গোসল (كتاب الغسل)

بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
অধ্যায় - ৫ - গোসল (كتاب الغسل)
( হা

পরিচ্ছদঃ ১৭৪। গোসলের পূর্বে উযূ করা

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা আলার বাণী, যদি তোমরা অপবিত্র থাক তবে বিশেষভাবে পবিত্র হবে। তোমরা যদি পীড়িত হও বা সফরে থাক বা তোমাদের কেউ শৌচগার থেকে আসে অথবা তোমরা স্ত্রীর সাথে সংগত হও এবং পানি না পাও তবে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করবে এবং তা তোমাদের মুখে ও হাতে বুলাবে। আল্লাহ্ তোমাদের কষ্ট দিতে চান না; বরং তিনি তোমাদের পবিত্র করতে চান যাতে তোমরা শোকর আদায় কর। (৫:৬) এবং আল্লাহ্ র বাণীঃ হে মু মিনগণ! তোমরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় সালাতের ধারেও যেয়োনা, যতক্ষন না তোমরা যা বল তা বুঝতে পার, আর যদি তোমরা পথবাহী না হও তবে অপবিত্র অবস্থায়ও না, যতক্ষন না তোমরা গোসল কর। আর তোমরা যদি পীড়িত হও অথবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ যদি শৌচাগার থেকে আসে অথবা স্ত্রীসংগম করে, আর পানি না পায়, তাহলে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম কর, এবং তা মুখ ও হাতে বুলাবে। আল্লাহ্ পাপ মোচনকারী ও ক্ষমাশীল। (৪:৪৩)

২৪৬। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ)......... ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জানবাতের গোসল করতেন, তখন প্রথমে তাঁর হাত দু টো ধুয়ে নিতেন। তারপর সালাত (নামায/নামাজ)-এর উযূ (ওজু/অজু/অযু)র মত উযূ (ওজু/অজু/অযু) করতেন। তারপর তাঁর আঙ্গুলগুলো পানিতে ডুবিয়ে নিয়ে চুলের গোড়া খিলাল করতেন। তারপর তাঁর উভয় হাতের তিন আঁজলা পানি মাথায় ঢালতেন। তারপর তাঁর সারা দেহের উপর পানি পৌঁছিয়ে দিতেন।

২৪৭। মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ)......... মায়মুনা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ)-এর উযূ (ওজু/অজু/অযু)র ন্যায় উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন, অবশ্য পা দুটো ছাড়া এবং তাঁর লজ্জাস্থান ও যে যে স্থানে নাপাক লেগেছে তা ধুয়ে নিলেন। তারপর নিজের উপর পানি ঢেলে দেন। তারপর সেখান থেকে সরে গিয়ে পা দুটো ধুয়ে নেন। এই ছিল তাঁর জানবাতের গোসল।

 

পরিচ্ছদঃ ১৭৫। স্বামী-স্ত্রীর একসাথে গোসল

২৪৮। আদম ইবনু আবূ ইয়াস (রহঃ)... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই পাত্রে (কাদাহ) থেকে (পানি নিয়ে) গোসল করতাম। সেই পাত্রকে ফারাক বলা হতো।

 

পরিচ্ছদঃ ১৭৬। এক সা বা অনুরূপ পাত্রের পানিতে গোসল

২৪৯। আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ)...... আবূ সালামা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি ও ‘আয়িশা (রাঃ)-এর ভাই ‘আয়িশা (রাঃ)-এর নিকট গেলাম। তাঁর ভাই তাঁকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গোসল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি প্রায় এক সা (তিন কেজির চেয়ে কিছু পরিমাণ বেশি)-এর সমপরিমান এক পাত্র আনালেন। তারপর তিনি গোসল করলেন এবং নিজের মাথার উপর পানি ঢাললেন। তখন আমাদের ও তাঁর মাঝে পর্দা ছিল।

