বেশ অনেকটা সময় নিরবতায় কাটে।
ইরা অবাক হয়।সে তো ভেবেছিলো দরজা খোলার সাথে সাথে ইরাকে দেখে শৌখিন রাগারাগি করবে।কিন্তু তা হলোনা কেনো?
ইরা সাবধানে মাথা উচু করে সামনে তাকায়।
কাউকেই দেখতে পায়না।
তার কপাল কুঁচকে আসে।
ভাবে তাহলে দরজায় বেল বাজালো কে?
ভুত নাকি?
রাত বারোটায় নাকি ভুত আসে?কোথায় যেনো শুনেছে ইরা।ও হ্যা তার দাদির কাছে শুনেছে।
ছোটবেলায় দাদির কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকতো ইরা।আর দাদি তখন মাথায় হাত বুলিয়ে গল্প শোনাতো।রুপকথার গল্প, রাজকন্যা,রাজপুত্রের গল্প, ভুতের গল্প।
কিন্তু সেই ভুত এখানে আসবে?
তাও আবার বেল বাজিয়ে?
পেছনে শব্দ পেয়ে ঘার ঘুরিয়ে দেখে কেউ সিড়ি বেয়ে উপরে উঠছে।
গটগট পায়ে উঠে চলেছে সে।আশেপাশে কারো দিকে তার হুশ নেই।
পেছন থেকে চেহারাটা দৃষ্টিগোচর হলোনা ইরার।
কিন্তু সে বেশ বুঝতে পারলো লোকটা শৌখিন।
তার হাটার স্টাইল দেখলেই ইরা এক নিমিষে তাকে চিনে ফেলে।
কিন্তু সে কখন ঘরে ঢুকলো?
ইরা যখন মাথা নিচু করে দাড়িয়ে ছিলো তখন?তাহলে কিছু বললো না কেনো?
ইরার মাথায় তালগোল পাকিয়ে গেলো।
তবে এইটুকু কথা ভেবে শান্তি পেলো যে শৌখিন তাকে দেখে রাগারাগি করেনি।
ডাইনিং টেবিলে গিয়ে সব খাবার গুছিয়ে ফ্রিজে রাখলো ইরা।
রেহেনা বেগম শৌখিনের জন্য খাবার সাজিয়ে রেখেছিলেন। শৌখিন তো খাবার কথা দুরে থাক অন্য কোন কথাও বললোনা।ইরার নিজেরও সাহসে কুলায়না শৌখিনকে খাবারের কথা বলতে।
নিজের রুমে ঢুকে টর্চ জালিয়ে বিছানার একপাশে শুয়ে পরলো।
অন্যপাশে শাম্মী ঘুমিয়েছে।
ইরা সাধারণত শাম্মীর সাথেই ঘুমায়।
নিজের আলাদা একটা রুম দিতে চেয়েছিলো রেহেনা বেগম কিন্তু ইরা নিজেই নেয়নি।
তার আলাদা রুমের প্রয়োজন পরেনা।
তাছাড়া শাম্মীর সাথে দুজনে মিলে গল্প করে বেশ সময় কাটে তার।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পরে নেয় ইরা।
নিচে নেমে কিচেনে যায়।
এ বাসায় রহিমা খালা সবরকমের কাজ করে।
রহিমা খালা চুলায় চায়ের পানি বসাচ্ছিলেন।
ইরা পিছনে গিয়ে দাড়ায়।
কপট রাগ দেখিয়ে বলে,
তুমি আজও চা বানাতে যাচ্ছিলে খালা?
রহিমা সরে দাড়ায়।হেসে বলে,
ভাবলাম তুমি আজ চা বানাইবানা।
বানাবো না কেনো?তুমি জানোনা আমি রোজ সকালে চা বানাই।
-হ জানিতো।আরে আমি কি চা বানাইছি নাকি?খালি পানি বসাইছি চুলায়।
ইরা মুচকি হেসে চা বানানোয় মন দেয়।
সে প্রতিদিন নিজের হাতে চা বানায়।ফুপু খুব পছন্দ করে ইরার হাতের চা।
বাবা যখন বেঁচে ছিলো তখন সেও খুব পছন্দ করতো।
বলতো,আমার বুড়িমার হাতে জাদু আছে।
চা বানিয়ে কাপে ঢেলে রেহেনা বেগমের ঘরে যায় ইরা।রেহেনা বেগম নামাজ পরে বেলকনির খোলা হাওয়ায় বসে ছিলেন।
ইরাকে দেখে হাত এগিয়ে দেন চায়ের কাপ নেওয়ার উদ্দেশ্যে।
বলেন,
শাম্মী উঠেনি এখনো ঘুম থেকে?
