চারিদিকের শীতময় আবহাওয়া
মধ্যে, সুয়েটারের পকেটের ভিতরে
হাত ঢুকাই, রাস্তা দিয়ে হাঁটছি আর
মনে মনে ভাবতেছি...
এবার শীতে যেমনেই হোক,
সিলেট তো যামুই যামু।
।
কিন্তু সিলেট যে যামু....পকেটের
মধ্যে তো মাত্র দুইটা পাঁচ টাকার কয়েন
ঝনঝন করতেছে।
এই দুইটা কয়েন দিয়ে কেমনে সিলেট যামু।
।
এই সব ভাবতেছি আর সাত সকালে
রাস্তা দিয়ে হাঁটতেছি।
রাস্তার সাইট দিয়ে বাস, ট্রাক,
মাইক্রো সাঁ সাঁ করে ছুঁটে যাইতেছে।
।
আহা আজ যদি আমি বাসের কন্টাক্টার
হইতাম... কী আরামছেই না সিলেট
যাইতে পারতাম।
ফাঁডা কপাল আমার.... খালি দুইডা
পাঁচ টাকার কয়েন পকেটে নিয়ে ঘুরতেছি।
।
ছোটবেলার কিছু অভ্যাস এখনো
আমার মধ্যে বিরাজমান।
তবে সব চাই বেশি যেই জিনিসটা
ছোটবেলা থেকে আমার ভিতরে কাজ করে
সেটা হলো..
ধরুণ আমি আকাশ দিয়ে একটা প্লেন উঁড়ে যাচ্ছে,
আর আমি নিচে থেকে হা করে প্লেনটাকে
উঁড়ে যাইতে দেখতেছি।
ঠিক সেই মুহূর্তে আমার মনে হতো,
বড় হয়ে যেমনেই হোক আমি তো
একট প্লেন কিনমুই কিনমু।
আর সারাদিন আকাশে বাতাসে
উঁড়ে বেরামু।
আবার মনে করেন আমার আপেল খাইতে
মন চাইছে...কিন্তু কেউ আমারে সেই
সময়ে আপেল কিনে দেই নাই।
ঠিক সেই মুহূর্তে মনে হতো, আমি
যখন বড় হমু... তখন আপেল এর
দোকান দিমু... আর সারাদিন বসে বসে
আপেল খামু।
আর যদি আপেল এর দোকান দিতে না পারি,
তাহলে যেই মেয়ের বাপের আপেল এর দোকান
আছে।
সেই মেয়েকে বিয়ে করমু তারপরে সারাদিন
খালি আপেল আর আপেল খামু।
আবার মনে করেন সাপের ছবি
দেখতেছি... হঠাৎ যখন নায়ক
সাপ হয়ে যেতো...
তখন মনে হতো.... আহা আমিও
যদি সাপ হইতে পারতাম...
তাহলে আমার ও একটা সুুন্দরী নাগিনী
থাকতো।
আবার যখন কটকটি ওয়ালা আসতো,
তখন মনে হতো বড় হয়ে কটকটি ওয়ালা হমু।
আর সারাদিন কটকটি খামু।
হাওয়াই মিঠা ওয়ালা আসলে মনে হতো
বড় হয়ে হাওয়াই মিঠা ওয়ালা হমু।
এক কথায় আমার যাই ভালো লাগতো
আমি সেটাই হইতে চাইতাম।
আর এই অভ্যাসটাই এখনো,
আমার ভিতরে আছে ।
এত বড় যে হইছি তাও ঐ
ছোটবেলার আরমান, আর এখন এর
আরমান কোন টার কোন পরিবর্ত নাই।
এখনো যদি....
দামি কোন গাড়িতে চড়ে কাউকে
যাইতে দেখি তাইলেই মনে হয়...
হেতের তো খালি এই একটাই
গাড়ি আছে।
আমি তো একদিন এর থেকে ও
দামি দামি গাড়ি বানানোর একটা
কোম্পানি দিমু।
সেই ছোট থেকে আজ অব্দি,
হাওয়াই মিঠা ওয়ালা থেকে বড় বড়
কোম্পানির মালিক, কিছুু হওয়াই বাদ
রাখি নাই।
সব শেষে এখন পকেটে দশ টাকা
নিয়ে, সিলেট যাওয়ার স্বপ্ন দেখতেছি।
যাই হোক অনেক বকর বকর করে
ফেলছি...এখন পরিচয় টা দিয়াই দেই। আমি আরমান আহমেদ হিমেল ওরফে (আরমান)পরিচয় তো দিলাম এইবার তাহলে গল্পে যাই নাকি কি কন আমনেরা।
আর আসল কথা হইতেছে যেমনেই হোক
সিলেট তো যামুই....
এতে যদি চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, ছিনতাই
যা কিছু করার আমি তো সব করমু।
তবু তো আমি সিলেট যামুই যামু।
ভাই সিলেট... আই আম কামিং ।
কিন্তু যামু কেমনে..... উহু হু হু হু।
।
জীবনডা যদি সিনেমার মতো হইতো..আহা।
।
বাড়িতে গিয়ে...
আমার বাপের রুমে ঢুকলাম।
- এই সাত সকালে কোথায় থেকে উদয়
হইলি।
- আসলে আব্বা কাহিনীডা হইতেছে,
সূর্য মামা আজকে একটু বউয়ের সাথে
দেখা করতে যাবে।
তাই যাওয়ার সময় আমারে কইলো,
ভাগিন আরমান... আমি তো
আজকে তোমার বাপের ঘরে উদয়
হইতো পারবো না....
