ছাত্রীর সাথে প্রেম

ভার্সিটি পড়ুয়া ছাত্র যদি স্যার হয়।তাহলো পড়াশোনার পাশাপাশি প্রেম করা তো হোক হয়ে দাড়ায়?

--আদ্র ভাইয়া বাসায় তো কেউ নেই। বাইরে বৃষ্টি পড়ছে। তুমি এই বৃষ্টির দিনেও আমায় পড়াতে চলে এলে?

 

আদ্র হাতের ছাতাটা টেবিলের এক পাশে রাখল।তারপর অনুর দিকে তাকিয়ে রাগী স্বরে বলল,

 

--বাসায় কেউ নেই বলে আমি কি তোকে পড়াতে আসতে পারি না অনু? তুই এটা কি করে বললি?

 

অনু কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে আদ্রকে বলল, 

 

--আমি তো এটা বলতে চাই নি আদ্র ভাইয়া। 

 

--তাহলে কি বলতে চাইলি? আর খালামনি কোথায়?

 

--আম্মু বাসায় নেই। আর আব্বু তো অফিসে। 

 

আদ্র রুমের দরজা লাগিয়ে দিল।অনু ভয় পেয়ে গেল। বাসায় কেউ নেই তাই অনুর আরও ভয় লাগছে। আদ্র অনুর দিকে ফিরে তাকিয়ে বলল,

 

--নিজের রুমে যা।তোকে আজকেও পড়তে হবে। 

 

অনু মন খারাপ করে বলল,

 

--আজকে না পড়লে হয় না আদ্র ভাইয়া?দেখো বাইরে কত বৃষ্টি। এই বৃষ্টির দিনে পড়তে মন চায় না।

 

আদ্র রেগে গিয়ে বলল,

 

--থাপ্পড় চিনিস? থাপড়ে তোর সব দাঁত ফেলে দিবো বেয়াদব মেয়ে। যা নিজের রুমে গিয়ে পড়তে বস।

 

অনুর কান্না পেয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কান্নাটা চেপে নিজের রুমে চলে গিয়ে পড়ার টেবিলে বসল। 

 

অনু ইন্টার প্রথম বর্ষে পড়ে। আর আদ্র অনার্স চতুর্থ বর্ষে পড়ে। আদ্র অনুর একমাত্র খালাতো ভাই। আদ্রের কোনো ভাইবোন নেই। অনুরও কোনো ভাইবোন নেই। অনুর মা আর আদ্রের মা আপন দুই বোন।অনু এবং আদ্রের বাসা যেহেতু কাছাকাছি তাই অনায়াসেই আদ্র অনুর বাসায় আসতে পারে। আদ্রের এই হুটহাট অনুর বাসায় চলে আসাটাও অনু মানতে পারে না। অনুর মা আদ্রকে কিছু বলেও না। উল্টো আদ্র বাসায় আসলে অনেক খুশি হয়। এখন অনুর মা অনুকে পড়ার দায়িত্বটাও আদ্রকে দিয়েছে। আদ্র প্রচুর রাগী হওয়াতে অনু আদ্রকে খুব ভয় পায়। তাই না পারে কিছু বলতে আর না পারে কিছু সইতে। অনু খুব নিরুপায়। 

 

অনু মন খারাপ করে একটা বই বের করল। ফিজিক্স বইটা বের করে পৃষ্ঠা এক পাতা দুই পাতা উল্টাতে লাগল। অনুর হঠাৎই মনে পড়ল তার আজকে কোনো পড়া হয় নি। আদ্র ভাইয়া যে আজ তাকে কঠিন শাস্তি দিবে তা অনু ভালো করেই জানে। অনুর বুকের ভিতর ভয়ে হাতুড়ি পেটাতে লাগল। আদ্র রুমে এসে অনুর পাশের চেয়ারে বসে বলল,

 

--আজকে তোর ফিজিক্সের দ্বিতীয় অধ্যায় পড়া ছিল। এখন তোকে আমি ম্যাথ করতে দিবো। ঝটপট করে ফেল। বেশি লেট হলে মাইর খাবি। 

 

অনু অপরাধীর স্বরে আদ্রকে ডাক দিল, 

 

--আদ্র ভাইয়া?

 

আদ্র ফিজিক্সের বইয়ের একটা অধ্যায় মনোযোগ দিয়ে দেখছিল। অনুর ডাকে অনুর দিকে শান্ত চাহনিতে বলল,

 

--হ্যা বল। কি হয়েছে?

 

--ইয়ে মানে... আমি মানে...

 

আদ্র রেগে গিয়ে বলল,

 

--কি ইয়ে মানে ইয়ে মানে করছিস? ঠিক করে উত্তর দে।

 

অনু কান্নাজড়িত কন্ঠে আদ্রকে বলল,

 

--ভাইয়া আমি আজকে পড়া শিখতে পারি নি। 

 

আদ্র কপালে হাত দিয়ে শান্ত স্বরে বলল,

 

--কি বললি? আরেকবার বল?

 

অনুর ভয়ে কাঁপা-কাঁপি অবস্থা হয়ে গেছে। আদ্র এতো শান্ত স্বরে কথা বলছে মানে আজকে বাইরের এই ঝড় বৃষ্টির সাথে অনুর কপালেও ঝড় বৃষ্টি আছে। অনু কিছু না বলে একদম চুপ করে হাত গুটিয়ে বসে রইল৷ আদ্র আবারও অনুকে জিজ্ঞেস করল, 

 

--কিরে অনু কথা বলছিস না কেন? বলতে বলেছি না?

