আমলকী

আমলকী দেশীয় ফল এটি ওষুধী কাজেও ব্যবহার হয়।

সংশোধনঃ মধু, বাদাম তেল ও দুধ।

 

সাধারণ ক্রিয়া : আমলকীর ফল বা ফলের রস হৃদযন্ত্রের শক্তিদায়ক, সিদ্ধকারক। পাকস্থলী, যকৃত, মস্তিষ্ক ও স্নায়ুমন্ডলীর শক্তিবর্ধক। রক্ত ও পিত্তের উগ্রতা প্রশমিত করে। বায়ু নিঃসারক ও ক্ষুধাবর্ধক। মূত্রকারক, শীতলকারক, সংকোচক, রক্তরোধক এবং সাধারণ বলকারক।

 

আময়িক ব্যবহার: ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে আমলকীর ব্যবহার

 

সর্বাধিক। একে দিয়ে যে সব ওষুধ তৈরি করা হচ্ছে, এর অধিকাংশই বর্তমানে বৈজ্ঞানিক উপায়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অত্যন্ত সাফল্যজনক কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে। এক্ষেত্রে স্মরণ করা যাচ্ছে মোরব্বা আমলা বা আমলকীর মোরব্বা, চ্যবনপ্রাশ, রওগনে আমলা বা আমলকীর তেল, আমলকী রসায়ন, জওয়ারিশ আমলা প্রভৃতি ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক ওষুধগুলো দিন দিন জনপ্রিয়তা লাভ করছে এবং জনগণ অত্যন্ত আস্থার সাথে উক্ত ওষুধগুলো বিভিন্ন রোগে ব্যবহার করছেন। নিম্নে কয়েকটি ফর্মুলা প্রদান করা গেলঃ

 

১। মোরব্বা আমলা বা আমলকীর মোরব্বা (MURABBA AMLA) : প্রস্তুত প্রণালী (Preparation) : সদ্য গাছ হতে সংগ্রহ করা এক কিলোগ্রাম পরিপক্ক আমলকী নিন। আধা লিটার পানিতে হালকা উত্তাপের সাহায্যে নরম করে নিন। এবার চিনির কেওয়াম বা সিরাপ প্রস্তুত করে আমলকীকে পানি হতে পৃথক করে সিরাপে মিশিয়ে নিন। দ্বিতীয় দিনে সিরাপের ঘনত্ব কিছুটা কমে গেলে বা পাতলা হয়ে গেলে আমলকী হতে সিরাপ পৃথক করে এমনভাবে মৃদু উত্তাপে জ্বাল করতে হবে, যাতে সিরাপের ঘনত্ব পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে। অতঃপর সংশ্লিষ্ট আমলকী পুনরায় সিরাপে মিশিয়ে নিন। ৪/৫ দিন পর দেখতে হবে সিরাপের ঘনত্ব ঠিক আছে কিনা। যদি সিরাপের ঘনত্ব কমে যায় তাহলে পূর্বের ন্যায় মৃদু উত্তাপে সিরাপ জ্বাল করে নিয়ে আমলকীর মোরব্বা বায়ুরোধী পাত্রে সংরক্ষণ করুন।

 

আমলকীর মোরব্বা হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্কের শক্তি বৃদ্ধিকারক। পরিপাকতন্ত্রকে শক্তিশালী করে এবং রুচিকারক। উল্লেখিত ক্ষেত্রে ২-৩টি করে দিনে ২-৩ বার খেতে হয়।

 

টীকা: অনেক স্থানে দেখা যায় নির্বাচিত আমলকীকে প্রথমে লৌহ শলাকার সাহায্যে প্রতিটিকে ছিদ্র করে চুনের পানিতে ২/৩ দিন ভিজিয়ে রাখে এবং প্রতিদিন পানি পরিবর্তন করে। এতে আমলকীর কষায় টকযুক্ত ভাব কমে যায় এবং এর মূল রাসায়নিক • ভিটামিন "সি" লোপ পায়। বিশিষ্ট বিজ্ঞানী বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প 2উন্নয়ন) "ডঃ আবদুল খালেক" আমলকীর উপর বিভিন্ন পদ্ধতিতে গবেষণা চালিয়ে এটি প্রমাণ করেছেন।

