প্রস্তুতপ্রণালী (Preparation) : ১ নং হতে ৩ নং উপাদানসমূহকে রৌদ্রে কিংবা ড্রাই চেম্বারে শুকিয়ে উত্তমরূপে চূর্ণ করে ৬০ মেশের চালনীতে চেলে নিয়ে ১১ নং উপাদানের ঘি) সাহায্যে ভালোভাবে মেখে পৃথক করে রেখে দিন।
৪নং হতে ৮ নং উপাদানসমূহ একইভাবে শুকিয়ে চূর্ণ করে ৬০ মেশের চালনীতে চেলে নিয়ে রেখে দিন। এবার সমুনিয়া ও মুস্তগী রূমী অত্যন্ত হালকা চাপে খড়লে মিহিচূর্ণ করে চেলে নিয়ে উল্লেখিত উপাদানের সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
তারপর মধু ও চিনি সহযোগে উত্তাপের লাহায্যে কেওয়াম বা সিরাপ তৈরি করে সোডিয়াম বেনজয়েটের দ্রবণ মিশিয়ে চুলা হতে নামিয়ে ছেঁকে নিয়ে নির্বাচিত (আমলকী, হরীতকী ও বহেড়া) চূর্ণসমূহ প্রথমে মিশিয়ে পরবর্তীতে অন্যান্য সংশ্লিষ্ট চূর্ণ উপাদানসমূহ ধীরে ধীরে মিশিয়ে নিন।
এত্রিফল ঠান্ডা ওয়ার পর শুষ্ক ও বায়ুরোধী কাঁচের পাত্রে সংরক্ষণ করুন।
বীজ: আমলকীর বীজ ফেলে দিয়ে কেবল মাংসটুকু ব্যবহার করতে হয়। তেউরীমূলো ভিতরের অংশ ফেলে দিয়ে কেবল উপরের খোসা ব্যবহার করতে হয়।
মুস্তগীরূমী কমুনিয়া অত্যন্ত হালকাচাপে খড়লে পিষে মিহিচূর্ণ করে চেলে নিয়ে পরবর্তীত নির্বাচিত অন্যান্য চূর্ণ উপাদানের সাথে মিশাতে হয়। মধুর অভাবে উল্লেখিত পরিম
মিযাজ (Temperament): প্রথম শ্রেণীর শীতল ও দ্বিতীয় শ্রেণীর শুষ্ক।
ব্যবহার্য অংশ: প্রধানতঃ ফল বা ফলত্বক।
উল্লেখ্য যে বিভিন্ন তথ্যবহুল গ্রন্থে বড় হরীতকীর বীজ বাদ দিয়ে শুধু উপরের খোসা ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।
সেবনমাত্রা: ৬ গ্রাম থেকে ১২ গ্রাম পর্যন্ত। প্রয়োজনবোধে আরও অধিক মাত্রায় প্রয়োগ করা যেতে পারে।
সাধারণ ক্রিয়া: কোষ্ঠ পরিষ্কারক, মস্তিষ্কের শক্তিদায়ক, ক্ষুধাবর্ধক ও দৃষ্টিশক্তি বর্ধক। জ্বর, সর্দি, হাঁপানি, অর্শ, ক্রিমি, বাত ও মূত্রযন্ত্রের বিভিন্ন রোগে হরীতকী বিশেষ ফলপ্রদ।
তাছাড়া উদরাময়, রক্ত আমাশয়, পেট ফাঁপা, বমন, প্লীহা ও যকৃতের বিভিন্ন রোগে অত্যন্ত উপকারী। হরীতকী বলকারক, জীবনীশক্তি বৃদ্ধিকারক এবং পিপাসা নিবারক।
আময়িক ব্যবহার: প্রাচীনকাল হতে ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিভিন্ন
ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে হরীতকী সর্বাধিক ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে ত্রিফলা নামটি অত্যন্ত সমাদৃত।
বিভিন্ন রোগ সারাতে এর তুলনা বিরল। তিনটি ফলের সমাহার বিধায় একে ত্রিফলা বলে। এর মধ্যে হরীতকী একটি প্রধান উপাদান। এটির সংমিশ্রণে অনেক ওষুধই তৈরি করা হয়।
