Valobashar proktakkan

Valobashar proktakkhan Sob valobashar joy hoy na kisu valo valobashar porajoy o hoy.

সেদিনের পর অতিবাহিত হয়েছে প্রায় আটমাসের মত। হাসি আনন্দে কেটেছে। প্রথম দিকে সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল ইয়ানাত আপুর সাথে। আমাদের বাড়ি কিংবা তার বাড়ি, কেউ তার সাথে কথা অব্দি বলেনি। প্রায়ই ফোন করতেন আমায়। আমি মেনে নিলেও রৌধিকে মেনে নেয়নি। ফোন দিতেন না আমায়, যাতে ইয়ানাত আপুর সাথে যোগাযোগ করতে পারি।

সেদিন ইয়ানাত আপু নিজের অগোচরেই তার বোনের জীবনটার ইতি টেনে দিচ্ছেল। পরে যখন জানতে পারেন, তখন দিশেহারা হয়ে গেছিলেন। যখন পাঁচ মাসে পরেছে আমার, তখন সবার কাছে বায়না ধরি, যাতে ইয়ানাত আপুকে ক্ষমা করে দেয়। অবশেষে রাজিও হয়েছে। 

 

এখন দশমাস চলেছে। মেঘলা আকাশ। বাইরে পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ শোনা যাচ্ছে। আমি বেডের নিচে শুয়ে গন্ধ শুঁকে চলেছে। ইদানীং বি'শ্রী বি'শ্রী গন্ধগুলো খুব ভালো লাগে। এর ধরুন, শাক-সবজিতে পচন ধরলে সেই গন্ধ, আঁশটে গন্ধ, ঘামের দুর্গন্ধ। দুর্গন্ধযুক্ত সবকিছুই ভালো লাগে। যেগুলো পছন্দের সেগুলো অপছন্দময়। 

 

পায়ের শব্দ শ্রবণ হচ্ছে। নিশ্চিয়ই রৌধিক ফিরেছেন।মাঝরাতে তুলে বাইরে পাঠিয়েছি চকলেট কেক আনতে। আমার আবদার রাখতেই সে সর্বদা সচেষ্ট। আমি দ্রুত বেডের নিচ থেকে বেরুনোর প্রয়াস করলাম। আমাকে এই অবস্থায় দেখলে আবার ধমকাবেন। কিন্তু ভাগ্য আমার সহায় নয়। আমার ভারী পেট নিয়ে বের হওয়ার আগে রৌধিক কেক নিয়ে হাজির। সৌজন্য হাসির রেখা টানলাম। রৌধিক ঘেমে একাকার। দম না নিয়েই বললেন,

 

"তুমি আবার নিচে ঢুকেছ। দরজা আটকে না গেলে ময়লার গন্ধ শুঁকে শুঁকে নিচে চলে যেতে।"

 

"হি! হি! হি! একটু বের করবেন।"

 

"না। ওভাবেই থাকো। কথা শুনো না, এবার ওভাবেই থাকো।" রৌধিকের একরোখা জবাব।

 

"ওকে! কষ্ট হলে আপনার বেবীর হবে, আমার না।"

 

রৌধিক বিরক্ত নিয়ে আমায় টেনে তুললেন। কেকের প্যাকেটটা হাতে দিয়ে খেতে বললেন। ঘামার্ত শার্টটা খুলে রাখলেন। অমনি গন্ধটা নাকের কড়া নাড়ল। ধরতে গেলেই রৌধিক ধরে ফেললেন। দ্রুত ওয়াশরুমে চলে গেলেন। আমি দীর্ঘশ্বাস নিলাম। লোকটা এমন কেন? আমি কী টাকা চাইছি। ভেংচি কেটে চকলেট কেক মুখে দিলাম। পেটে হাত রেখে আলফাকে বলেছি,

 

"ভালো লাগছে কেক আলফা। হেব্বি টেস্ট না। আরো খেতে চাও। তাহলে বাবাইকে বলব।"

 

"হ্যাঁ। বাবাইকে বলো। আমি তো এলাকার বাপ, এতরাতে চাইলেই দোকান খুলে রাখবে।

অনেক কষ্টে এই প্যাকেটটা এনেছি। একটাই কেক ছিল এবং একটাই দোকান খুলা ছিল।"

 

"আশ্চর্য তো! তুমি এলাকার বাপ হতে যাবে কেন? তুমি তো আলফার বাপ। সো আলফার জন্য করতেই পারো।"

 

গভীরতর ভাবনায় লিপ্ত হলেন। অতঃপর বললেন, "ঠিক আছে। আলফার নিকনাম রাখব, এলাকা। সবাই দেখে বলবে, এলাকার বাপ আইছে।? তারপরে দোকান খুলে দিবে। কী বলো?"

 

"তাহলে আমাকে কেন বিয়ে করেছেন? পৃথিবীকে বিয়ে করতেন। সবাই বলত, পৃথিবীর জামাই আইছে।

হা! হা! হা! তাইলে এই জীবনে বউ জুটত না।"?

