দরুদে মাহি ‘মাছের দরুদ’-এর কাহিনীতে বর্ণিত ঘটনাবলি সবই মিথ্যা ও বানোয়াট। অনুরূপভাবে এ দরুদের ফযীলতে বর্ণিত সকল কথাই বানোয়াট ও মিথ্যা কথা। এ বানোয়াট কাহিনীটিতে বলা হয়েছে, যে, রাসূলুল্লাহর (ﷺ) যুগে একব্যক্তি নদীর তীরে বসে দরুদ পাঠ করতেন। ঐ নদীর একটি রুগ্ন মাছ শুনে শুনে দরুদটি শিখে ফেলে এবং পড়তে থাকে। ফলে মাছটি সুস্থ হয়ে যায়। পরে এক ইহূদীর জালে মাছটি আটকা পড়ে। ইহূদীর স্ত্রী মাছটিকে কাটতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। অবশেষে মাছটিকে ফুটন্ত তেলের মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়। মাছটি ফুটন্ত তেলের মধ্যে ঘুরে ঘুরে দরুদটি পাঠ করতে থাকে। এতে ঐ ইহূদী আশ্চার্যান্বিত হয়ে মাছটিকে নিয়ে রাসূলুল্লাহর (ﷺ) দরবারে উপস্থিত হয়। তাঁর দোয়ায় মাছটি বাকশক্তি লাভ করে এবং সকল বিষয় বর্ণনা করে। .... পুরো ঘটনাটিই ভিত্তিহীন মিথ্যা।
জুমুআর দিনে বেশি বেশি দরুদ পাঠ করতে সহীহ হাদীসে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে এ দিনে নির্ধারিত সংখ্যক দরুদ পাঠের বিষয়ে কোনো সহীহ হাদীস বর্ণিত হয় নি। এ দিনে বা রাতে ৪০ বার, ৫০ বার, ১০০ বার, ১০০০ বার বা অনুরূপ কোনো সংখ্যায় দরুদ পাঠ করলে ৪০, ৫০ ১০০ বছরের গোনাহ মাফ হবে, বা বিশেষ পুরস্কার বা ফযীলত অর্জন হবে অর্থে কোনো সহীহ হাদীস নেই। মুমিন যথাসাধ্য বেশি বেশি দরুদ ও সালাম এ দিনে পাঠ করবেন। নিজের সুবিধা ও সাধ্যমত ‘ওযীফা’ তৈরি করতে পারেন। যেমন আমি প্রতি শুক্রবারে অথবা প্রতিদিন ১০০, ৩০০ বা ৫০০ বার দরুদ ও সালাম পাঠ করব।
শিলা মৌমাছি ২ | ##শিলা মৌমাছি ২
সালাত বা দরুদ পাঠকারী যতক্ষণ দরুদ পাঠে রত থাকবেন ততক্ষণ ফিরিশতাগণ তার জন্য দোয়া করতে থাকবেন। একবার সালাত (দরুদ) পাঠ করলে আল্লাহ এবং তাঁর ফিরিশতাগণ তাঁর উপর সত্তর বার সালাত (রহমত ও দোয়া) করবেন।
(৩). সালাত ও সালাম পাঠকারীর সালাত ও সালাম তার পরিচয়সহ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাছে পৌঁছান হবে।
(৪). রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিজে সালাত পাঠকারীর জন্য দোয়া করবেন।
(৫). দরুদ পাঠ কেয়ামতে নবী (ﷺ)-এর শাফায়াত লাভের ওসীলা।
(৬). মহান আল্লাহ সালাত (দরুদ) পাঠকারীর দোয়া কবুল করবেন এবং সকল দুনিয়াবী ও পারলৌকিক সমস্যা মিটিয়ে দেবেন।
সালাতের এত সহীহ ফযীলত থাকা সত্ত্বেও কতিপয় আবেগী মানুষ এর ফযীলতে আরো অনেক বানোয়াট কথা হাদীস নামে প্রচার করেছেন।
একটি বানোয়াট ও ভিত্তিহীন দোয়া ‘দোয়ায়ে আহাদ নামা’। প্রচলিত বিভিন্ন পুস্তকে এ দোয়াটি বিভিন্নভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ দোয়ার মূল বাক্যগুলো একাধিক যয়ীফ সনদে বর্ণিত হাদীসে পাওয়া যায়। এ সকল হাদীসে এ দোয়াটি সকালে ও সন্ধ্যায় পাঠ করতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। ফযীলত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, যদি কেউ এ দোয়াটি সকাল সন্ধ্যায় পাঠ করেন তবে কিয়ামতের দিন সে মুক্তি লাভ করবে...।[15]
এছাড়া এ দোয়ার ফযীলত ও আমল সম্পর্কে প্রচলিত সব কথাই বানোয়াট। এরূপ বানোয়াট কথাবার্তার একটি নমুনা দেখুন: ‘‘তিরমিজী, শামী ও নাফেউল খালায়েক কিতাবে ‘দোয়ায়ে আহাদনামা’ সম্পর্কে বহু ফজীলতের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- যে ব্যক্তি ইসলামী জিন্দেগী যাপন করে জীবনে আহাদনামা ১০০ বার পাঠ করবে সে ঈমানের সাথে দুনিয়া থেকে বিদায় নেবে এবং আমি তার জান্নাতের জামিন হব।... হজরত জাবির (রা) বর্ণনা করেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে শুনেছি, মানব দেহে আল্লাহ তায়ালা তিন হাজার রোগব্যাধি দিয়েছেন। এক হাজার হাকিম ডাক্তারগণ জানেন এবং চিকিৎসা করেন। দু’হাজার রোগের ব্যাপারে আল্লাহ ছাড়া কেহ জানেন না। যদি কেহ আহাদনামা লিখে সাথে রাখে অথবা দু’বার পাঠ করে আল্লাহ তায়ালা তাকে দু’হাজার ব্যাধি থেকে হিফাজত করবেন। ...’’[16]
এগুলো সবই ভিত্তিহীন ও জাল কথা। সুনানুত তিরমিযী বা অন্য কোনো হাদীস-গ্রন্থে এ সকল কথা সহীহ বা যয়ীফ সনদে বর্ণিত হয় নি।