আবূ ‘আবদুল্লাহ [ইমাম বুখারী (রহঃ)] বলেন যে, ইয়াযীদ ইবনু হারূন (রহঃ), বাহয ও জুদ্দী (রহঃ) শু বা (রহঃ) থেকে نَحْوًا مِنْ صَاعٍ এর পরিবর্তে قَدْرِ صَاعٍ (এক সা পরিমাণ)-এর কথা বর্ণনা করেন।

২৫০। আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ)...... আবূ জা ফর (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি ও তাঁর পিতা জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর কাছে ছিলেন। সেখানে আরো কিছু লোক ছিলেন। তাঁরা তাঁকে গোসল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেন, এক সা তোমার জন্য যথেষ্ট। তখন এক ব্যাক্তি বলে উঠলঃ আমার জন্য তা যথেষ্ট নয়। জাবির (রাঃ) বললেনঃ যাঁর মাথায় তোমার চাইতে বেশি চুল ছিল এবং তোমার চাইতে যিনি উত্তম ছিলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জন্য তো এ পরিমাণই যথেষ্ট ছিল। তারপর তিনি এক কাপড়ে আমাদের ইমামতি করেন।

২৫১। আবূ নু আয়ম (রহঃ)...... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও মায়মূনা (রাঃ) একই পাত্রের পানি দ্বারা গোসল করতেন।

আবূ আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, ইবনু ‘উয়ায়না (রহঃ) তাঁর শেষ জীবনে ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর মাধ্যমে মায়মূনা (রাঃ) থেকে ইহা বর্ণনা করতেন। তবে আবূ নু আয়ম (রাঃ)-এর বর্ণনাই ঠিক।

 

পরিচ্ছদঃ ১৭৭। মাথায় তিনবার পানি ঢালা

২৫২। আবূ নু আয়ম (রহঃ)...... জুবায়র ইবনু মুত ইম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি মাথায় তিনবার পানি ঢেলে থাকি। এই বলে তিনি উভয় হাতের দ্বারা ইশারা করেন।

২৫৩। মুহাম্মদ ইবনু বাশ্শার (রহঃ)...... জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের মাথায় তিনবার পানি ঢালতেন।

২৫৪। আবূ নু আয়ম (রহঃ)...... আবূ জা ফর (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমাকে জাবির (রাঃ) বলেছেন, আমার কাছে তোমার চাচাত ভাই অর্থাৎ হাসান ইবনু মুহাম্মদ ইবনু হানাফিয়্যা এসেছিলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, জানবাতের গোসল কিভাবে করতে হয়? আমি বললাম, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন আঁজলা পানি নিতেন এবং নিজের মাথার উপর ঢেলে দিতেন। তারপর নিজের সারা দেহে পানি পৌঁছিয়ে দিতেন। তখন হাসান আমাকে বললেন, আমার মাথার চুল খুব বেশি। আমি তাঁকে বললাম, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চুল তোমার চেয়ে অধিক ছিল।

পরিচ্ছদঃ ১৭৮। একবার পানি ঢেলে গোসল করা

২৫৫। মূসা ইবনু ইসমা‘ঈল (রহঃ)...... ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মায়মূনা (রাঃ) বলেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য গোসলের পানি রাখলাম। তিনি তাঁর হাত দু বার বা তিনবার ধুয়ে নিলেন। পরে তাঁর বাম হাতে পানি নিয়ে তাঁর লজ্জাস্থান ধুয়ে ফেললেন। তারপর মাটিতে হাত ঘষলেন। তারপর কুলি করলেন, নাকে পানি দিলেন আর তাঁর চেহারা ও দু হাত ধুয়ে নিলেন। এরপর তাঁর সারা দেহে পানি ঢাললেন। তারপর একটু সরে গিয়ে দু পা ধুয়ে নিলেন।

 

