বসন্ত ষড়ঋতুর সর্বশেষ ঋতু। বসন্ত কে ঋতুর রাজা বলা হয়। ফাল্গুন এবং চৈত্র মাস মিলে হয় বসন্ত ঋতু। বসন্ত ঋতুর আগমন ঘটে শীত চলে যাবার পর এবং গ্রীষ্ম আসার আগে।
কয়েক মাস ঠান্ডা আবহাওয়া এবং অনুর্বর ল্যান্ডস্কেপের পরে, বসন্ত নতুন বৃদ্ধি এবং জীবন নিয়ে আসে। গাছে মুকুল আসতে শুরু করে, ফুল ফোটে এবং প্রাণীরা হাইবারনেশন থেকে জেগে ওঠে। এই পুনর্নবীকরণ একটি ভাল ভবিষ্যত এবং একটি নতুন শুরুর জন্য আশার প্রতীক। বসন্ত জন্ম এবং পুনর্জন্মের সাথেও জড়িত।
শহর থেসে কিছু দূরে নিরিবিলি পরিবেশে এক জনবহুল গ্রাম। বেপক ফসলের মাঠ, বড় নদীর পাশাপাশি ছোট ছোট খাল বিল ভরা। প্রতিটি বাড়ির পিছনে নিজেশ্য একটা করে পুকুর। হাস মুরগী ছাগল গুরু কবুতর সহ বিভিন্ন পশুপাখি গ্রামের প্রায় বাড়িতে লালনপালন করে। শাকসবজি থেকে শুরু বিভিন্ন রকমের ফসল উৎপাদন করে। গ্রাম হলেও প্রতিটি বাড়ি প্রায় ইট-পাথরে গড়া।
অনেক বাড়ি মাটির দালান অথবা কুরে ঘর। কোন বাড়ি টিনে ঘেরা অথবা বাশের বাতি দিয়ে তৈরি।
এই গ্রামে মাদ্রাসা মক্তব স্কুল বিশ্ববিদ্যালয় সাথে বড় নামকরা কলেজ ও আছে। যে কলেজ থেকে ভালো ভালো রেজাল্ট নিয়ে বেরিয়ে বড় বড় কম্পানিতে চাকরি করছে। কলেজের পুরো জায়গা জমিদার রোস্তম আলী দান করেছেন। গ্রামে বড় মসজিদ, ঈদ গাহ মাঠ, ও একটা মক্তব করে দিয়েছেন। গ্রামের মানুষের সুযোগ সুবিধার জন্য দুটো এনজিও খুলেছেন। তাদের মাধ্যমে সবার খোঁজ খবর রাখা যায়।
এই গ্রামে প্রতিটি মানুষের অধিকার সমান। কোন সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হলে বড় বড় মাথা গুলো বসে যে সিদ্ধান্ত নিবে সেটা সকলে এক বাক্যে মেনে নিবে। গ্রামটির নাম §§§§ শান্তি নগর §§§
শান্তি নগরের জমিদার রোস্তম আলীর তিন ছেলে। বড় ছেলে শফিক সাহেব এক ছেলে শাহরিয়ার মাসরুর ও স্ত্রী নিয়ে শহরে থাকেন। শাহরিয়ার মাসরুর দেশের বাহির থেকে ডিগ্রি নিয়ে কিছু দিন হলো দেশে আসছে।
মেজ ছেলে শরিফ সাহেব, ফুল ফ্যামেলি নিয়ে গ্রামে থাকেন। সেজ ছেলে শহিদ সাহেব স্ত্রী ও দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে দেশের বাহিরে থাকেন।
