খাদিজা রাদিআল্লাহু আনহু

আর্দশ দম্পতি হওয়ার গল্প হযরত মোহাম্মদ সাঃ ও খাজিদা রাঃ

খাদীজা (রা)-এর বয়স চল্লিশ হলে কি হবে, তাঁর রূপ-সৌন্দর্য একটুও নস্ত হয়নি। তাঁর গায়ের রং ছিল প্রস্ফুটিত লাল গোলাপের মত। অর্থাৎ দুধে আলতা মিশালে যে রং হয়, ঠিক সেই রং।

 

 এমন রূপসী খাদীজা। তিনি স্বামীকে খুশি ও সন্তুষ্ট করার জন্যে সচেষ্ট হয়ে উঠলেন। 

 

কখন কিভাবে স্বামীকে খুশি ও সন্তুষ্ট করা যায়-এই চিন্তা ও সুযোগের অপেক্ষায় থাকতেন। এজন্যে তিনি কখনও সুন্দর পোশাক পরতেন, 

 

কখনও সুন্দরভাবে সাজ-গোজ করতেন। কখনও স্বামীর সঙ্গে হাসি-তামাশায় মশগুল হতেন, কখনও স্বামীর পাশে বসে মিষ্টি-মধুর কথা বলতেন। 

 

কখনও স্বহস্তে উত্তম খাবার তৈরি করে স্বামীকে হাসিমুখে খেতে দিতেন। খাদীজা (রা) এসব করতেন স্বামীর মেজাজ ও মর্জি বুঝে। যখন-তখন নয়। 

 

অর্থাৎ যখন যেটা করলে স্বামী অধিক খুশি হবেন, খাদীজা তখন সেটাই করতেন। স্বামী অসন্তুষ্ট হতে পারেন বা মনে একটু কষ্ট পেতে পারেন-এমন আশংকাজনক কথা বা কাজ খাদীজা (রা) কখনও করতেন না। 

 

এত সাবধানতার সাথে তিনি সংসার জীবন শুরু করলেন। ফলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রগাঢ় ভালবাসা সৃষ্টি হলো।

 

খাদীজা (রা)-এর প্রতিটি কাজ-কর্ম, আচার-ব্যবহার তাঁর স্বামীর জন্যে ছিল খুবই পছন্দনীয়। তাই তরুণী স্ত্রীর অভাব হযরত মুহাম্মদ (সা) অনুভব করতে পারতেন না। তিনি তাঁর স্বামীকে প্রাণ অপেক্ষা ভালবাসেন। 

 

তিনি দুনিয়াতে এক পরম সম্পদ লাভ করেছেন। যাঁর তুলনা হয় না। খাদীজা (রা) যেন হারানো জীবন ও যৌবন ফিরে পেলেন। তাই এত দিনের সঞ্চিত অন্তরের সেই অফুরন্ত প্রেম-প্রীতি,

 

 মায়া-মহব্বত উজাড় করে দিয়ে স্বামীকে তুষ্ট ও খিদমত করতে লাগলেন। আদর-সোহাগ ও সেবাযত্ন দ্বারা খাদীজা (রা) স্বামীর মন কেড়ে নিলেন। 

 

খাদীজা (রা)-এর এহেন ভক্তি-শ্রদ্ধায় মুহাম্মদ (সা) মুগ্ধ হলেন এবং তাঁর মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেললেন।

 

তাঁরা সব সময় চেষ্টা করতেন কিভাবে একে অপরকে খুশি করা যায়। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে রীতিমত প্রতিযোগিতা চলতো। ফলে তাদের মধ্যে গড়ে উঠে গভীর প্রীতি ও ভালবাসা এবং আদর্শ দাম্পত্য জীবন। 

 

এমন আদর্শ দাম্পত্য জীবন পৃথিবীতে ইতিপূর্বে আর গড়ে উঠেনি।

 

 দীর্ঘ পঁচিশ বছরের দাম্পত্য জীবনে একটি দিনও তাঁদের দু'জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি,

 

 তর্ক-বিতর্ক কিংবা মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়নি। এমন কি একটা কটু কথাও কেউ কাউকে কোনদিন বলেন নি। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ছিল এমনই মধুর সম্পর্ক। এরই একটা ঘটনা এখন

 

 

একদিন হযরত খাদীজা (রা) রান্না ঘরে বসে গোশত-রুটি খাচ্ছেন। এমন সময় হযরত মুহাম্মদ (সা) কোথেকে যে বাড়িতে ফিরলেন। এসেই তিনি দেখেন, খাদীজা (রা) একটি গোল্ভের টুকরা মুখে দিয়ে ছিড়ছেন।