 

রৌধিক নিশ্চুপ। সে জানে, আমার সাথে পারবে না। তাই চুপচাপ শুয়ে পড়লেন। খাওয়া শেষ হলে আমাকে শুতে বললেন। আমি খেতে লাগলাম। পেটে চিনচিন ব্যথা অনুভব। কেক খাওয়ার এমনটা হচ্ছে ধরে নিলাম। ধীরে ধীরে ব্যথাটা প্রবল মাত্রায় পৌঁছেছে। শ্বাস আঁটকে আসছে ক্রমশ। হাত ফস্কে পড়ে গেল কেকের প্যাকেট। হাত জোড়া আঁটকে ধরল বেডশিটে। গাল গড়িয়ে পড়ছে অশ্রুধারা। আমি শব্দহীন স্বরে বলছি, 

 

"শু-ন-ছে-ন?"

 

রৌধিকের সাড়া নেই। আমার কথা আদৌও তার কর্ণপথে পৌঁছেছে কি-না জানা নেই। ব্যথায় কাতর হয়ে একপর্যায়ে রৌধিকের উপর পড়ি। ধরফরিয়ে উঠে বসলেন রৌধিক। আমার দিকে তাকিয়ে সন্দিহান চোখে অবলোকন করে গলায় বললেন,

 

"ওয়াট হ্যাপেণ্ড জোনাকি? কী হয়েছে? এমন করছ কেন? আরও কেক চাই, এখন দোকান বন্ধ কালকে এনে দিবো।"

 

"ব্য-থা ক-র-ছে।"

 

শব্দগুলো থেমে গেল। ব্যথা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কাঁতরাতে কাঁতরাতে এক পর্যায়ে জ্ঞান হারালাম। যখন জ্ঞান ফিরল তখন আমি হসপিটালের বেডে। সবার মুখে হাসি। রৌধিক নেই। কোথায় গেলেন তিনি। আদ্রুপু আর ইয়ানাত আপুর কোলে একটা শুভ্র টাওয়াল। নিঃসন্দেহে সেটা আমাদের প্রিন্সেস। আচ্ছা প্রিন্সেস হয়েছে না-কি প্রিন্স। এরজন্য রৌধিক রাগ করে নেই তো! গলা খাঁকারি দিয়ে বলি, " আপু উনি কোথায়?"

 

"উ.. নি..! তোর উনি যদি রৌদু হয়ে থাকে। তবে সে এলাকার লোকদের মিষ্টি খাওয়াতে গেছে।" বিদ্রুপ করে আদ্রিতা আপু।

 

"দুদিন পর কিন্তু ভাইও আমাদের মিষ্টি খাওয়াবে।"

 

লজ্জামিশ্রিত হলেন আদ্রুপু। তিনমাস চলছে তার প্রেগন্যান্সির। পরপর দুই সন্তান আসাতে খুশি সর্বদা উচ্চে পড়ছে। ইতোমধ্যে রৌধিক উপস্থিত হলেন। আমি ভ্রু কুচকালাম। বিদ্রুপ করে বললাম,

 

"ঐযে, এলাকার বাপ আইছে।"

 

আমার কথা অনুসরণ করে সবাই দরজা দিকে তাকাতেই রৌধিককে দেখলেন। অতঃপর পুনরায় আমার দিকে তাকিয়ে সবাই উচ্চস্বরে বললেন, "এলাকার বাপ!"

 

"হ্যাঁ তো। উনি কাল রাতে বলেছে, আলফার নিকনাম রাখবে এলাকা। যাতে সবাই তাকে দেখলে বলে, এলাকার বাপ আইছে। তাই আমিই আগে শুরু করলাম।"

 

সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন। রৌধিক ইতস্তত বোধ করলেন। আলফাকে আমার পাশে রেখে বেরিয়ে গেলেন একে একে। রৌধিক এগিয়ে এলেন। আলফার ললাটে ওষ্ঠদ্বয় ছুঁয়ে দিলেন। আমার ললাটের ললাট ঠেকিয়ে বললেন,

 

"তুই অসুস্থ। নাহলে আমাকে বিদ্রুপ করার জন্য কড়া শাস্তি দিতাম।"

 

"আমাকে তুই করে কেন বলছেন?"

 

"কারণ তুই আমার বোন ছিলি একসময়।"

 

"তো। মেয়ে এখন বাবাইকে মামা বলে ডাকবে?"

 

"মামা কেন ডাকবে, বাবা ডাকবে। চাইলে মাম্মাকে ফুফু ডাকতে পারে।"

 

"মোটেও নয়। আচ্ছা সেটা নাহয় রোদসী আহম্মেদ আলফা ঠিক করবে। তুমি চুপচাপ শুয়ে থাকো।"

 

তিনটি বছর যেন হওয়ার সাথে অতিবাহিত হয়েছে। চোখের পলক ফেললেই চলে যাচ্ছে। এরজন্য হয়ত বলে, ভালো সময় অতিদ্রুত কেটে যায় এবং দাগ লাগা কালো সময় গুলো আমার থেকে বিদেয় নিতে গিয়েও চলে আসে। ইভু ভাইয়া আর আদ্রুপু শান্তিতে সংসার করছে। তাদেরও একটা মেয়ে হয়েছে। নাম তার ইদ্রিতা। আমি আমার প্রিন্সেস আর রৌধিককে নিয়ে দিব্যি আছি। তবে আলফা অসন্তুষ্ট এতে। তার আদর কমে গেছে বলে তার ধারণা। প্রচুর দুষ্টু সে। বাড়ি একদম মাথায় রাখে। সবার ধারণা, ছোট বেলার আমি। আচ্ছা, আমি এত দুষ্টু ছিলাম। মা সামলাতেন কীভাবে?

