'সন্তানদের ওসিয়ত করা’ - এটা আমাদের কাছ থেকে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে এবং অপরিচিত হয়ে যাচ্ছে। অথচ এটা এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে, আল্লাহ তা'য়ালা তাঁর প্রিয় দুই নবী তাঁদের সন্তানদের ওসিয়ত সম্পর্কে বলেছেন, আর ইবরাহীম ও ইয়া‘কূব তাঁদের নিজ সন্তানদেরকে ওসিয়ত করে গেছে যে- ‘হে আমার সন্তানেরা! আল্লাহ এ দ্বীনকে (ইসলাম) তোমাদের জন্য পছন্দ করেছেন; কাজেই তোমরা মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না’। [১]

আজকাল যেখানে মা বাবারা তাদের মৃত্যুর আগে সন্তানদেরকে বাড়ি গাড়ি, ধন সম্পদ, মিল ফ্যাক্টরি ইত্যাদি বুঝিয়ে দিতে ব্যস্ত সেখানে ইবরাহীম (আঃ), ইয়াকূব আলাইহিস সালামরা তাঁদের সন্তানদেরকে ইসলাম (ঈমান ও আমল) বুঝিয়ে দিতে ব্যস্ত ছিলেন। তাদের অসিয়তের জায়গাটা ছিল ইসলাম। কারণ তারা জানতেন এটাই আসল সম্পদ। সন্তানের চিরস্থায়ী সুখের জন্য ইসলামের হেফাজতের তাগিদ দেওয়াটাই বরং জরুরি।

এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রতিটি মা বাবার উচিত সন্তানদেরকে সুন্দর ভাষায় ওসিয়ত করা যে, ও আমার সন্তানেরা, আমার মৃত্যু কবে চলে আসে তা তো বলা যায় না তাই তোমাদেরকে আগে বলে রাখছি, তোমরা তোমাদের ঈমান আমলের ব্যাপারে সচেতন থেকো। ঈমান আমলে বিন্দু পরিমাণ ছাড় দিয়ো না, গাফেল থেকো না। শিরকের ছিটেফোঁটাও যেন তোমাদের গায়ে না লাগে। আর দুনিয়ার ব্যাপারে তোমরা কখনোই এতটা সিরিয়াস হয়ো না যে সিরিয়াস তোমাদেরকে আখিরাতের কথা ভুলিয়ে দেয়, যে সিরিয়াস তোমাদের মুসলমানিত্বের ওপর জীবনযাপনের প্রতি উদাসীন করে তোলে। মনে রেখো, কেবল মুসলিম নামে নয়, কাজেকর্মে যেন মুসলিম হিসেবে তোমাদের মৃত্যু হয় সেইভাবে নিজেদের জীবন পরিচালনা করো।

লক্ষ্যণীয়, ইবরাহীম ও ইয়া‘কূব (আঃ) এর সন্তানেরা (ইসমাঈল ও ইসহাক আলাইহিমুস সালাম) নবী ছিলেন। ফলে তাদেরকে আলাদাভাবে ইসলামের হেফাজত নিয়ে ওসিয়ত না করলেই হত। কারণ তাদের কাছে এমনিতেই এগুলোর গুরুত্ব ছিল। সেই জায়গায় তাদেরকে তাদের পিতা কর্তৃক এই ওসিয়ত থেকে আমাদের জন্য বার্তা এটাই যে, নবীদের সন্তানদেরকে যদি সচেতন জেনেও ওসিয়ত করা হয় তবে আমরা কি আমাদের সন্তানদেরকে অসচেতন জেনেও ওসিয়ত করছি? তাদেরকে জীবনের শেষ পর্যন্ত তাওহীদের ওপর অটল থাকার কথা বলছি? ইসলাম (ঈমান ও আমল) ধরে রাখার গুরুত্ব বুঝাচ্ছি? আমাদের ওসিয়তে কি দুনিয়ার চেয়ে আখিরাত প্রাধান্য পাচ্ছে?


১] সূরা আল বাকারা, আয়াত নং : ১৩২
#সন্তান