মিমঃ ঠাসস, ঠাসস।। তোকে না বলেছি কোনো মেয়ের সাথে কথা বলবি না।। তারপরও তুই কোন সাহসে ওর সাথে কথা বলছিস? (অনেক রেগে)।।
আমিঃ গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছি কোনো কথা বলছি না।। কারণ মিম আপুকে আমি জমের মতো ভয় পাই।। সবার সামনে যতই বাহাদুর হইনা কেন মিম আপুর সামনে একদম বিড়াল হয়ে যাই।। এদিকে আপুকে দেখে মেয়েটাও দৌড়ে কোথায় যেন পালিয়ে গেল।। আসলে ভার্সিটির সবাই আপুকে অনেক ভয় পায় তাই মেয়েটা পালিয়ে গেছে।।
মিমঃ চুপচাপ ক্লাসে যা আর ভুলেও এদিক ওদিক তাকাবি না বলে দিলাম।। আর ভার্সিটি ছুটি হওয়ার পর সোজা বাসায় চলে যাবি আমার যেতে একটু দেড়ি হবে।। যদি শুনেছি আমার কথার বরখেলাফ হয়েছে তাহলে দেখিস আমি কি করি?।।
আমিঃ কিছু না বলে মাথা নিচু করে ক্লাসে চলে আসলাম।। ক্লাসে এসে বন্ধুদের পাশে বসে পরলাম।।
শুভঃ কিরে তোর গাল এমন টমেটোর মতো লাল হয়ে আছে কেন?..?
আমিঃ আর বলিস না ভার্সিটিতে ঢুকার সময় ১টা দেয়ালের সাথে ধাক্কা লেগে গেছিল তাই হয়তো গাল লাল হয়েগেছে (মিথ্যা বললাম নাহলে ওরা আমায় নিয়ে হাসাহাসি শুরু করবে)।।
রহিমঃ কিন্তু দেখে তু মনে হচ্ছে কেউ চড় মেরেছে দেখ গালে একদম ৫ আঙুলের দাগ পরেগেছে।।
আমিঃ আরে তেমন কিছু হয়নি দেয়ালের সাথে ধাক্কা লাগায় এমন হয়েছে বোধহয়।।
ওরা আর কিছু বলার আগেই ক্লাসে স্যার চলে আসলেন তাই আর কিছু বলল না।। এরপর স্যার কিছুক্ষণ ক্লাস করিয়ে চলে গেলেন।। এইভাবে একে একে সব ক্লাস শেষ করে সবাই ক্লাস রুম থেকে বের হয়ে আসলাম।। এরপর বন্ধুদেরকে বলে ভার্সিটি থেকে বের হয়ে সোজা বাসায় চলে আসলাম।।
বাসায় এসে রুমে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।। তারপর আয়নার সামনে দাড়িয়ে দেখি গালে এখনও মিম আপুর হাতের দাগ পরে আছে।। হওয়ারই কথা কারণ যতো জোরে মেরেছে কি আর বলব?।। ভাগ্যিস তখন ভার্সিটিতে ছাত্র-ছাত্রী বেশি ছিল না নাহলে তু সবার সামনে চরম লজ্জায় পরতে হতো।।
ওহ হে এতোক্ষণ ধরে কথা বলছি কিন্তু আপনাদের সাথে তু পরিচিতই হলাম না।। আমি তামিম মা-বাবার একমাত্র চুনার টুকরা?।। বাবার নিজের একটা বিজনেস আছে।। এইবার অনার্স ১ম বর্ষে পড়ছি।। আর ভার্সিটিতে যে মেয়ে আমায় চড় মেরেছিল সে হলো মিম।। আমার থেকে ১ বছরের বড় এইবার অনার্স ২য় বর্ষে পড়ছে।। ভাবছেন সে আমায় কেনই বা চড় মারল আসলে ভার্সিটিতে ঢুকার পর একটা মেয়ে এসে আমার সামনে দাড়ায় আর একটা কথা বলতে চাচ্ছিল তখনই মিম আপু এসে কি করলেন দেখলেনই তু।। মিম আপু আমাদের পাশের বিল্ডিংয়েই থাকে তা ছাড়াও সে আমার প্রাইভেট টিচার মানে আমার মিস।। আমার থেকে বড় আর পাশাপাশি বাসা হওয়াতে আম্মু জোর করে আমায় ওর কাছে পড়াতে পাঠিয়ে দেন।।
