অংশীদার

অংশীদার ব্যবসা বলতে একের অধিক মালিক সমূহকে বুঝায়।

অংশীদারি ব্যবসায়ের সুবিধাসমূহ বর্ণনা কর

 

দোতা

 

Discuss the advantages of partnership business.

 

উত্তরা। ভূমিকা : অংশীদারি ব্যবসায় প্রাচীনকাল হতে অত্যন্ত সফলতার সাথে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড করে আসছে। এদিক থেকে একমালিকানা ব্যবসায়ের পরই এর অবস্থান। স্বল্প আর্থিক অবস্থার কতিপয় বাঙি মূলধন একত্রিত করে এ ব্যবসায় গঠন ও পরিচালনা করতে পারে। প্রাচীনকাল হতেই এ ব্যবসায় মানুষের বিভিন্ন। মেটানোর কালা পানে মানায় অভাব মোচনের মাধ্যমে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে সহায়তা করে আসছে।স আর্থসামাজিক উন্নয়নে এর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্ববহ। নানাবিধ সুবিধার কারণে ব্যবসায় জগতে এ ব্যবসায় ভলোভনে করে নিয়েছে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

 

১২৫

 

নিম্নে এ ব্যবসায়ের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাগুলো বর্ণনা করা হল:

 

১. সহজ গঠন (Easy formation): চুক্তি সম্পাদনে যোগ্য একাধিক ব্যক্তি অংশীদারি ব্যবসায় গঠন করতে পারে। এর জন্য তেমন একটা আইনগত আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে হয় না। এ ব্যবসায়ের মূলভিত্তি হল চুক্তি। এ চুক্তি অলিখিত হলেও ব্যবসায় পরিচালনা করা যায়।

 

২. ঝুঁকি ভাগাভাগি (Sharing risk): অংশীদারি ব্যবসায়ে প্রতিটি অংশীদার একে অপরের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে। স্বভাবতই এ ব্যবসায়ের ঝুঁকি সকল অংশীদারের মধ্যে সমহারে বষ্টিত হয়। একজন অংশীদারের দায় সকল অংশীদার ভাগাভাগি করে নেয় বলে স্বাভাবিক কারণেই এ ব্যবসায়ে ঝুঁকির পরিমাণ হ্রাস পায়।

 

৩. ঋণের সুবিধা (Facilities for loan): অংশীদারি ব্যবসায়ের জন্য ঋণগ্রহণ করা তেমন একটা কষ্টসাধ্য ব্যাপার নয়। একাধিক সদস্য থাকে বলে অংশীদারদের নিজস্ব সুনাম ও ব্যবসায়ের কর্মকাণ্ডের বিপরীতে বিভিন্ন ব্যক্তি বা ২৬ ঋণপ্রদানকারী সংস্থার কাছ থেকে ঋণগ্রহণ করা যায়। এক অংশীদারের দায় অন্য অংশীদার বহন করে বলে ঋণদাতারা ঋণ প্রদান করে স্বস্তিতে থাকে।

 

৪. যৌথ সিদ্ধান্ত (Collective decision): এ ব্যবসায়ে ব্যবসায় সংক্রান্ত কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সকল অংশীদারের মতামতের দরকার হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সদস্য সংখ্যা খুব একটা বেশি না হওয়ায় দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। সকলের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে গৃহীত সিদ্ধান্ত অধিক কার্যকরী হয়।

 

৫. নমনীয়তা (Flexibility): অংশীদারি ব্যবসায়ে সদস্য সংখ্যা একাধিক থাকলেও ২০ জনের বেশি হতে পারে না। সুতরাং, সদস্য সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম থাকায় তাদের মধ্যে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষিত হয়। ফলে যে কোন বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হয়। দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায় বলে সহজে এ ব্যবসায়ের পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা সংকোচন করা যায়।

 

৬. বিশেষায়নের সুবিধা (Advantages of specialization): অংশীদারি ব্যবসায় কিছুসংখ্যক যোগ্য ও অভিজ্ঞ ব্যক্তি দ্বারা গঠিত হয়ে থাকে। এর মধ্যে অধিকতর যোগ্য ও অভিজ্ঞ ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের উপর পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। ফলে ব্যবসায় সংক্রান্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে যোগ্য ব্যক্তি তার প্রতিভার সফল প্রয়োগ করতে পারে এবং বিশেষায়নে সহায়তা করে।

 