 

২। রওগন আমলা বা আমলকীর তেল (ROWGHAN AMLA) 8 স্মরণাতীত কাল হতে আমলকীর তেল চুল উঠা, চুলের শক্তি ও কৃষ্ণতা বৃদ্ধি করা,

 

অকালপক্কতা এবং মাথাকে শীতল রাখতে ব্যবহার হয়ে আসছে। এক্ষেত্রে কাঁচা আমলকীর রস ১ লিটার বের করে, তাতে ২ লিটার তিল-এর তেল মিশ্রিত করে একটি পাত্রে দিন। তারপর চুলায় বসিয়ে মৃদু উত্তাপে জ্বাল করতে থাকুন। পানির অংশ বাষ্পায়িত হয়ে যখন শুধু তেল অবশিষ্ট থাকবে, তখন চুলা হতে নামিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিন। ময়লা নীচে বসে গেলে অত্যন্ত সাবধানতার সাথে ছেঁকে নিয়ে আপনার পছন্দ অনুযায়ী রং এবং সুগন্ধি দ্রব্য মিশিয়ে শিশিতে সংরক্ষণ করে বাজারজাত করা যায়। কাঁচা আমলকী সংগ্রহ করা না গেলে শুষ্ক আমলকীকে ২৪ ঘন্টা পানিতে সিক্ত রেখেও উল্লেখিত নিয়মে তেল প্রস্তুত করা যায়। তাছাড়া গ্রন্থকারের অভিজ্ঞতার আলোকে আরও অধিকতর কার্যকরী "হামদর্দ ফার্মাকোপিয়ার" ফর্মুলাটি নিম্নে প্রদান করা গেল।

 

ফর্মুলা:

 

উপাদানসমূহঃ

 

বাংলা বা স্থানীয় নাম

 

১. তাজা আমলকী

 

২. ভূংগরাজ

 

৩. তাজা মেহেদী পাতা

 

৪. জটামাংসী

 

৫. একাঙ্গি

 

৬. তিল তেল

 

৭. আপেল গ্রীন কালার

 

৮. আমলকীর এসেন্স

 

ইউনানী নাম

 

আমলা

 

ভাংরা

 

বর্গেহেনা

 

বালছড়/সুমুলুত তীব

 

যরম্বাদ/নরকচুর

 

রওগন কুনজাদ

 

বৈজ্ঞানিক নাম/ রাসায়নিক গঠন

 

Phyllanthus emblica

 

Eclipta alba

 

Lawsonia alba

 

Nardostachys jatamansi Curcuma zedoaria

 

Sesamum indicum oil

 

পরিমাণ

 

২৫০ গ্রাম

 

২৫০ গ্রাম

 

২৫০ গ্রাম

 

৫০ গ্রাম

 

৫০ গ্রাম

 

১.২৫ লিটার

 

প্রয়োজনমতো

 

প্রয়োজনমতো

 

প্রস্তুতপ্রণালী (Preparation): প্রথমতঃ কাঁচা আমলকী, ভূংগরাজ এবং মেহেদী পাতা প্রতিটি আলাদাভাবে রস বা নির্যাস বের করুন। অতঃপর উক্ত রসের সমপরিমাণ পানি সংমিশ্রণ করুন। এবার জটামাংসী এবং একাঙ্গি মিহিচূর্ণ করে সংশ্লিষ্ট মিশ্রণটির সাথে যোগ করে নিন। ৬/৭ ঘন্টা পর মৃদু উত্তাপে জ্বাল করে পরবর্তীতে সাবধানতার সাথে ছেকে নিন। এবার মিশ্রণটির সাথে তিল তেল মিশিয়ে চুলায় জ্বাল করতে থাকুন। দীর্ঘক্ষণ জ্বাল করার পর যখন পানির অংশ বাষ্পায়িত হয়ে শুধু তেল অবশিষ্ট থাকবে তখন চলা হতে নামিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিন। অতঃপর অত্যন্ত সাবধানতার সাথে ২/৩

 ও সুগন্ধি দ্রব্য ভালভাবে মিশিয়ে বোতলজাত কিংবা,

 