 ইদ্রিতার বয়স দুইয়ের বেশি। তবে ভালোও ভাসে। প্রতিদিন ঐবাড়িতে যেতে হয় ইদ্রিতার সাথে দেখা করার জন্য। আজকেও গিয়েছিল। গতকাল শপিং করেছে, সেগুলো দেখাতে যাবে। রৌধিক আলফাকে নিয়ে গেছিলেন‌ সবাইকে আনতে। কিছুদিন পর ঈদ উল ফিতর। আজ ২৩শে রমজান। সবাইকে ইফতারের দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল। 

 

রাত দশটা বাজে। রৌধিক তাদের এগিয়ে দিতে গেছেন। আলফা চকো চকো খাচ্ছে। এগুলো ইভু ভাইয়া দিয়েছে তাকে। আমি ঝাড়ু দিচ্ছি। হুট করে আলফা তার আধো আধো স্বরে বলে,

"চোল মাম্মা, তুমি তো চোল। তুমি আমাল দন্য চুলি কলে ছোত বাবু ভাই এনে দাওনা। আমি তারাদিন ওকে নিয়ে খেলব।"

 

ঝাড়ু রেখে মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছি। বাবা আর মেয়ে জ্বালায় একদন্ত শান্তি নেই, যখন একত্রে হয়। এখন বলছে চোর! সরল ভাষায় বলি,

 

"চোল কী হ্যাঁ। তোমার মাম্মা চোর। মাম্মা কখনো চোর হয়?"

 

"বাবাই বলেথে, তুমি চোল। রোজা লেখে চুপিচুপি তবকিছু খেয়ে ফেলো।"

 

"আজ আসুক তোর বাবাই, আমি চোর। দুই বাপ বেটিকে ধরে আচ্ছা করে পি'টা'নি দিবো। দেখব কে চোর।"

 

"তুমি আমাল বাবাইকে মালবে। আতুক বাবাই..

 

"কে কাকে মা'রবে শুনি।"

বলতে বলতে রৌধিক এলেন। আমি বাবা মেয়ের কাণ্ড দেখলাম। মেয়ে চকো চকো রেখে বাবার কোলে উঠে আমার নামে নালিশ করল। রৌধিক তাকে সান্ত্বনা দিল। রাত হয়েছে বলে ঘুম পাড়িয়ে দিল। লাইট বন্ধ করে শুতে শুতে বললেন,

 

"এভাবে খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন? ঘুমাবে না। সেহরির সময় উঠতে পারবে না কিন্তু।"

 

"আপনার কী হ্যাঁ। আপনার কী? মেয়েকে শেখাচ্ছেন, তার মা রোজা রাখে না। চুরি করে খায়? এসব বাইরে গিয়ে বললে, কী হবে।"

 

ততক্ষণে আঁধারে আবৃত হয়েছে ঘর। রৌধিকের মুখশ্রী দেখা গেল না। আমার হাত টেনে কোলের উপর বসালেন। কোমর জড়িয়ে কাঁধে মুখ গুঁজে দিলেন। চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে বললেন,

"সামান্য এই কারণে বাচ্চাদের মতো গাল ফুলিয়ে আছো তুমি? কয়টা বাচ্চা সামলাবো আমি। ছোটটাকে কথার জালে সামলানো যায়। কিন্তু বড়টাকে? সে কী কথায় ভুলে। তাকে তো আদর করে ভুলিয়ে দিয়ে হয়।

আলফা সারাদিন কিছু খায়নি। ওর মাম্মা বাবাই রোজা রেখেছে, সেও রাখবে। তাই কথায় ভুলিয়ে ওকে খাইয়েছি‌। আর এটা আমাদের সিক্রেট। কাউকে বলবে না।"

 

নিমিষেই রাগ মিশে গেল। এক চিলতে হাসি ফুটল মুখে। আমি মাথা রাখলাম রৌধিকের বুকে। এই মানুষটার বুকে মাথা রাখলে সবকিছু ভুলে যাই তৎক্ষণাৎ।

 

"বারোটা তো বেজে যাচ্ছে, তিনটায় সেহরিতে উঠতে হবে। ঘুমাবে না।"

 

"আরেকটু থাকি না।"

'অনুবদ্ধ আয়াসে তোকে নাহি চাই,

তবে পরিশিষ্ট তুমিহীনা হলে; না চলবেই না।'

                                      


Salma Akter

233 Blog posts

Comments