আসলে আমি বেশি পড়াশোনা করি না সারাদিন মোবাইল নিয়ে পরে তাকি পড়াশোনায় একটুও মন বসে না।। তাই আম্মু মিম আপুর কাছে আমায় প্রাইভেটে ভর্তি করে দেন।। উনার বাবার একটা বড় ফেক্টরি আছে বলতে গেলে ওরা খুব বড়লোক।। আমার বাবা আর মিম আপুর বাবা দুজনেই বাল্যকালের বন্ধু।। মিম আপু খুব রাগি স্বভাবের সেইদিক দিয়ে সুন্দরও বটে।। উনার কথা না শুনলে কথায় কথায় চড় মারেন এর প্রতিবাদ করলে আবার প্রাইভেটে গেলে শিক্ষা দেন আর বাসায়ও উলটা পালটা বলে আম্মুর কাছে বকা খাওয়ায় তাই আমি উনার মুখের উপর কিছু বলতে পারি না ভিষণ ভয় পাই উনাকে।।
যাইহোক অনেক কথা হয়েছে আর না বাকিটা গল্প পড়লেই বুঝতে পারবেন এখন গল্পতে আসি।। আপনাদের সাথে কথা বলতে বলতে আম্মু এসে খাবার খাওয়ার জন্য ডেকে গেলেন।। ভিষণ খিদে লেগেছে তাই আর দেড়ি না করে নিচে খেতে চলে এলাম।। নিচে গিয়ে দেখি আম্মু খাবার বেড়ে টেবিলে সাজিয়ে রেখেছেন।। সোজা গিয়ে একটা চেয়ার টেনে টেবিলে বসে পরলাম।। খাবার খেয়ে আবার নিজের রুমে চলে এলাম।। শরীরটা অনেক ক্লান্ত লাগছে তাই একটু বিছানায় ঘা এলিয়ে দিলাম।। ক্লান্ত থাকায় কখন যে ঘুমিয়ে পরলাম খেয়ালই নেই?।।
দুপুরবেলা ঘুম ভাঙল ফোনের রিংটোনে।। ঘুম ঘুম চোখে মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখি বন্ধু রহিমের কল।। এই সময় আবার কিসের জন্য কল দিল দেখি তু।।
আমিঃ হে বল (কল ধরে)
রহিমঃ কিরে কই তুই..?
আমিঃ আমি তু বাসায় ঘুমাচ্ছি কেন কি হইছে..?
রহিমঃ আর ঘুমানোর দরকার নাই ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে রহমান চাচার দোকানে চলে আয়।। আমরা সবাই এইখানে বসে আছি তুইও চলে আয় আড্ডা দিব।।
আমিঃ আচ্ছা তোরা থাক আমি আসছি (বলে কল কেটে দিলাম)
তারপর উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।। ভাবছি আজ মিম আপুর কাছে পড়তে যাব না ভালো লাগছে না।। এরপর রেডি হয়ে যেই বের হতে যাব তখনই আম্মু এসে পথ আটকালেন।।
আম্মুঃ কিরে কোথাউ যাচ্ছিস নাকি..?
আমিঃ হে একটু বাহিরে যাচ্ছি বন্ধুদের কাছে।।
আম্মুঃ সে কি তাহলে মিমের কাছে আজ পড়তে যাবি না..?
আমিঃ না আজ ভালো লাগছে না কাল যাব।।
আম্মুঃ পড়াশোনা বাদে তু তোর সবই ভালো লাগে।। চুপচাপ বই নিয়ে মিমের কাছে পড়তে যা বলছি? (ধমকের শুরে)।।
আমিঃ একদিন না গেলে কি?..?
আম্মুঃ বুঝেছি তুই এইভাবে যাবি না দাড়া মিমকে ফোন করে বলছি ওই এসে তোকে নিয়ে যাবে।।
আমিঃ এই না না আম্মু প্লিজ এমন কর না আমি যাব তু এক্ষুণি যাচ্ছি? (মিমের নাম শুনতেই ভয়ে রাজি হয়ে গেলাম)।।
আম্মুঃ ঠিক আছে তারাতাড়ি যা (বলে আম্মু চলে গেলেন)।।
কি আর করার না গিয়ে পারা যাবে না তাই যেতেই হল এর আগে রহিমকে কল করে জানিয়ে দিলাম আমি আজ আসতে পারব না।। এরপর বই খাতা নিয়ে চলে এলাম মিম আপুর বাসার সামনে।। দরজার কাছে এসে কলিং বেল বাজাতেই আন্টি (মিমের আম্মু) এসে দরজা খুলে দিলেন।।
আমিঃ আন্টি মিম আপু বাসায় আছেন..?