৩। জওয়ারিশ আমলা (JOWARISH AMLA) 1

 

'জওয়ারিশ আমলা' ইউনানী চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি প্রসিদ্ধ ওযুব। এটি অগ্নিবর্ধক, পাকস্থলীর দুর্বলতা দূরকারক, পরিপাক শক্তি ও অস্ত্রসমূহের শক্তি বৃদ্ধিকারক। মস্তিষ্ক ও হৃদযন্ত্রের শক্তিদায়ক। পেটফাঁপা এবং পিত্তজনিত দাস্তবোধক

 

ফর্মুলা :

 

CLE উপাদানসমূহঃ

 

বাংলা বা স্থানীয় নাম

 

১. আমলকী (শুভ)

 

২. ছোট এলাচ

 

৩. জটামাংসী

 

৪. গোলাপফুল

 

৫. শ্বেত চন্দন

 

৬. চিনি

 

৭. মধু

 

৮. সোডিয়াম বেনজয়েট

 

ইউনানী নাম

 

আমলা খুশুক

 

হীল খুর্ন

 

সুমবুলুত-তীব

 

গুলে সুখ

 

ছন্দল সফেদ

 

কুন্দ সফেদ

 

শহদ

 

নিথরুন বেঞ্জোয়ী

 

বৈজ্ঞানিক নাম/ রাসায়নিক গঠন

 

Phyllanthus emblica

 

Elenaria cardamomum

 

Nardostachys jatumunsi

 

Rosa damascens

 

Santalum album

 

Sugar

 

Apis mellifera

 

Sodium benzoate

 

পরিমাণ

 

৪৫০ গ্রাম

 

৪০ গ্রাম

 

৪০ গ্রাম

 

৪০ গ্রাম

 

১.৫ কেজি

 

৩ কেজি

 

৫০ গ্রাম

 

প্রস্তুতপ্রণালী (Preparation): প্রথমতঃ আমলকী মিহিচূর্ণ করে ৬০ মেশের চালনী

 

দিয়ে চেলে নিয়ে ২ লিটার বিশুদ্ধ পানির মধ্যে ৭-৮ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন। এবার চুলায় বসিয়ে কিছুক্ষণ ভালভাবে জ্বাল করার পর চুলা হতে নামিয়ে কাপড় দ্বারা ছেঁকে নিয়ে। নির্যাসটুকু সংগ্রহ করুন। উক্ত নির্যাসে চিনি ও মধু মিশিয়ে পুনরায় একইভাবে জ্বাল দিয়ে কেওয়াম বা সিরাপ প্রস্তুত করে চুলা হতে নামিয়ে গরম অবস্থায় সোডিয়াম বেনজয়েট আলাদাভাবে দ্রবণ করে সিরাপে মিশিয়ে নিন। তারপর অন্যান্য উপাদানসমূহ (ছোট এলাচ, জটামাংসী, গোলাপফুল, শ্বেতচন্দন) মিহিচূর্ণ করে ৬০ মেশের চালনীতে চেলে নিয়ে ধীরে ধীরে মিশ্রিত করুন এবং নাড়তে থাকুন। কিছুক্ষণ রেখে দেয়ার পর জওয়ারিশ ঠান্ডা হলে শুষ্ক কাঁচের পাত্রে সংরক্ষণ করুন।

 

সেবনবিধি : ১-২ চা চামচ ওষুধ আহারের পর দিনে ৩ বার পানিসহ সেব্য। উল্লেখিত ফর্মুলাটি 'হামদর্দ ফার্মাকোপিয়া' হতে নেয়া হয়েছে। তাছাড়া ফর্মুলাটি সেন্ট্রাল কাউন্সিল ফর রিসার্চ ইন ইউনানী মেডিসিন গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়া, নিউ দিল্লীতে বৈজ্ঞানিক উপায়ে বিশ্লেষণের মাধ্যমে যে সব তথ্য পাওয়া গিয়েছে তা নিম্নে প্রদান করা গেলঃ

 

 

Appearance : Semi Solie

Colour : Brown 

Smell:Spicy


Akhi Akter Mim

313 Blog posts

Comments