পরিচ্ছদঃ ১৭৯। গোসলে হিলাব* বা খুশবু ব্যবহার করা।

২৫৬। মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ)...... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জানবাতের গোসল করতেন, তখন হিলাবের অনুরূপ পাত্র চেয়ে নিতেন। তারপর এক আঁজলা পানি নিয়ে প্রথমে মাথার ডান পাশ এবং পরে বাম পাশ ধুয়ে ফেলতেন। দু হাতে মাথার মাঝখানে পানি ঢালতেন।

*হিলাবঃ উটনীর দুধ দোহনের পাত্র ।

 

পরিচ্ছদঃ ১৮০। জানাবাতের গোসলে কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়া

২৫৭। উমর ইবনু হাফস্ ইবনু গিয়াস (রহঃ)...... ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, মায়মূনা (রাঃ) বলেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য গোসলের পানি ঢেলে রাখলাম। তিনি তাঁর ডান হাত দিয়ে বাঁ হাতে পানি ঢাললেন এবং উভয় হাত ধুইলেন। এরপর তাঁর লজ্জাস্থান ধুয়ে নিলেন এবং মাটিতে তাঁর হাত ঘষে নিলেন। পরে তা ধুয়ে কুলি করলেন, নাকে পানি দিলেন, তারপর তাঁর চেহারা ধুইলেন এবং মাথার উপর পানি ঢাললেন। পরে ঐ স্থান থেকে সরে গিয়ে দুই পা ধুইলেন। অবশেষে তাঁকে একটি রুমাল দেওয়া হল, কিন্তু তিনি তা দিয়ে শরীর মুছলেন না।

 

পরিচ্ছদঃ ১৮১। পরিচ্ছন্নতার জন্য মাটিতে হাত ঘষা

২৫৮। আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর হুমায়দী (রহঃ)....... মায়মূনা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানবাতের গোসল করলেন। তিনি নিজের লজ্জাস্থান ধুয়ে ফেললেন। তারপর হাত ঘষলেন এবং তা ধুইলেন। তারপর সালাত (নামায/নামাজ)-এর উযূ (ওজু/অজু/অযু)র মত উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। গোসল শেষ করে তিনি তাঁর দু পা ধুইলেন।

 

পরিচ্ছদঃ ১৮২। যখন জানাবাত ছাড়া হাতে কোন নাপাকী না থাকে, ফরয গোসলের আগে হাত না ধুয়ে পানির পাত্রে তা প্রবেশ করানো যায় কি? ইব্ন ‘উমর (রা) ও বারা ইব্ন ‘আযিব (রা) হাত না ধুয়ে পানিতে হাত ঢুকিয়েছেন, তারপর উযূ করেছেন। ইব্ন ‘উমর (রা) ও ইব্ন ‘আব্বাস (রা) যে পানিতে ফরয গোসলের পানির ছিটা পড়েছে তা ব্যবহারে কোন দোষ মনে করতেন না।

২৫৯। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ)........ আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই পাত্রের পানি দিয়ে এভাবে গোসল করতাম যে, তাতে আমাদের দু জনের হাত একের পর এক পড়তে থাকত।

২৬০। মূসা দ্দাদ (রহঃ)...... ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানবাতের গোসল করার সময় প্রথমে হাত ধুয়ে নিতেন।

২৬১। আবূল ওয়ালীদ (রহঃ)...... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই পাত্রের পানি দিয়ে জানবাতের গোসল করতাম।

‘আবদুর রহমান ইবনু কাসিম (রহঃ) তাঁর পিতার সূত্রে ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন।

২৬২। আবূল ওয়ালীদ (রহঃ)........ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার স্ত্রীদের কেউ কেউ একই পাত্রের পানি নিয়ে গোসল করতেন। মুসলিম (রহঃ) এবং ওয়াহ্ব ইবনু জারীর (রহঃ) শু বা (রাঃ) থেকে ‘তা ফরয গোসল ছিল বলে বর্ণনা করেছেন।


Akhi Akter Mim

313 Blog posts

Comments