বসন্ত ষড়ঋতুর সদ্য কোচি ধানের জমির আল দিয়ে সপ্তদশী এক কিশোরী গায়ে মাথায় ওড়না পেঁচিয়ে ধীর পায়ে বাড়ির দিকে আসছে। কিশোরির হাতে একটা ঢাকনা দেওয়া বাটি । মেয়েটির ওড়নার কোনা ধরে চার বছরের ছোট্ট মেয়ে নুড়ি তার অস্পষ্ট বুলিতে গল্প করছে। সে গল্প শুনে সপ্তদশী খিলখিলিয়ে হাসতে। হাসতে সময় দুই পাটি মুক্তর ন্যায় ঝকঝকে ছোটো ছোটো দাত বেড়িয়ে হাসির সুন্দর্য বাড়িয়ে দিচ্ছে। কাজল কালো টানা টানা ডাগর ডাগর হরিনী দু'টো চোখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। গোলাপি ফর্সা স্নিগ্ধ মুখশ্রীর টোবা টোবা গাল দুটোতে গভির টোল পরছে। অতি ভদ্র নম্র সভ্য লাজুক মেয়েটি পুরো গ্রামের প্রাণ। বড় বোন রাবেয়ার জান, বড় ভাই আরাবের টুনটুনি পাখি। দাদুর বুড়ি, বাবার আম্মা জান। মায়ের আদর্শ মেয়ে। দাদীর অতী আদরের সতিন ছিলো। বছর কয়েক আগে ভদ্র মহিলা গত হয়েছেন।
হঠাৎ পিছন থেকে একজন ডেকে উঠলো।
-- রুহাবা কোথায় গিয়েছিলে?
রুহাবা ঘার ঘুরিয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে,
-- রুহান ভাইয়া! তোমাদের বাড়ি থেকে আসলাম। এই দেখ মামী কতো গুলো মধু দিয়েছে।
রুহান বড় বড় পা ফেলে রুহাবার কাছে আসলো। বাটির ঢাকনা খুলে উঁকি দিয়ে দেখে বলে,
-- চাক কখন কাটলো আমি তো জানি না।
-- তুমি সারা দিন বাহিরে আড্ডা দিলে কি ভাবে জানবে?
রুহান হেঁসে বলে,
-- ভিতরে থাকার লোক যখন পার্মানেন্ট যাবে তখন একপা বাহিরে দিবো না।
সপ্তদশী কিশোরী কথার মানে না বুঝলেও হাসলো। রুহান দ্রুত রুহাবার সামনে থেকে প্রস্থান করলো।
রুহান দের বাড়ি জমিদার রোস্তম আলীর বাড়ির পিছনে হওয়ায় বাকা পথে আসতে হয়।
রুহাবা বাড়ির পাশ দিয়ে সামনে আসলো। মেয়েটি প্রকৃতির পাগল। গাছ গাছালি, কবুতর, রাজ হাঁস সাথে কিছু কয়েক জাতের মুরগী পালন করে। কিছু দিন আগে বাবা শরিফ সাহেব সুন্দর ভাবে একটা বাগান করে দিয়েছেন। বেলা করে দিনে দুই বার সে বাগানের যত্ন নিতে ভুলে না রুহাবা।
নুড়ির সাথে কথা বলতে বলতে বাগানে পা দিয়ে সামনে তাকিয়ে থমকে গেলো। একটি অপরিচিত শহুরে মুখ দেখে। ছেলেটি বাম হাত পকেটে ঢুকিয়ে ডান হাত দিয়ে আদো ফোঁটা গোলাপ ফুলের উপর আঙ্গুল বুলিয়ে দিচ্ছে। রুহাবা এক পলক তাকিয়ে পুরো যুবককে পর্যবেক্ষণ করলো।
মাথার ঘোন লম্বা হাল্কা ভিজা চুল কপালের অর্ধেক ঢেকে রাখা। গভীর কালো মনী যুক্ত দুটো চোখ। সরু নাকের নিচে পাতলা দুটো ঠোঁট। মুখে চাপ দাড়ি ছাঁটা। সুবলিষ্ঠ কঠোর শক্ত দেহদা টাইট ফিটিং টিশার্টে ঢেকে আছে। শক্ত উঁচু বক্ষ টিশার্ট ফেটে যেন বেরিয়ে আসছে। সঙ্গে ফর্মাল কালো ফুলপ্যান্ট। হাতের কনুই এর উপর টিশার্টের অংশ টুকু সুন্দর ভাবে গুছানো। বাম হাতের কব্জিতে রোলেক্স সাবমেরিনার ঘড়ি রোদের কিরন পরে ঝলমলে জ্বলছে। গায়ের রং না চাপা না উজ্জ্বল। ছেলেটির গরন অনুযায়ী খাপে খাপ। পায়ে বাদমি কালার স্নিকার্স পরা। এক কথায় একটি মেয়েকে এক দেখায় ঘায়েল করতে সক্ষম।