ইরা মাথা নাড়ে।
রেহেনা বেগম আফসোস করেন,
মেয়েটা যে কেমন হলোনা?আমার দুই ছেলেমেয়ের একটাকেও মনের মতো মানুষ করতে পারলামনা।
কোথায় সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে নামাজ কালাম পরবে তা না!
কথা শেষ করে চায়ের কাপে চুমুক দেন।তৃপ্তিতে চোখ বুজেন।
আবার ফট করে চোখ খুলে ইরার মুখোমুখি তাকান।
বলেন,
শৌখিনকে চা দিয়েছিস?
ইরা মুখ থমথমে করে।
তার এতক্ষণ যাবত শৌখিনের কথা মনে ছিলোনা।
তাছাড়া চা নিয়ে শৌখিনের সামনে দাড়ানোর মতো সাহস ইরার নেই।যা সাহস ছিলো সব কাল রাতেই দেখিয়ে ফেলেছে।
ইরার থমথমে মুখের দিকে তাকিয়ে রেহেনা বেগম বলেন,
ও তোকে কাল কিছু বলেছে?
ইরা মুখে হাসিহাসি ভাব আনে।ফুপুর সামনে গোমড়া মুখে সে থাকতে চায়না।এতে ফুপুর টেনশন বাড়বে।
সে বলে,
--কি বলবে বলোতো?
আর তুমি জানলে কি করে যে তোমার ছেলে এসেছে?
---সকালে রহিমা বললো।
তা হ্যারে চা দিয়েছিস শৌখিনকে?
ইরা মাথা নাড়ে।
---না দেইনি।
রেহেনা বেগম একপ্রকার আঁতকে ওঠেন।
---সে কি কথা?শৌখিন রোজ সাতটায় চা খায়।এর একমিনিট এদিক ওদিক হলেও লংকা-কান্ড বাধিয়ে ফেলবে।
যা তাড়াতাড়ি দিয়ে আয়।
ইরা আমতাআমতা করে।বলে,
---আমি দিয়ে আসবো?
--হ্যাঁ।তো?
ইরা বোকা হাসে।
আবার মুখ গোমড়া করে।
মাথা চুলকে খালি চায়ের কাপ তুলে নেয়।
বলে,
---যাচ্ছি।
কিচেনে ঢুকে পাশে রাখা টুলে ঠাস করে বসে পরে ইরা।
রহিমা বেগম ততক্ষণে নাস্তা বানাতে শুরু করেছেন।
ইরাকে মনমরা দেখে তিনি বলেন,
---কি হয়েছে ইরা মা?মুখ গম্ভীর কেন?
ইরা আনমেনেই বিরবির করে,
---কি আর হবে খালা?বাঘের সামনে হাজির হওয়ার নির্দেশ এসেছে।
রহিমা খালা চাপা চিৎকার দিয়ে ওঠেন।
---ও আল্লাহ, বাঘ?বাঘ কই?
ইরা হতভম্ব হয়।
সে কি বললো আর রহিমা খালা কি বুঝলো?
সে চায়ের কাপ হাতে তুলে নেয়।
যাওয়ার সময় আবার পিছ ঘোরে।
রহিমা খালার কাছে এগিয়ে ফিসফিস করে বলে,
--সাবধান খালা এই এলাকায় বাঘ এসেছে।
একটু আগেই শুনে এলাম।
রহিমা খালা ভয়ার্ত চোখে তাকালেন।
ইরার প্রচন্ড হাসি পেলো সে মুখ দেখে।
কিন্তু হাসলোনা।
তার সামনে বিপদ।
------
দরজায় কিছুক্ষণ কড়া নাড়ানোর পর দরজা খোলে শৌখিন।
পরনে তার কোন জামা নেই।
একটা ট্রাউজার পরিহিত অবস্থায় দরজা খুলে চোখ ডলে সে।
চোখে তার এখনো ঘুম।অনেক রাতে ঘুমানোর ফল এটা।
চুল উশকো খুশকো হয়ে এলোমেলো হয়ে আছে।
নগ্ন বুকের ভারী পশমগুলোর দিকে কড়া নজরে তাকায় ইরা।
হাতের পেশিগুলো হাত নাড়ানোর ফলে উঠানামা করে।
ইরার চোখ বড়বড় করে দেখে।
শৌখিনকে এতো কাছ থেকে আগে কখনো দেখেনি সে।
ছোটবেলায় দেখেছিলো।
তারপর তো মামা মামির কাছে চলে গেলো।
যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেলো।
আর বিয়ের সময় কতোরকম ঝামেলার মাঝে সেরকম করে দেখাই হয়নি।দেখা হলেও এমন ভাবে হয়নি।
ইরা ভেবে পেলোনা শৌখিন ভাই এতো সুন্দর! এতো এতো সুন্দর ছেলেটা তার বর?