হযরত মোহাম্মদ সাঃ

খাদিজা রাদিআল্লাহু আনহুর সকল ধনদৌলত নিয়ে আলোচনা।

দিন যায়, রাত যায়। ক্রমেই খাদীজার অন্তর মুহাম্মদের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়তে লাগলো। অবশেষে তিনি সত্যি সত্যি বুঝতে পারলেন মুহাম্মদকে তিনি,, 

 

 ভালোবেসে ফেলেছেন। তাই তাঁকে বিয়ে করার জন্যে খাদীজা ব্যাকুল হয়ে পড়লেন। 

 

কিন্তু কিভাবে এ কাজ সমাধা করা যায়-তিনি তা ভাবতে লাগলেন।

 

নফিসা নামে খাদীজার এক সহচরী ছিলেন। তিনি যেমনি বুদ্ধিমতী তেমনি চতুর। 

 

একমাত্র তাঁর নিকট খাদীজা তাঁর মনের কথা বলে থাকেন। নফিসাও তাঁর মনের কথা খাদীজার নিকট বলে থাকেন। উভয়ের মধ্যে খুব অন্তরঙ্গ ভাব ছিল। 

 

খাদীজা অনেক ভেবেচিন্তে ঠিক করলেন-নফিসাই এ কাজটা সমাধা করতে পারবে। কারণ নফিসা উভয় পক্ষেরই আত্মীয়া। তাছাড়া সে বুদ্ধিমতী ও চতুর।

 

তারপর একদিন তিনি নফিসাকে বাড়িতে ডেকে আনলেন। দু'জনে বসে একথা সেকথা আলাপ করতে করতে খাদীজা মুহাম্মদের খুব প্রশংসা করতে লাগলেন। 

 

সুচতুর নফিসা মনে মনে ভাবতে লাগলেন খাদীজা কেন মুহাম্মদের এত প্রশংসা করছে। এক মুহূর্ত ভেবেই বললেন: কি ব্যাপার? এ বয়সে এক যুবকের প্রশংসায় পঞ্চমুখ কেন।

 

কথা শুনে মনে হচ্ছে শূন্য আসন দখল করে ফেলেছে। এত প্রশংসার পিছনে মতলব কি?

 

 খাদীজা মুচকি হেসে বললেন: সত্যি নফিসা ! আমি তাঁকে ভালোবেসে ফেলেছি। শত চেষ্টা করেও তাঁর থেকে মনকে ফিরিয়ে আনতে পারিনি। 

 

বরং ছাড়ার চিন্তা করে আরও জড়িয়ে পড়েছি। এজন্যই তোকে ডেকে এনেছি। শুধু শুধুই তাঁর প্রতি

 

দুর্বল হয়ে পড়িনি। এর উপযুক্ত কারণ আছে। পরে সময় হলে জানতে পারবি।

 

নফিসা: তাই তো বলি ছোড়ার প্রেমে পড়ে বুড়িও ছুড়ি হয়।

 

খাদীজা : তোর চোখে তাহলে আমি বুড়ি? চোখ মেলে ভাল করে দেখতো, আমি যুবতীদের চেয়ে কোন্ অংশে কম?

 

নফিসাঃ "ও! তাই তো, কে বলে বুড়ি, একদম ষোড়শী যুবতী।" বলে ফিক করে হেসে দেন নফিসা। খাদীজাও হাসেন।

 

 তারপর নফিসা বলেন: বুঝেছি। এবার বল, আমাকে কি করতে হবে?

 

 

 

খাদীজা তাঁর মনের বাসনাটি বললেন। নফিসা শুনে খুশি হলেন এবং যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন বলে খাদীজাকে আশ্বাস দিলেন।

 

তারপর নফিসা মুহাম্মদের নিকট গেলেন। সুচতুর নফিসা কৌশলে সুন্দরভাবে প্রস্তাবটি মুহাম্মদের নিকট পেশ করলেন। প্রথমে তিনি নানা কথা আলাপ করলেন। 

 

তারপর কথা প্রসঙ্গে তিনি মুহাম্মদকে বললেন: আচ্ছা আপনি বিয়ে করছেন না কেন?

 

মুহাম্মদ স্নিগ্ধ হাসি হেসে বললেন: আমার বিয়ে করার সামর্থ্য কোথায়? আমার মত হতভাগাকে কে বিয়ে করবে? 

 

কপর্দকহীন এতিম আমি। এমন যুবককে কি কেউ বিয়ে করে? এমন যুবককে বিয়ে করতে কি কোন মেয়ে রাজি হয়?

 

নফিসাঃ যদি তাঁর সুব্যবস্থা হয়?

 

মুহাম্মদ: তাঁর মানে?

 

নফিসা: তার মানে-মনে করুন, ধনেমানে রূপেগুণে শ্রেষ্ঠা-এমন একজন নারীর সঙ্গে যদি আপনার বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়, আর বিয়ের পর আপনি সব কিছুর

 

মালিক হয়ে যান। তাহলে কি আপনার আপত্তি আছে? মুহাম্মদ: এমনটি হলে তো আপত্তি থাকার কথা নয়। এমন মেয়েটি কে? নফিসা। মেয়ে নয় মহিলা। তিনি আপনার খুব পরিচিতা।

 

মুহাম্মদ: কে?

 

নফিসাঃ খাদীজা।

 

মুহাম্মদ : খা-দী-জা।

 

নাম শুনে মুহাম্মদ আশ্চর্য হয়ে গেলেন। একটু ভেবে তিনি মনে মনে খুশিও হলেন। বললেন: আমার মত একজন হতভাগা কর্মচারীকে তিনি বিয়ে করবেন?

