শীতের উত্ত্বরে হিমেল হাওয়া বইছে,,,
টিউশনি শেষ করতে প্রায় অনেক রাত হয়ে গেলো।আমি খালি বাসটায় উঠে পড়ি।এই কোলাহল পূর্ণ নগরীর বাসিন্দারা যখন ঘুমের ঘোরে ঢুলুঢুলু তখন একদল মানুষের ঘরে ফেরার পালা।
আর বাস ততক্ষণে চলতে শুরু করে দিয়েছে।ঐ জানালা দিয়ে আসা চূর্ণ বাতাসে গা এলিয়ে দিয়ে ঘুম ঘুম চোখে কি সব অদ্ভুত চিন্তা-ভাবনা যেনো মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।বাস দুলছে,আমিও দুলছি।
পেছনে চলে যাওয়া ঐ সোডিয়াম আলোগুলোকে কোনো সেলুলয়েডের চেয়ে কম মনে হচ্ছে না।
হঠাৎ আচমকা এক ডাকে ঘুমের ঘোর কেটে গেল -"মামা ভাড়া দেন?" ১৫ টাকার ভাড়া দিয়েই ঘুমের ঘোর শেষ হয়ে গেল।
বাসার ভেতর ঢুকতেই মনে হলো!যাহ্
"কলম"টা মনে মনে হয় বাসেই ফেলে এসেছি।কিছুদিন ধরে মনে হচ্ছে যেনো কেউ হয়তো আমাকে অনুসরণ করছে।কিন্তু কাউকেই তো দেখছি না?
ঐতো সেদিন অষ্টম শ্রেণীর এক ছাত্র কে পড়াতে গিয়ে দেখি পকেটে কলম নেই?নিতে ভুলে গেছিএটা নিতান্তই একটা হাস্যকর ব্যাপার যে- শিক্ষক তার কাছে কলম নেই।
কেনো যানি দিন দিন এভাবে অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জিনিস গুলো ভুলে যাচ্ছি। হাত ঘড়িটা কেদারায় রেখে গা টাকে বিছানায় এলিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়লাম।ইচ্ছে করছেনা ফ্রেশ হই,
খাবার খেয়ে পড়তে বসি।আমার বরাবরই পড়তে ভালো লাগে কিন্তু কেন জানি এখন সব কিছু আমাকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে।
হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল মনে হচ্ছে রাত প্রায় অনেক গভীর।তখনই অনুভব করলাম খুব ক্ষিধে পেয়েছে।রাতে তো আমি না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
ফ্রেশও হওয়াও হয় নি।এতই ক্লান্ত লাগছিলো যে ঘুমিয়েই পড়েছি।মনের অজান্তেই টেবিলের দিকে চোখ পড়ল,কিছু একটা ঢাকা আছে?
সামনে এগিয়ে ঢাকনা খুলতেই দেখতে পেলাম "বিরিয়ানী আর এক বাটি দই।।আমি "বিরিয়ানী -র "
মধ্যে সব সুখ খুজেঁ পাই।এটা খাবার সময় সামনে পেলে সব কিছু ভুলে যায়।এটা হয়তো মা-র কাজ।রুমে এসে দেখেছে হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছি।তাই আর ডাক দেয়নি,খাবার টা রেখেই চলে গেছে।
আচ্ছা মায়েরা সন্তানদের এতো ভালোভাবে বোঝে কিভাবে?মা হয়তো জানতে যে ক্ষিদেই আমার মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে যাবে?তখন প্রচন্ড বেগে ক্ষিদেও পাবে।
সেই ছোট্ট বেলায় মাকে জড়িয়ে ধরে রাতে ঘুমোতাম,মনে হতো কেউ আমাকে নিয়ে যাবে?তাই জাপটে ধরে শুয়ে থাকতাম।মাঝে মাঝেই মধ্য রাতে ঘুম ভেঙে যেত আর মা-র কাছে ক্ষিদের বায়না ধরতাম,ক্ষিধে পেয়েছে!
ক্ষিদে পেয়েছে!সেই কনকনে শীতের মধ্য রাতে মা উঠে আর নিজের হাতে খাইয়ে দিত।এতো পরিমাণ ঠান্ডা যে আমি লেপ মুড়ি দিয়ে গুটিশুটি হয়ে বসে আরাম করপ খেতাম আর মা ঠান্ডায় কাপঁতে কাপঁতে হাসি মুখে খাবার তুলে দিত।কীভাবে পারত এগুলো?
এতো ঠান্ডা উপেক্ষা করে সন্তানের বায়না পূরন করতে?আসলে মায়েরা এমনই।তাদের কথা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
খাওয়া বিছানায় গিয়ে কখন য়ে ঘুমিয়ে পড়েছি।কিছুর একটা শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো।
কিছুর একটা শব্দে ঘুম ভেঙে গেল...