তবে এখানে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ওষুধের নাম উল্লেখ করা গেল। যেমন- এত্রিফল মুলাইয়েন, হাব্বে সূরাঞ্জান, হাব্বে হলিলা, মাজুন হলিলা, কুরছ মুলাইয়েন, সফূফ মোইয়া, সফূফ মুলাইয়েন প্রভৃতি।
উল্লেখিত ওষুধগুলো থেকে তিনটি ওষুধের ফর্মুলাসহ কার্যকারিতা, প্রস্তুতপ্রণালী ও সেবনবিধি নিম্নে প্রদান
করা হলোঃ
এত্রিফল মুলাইয়েন (ETRIFAL MULAYIN) :
এত্রিফল এক প্রকার হালুয়া জাতীয় ওষুধ। এত্রিফল নামকরণের একমাত্র কারণ বিশেষতঃ ত্রিফলা অর্থাৎ আমলকী, হরীতকী, বহেড়া এর প্রধান উপাদান। বস্তুতঃ এত্রিফল জাতীয় ওষুধগুলো মস্তিষ্কের বিভিন্ন রোগে সর্বাধিক ব্যবহৃত হয়।
তাছাড়া চোখ, নাক, কানের রোগ এবং কোষ্ঠকাঠিন্যে অত্যন্ত উপকারী। এত্রিফল মুলাইয়েন কোষ্ঠকাঠিন্য প্রশমিত করে, বিকৃত আবদ্ধ শ্লেষ্মা মস্তিষ্ক হতে বের করে দেয়। অধিকন্তু ওরা খা ব্যথা, কানের মধ্যে শোঁ শোঁ শব্দ বা ব্যথা হওয়া এবং চোখের দৃষ্টিশক্তি
ক্ষেত্রে ১ চা চামচ ওষুধ গরম পানি কিংবা দুধসহ
রাত্রে শয়নকালে সেব্য।
বাংলা বা স্থানীয় নাম
ইউনানী নাম
হরীতকী
ফার্সী নাম
হলীলা/হলেলা
হলেলা/হলীলা
আরবী নাম
হলীলজ
হিন্দী নাম
হরড়া
সংস্কৃত নাম
হরীতকী
ইংরেজী নাম
Chebulic Myrobalan
বৈজ্ঞানিক নাম
Terminalia chebula Retz.
পরিবার
Combretaceae
পরিচয় : এক প্রকার বড় ধরনের পাতা ঝরা বৃক্ষের ফল বিশেষ। বৃক্ষটির পাতা অনেকটা জামরুলের পাতার ন্যায়, তবে একটু ছোট প্রকৃতির হয়।
সাধারণতঃ মে-জুন মাসে পাতা ঝরে গিয়ে আবার অল্প দিনের মধ্যেই নতুন পাতা হয়। ১০-১২ সেঃ মিঃ লম্বা পুষ্পদন্ডের চারিদিকে নাকচাবির মত সাদা বা হলুদ রং এর ফুল হয় এবং পরবর্তীতে ফল আসে।
অগ্রহায়ণ ও পৌষ মাসে ফল পরিপুষ্ট হয়ে আপনা আপনি পড়ে যায়। বস্তুতঃ তখনই এর সংগ্রহকাল। পরিপুষ্ট হরীতকীর উপরের অংশ গাঢ় বাদামী রং এর এবং লম্বা লম্বা ফাটলের ন্যায় দেখায়।
আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে সাত প্রকারের হরীতকীর কথা উল্লেখ থাকলেও বর্তমানে জনসাধারণের নিকট দুই প্রকার হরীতকীই সর্বাধিক পরিচিত। যেমন বড় হরীতকী বা কাবুলী হরীতকী এবং ছোট হরীতকী বা জংগী হরীতকী।
বস্তুতঃ উভয় হরীতকীই একই গাছের ফল বিশেষ। জংগী হরীতকী ফল কচি অবস্থায় ঝরে যাওয়ার পর সংগ্রহ করে শুকিয়ে নেওয়া হয়। জংগী শব্দটি বহিরাগত এর অর্থ নিগ্রো অর্থাৎ যেমনি কালো তেমনি শক্ত।
ইউনানী চিকিৎসকগণ একে হলীলা সিয়াহ্ বলে থাকেন। আবার কেহ কেহ একে “চেতকী” হরীতকীও বলেন।
উৎপত্তিস্থল : বিভিন্ন গ্রন্থে দেখা যায়, হরীতকী এক প্রকার ভারতীয় গাছের ফল। ভারতের বিহার, উড়িষ্যা, দাক্ষিণাত্য, পাটনা এবং মধ্য প্রদেশের পাহাড়িয়া অঞ্চলে প্রচুর দেখা যায়।
আমাদের দেশেও হরীতকী একটি স্থানীয় গাছ হিসেবে সবার নিকট অতি পরিচিত। সকল প্রকার মাটিই বৃক্ষটি রোপন করার উপযোগী।