয়া। রাত করে চায়ের আড্ডা দেয়া বন্ধু কলিগ বান্ধবী বান্ধবীর জামাই। অফিসে আজকে এই পার্টি কাল সেই পার্টি। বাচ্চাগুলোর চিন্তা না করা। আমার বয়স্ক মায়ের কাছে ফেলে রাখা। মায়ের সাথে ঝগড়া করা। আমার সাথে ঝগড়া করা। ঘরে অশান্তি আর অশান্তি। এমন আরো অনেক কিছু আছে যেগুলো আমি লেখিনি লিখতে ইচ্ছে করছেনা।
এখন দিনশেষে আমি শুধু ভাবি, আমার সংসার আমার পরিবার তো এমনটা আমি কল্পনায় সাজাইনি। সাজিয়েছিলাম হাসিখুশি একটা জীবন সেই ছোট অপ্রতিষ্ঠিত মেয়েটার সাথে! ভেবেছিলাম শুধু মানুষ চেঞ্জ করলে তো আর আমার সংসারে সাজানোর কল্পনা চেঞ্জ হবেনা। সব তো সেইম ইই থাকবে। শুধু তো মেয়েটাই চেঞ্জ করছি। তারপর একদিন, কোনো এক সন্ধ্যায় আমার এই ভুলটা ভেঙে যায়। 🙂
এখন মাঝে মাঝে প্রায়ই আমার মাথায় ওর ভয়েস ঘুরে, হাসি ঘুরে, কান্না চেহারাটা ঘুরে। ঐ কেমন আছে জানিনা। কোন কনট্যাক্ট রাখেনি আমার সাথে। কোথাও খুজেঁ পাইনা। না ফেসবুক, না অন্য কোথাও। একদিন কি মনে করে যেন তার নাম গুগল সার্চ বারে লেখি।, সবার প্রথমেই তার নাম আর ছবি আসে। অনেক অবাক হয়ে ব্যাক গিয়ে আবারও লেখি। নিজের চোখে বিশ্বাস হচ্ছিল না। যে মেয়েকে আমি সরকারি চাকরি পেয়ে ছেড়ে দিয়েছিলাম, সেই মেয়ে এখন একটা ইন্ডাস্ট্রিয়াল আইকন। আমার মত ১০০ জন আমলা সে হায়ার করার যোগ্যতা রাখে।🙂
আচ্ছা সে কি আমাকে ভুলে গেছে? আমি যদি এখন তার সাথে কথা বলতে যাই শুধুমাত্র ক্ষমা চাইতে সে কি ভাববে যে, সে এখন অনেক ধনী তাই আমি তাকে বিরক্ত করতে চাচ্ছি? আমি এত কিছু জানিনা। শুধু জানি আমি তার সাথে চরম অন্যায় করেছিলাম। সে আমাকে একটা অভিশাপ দিয়েছিল।
তাকে অভিনন্দন, তার দেয়া অভিশাপের প্রত্যেকটি শব্দ আমার লেগেছে। আমার বিবাহিত জীবন আর ব্যক্তিগত জীবন ভিতর থেকে এতটাই কষ্টের যে আমার চাকচিক্য দেখে তা বুঝা যায় না।
অভিশাপ আমার লেগেছে। 🙂 আচ্ছা তুমি তো আমাকে ভালোবাসতে, আমার দীর্ঘায়ু চাইতে, তাহলে তুমি কি করে আমাকে অভিশাপ দিতে পারলে।
শ্রীকান্ত ৪র্থ পার্ট | ##