রুহাবা সামনে পা বাড়াতেই এক বাইক শোহ করে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় রুহাবার মাথায় হাতের তালু দিয়ে চাপ দিলো। আচমকা এমন ঘটনায় হাতের বাটি পরে যেতে ধরলে সামনের যুবকটি চোখের পলকে এসে বাটির কোনা ধরে ফেললো।
হঠাৎ এক অপরিচিত যুবক এতো কাছে আসায় রুহাবা ভরকে গেলো। পুরুষালী তীব্র সদ্য শাওয়ার নেওয়া মিষ্টি ঘ্রাণ রুহাবার নাসারন্ধ্র প্রবেশ করে ছোট্ট শরীরটা ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো। লেছেটার শক্ত থাবার ন্যায় হাতের তালুর নিচে রুহাবার ছোট্ট তুলতুলে হাত পিষ্ঠ হচ্ছে। রুহাবা ঠুকঠুক করে কাঁপছে। রুহাবা ধীরে রিনঝিন কন্ঠে বলে,
-- ছারুন!
ছারুন শুনে ছেলেটি রুহাবার চোখের দিকে তাকালে রুহাবা ইশারায় দেখিয়ে দিলো। ছেলেটি হাতের নিচে তুলতুলে নরম হাত আলতো চাপ দিয়ে সাথে সাথে ছেরে দিয়ে দুই কদম পিছিয়ে গেলো।
রুহাবা ছাড়া পেয়ে দ্রুত পা ফেলে জমিদার বাড়ির ভিতরে চলে গেলো।
আরাব বাইক রেখে ছুটে এসে ছেলেটিকে জড়িয়ে ধরলো।
-- ভাইয়া! কখন আসলে? বড় আম্মা কেমন আছে?
মাসরুর গম্ভীর থমথমে গলায় বলে
-- ভালো। কোথায় ছিলি এতোক্ষণ?
আরাব মাসরুর কে বরাবর খুব সন্মান করে। জমিদার বংশের বড় ছেলে বলে সবার আদরের। সভাব খুব রাগি, বদ মেজাজি গম্ভীর। অন্যায় দেখলে আপন মাকেও এক চুল ছেড়ে কথা বলে না। সব কিছুর মাঝে উর্তি বয়সি ছেলেরা এক নিমিষেই মিশে যায়।
-- বাজারে দোকান গুলোর ভারা তুলতে গিয়ে ছিলাম ভাইয়া।
-- তার জন্য তো কর্মচারী আছে?
-- একটু ঝামেলা হয়ে ছিলো।
-- চাচু কোথায়?
-- কলেজের কাজে ঢাকা গেছে।
কথা বলতে বলতে দুই ভাই ভিতরে ঢুকলো।
________
জমিদার বাড়ি দোতলা করে চার পাশে ঘর। জমিদার রোস্তম তিন ছেলের জন্য উপর নিচ তিনটি প্লট করেছেন। ছেলেরা বউ সহ নিচে থাকে । নাতী নাতনী রা উপরে। রুহাবা চিলেকোঠার রুমে থাকে। যদিও দোতলায় সবার মতো তারও একটা রুম আছে। পুরো জমিদার বাড়ির ছাদ তার দখলে।
রুহাবা হাতের বাটি নিয়ে রান্না ঘরে ঢুকলো।
-- আম্মা আপনার মধু নিন।
আবিরা বেগম রুহাবার হাতে এক কাপ চা দিমে বলেন
-- ছোট মা! তোমার দাদুকে চা'র কাপটা দিয়ে আসো তো।
রুহাবা বিনা বাক্যে মায়ের হাত থেকে চার কাপ নিয়ে রোস্তম আলীর রুমে ঢুকলো।
-- দাদু! আপনার চা।
রোস্তম আলী আলমারি খুলে কিছু করছিলেন। রুহাবার আওয়াজ পেয়ে আলমারি বন্ধ করে আসতে আসতে বলেন,
-- বুড়িবু! তুমি আসছো?
