ভরসার হাত

বিয়ের পর একটা মেয়ের বিশ্বাস ভরসার জায়গা তার স্বামী।

 

মনে রাখবেন একটা মেয়ে খাবারের জন্য শুশুর বাড়ি আসে না হাজারে স্বপ্ন নিয়ে আসে।

 

রাতে খেতে বসবো, টেবিলে খাবার দেওয়া হয়ে গেছে, একটা কাজে বাসায় এক আত্মীয় এসে হাজির।

 

স্বাভাবিকভাবেই তাকে সাথে নিয়ে খেতে বসলাম। 

 

আমাদের ছোট পরিবার। পরিবারে সদস্য সংখ্যা চারজন। 

 

সেই হিসাবেই খাবার রান্না করা হয়। 

 

কোনো কারণে হঠাৎ করে কেউ এসে পড়লে ঝামেলা হয়। 

 

মেহমান বেশি হলে আবার রান্না করতে হয়, একজন হলে অনেক সময় চারজনের খাবার দিয়ে ম্যানেজ করা হয়। 

 

সেক্ষেত্রে স্ত্রীর খাবারে টান পড়ে বেশি। 

 

আজকেও তাই হল। পরে স্ত্রীকে ডিম ভেজে খেতে হল। 

 

আমরা এমনিতেই কম খাই এবং তিনবেলা গরম ভাত রান্না করে খাই। 

 

আমি লক্ষ্য করেছি, হুটহাট করে একজন মেহমান চলে এলে রান্নার ঝামেলা থেকে বাঁচতে আগের রান্না করা খাবার দিয়ে যদি চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়, স্ত্রীর খাবারই টান পড়ে। 

 

কোনো বেলায় খাবার বাড়ন্ত হলে সেখানেও একই ঘটনা। 

 

দেখা যায়, স্ত্রী তার খাবার আমাকে কিংবা ছেলেমেয়ের পাতে তুলে দিচ্ছে। 

 

 

পরে সে কোনো রকমে চালিয়ে নিচ্ছে। 

 

বড় মাছের টুকরো কিংবা মাংসের টুকরো আমার কিংবা ছেলেমেয়েদের পাতে চলে আসে। 

 

মানা করলেও শুনে না। 

 

নিজে না খেয়ে মেহমানদারি করা, ভালো খাবারটা নিজে না খেয়ে স্বামী বা ছেলেমেয়েদের পাতে তুলে দেওয়া, আমার মনে হয় বাঙালি মেয়েদের পক্ষেই সম্ভব। 

 

এটা কি অলিখিত নিয়ম? 

 

নাকি বাঙালি মেয়েদের এভাবেই গড়ে তোলা হয়? 

 

নাকি স্বামী সন্তান রেখে তাদের ভালো খাবার খেতে নেই? 

 

অনেক নারী নিজে না খেয়ে ভালো ভালো খাবার শ্বশুর শাশুড়িকে দিয়েছেন, এই দৃশ্য বহুবার দেখেছি।

 

আমি আমার মাকেও এই কাজটা করতে দেখেছি। 

 

বড় মাছের মাথা বাবার পাতে, আমাদের পাতে তুলে দিচ্ছেন। 

 

নিজের খাবার মেহমানকে খাইয়ে দিচ্ছেন। ?️

 

বোনও একই কাজ করে। 

 

হুট করে হঠাৎ বোনের বাসায় চলে গেলে, যদি নতুন করে রান্না করতে সময় না পায়, নিজে না খেয়ে ভালো খাবার ভাইয়ের পাতে তুলে দেয়। 

 

পৃথিবীর আর কোনো দেশের মেয়েদের মধ্যে এমন মমতা আছে কিনা আমার জানা নাই। 

 

পৃথিবীর কয়টা দেশের মেয়েরা নিজের খাবার মেহমানের মুখে তুলে দেয়? 

 

এই দেশের মেয়েরা এতো মমতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেও অনেকে সুখের নাগাল পায় না। 

 

ভালো ঘরসংসার পায় না। 

 

নিজে না খেয়ে যাদের মুখে ভালো খাবার তুলে দেন, অনেক সময় দেখা যায় আঘাত আসে তাদের দিক থেকেই। 

 

হতে পারে সেটা শ্বশুর শাশুড়ি, ননদ, জা কিংবা স্বামী। 

 

অনেকে ছেলেমেয়েদের কাছ থেকেও প্রচণ্ড আঘাত পান। 

 

এদিকে পুষ্টিকর খাবার কম খাওয়ার দরুন বয়স চল্লিশ পার হওয়ার আগেই তারা নানা জটিলতায় ভুগতে শুরু করেন। 

 

শরীরে বাসা বাঁধে নানা রোগব্যাধি। 

 

পারিবারিক অশান্তি একটা সুখের সংসার নরক বানিয়ে ফেলতে পারে।

 

একজন নারীর ভাগ্য অনেকটাই নির্ভর করে স্বামীর উপর, হোক সে স্ত্রী মূর্খ অথবা শিক্ষিত। 

 

স্বামী ভালো হলে তার দুনিয়া বেহেশত। 

 

স্বামী খারাপ মানেই তার কাছে দুনিয়া একটা নরক। 

 

বেশিরভাগ নারীর পাশে এই নরক থেকে মুক্তি দেওয়ার কেউ থাকে না। 

 

এমনকি মা, বাবা, ভাইবোনও না!


Akhi Akter Mim

313 Blog posts

Comments