তাই তুমিই একটু তোমার বাপের ঘরে
গিয়ে উদয় হইয়ো।
সেই জন্যই আর কী.... সূর্য মামার
বদলে আজকে আমি উদয় হইছি...।
- বাপের সাথে মসকারা করস না...
ছোটবেলার ক্যালানির কথা কী
ভুইলা গেছস।
আবার কী ওমন শুরু করমু।
- দেখো আব্বা..... আমি কিন্তু এখন
বড় হইছি...যোগ, বিয়োগ,গুণ, ভাগ করে
কথা কইবা।
- ওরে.... বদমাশ ...বড় হয়েই
তুই আমার কী ছিঁড়ছস হ্যা।
আর তোর সাথে আমার যোগ বিয়োগ
করে কথা কইতে হইবো তাই না।
- হুুমমমমমমম।
- কপালে মনে হয় আজকে তোর মেলা দুঃখ
আছে....
কী জন্য আসছিস....ফটাফট বলে
বিদায় হয়ে যা।
- আমার তিন হাজার টাকা লাগতো।
- কেনো।
- সিলেট যামু।
- ওরে বদমাশ .... তোর... সিলেট
যাওয়া ছুঁটাইতেছি দাঁড়া।
।
ওখান থেকে দৌড়ানি খেয়ে আবার
বাহিরে আসলাম।
।
কপালডা আমার এমনি.. দৌঁড়ানি ময়।
সালা.. নিজের মা না থাকলে যা হয় আরকি।
জানতাম টাকা দিবে না...
আজগুবি টাকাটা চাইতে গেলাম,
এখন দুপুরের ভাতটা কপালে জুটবে নাকি
আল্লাহ্ জানে।
।
কী ঘরে পয়দা করছো হে খোদা।
।
মাঝে মধ্যে ভাবি.. হিরোইর খোর,
গাঁঞ্জা খোর, মদ খোর, ইয়াবা খোর,
ফেন্সি খোর, বিড়ি খোর, সিগারেট খোর,
এই সালারা প্রতিদিন ঐ সব
খাওয়ার জন্য এতো টাকা কই পায়।
যেখানে আমি সপ্তাহে দশ টাকা ও পাই না।
।
কিন্তু যাই হোক সিলেট তো
আমি যামুই।
।
রাস্তার সাইটে...পাঁচটার কয়ের দুুইটা
দুই হাতে নিয়ে বসে আছি আর ভাবতেছি।
যেমনেই হোক এই দুইটা পাঁচটার কয়েনরে
কাজে লাগাই সিলেট যাওয়ার টাকা
বের করতে হবে.......কিন্তু কেমনে।
।
আজ যদি এইটা সিনেমা হইতো,
তাইলে নয়ক এই দশ টাকা দিয়ে
একটা লটারি কাঁটতো আর বড়
লোক হয়ে যাইতো।
কিন্তু আমার তো সালা ফাঁডা কপাল...
লটারি কাঁটলাম মানে... টাকা টা পুরাই জলে।
।
এই কয়েন দুইটা দিয়ে এমন কিছু
করতে হবে।
যাতে হাতে নাতে টাকা পাইতে পারি।
।
আহারে মাথা.... একটা বুদ্ধি বের কর ভাই।
সিলেট তো আমারে চুম্বুকের মতো
টানতেছে।
।
দুই দিন দুই রাত অনেক ভাবার পড়ে
একটা ডিসিশন নিলাম...
এই দশ টাকা দিয়ে দুই টা ঘুমের টাবলেট
কিনমু আর আমার বাপরে খাওয়াই
দিমু।
এতে আমার বাপ আরামছে ঘুমাবে,
আর আমি এই দিকে আরামছে টাকা চুরি
করে সিলেট চলে যামুু।
।
মনে মনে খারাপ লাগলে ও মনকে
বুঝাইতেছি যে ...
আমার বাপের যা টাকা
আছে আমি ও তো কিছু ভাগ পামুু নাকি।
আর বাবা এত টাকা পয়সা নিয়া কী
কবরে যাবে... অদ্ভুত।
।
প্ল্যান অনুযায়ী সব কাজ কমপ্লিট।
।
আলমারির চাবি খুলেই দেখি....
ওহ হু হু হু.... এত টাকা।
বাপ হইলে কী হইবো... তিনি একটা হাড় কিপ্টে
এত টাকা রাইখা ও...প্রতি সপ্তাহে
আমারে হাত খরচের জন্য মাত্র দশ টাকা
করে দেয়....আর যদি না চাই, তাহলে
আর দেই না.... কী... খারাপ।
।
যাই হোক আল্লাহ্ যা করে ভালোর জন্যই
করে....
তাইতো আজকে সুদ সমেত সব একবারে
পাইতেছি।
।
চোর হলে ও আমার একটা ধর্ম আছে,
আলমারি থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা
নিয়ে।
আর বাদ বাঁকি টাকা গুলো যেমনে ছিলো ওমনেই রেখে...
আবার আলমারিতে তালা দিলাম।
আর চাবিটা আমার বাপের পকেটে ঢুকাই
দিয়ে....
আমি তো পগার পার।
।
ডাক্তারের কথা অনুুযায়ী দশ ঘন্টার আগে
ঘুম ভাংবে না।
এবার আমারে সিলেট যাওয়া থেকে কে