হাত থেকে চা নিয়ে তার রাজকিয় কাঠের চেয়ারে বসলেন। রুহাবা চেয়ারের হাতলের উপর দাদুর গা ঘেঁষে বসলো।
-- দাদু! মামী সদ্য চাক থেকে নিংড়ে অনেক খানি মধু দিয়েছে শরবত খাবেন?
রোস্তম আলী নাতনীর মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে বলেন।
-- চার গ্লাস নিয়ে আসো।
এর মধ্যে মাসরুর রোস্তম আলীর রুমে ঢুকলো। রুহাবাকে বিড়াল ছানার মতো বসে থাকতে দেখে এক মূহুর্ত দাড়ি আবার হেটে দাদুর পাশে বসলো। ফারদিন কে ঢুকতে দেখে রুহাবা উঠে মাথা নিচু করে দাঁড়ালো।
রোস্তম আলী রুহাবার হাত ধরে দাড় করিয়ে বলে,
-- বুড়ি এই ছেলেকে চিনো?
রুহাবা মাথা দিয়ে না করলো। রোস্তম আলী মুচকি হেসে বলেন
-- তোমার বড় আব্বুর ছেলে শাহরিয়ার মাসরুর। তোমার বড় ভাইয়া।
রুহাবা ঠোট গোল করে ওহ্ বললো। চোখ তুলে মাসরুরের দিকে তাকালে চোখে চোখ পরে যায়। মাসরুর রুহাবার স্নিগ্ধ মুখশ্রীতেই তাকিয়ে ছিলো। চোখে চোখ পারায় রুহাবা দ্রুত চোখ সরিয়ে নিলো। মারুরের দৃষ্টি যেন ছোট্ট রুহাবার প্রাণ পাখি জ্বলসে দিবে। ভয়ঙ্কর দৃষ্টি ছোট্ট হৃদপিন্ড এক মূহুর্তের জন্য থমকে দিলো।
রোস্তম আলী মাসরুরের দিকে তাকিয়ে বলে,
-- দাদু ভাই! তোমার রুহাবার কথা মনে আছে?
মাসরুর রুহাবার দিকে তাকিয়ে বলে
-- ওকি ভুলে যাওয়ার কেউ? আমার সব মনে আছে।
মাসরুরের কথায় কেমন যেন রহস্যময় লাগলো।
-- যখন তুমি চলে যাও তখন তো ওর বয়স মাত্র চার কি পাচ ছিলো। তাই ভাবলাম মনে আছে না কি ভুলে গেছো।
দুই দাদা নাতির গল্প থেকে বেড়িয়ে গেলো শরবত আনতে।
রুহাবা শরবত করে রোস্তম আলীর কামরায় দিয়ে চলে গেলো। সোজা চিলেকোঠার রুমে এসে ফ্রেশ হলো। জামা কাপড় ধুয়ে ছাদের একপাশে মেলে দিলো। ওড়না দিয়ে গলা পেঁচিয়ে দুই মাথা সামনে ছেরে দিলো। মাথার ভেজা লম্বা চুল পিঠের উপর ছরিয়ে দিলো। কবুতরের খাবার নিয়ে ছাদের ফাঁকা পাশে ছড়িয়ে দিলে এক ঝাঁক কবুতর নিচে নেমে আসলো। লেজ নাড়িয়ে ঘুরছে আর বাকুম বাকুম করে আদার খাচ্ছে।
রুহাবা মুগ্ধ হয়ে নিষ্পাপ অবুঝ প্রাণী গুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। রুহাবা এক মুষ্টি আদার নিয়ে নিচে বসে হাত বাড়িয়ে ধরলো। দশ বারোটা কবুতর কুম কুম করতে করতে রুহাবার হাত ঝেকে ধরলো। চিকন ধারালো ঠোঁটের গুতায় সিরসির করছে হাতের তালু। মেয়েটির মুখে নিষ্পাপ হাসির ঝিলিক লেগে আছে।