আজকের সকালটা বেশ সুন্দর। ভেজা সকালের আদ্রতা ভেঙে..জানালার গ্রীল ছুঁয়ে রোদ পড়েছে আমার ঘরে।চেয়ে দেখলাম!বারান্দার ফুলের টবে বসে দুটো প্রজাপতি রোদ মাখামাখি করে স্নান করছে।
আর দূর থেকে মাইকের আওয়াজ ভেসে আসছে কানে-কেউ একজন মায়াবি কন্ঠে গাইছে --"ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে গান"
গানটা শুনেই মনে পড়ে গেল - "আজ তো পহেলা বসন্ত"।
না আর ঘরে থাকা যাবে না।শুনেছি ইউনিভার্সিটিতে বসন্ত উৎসব হবে।রঙে রঙে রঙিন হবে পুরো ক্যাম্পাস।
কেউ হয়তো আজ প্রথম বারের মতো রঙের ছোয়া দিবে,হয়তো আবার কারো মনপর কোণেও আজ রঙ লাগাবে।
এক মুহূর্তেই সিদ্ধান্ত নিমাল আজ পুরো দিনটা ছুটিতে কাটাবো।সাথে সাথেই স্কুলটা ছুটি নিয়ে নিলাম এবং সকল গার্ডিয়ানকে ফোন করে বলে দিলাম -আজ পড়াতে যাবো না।
আর দেরি না করে ঝটপট স্নান করে আমার প্রিয় নীল রঙের পাঞ্জাবী টা পড়ে বেড়িয়ে গেলাম।মনে পড়ে গেলো সেই দিনের কথাটা-টিউশনি শেষ করে বাসায় বাসায় ফেরার সময় হঠাৎ চোখ পড়লো পাঞ্জাবির দোকানটায়।ঝুলিয়ে রেখেছে নীল রঙের একটা পাঞ্জাবি। নীল আমার খুবই পছন্দ।
কেনো জানি নীল রঙটা পড়লে নীজেকে শান্ত মনে হয়।চলে এলাম ইউনিভার্সিটির গেটের সামনে।
রিক্সাওয়ালা মামাকে ২০ টাকার ভাড়া ৫০ টাকা দিলাম।সেই ও খুশি মনে চলে গেলো।গেটটা আজ খুব সুন্দর ভাবে সাজানো হয়েছে।
পাশদিয়ে বাহারি নানান ফুলর বিপননি ও দেখা যাচ্ছে।সেগুলোতে ভিড়ও রয়েছে।
আমি ভিতরে ঢুকতেই দেখতে পেলাম যাদের এতোদিন নিত্য পরিধানকৃত পোশাকে দেখেছি-তাদের মাঝে আজ নতুনত্ব দেখা যাচ্ছে।ভেতরে মানুষের ভীড়।
নাচে,গানে,আড্ডায় মুখরিত পুরো ক্যাম্পাস।আবার কেউ কেউ ছবি তোলা নিয়ে ব্যস্ত।হঠাৎ ভেতরটা শূন্য শূন্য মনে হতে লাগলো।একটা ভবনের বারান্দার এক কোণে গিয়ে বসলাম।
হঠাৎ দেখি - আমার ছয় -সাত হাত দূরে লাল পেড়ে সাদা শাড়ী পড়নে মেয়ে এসে বসল।মাথায় ছিল তার ফুলের বাহার।লাল পেড়ে সাদা শাড়ীতে মেয়ে টাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে
।চোখ ফেরানো সুন্দর নয়-বরং এমন সুন্দর যে চোখটা ফিরিয়ে নিতে হয়।যাতে করে তাকে আবার দেখতে ইচ্ছে করে।হঠাৎ করে হকচকিয়ে গেলাম!পেছন থেকে ক যেনো ডাকছে।
আপনি কী কাব্য ভাইয়া?পাঁচ -ছয় বছরের একটি ছেলে।আমি হাসি মুখে বললাম-হ্যাঁ আমিই কাব্য "ভাইয়া"।
ছেলেটির মুখে চালাকির হাসি দেখা গেলো।সে হয়তো আমাকে বোকা ভাবছিল,,,বড় হয়েও আমি তাকে 'ভাইয়া'বলেছি।
যা শিশু বয়সে আমরা ভেবে থাকি।বেশি কিছু না বলেই হাতে একটি প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে দৌড়ে চলে গেল।এক পলকেই কোথায় যেনো মিলিয়ে গেলো।
আমি প্যাকেটটি হাতে নিয়ে দ্বিধায় পড়ে গেলাম।অবশেষে সকল দ্বিধা কাটিয়ে প্যাকেটটি খুলেই ফেললাম।দেখলাম একটি" কলম"সাথে একটি চিরকুট। লেখা ছিল-"বসন্তের অনেক অনেক শুভেচ্ছা"।
আমি অবাক হয়ে গেলাম।এই ভেবে যে-আমাকে কেউ বসন্তের শুভেচ্ছা জানিয়েছে তার চেয়ে বেশি অবাক হলাম এতে সন্দর হাতের লেখা দেখে।
আমার ১৯ বসন্তে এতো সুন্দর লেখা কখনো দেখিনি।হঠাৎ মৃদু হাসির শব্দে ভাবনা গুলো থেমে গেল।সামনে দেখি মেয়েটি হাসছে।....