সূরা ফালাক ও নাস জীবনে বহুবার পড়া হলেও এই বিষয়টা আগে এইভাবে হয়তো খেয়াল করেননি। লেখাটি পড়লে অনুধাবন করবেন কেন দিনে এতবার এগুলো আমল করতে বলা হয়েছে, সুবহানাল্লাহ চমৎকৃত হওয়ার মতো বিষয়।
.
মূল প্রসঙ্গে যাবার আগে এই দুই সূরার উপর সামান্য আলোকপাত করে নেই। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার জাদুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এক ইহুদি তাঁর উপর জাদু করেছিল। এর প্রভাবে তিনি ভীষণ অসুস্থ হয় পড়েন। পরে আল্লাহ এই দুই সূরা অবতীর্ণ করেন এবং তাকে জাদুর ব্যাপারে জানিয়ে দেন। তিনি এই দুই সূরার মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করেন এবং সুস্থ হয়ে উঠেন। তো এই দুই সূরার মূল প্রতিপাদ্য হলো অন্যদের অনিষ্ট থেকে নিজেকে সুরক্ষা করা।
.
এই অনিষ্টগুলো দুই রকমের। একটা হলো বহিরাগত অনিষ্ট। যেমন, চোর-ডাকাতের কবলে পড়া। সাপ-বিচ্ছুর কামড় খাওয়া। অন্য কেউ জাদু-টোনা করা। কারো হিংসা-বিদ্বেষের শিকার হওয়া ইত্যাদি। অন্যটা হলো ভেতরগত। যেমন, নফস ও শয়তানের মনের ভেতর জাগিয়ে দেওয়া নানান রকম কুমন্ত্রণা।
.
বহিরাগত ও ভেতরগত এই দুই অনিষ্টের মধ্যে ক্ষতির দিক থেকে মারাত্মক হলো দ্বিতীয়টা। কারণ নানান রকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করার দ্বারা বহিরাগত অনিষ্ট সহজেই ঠেকানো যায়। কিন্তু যে অনিষ্ট সবসময়ই সাথে সাথে থাকে তার থেকে বাঁচা বড় দায়। কারণ মানুষ যেখানেই যায়, তার সাথে সেও যায়। মানুষের রক্ত-মাংসের সাথে শয়তান মিশে থাকে। হাদীসে এসেছে, শয়তান মানুষের রক্তের শিরা-উপশিরায় চলাচল করতে পারে। আর নফস তো মনের ভেতর সর্বদা শক্ত আসন গেড়ে বসে থাকে। ফলে এদের প্রতিহত করাটা বেশি কঠিন।
.
সূরা ফালাক ও নাস উভয় সূরার মধ্যে আল্লাহর কাছে বিভিন্ন অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা হয়েছে। খেয়াল করলে দেখবেন, সূরা ফালাকে উল্লেখিত অনিষ্টগুলো সব বহিরাগত। এর মধ্যে আছে-
ক. শাররি গাসিকিন বা রাতের অনিষ্ট।
খ. শাররিন নাফফাসাতি ফিল উকাদ বা গ্রন্থিতে ফুঁ-দানকারিণীর অনিষ্ট।
গ. শাররি হাসিদিন বা হিংসুকের অনিষ্ট।
.
এগুলো সব বহিরাগত হবার কারণে তুলনামূলক দুর্বল। তাই আশ্রয়দাতা আল্লাহর কথা একবার উল্লেখ হয়েছে-
আউযু বিরব্বিল ফালাক- আমি প্রভাতের রবের কাছে আশ্রয় চাচ্ছি।
.
পক্ষান্তরে সূরা নাসের অনিষ্টগুলো ভেতরগত। এটি হলো 'শাররিল ওয়াসওয়াস' বা মানুষ ও শয়তান জিনদের অন্তরে জাগ্রত করা ওয়াসওয়া বা কুমন্ত্রণা, যা তুলনামূলক বেশি শক্তিশালী ও অধিক ক্ষতিকর। ফলে এর থেকে বাঁচার জন্য আশ্রয়দাতা আল্লাহর কথা তিনবার উল্লেখ করা হয়েছে-
ক. আউযু বি রব্বিন নাস- আমি মানুষের রবের কাছে আশ্রয় চাচ্ছি
খ. মালিকিন নাস- মানুষের মালিকের কাছে আশ্রয় চাচ্ছি।
গ. ইলাহিন নাস- মানুুষের মাবুদের কাছে আশ্রয় চাচ্ছি।
.
এটা তো খুব সহজেই অনুমেয় যে, যেখানে আল্লাহর কথা তিনবার উল্লেখিত হয়েছে সেটা অবশ্যই একবার উল্লেখিত হবার তুলনায় অধিক শক্তিশালী হবে। বিষয়ের সাথে কত সুন্দর সামঞ্জস্যতা! সুবাহানাল্লাহ❤️
.
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সকাল-বিকাল সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক্ব এবং সুরা নাস ৩বার পড়বে; এগুলোই তার সবকিছুর (নিরাপত্তার) জন্য যথেষ্ট হবে।