________
বিকালে রুহাবা ছাদের গাছে পানি দিচ্ছে। এমন সময় আরাব আসলো পিঠার থালা নিয়ে।
-- টুনটুনি পাখি! পিঠা খেলে এখানে আয়।
রুহাবা পানির পাইপ রেখে ভাইয়ের কাছে এসে বসলো।
-- ভাইয়া! লোকটা ওমন গোমরাহ মুখো কেন? দেখলে কেমন ভয় লাগে।
-- লোকটা কি? বড় ভাই ফাজিল মেয়ে। ভাইয়া যেমনই হোক তার মন অনেক ভালো।
-- ওহ্।
-- ভাইয়া কিন্তু তোদের ক্লাস নিবে সাবধানে পড়াশোনা করিস। একটু ত্রুটি হলে শাস্তি গুনে গুনে দিবে।
-- আর ভয় দেখিয়েও না। এমনিতেই মনে হচ্ছে তার চোখ দুটো আমাকে জ্বালিয়ে দিচ্ছে। ও বাবা কেমন যেন ভয়ঙ্কর তার চাহুনী।
আরাব রুহাবার মাথার গাট্টা মারলো।
-- তুই এতো ভিতু হলি কেন? আমাদের জমিদার বংশের কেউ তো এতো ভিতু ছিলো না।
রুহাবা চুপচাপ পিঠা খাচ্ছে। সত্যি তো সে এতো ভিতু কেন হলো? তার আপি কতো সাহসী। কোন ছেলে আপির দিকে চোখ তুলে দেখলে লাঠি দিয়ে গুতো মারতে যায় আর সে ভয়ে গুটিয়ে থাকে।
দুই ভাই বোন ক্ষনিকের মাঝে পিঠার প্লেট ফাঁকা করে ফেললো। আবিরা বেগম সবসময় বাসায় একেকটা পিঠার রেসিপি করেন। তার তিন ছেলে মেয়ে ভাতের থেকে বেশি পিঠা পছন্দ করে। রুহাবা তো পিঠা পেলে দুনিয়া ভুলে যায়।
-- টুনটুনি! প্লেট নিচে রেখে এক কাপ কফি নিয়ে আয়।
রুহাবা প্লেট নিয়ে নিচে আসলো। মনের সুখে গুনগুন করছে আর কফি করছে। হঠাৎ চুলে টান লাগায় ঘার ঘুরিয়ে দেখে ছোট্ট বিড়াল ছানা জামা বেয়ে উঠে চুলের সাথে ঝুলে আছে। রুহাবা বিড়াল ছানার দুষ্টুমি দেখে ঈষৎ হাসলো। নিজের জন্য এক কাপ আগে বানিয়ে ফটাফট দুই চুমুক মেরে দিলো।
দুটো কফির কাপ নিয়ে কিচেন থেকে বের হয়ে দেখে সিড়ির উপর মাসরুর দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে। রুহাবা দ্রুত কিচেনে ঢুকে মাথার কাপড় ঠিক করে আবার বেরিয়ে আসলো। মাসরুর ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে দেখে রুহাবা সাবধান কয়েক সিড়ি উপরে উঠে। মাসরুর কে পাশ কাটতে গেলে ডান হাতের কাপটা মাসরুর ছো মেরে নিয়ে নিলো। রুহাবা গোল গোল চোখে মাসরুর এর দিকে তাকালো। মাসরুর কাপ নিয়ে ততক্ষণে এক চুমুক দিয়েছে। রুহাবা মিনমিন করে বলে
-- ওটা এঁটো ছিলো।
-- তো?