আন্টিঃ হে বাবা ওর রুমেই আছে তুমি যাউ।।
আমিঃ আচ্ছা বলে উনার রুমে চলে এলাম।।
রুমের কাছে এসে বাহির থেকে ধাক্কা দিতেই ভিতর থেকে আওয়াজ এলো,, দরজা খুলা আছে।। আর দাড়িয়ে না থেকে ভিতরে ঢুকে পরলাম।। ভিতরে গিয়ে দেখি মিম আপু একটা বই নিয়ে বিছানায় বসে বসে পড়ছেন।। আমাকে আসতে দেখে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বসতে বললেন আমিও বসে পরলাম।। উনার হাসি একদম মন কেড়ে নেওয়ার মতো কিন্তু মেয়েটা যে এতো রাগি তা দেখে কেউ বিশ্বাসই করবে না।। চুপচাপ বসে আছি আর ভাবছি একটা মেয়ে এতো রাগি হয় কি করে।।
মিমঃ ওই কি হল এতো কি ভাবছিস..? (হালকা ধাক্কা দিয়ে)
আমিঃ হে না ইয়ে মানে কিছু না।।
মিমঃ কিছু তু নিশ্চয় ভাবছিলি আমি দেখেছি বল কি ভাবছিলি..?
আমিঃ আরে না কিছু ভাবছিলাম না, বলছি কি পড়াবেন আজ..? (কথা পালটানোর জন্য)
মিমঃ ইংলিশ বের কর আজ ইংলিশ পড়াব।।
আমিঃ উনার কথামতো ইংলিশ বই বের করে দিলাম আর উনি দেখতে লাগলেন।।
মিমঃ কাল যে পড়া দিয়েছিলাম সেইটা কমপ্লিট হয়েছে..?
আমিঃ কিছু না বলে চুপ করে আছি কারণ পড়াটা শেষ করতে ভুলেই গেছিলাম।। না জানি এখন কি হয়।।
মিমঃ কি হল চুপ করে আছিস কেন তোকে আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি সেটার উত্তর দে।।
আমিঃ না মানে আসলে ইয়ে মানে পড়াটা
মিমঃ ঠাসস, তোকে না বলেছিলাম আমার দেওয়া পড়া কমপ্লিট না করে পড়তে আসবি না।। কি করিস সারাদিন যে পড়ার টাইম পাস না..? সারাদিন তু মোবাইল টিপা আর আড্ডা দিতে পারিস?।।
আমিঃ কি বলব বুঝতে পারছি না চড়টা এতো জোরেই লেগেছে যে কথা বলার শক্তিটাও মনে হচ্ছে হারিয়ে ফেলেছি।। চোখে জল চলে এসেছে আর থাকতে পারলাম না কেদেই দিলাম।। আপনি সবসময় আমায় এইভাবে মারেন কেন আমার বেথা লাগেনা বুঝি।। আমি আর পড়ব না আপনার কাছে আজকেই আমি আম্মুকে বলব আপনি শুধু শুধু আমায় খালি মারেন? (কেদে কেদে বললাম)।।
মিমঃ কিহহ! কি বললি তুই আমার কাছে আর পড়বি না আমি তোকে শুধু শুধু মারি।। এই কথা আর ভুলেও মুখে আনবি না বলে দিলাম নাহলে এর ফল খুব খারাপ হবে (আমার কলার ধরে মুখের কাছে মুখ এনে বলল)।।
আমিঃ আমি আপনার কি ক্ষতি করেছি আমার সাথেই কেন সবসময় এমন করেন?।।
মিমঃ কারণ আমি তোকে (বলেই থেমে গেল)
আমিঃ আমায় কি বলেন (আগ্রহ নিয়ে)
মিমঃ কিছু না সরি তোমার খুব লেগেছে তাইনা..? (গালে হাত দিয়ে)
আমিঃ তু অবাক তার মুখ থেকে তুমি শব্দটা শুনে?।। আপু আপনি আমায় তুমি করে বললেন..?
মিমঃ হুম বলেছি তু কি হয়েছে খুব বেথা পেয়েছ তাইনা..?
আমিঃ চড় মারলে তু বেথা পাবই এটাও আবার জিজ্ঞেস করতে হয় নাকি।।
মিমঃ সরি প্লিজ মাফ করে দাউ আর কখনো তোমায় মারব না।।
আমিঃ সত্যি তু..?