 

 এটা কি আপনার বিশ্বাস হয় ? এ প্রস্তাব আপনি তাঁর নিকট পেশ করতে পারবেন? ভাল করে ভেবে দেখুন।

 

নফিসা: পারি কি না তা চেষ্টা করে দেখবো। চেষ্টার অসাধ্য কি আছে? চেষ্ট। করে ব্যর্থ হওয়া ভাল। ধন-দৌলত তো মানুষের যোগ্যতার একমাত্র মাপকাঠি নয়। এপনাকে সে অযোগ্য বলবে কোন দিক দিয়ে? বরং আপনার মতো একজন

 

 

তরুণ যুবককে স্বামীরূপে পাওয়া তাঁর জন্যে বিরাট নসিবের কথা। সে কথা থাক। আগে আপনার অভিমত বলুন। 

 

তারপর খাদীজাকে রাজি করানোর দায়িত্ব আমার। এ ব্যাপারে আমি চেষ্টার এতটুকু ত্রুটি করবো না। আপনি রাজি তো?

 

মুহাম্মদ : বেশ, আপনি যদি তাঁকে রাজি করাতে পারেন তবে আমিও রাজি। সুচতুর নফিসা এমন কৌশলে মুহাম্মদের নিকট প্রস্তাবটি পেশ করলেন,

 

 যেন খাদীজা এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না। নফিসাই মুহাম্মদের নিকট থেকে খাদীজার নিকট প্রস্তাব নিয়ে যাচ্ছেন।

 

নফিসা আনন্দচিত্তে খাদীজার নিকট গিয়ে এ সুসংবাদ জানালেন। সংবাদ শুনে খাদীজা আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলেন। তখন থেকেই তাঁর চোখে কেবল মুহাম্মদের হাস্যোজ্বল মুখ ভাসতে লাগলো।

 

 নফিসা পুনরায় মুহাম্মদের নিকট গিয়ে খাদীজার সম্মতির কথা জানালেন।

 

তারপর উভয় পক্ষের অভিভাবকদের আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিয়ে ঠিক হলো। 

 

এক শুভ দিনে মহা ধুমধামে খাদীজা ও মুহাম্মদের বিয়ে হলো। খাদীজার বয়স তখন চল্লিশ বছর এবং মুহাম্মদের বয়স পঁচিশ বছর।

 

এই বিয়েতে মুহাম্মদের পক্ষে অভিভাবক ছিলেন তাঁর চাচা আবু তালিব এবং খাদিজার পক্ষে ছিলেন তাঁর চাচাত ভাই আমর বিন আসাদ। মাত্র সাড়ে বার 'উকিয়া'

 

 (সেকালের মুদ্রার নাম) মোহরানা নির্ধারণ করে খাদীজার বিয়ে হলো। এই সামান্য মোহরানায় এমন একজন পরমা সুন্দরী ধনাঢ্য মহিলার বিয়ে হলো। 

 

আমরা তো মনে করি মোহরানা যত বেশি হবে, ততই মেয়ের মঙ্গল। আসলে তা নয়, বরং মোহরানা যত কম হবে সে বিয়ে ততো বরকতময় হবে।

 

দু'রঙ্গের দু'টি ফুল ভিন্ন কাননে

 

ফুটেছিল কোন্ দিন কেহ নাহি জানে;

 

মিলন হইল আজি বিধির বিধানে।

 

বিয়ের পর মুহাম্মদ নতুন জীবন লাভ করলেন। খাদীজার জীবনেও এলো নবার। মুহাম্মদ চাচার বাড়ি ছেড়ে খাদীজার বাড়ি চলে এলেন। খাদীজা তাঁর,,

 

সমস্ত ধন-দৌলত, বিষয়-সম্পত্তি স্বামীর হাতে তুলে দিতে চাইলেন। এতে স্বামী একটু আপত্তি করলেন। অর্থাৎ তিনি ধন-সম্পদ গ্রহণ করতে চাইলেন না।

 

 

খাদীজা মিষ্টি হেসে বললেন: ধন-দৌলতের মালিক যে সে যদি আপনার হয়, 

 

তাহলে ধন-দৌলত কার হবে বলুন? আজ থেকে এ সংসারের মালিক আপনি। আমি শুধু আপনার হুকুমের তাঁবেদার। আপনার সেবিকা।

 

স্ত্রীর মুখে এমন কথা শুনে মুহাম্মদের মন খুশিতে ভরে গেল। সমস্ত মুখমণ্ডল স্নিগ্ধ হাসিতে ভরে উঠলো।

 

 

 একটু মুচকি হাসি দিয়ে স্ত্রীর প্রস্তাব তিনি গ্রহণ করলেন। আল্লাহ্ পাকের কি অপার মহিমা। একটু আগে যিনি ছিলেন কর্মচারী এখন তিনি হলেন মনিব। একটু পূর্বে যিনি ছিলেন কপর্দকহীন এখন তিনিই হলেন আরবের সেরা ধনী। 

 

একটু আগেও যাঁর সঙ্গে মেয়ে বিয়ে দিতে ইতস্তত করতো তাঁরই ভাগ্যে জুটলো আরবের সেরা সুন্দরী ও বুদ্ধিমতী নারী। 

 

একই সঙ্গে তিনি দু'টি সম্পদ পেলেন। একটি ধন-দৌলত অপরটি হলো সতী-সাধ্বী বুদ্ধিমতী নারী। একজন সতী নারী দুনিয়ার এক পরম সম্পদ।

 

হযরত মুহাম্মদ (সা) সমস্ত ধন-দৌলত আরবের নিঃস্ব অনাথ ও এতিমদের জন্যে খরচ করলেন। খাদীজা (রা) এতে একটুও অসন্তুষ্ট হলেন না। বরং খুশি হলেন।


Akhi Mustakim

6 Blog posts

Comments