রুহাবা অবাক নয়ন কুঁচকে গেলো। মাসরুর এর গা ছাড়া কথা শুনে। কিছু বলার জন্য হা করতে গেলে মাসরুর গম্ভীর কন্ঠে বলে,
-- গোওওও!
এই একটা শব্দ এমন ভাবে উচ্চারণ করলো মাসরুর , রুহাবার রুহ আত্মা কেঁপে উঠলো। কফির কাপের ডান্ডা চেপে ধরে এক সিঁড়ি পর পর পা ফেলে ছুটে পালিয়ে গেলো। পিছন ফিরে এক বার তাকানোর মতো ভুল করলো না। এই লোকের ছায়া টাও যেন ছোট্ট রুহাবার ভয়ের কারণ হয়ে গেলো।
রুহাবা হাঁফাতে হাঁফাতে আরাবের সামনে দাঁড়ালো। আরাবের হাতে কাপ দিয়ে ঠাস করে ফ্লোরে বসে চোখ বন্ধ করলো। রুহাবা ঘেমে ললাটের চিব দিয়ে গড়িয়ে পরছে। ছোট্ট বোনটির এমন বেহাল অবস্থা দেখে আরাব হতাশ হয়ে জিজ্ঞেস করলো।
-- টুনটুনি! কি হলো এমন করছিস কেন?
রুহাবা শুকনো ঢুক গিলে বলে,
-- ওই ড্রাগন সামনে পরেছিল ভাইয়া। কি তার ভয়ঙ্কর গর্জন। বলে গোওওও!!! ভাইয়া আমার আত্মা কেঁপে বেইমানি করেছে।
রুহাবার হাঁসফাস কথা শুনে আরাব দম ফাটানো হাসি দিলো। হাসতে হাসতে পেট চেপে ধরে বলে,
-- তুই এতো ঢং শিখলি কোথায়? ভাইয়া যদি শুনে তুই ড্রাগন বলেছিস তাহলে কি হবে জানিস?
-- তুমি বলে দিওনা ভাইয়া। তাহলে আমাকে খেয়ে ফেলবে।
-- বলবো না একটা শর্তে।
-- আজকে যে শর্ত দিবা তাই মেনে নিবো। তবুও বলে দিওনা।
-- মাথার চুল গুলো তোর চিকন চিকন আঙ্গুল দিয়ে টেনে দে তো টুনটুনি।
রুহাবা অন্য সময় হলে সোজা নাকোচ করে দিতো কিন্তু এখন কিছুতেই করবে না। যদি তার ভাইয়া বলে দেয়?
আরাব শান্তিতে চোখ বন্ধ করলো। তার পিচ্চি বোনের চুল টানা এতো মধুর লাগে বলার মতো না। রুহাবা সবসময় শরিফ সাহেবের মাথার চুল টেনে দেয়। শরিফ সাহেব ক্লান্ত হয়ে ফিরলে ছোট মেয়ের হাতের এক গ্লাস শরবত আর এই চুল টেনে নেওয়া একটুও ভুলেন না।
-- ভাইয়া!
-- হুমম।
-- এই ড্রাগন না মানে ভাইয়া টা এখানে কতো দিন থাকবে?
বোনের বোকার মতো প্রশ্ন শুনে আরাব মুচকি হাসলো।
-- এই বাড়ি যেমন তোর আমার সে রকম ভাইয়ার ও। তাই ভাইয়া এখানেই থাকবে।
আরাবের কথা শুনে ছোট্ট মনটা মলিন হয়ে গেলো। মনে মনে ফন্দি আটলো, যে ভাবেই হোক এই শহুরে বাবুকে গ্রাম ছাড়া করতে হবে। দরকার হলে রুহান ভাইয়ার সহজগিতা নিবে তবুও এই লোক কে জমিদার বাড়ি ছারতে হবে। ভয়ে ভয়ে সে কিছুতেই থাকবে না।