রোগ প্রতিকারে আমলকী

ভেষজে কাজে আমলকীর ব্যবহার

রোগ প্রতিকারে আমলকীর প্রয়োগ

 

১। হাঁপানি ও ফুসফুসের বেদনায় : ৫ গ্রাম আমলকী চূর্ণ মধু ও ঘি-এর সাথে মিশিয়ে দিনে ২-৩ বার খেলে হাঁপানি ও ফুসফুসের বেদনা ধীরে ধীরে প্রশমিত হয়।

 

২। ডায়াবেটিস রোগে : ৫ গ্রাম আমলকীর বীজ চূর্ণ করে ২৫০ মিলি পানিতে ৮-১০

 

ঘন্টা রাত্রে সিক্ত রেখে পরবর্তীতে জ্বাল করে ৫০ মিলি থাকতে ঈষৎ গরম অবস্থায় ছেঁকে নিয়ে সেবন করতে হয়। নিয়মিত কিছুদিন সেবন করে গেলে ডায়াবেটিস রোগের বিশেষ উপকার হয়।

 

৩। বমন ও পিপাসায়: অতিরিক্ত বমন ও পিপাসায় শুষ্ক আমলকী ৪-৫ গ্রাম ১ কাপ

 

পরিমাণ শীতল পানিতে ২-৩ ঘন্টা সিক্ত রেখে, পরবর্তীতে উক্ত পানি ছেঁকে নিয়ে ১ চা চামচ শ্বেতচন্দন ঘষা এবং সামান্য পরিমাণ চিনি মিশিয়ে দিনে কয়েক বার খেতে হয়।

 

৪। গণোরিয়ায় : ২০-৩০ মিলি আমলকী গাছের ছালের রস, হলুদচূর্ণ ৫ গ্রাম মধু সহযোগে দিনে ২-৩ বার করে খেয়ে গেলে গণোরিয়া রোগ প্রশমিত হয়।

 

৫। চোখ উঠায়: ২-৩ গ্রাম আমলকী প্রথমতঃ গরম পানিতে ধুয়ে নিতে হবে। পরবর্তীতে ৪-৫ চা চামচ গরম পানিতে ৫-৬ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে উত্তমরূপে ছেঁকে নিয়ে প্রতিবারে ১-২ ফোঁটা চোখে দিতে হবে। ২/৩ দিন ব্যবহার করলে চোখ উঠা সেরে যায়। তথ্য চিরঞ্জীব বনৌষধী ১ম খন্ড পৃষ্ঠা নং-১২৮।

 

  • ৬। দৃষ্টিক্ষীণতায়: অল্প বয়সে যাদের দৃষ্টিশক্তি কমে যায় এবং কিছুদিন পর পর চশমার শক্তি বৃদ্ধি করতে হয়। উল্লেখিত ক্ষেত্রে আমলকীর রস ২-৩ চা চামচ এবং প্রয়োজন অনুযায়ী মধু মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেতে হয়। তবে অজীর্ণ থাকলে প্রথম প্রথম কম মাত্রায় খেতে হয়। কেননা গলা ও বুক জ্বালা দেখা দিতে পারে।

 

৭। হিক্কায়: আমলকীর রস ২-৩ গ্রাম অথবা শুকনো আমলকী ভিজানো পানিতে ১০- ১৫ ফোঁটা মধু এবং ১০০ মিলিগ্রাম পিপুল চূর্ণ করে মিশিয়ে কয়েকবার খেলে হিক্কা সেরে যায়।

 

৮। তলপেটে বায়ু জমলে। আমলকী বেটে নাভীর নিচে প্রলেপ দিলে বায়ু প্রশমিত হয়। মূত্রকৃচ্ছতায় ও বিশেষ উপকার দর্শে।

 

   অন্যান্য প্রাপ্ত তথ্য

 

 

জানা যায় পারস্যে ক্রিমিনাশক ওষুধ হিসেবে প্রতি মাত্রায় ১০-২০ মিলি আমলকীর রসে সমপরিমাণ মধু মিশিয়ে সেবন করানো হয়। এতে আশাতীত উপকার হয়। ২-৩ চা চামচ আমলকী ফলের রস বা নির্যাসে ২ চা চামচ মধু ও ১ গ্রাম পিপুল চূর্ণ মিশিয়ে খেলে শ্বাসকষ্ট ও হিক্কায় বিশেষ উপকার দর্শে। উক্ত মুষ্টিযোগটি গ্রন্থকারের পরীক্ষিত।

 

আমলকী, হরীতকী ও বহেড়া প্রতিটি সমপরিমাণ নিয়ে ক্বাথ বা জোশান্দা করে খেলে পুরাতন আমাশয় ও পিত্ত প্রশমক হিসেবে বিশেষ উপকার হয়। তাছাড়া আমলকী, চিতামূল, হরীতকী, পিপুল প্রতিটি ৫ গ্রাম করে নিয়ে আধাচূর্ণ করে ২৫০ মিলি পানিতে ৬/৭ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে পরবর্তীতে জ্বাল করুন। ১০০ মিলি অবশিষ্ট থাকতে চুলা হতে নামিয়ে ছেঁকে নিয়ে সেব্য। উক্ত পদ্ধতিতে নিয়মিত কিছুদিন সেবন করে গেলে সর্দি, মাথা ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য ও জ্বরে অত্যন্ত ফলপ্রদ।

 

আমলকী বীজ পুড়িয়ে ভালোভাবে মিহিচূর্ণ করে চেলে নিয়ে নারিকেল তেলের সাথে মিশিয়ে যে কোন চর্মরোগ বা চুলকানিতে নিয়মিত ব্যবহারে বিশেষ উপকার হয়।

 

আধুনিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায় আমলকীতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন "সি" বিদ্যমান। সমীক্ষা করে দেখা গিয়েছে কমলা লেবুর রসের চেয়ে ২০ (বিশ) গুণ বেশী ভিটামিন “সি” আমলকীতে পাওয়া যায়। তাছাড়া প্রোটিন, চর্বি, খনিজ পদার্থ, কার্বোহাইড্রেট, নিকোটিনিক এসিড, পেস্টিন, ট্যানিন, গ্যালিক এসিড, এমিনো এসিড, সিভিউলিক এসিড ও অত্যাবশ্যকীয় তৈল আমলকীতে সমৃদ্ধ। আমলকীর ফল, ছাল ও পাতায় ট্যানিনের পরিমাণ যথাক্রমে ফলে ২৮%, ছাল বা বাকলে ৮-১০%, পাতায় ২২%।

 

প্রাপ্তিস্থান: আমলকী বাংলাদেশের সর্বত্রই পাওয়া যায়। আমাদের দেশে যদিও আমলকী একটি স্থানীয় গাছ হিসেবে অতি পরিচিত, কিন্তু এর গুণাগুণ বিচার বিশ্লেষণ করলে আরও ব্যাপকভাবে গাছটি রোপন করা উচিত। সকল প্রকার মাটিই এ গাছটি রোপন করার উপযোগী।


Akhi Akter Mim

313 Blog posts

Comments