 

শেষের কথাটা আদ্র এতো চিৎকার করে বলল যে অনু ভয়ে কেঁদে দিয়েই আবারও বলল, 

 

--আমি আজকে পড়া শিখতে পারি নি। 

 

--কেন শিখতে পারিস নি?

 

--কিছুই ভালো লাগছিল না। 

 

আদ্র এবার রাগী দৃষ্টিতে অনুর দিকে তাকিয়ে বলল,

 

-- মশকরা করা হচ্ছে? তুই বসা থেকে উঠ। 

 

অনু তাই করল। চেয়ারে বসা থেকে উঠে দাঁড়াল।আদ্র অনুর আলমারির দিকে ইঙ্গিত করে বলল,

 

--ঐদিকে গিয়ে দাঁড়িয়ে দুইশো বার কান ধরে ওঠবস করবি। কোনো চিটিংবাজি করবি না। আমি গুণে গুণে দেখবো তুই কতবার কান ধরে ওঠবস করলি। 

 

বাইরে জোরে বজ্রপাত হলো। আদ্রের কথা অনু অবাক হয়ে শুনছে। নিজের খালাতো ভাই এতোটা নির্দয় হয় তা অনুর জানা ছিল না। অনু মিনতি করে আদ্রকে বলল,

 

--এবারের মতো আমাকে ক্ষমা করে দাও আদ্র ভাইয়া। আমি এবার থেকে প্রতিদিন পড়া শিখে রাখবো।

 

--কোনো ক্ষমা নেই। যা বলেছি তাই কর। কান ধরে ওঠবস কর। 

 

--আমি পারবো না। 

 

আদ্র বড় লাঠি হাতে নিয়ে বলল,

 

--তাহলে লাঠির আঘাত খাবি?

 

অনু ভয়ে ভয়ে আদ্রকে বলল,

 

--না না। আমি কান ধরে ওঠবস করছি। 

 

অনু আদ্রের কথামতো কান ধরে ওঠবস করতে লাগল আর আদ্র ওঠবস গুণতে লাগল।অনুর কাছে আদ্রকে পৃথিবীর সেরা নিষ্ঠুরতম মানুষ মনে হচ্ছে। চল্লিশবার কান ধরে ওঠবস করেই অনু হাঁপিয়ে গেছে। আর ওঠবস করতে পারছে না বলে আদ্রকে বলল,

 

--আদ্র ভাইয়া আমি আর পারছি না।পায়ে ভীষণ ব্যথা করছে। আমাকে আর ওঠবস করতে বলো না। 

 

--এখনো তোর একশো ষাট বার কান ধরে ওঠবস করতে হবে অনু৷ কোনো ক্ষমা নেই।

 

--আদ্র ভাইয়া তুমি আমার সাথে এমন কেন করছো?

 

--পড়া শিখলে এমন কষ্ট করতে তোকে হতো না। 

এখন আমার কিছু করার নেই। কান ধরে ওঠবস কর। 

 

অনু কষ্ট করে আরও বিশ বার কান ধরে ওঠবস করল। আর না পেরে মাটিতে শুয়ে পড়ল৷আদ্র চেয়ার টেবিল থেকে উঠে এসে অনুর পাশে মাটিতে বসে বলল,

 

--এই অনু তোর কি হলো? 

 

অনু কোনো কথা বলছে না।অনু চোখ বন্ধ করে আছে। আদ্র কোনো উপায় না পেয়ে অনুকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুয়ে দিল। অনু চোখ খুলে আদ্রের দিকে তাকিয়ে চাপা কান্না করে আদ্রকে বলল, 

 

--আদ্র ভাইয়া তুমি খুব পঁচা। আমাকে শুধু কষ্ট দেও।

 

আদ্র অনুর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। অনু বুঝতে পারছে না আদ্র এভাবে কেন তার দিকে তাকিয়ে আছে। আদ্র হঠাৎ করেই অনুর দিকে ঝুকে এসে অনুর কপালে গভীর চুমু দিল। অনু ভয়ে কিছুটা দূরে সরে বলল,

 

--আদ্র ভাইয়া তুমি আমার কপালে চুমু দিলে কেন?

 

--বেশি কথা বলিস তুই। চুপ করে শুয়ে থাক। আরও একশো চল্লিশবার তোকে কান ধরে ওঠবস করতে হবে।

 

অনু আদ্রের ডান হাত নিজের দুই হাতে আঁকড়ে ধরল। আদ্র নিজের হাতে অনুর হাত চেপে ধরা দেখে অবাক হলেও কিছু বলল না। শুধু অনুর মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। অনু আদ্রের হাত চেপে ধরেই বলল,

 

--প্লিজ আদ্র ভাইয়া আমাকে আর শাস্তি দিও না।

 

অাদ্র চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ ভেবে তারপর বলল,

 

--শাস্তি দিবো না। কিন্তু একটা শর্তে। 

 

অনু ভয় পেয়ে আদ্রকে বলল,

 

--কি শর্ত আদ্র ভাইয়া? 

 

--তোকে আমার দুই গালে চুমু দিতে হবে। 

 

অনু চোখ বড়বড় করে শুয়ে থাকা থেকে উঠে বসে আদ্রের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলল,

 

--কি?

 

আদ্র স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,

 

--যা শুনলি তাই করতে হবে। নাহলে তোকে একশো চল্লিশবার কান ধরে ওঠবস করতে হবে!


Salma Akter

233 Blog posts

Comments