 

 আর অমনি দৌড়িয়ে গিয়ে তিনি গোশতের টুকরাটি ছোঁ মেরে মুখ থেকে কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করলেন। কিন্তু পারলেন না। কারণ খাদীজা (রা) টের পেয়ে চট্ করে টুকরাটি হাতে নিলেন। মুহাম্মদ (সা) ঠকে গেলেন। এজন্য দু'জনেই হাসতে লাগলেন।

 

হাসতে হাসতেই শুরু হলো আবার দু'জনের মধ্যে ঐ টুকরাটি নিয়ে কাড়াকাড়ি।

 

 টুকরাটি কে খেতে পারে? দু'জন তো হাসতে হাসতে খুন। খাদীজা চট্ করে গোশতের টুকরাটি অর্ধেক মুখের ভিতরে রেখে দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরলেন।

 

 নবীজী সেই অর্ধেকটুকুই মুখ থেকে ছিঁড়ে নিয়ে খেতে লাগলেন। আর বললেন: বাহ্! কী মজা!

 

গোশ্ত খেতে খেতে একে অপরের প্রতি তাকিয়ে হাসতে লাগলেন।

 

ফাতিমা (রা) তখন অন্য ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে আব্বা-আম্মার কাণ্ড দেখছেন আর মিষ্টি মিষ্টি হাসছেন। ফাতিমা যে বাড়িতেই রয়েছে একথা খাদীজা (রা) বেমালুম ভুলেই গিয়েছিলেন।

 

 হঠাৎ ফাতিমাকে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে খাদীজা লজ্জায় মুষড়ে গেলেন। তিনি স্বামীকে বললেন: ছি! ছি !! 

 

ফাতিমা দরজায় দাঁড়িয়ে সব দেখে ফেলেছে। আমি তো ওকে দেখিনি এবং ও যে বাড়িতে আছে তা খেয়ালও নেই। ওর সামনা সামনি অমন করা ঠিক হলো? ও আমাদেরকে ভাববে কি?

 

নবীজী বললেন: আরে, ওকে শেখানোর জন্যেই তো এমন করেছি। যাতে ওরাও এমনিভাবে পরম শান্তি লাভ করতে পারে।

 

অনেক মহিলা আছে, যারা কেবল স্বামীর সুখের সাথী হয়ে থাকে, কিন্তু দুঃখ- কষ্ট দেখলে দূরে সরে চলে যায়। খাদীজা (রা) কেবল স্বামীর সুখেরই সাথী ছিলেন না, দুঃখেরও সাথী ছিলেন। 

 

সুখের সময় তিনি স্বামীর উপর যেমন সন্তুষ্ট থাকেন, চরম দুর্দিনে এবং দুঃখের সময়ও তেমনি স্বামীর উপর তুষ্ট থাকতেন। ধৈর্য হারাতেন না।

 

 এমন কি স্বামীর সামনে দুঃখ করে একটা কথা বলা তো দূরের কথা, একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস পর্যন্ত ফেলতেন না। বরং স্বামীকেই আরও সান্ত্বনা দিতেন।

 

সুখে-দুঃখে ছায়ার মত খাদীজা (রা) স্বামীর পিছে পিছে থাকতেন। এটাই হলো স্বামী-স্ত্রীর প্রকৃত প্রেম-ভালবাসা। 

 

মহানবী খাদীজাকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালবাসতেন। এ ভালবাসার তুলনা হয় না। মহানবী (সা) বলেন: সেই পুরুষ অতি উত্তম, যে পুরুষ তার নিজের স্ত্রীর নিকট উত্তম। আমি নিজেও তদ্রূপ।

 

বিয়ের পর।

 

দেখতে দেখতে পনর বছর পার হয়ে গেল। বিয়ের প্রথম পাঁচ বছর তাঁদের কোন ছেলেমেয়ে হলো না। তারপর তাঁদের চার মেয়ে ও দু'ছেলে হলো।

মেয়েদের নাম-জয়নব, রুকাইয়া, উম্মে কুলসুম ও ফাতিমা। ছেলে দু'জনের নাম-কাসিম ও আবদুল্লাহ্। সকলে আদর করে আবদুল্লাহকে তাইয়্যেব ও তাহির-এই দু'নামে ডাকতো। এই নাম দু'টির অর্থ হলো 'পবিত্র'।

কাসিম দু'বছর বয়সে মারা যায়। আর আবদুল্লাহ্ মারা যায় শৈশবে। এজন্যে কাফিররা নবীজীকে আবতার বা অপুত্রক বলে ডাকতো।


Akhi Akter Mim

313 Blog posts

Comments