৭. গোপনীয়তা রক্ষা (Maintenance of secrecy): অংশীদারি ব্যবসায়ের সদস্য সংখ্যা খুব একটা বেশি নয়। কোন কোন ক্ষেত্রে মাত্র ২ জন অংশীদার মিলে ব্যবসায় গঠন ও পরিচালনা করে থাকে। সদস্য সংখ্যা কম হওয়ায় গোপনীয়তা রক্ষা করা সহজ হয়। যেহেতু সকল সদস্য অসীম দায় বহন করে, তাই সদস্য সংখ্যা ২০ জন পর্যন্ত হলেও নিজেদের স্বার্থেই তারা ব্যবসায়িক যাবতীয় তথ্য গোপন রাখে।

 

৮. আইনের ঝামেলাযুক্ত (Free from legal formalities): অংশীদারি ব্যবসায় গঠন করতে তেমন একটা

 

আইনগত আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে হয় না। চুক্তি সম্পাদনে যোগ্য কতিপয় ব্যক্তি তাদের মূলধন একত্রিত করে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে সহজেই এ ব্যবসায় গঠন ও পরিচালনা করতে পারে। তবে আমাদের দেশে পৌর এলাকায় এ ব্যবসায় গঠন ও পরিচালনা করতে পৌর কর্তৃপক্ষ অথবা সরকারি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হয়।

 

৯. অসীম দায়ের পরোক্ষ সুবিধা (Indirect benefit of unlimited liability): এ ব্যবসায়ে প্রত্যেক অংশীদার একে অপরের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে বলে সকলের দায় অসীম। অর্থাৎ, একজনের কৃতকর্মের ভার সকলকে বহন করতে হয়। কাজেই ব্যবসায়ের লোকসান এড়াতে এবং মুনাফা বৃদ্ধি করতে সকল পরিচালক এবং অংশীদার অত্যন্ত সতর্কতার সাথে ব্যবসায় পরিচালনা করে। এতে ব্যবসায় উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যায়।

 

১০. পারস্পরিক প্রতিনিধিত্বের সুফল (Good effect of mutual agency): অংশীদারি ব্যবসায়ে প্রত্যেক অংশীদারি একে অপরের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে। সফল অংশীদারগণ অথবা তাদের দ্বারা নির্বাচিত একজন ব্যবসায় পরিচালনা করে। অর্থাৎ, এ ব্যবসায়ে প্রত্যেক অংশীদারি তার কাজের জন্য সকল অংশীদারের নিকট দায়ী থাকে। যে কোন অংশীদারের ব্যবসায় সংক্রান্ত কাজের জন্য সকল অংশীদার ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে দায়বদ্ধ হয়। এ কারণে একজনের কাজ যেমন অন্যজন করতে পারে তেমনি দায় এড়ানোর জন্য সবাই সাধ্যমতো ব্যবসায় সঠিকভাবে চেষ্টা করেন।

১১. মিতব্যয়িতা (Economy): কয়েকজন যোগ্য ও দক্ষ অংশীদারের পরিচালনায় এ ব্যবসায় পি থাকে। যারা পরিচালনার দায়িত্বে থাকে, তাদেরকেও অসীম দায় বহন করতে হয়। সংগত কারণে প্রতোর জন পাশাপাশি পরিচালকগণ যথাসাধ্য ব্যবসায়ের ব্যয় কমানোর চেষ্টা করে। এতে ব্যবসায় মিতব্যয়িতা রক্ষিত হয়।

 

১২. সহজ বিলোপ সাধন (Easy windg-up): অংশীদারি ব্যবসায়ের বিলোপসাধন করতে হলে রেম। আইনগত আনুষ্ঠানিকতা পালন করার দরকার হয় না। সকল অংশীদারের সম্মতিক্রমে এর অবসায়ন করা যায় ৮ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ের আপনাআপনি বিলোপ ঘটে। তবে ইচ্ছাধীন অংশীদারির ক্ষেত্রে কোন অংশীদার লিখিত বিজয়। অন্য অংশীদারদের ব্যবসায় বিলোপের ইচ্ছা প্রকাশ করলে এরূপ ব্যবসায়ের বিলোপ ঘটে।

 

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায়, আধুনিক প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসায় জগতে অংশীদারি ব্যবসায় এক

 

ব্যবসায় সংগঠন। প্রাচীনকাল হতে এখনও এ ব্যবসায় জনপ্রিয়তার সাথে পরিচালিত হচ্ছে। এ ব্যবসায়ের গাব যেমন সহজ, তেমনি পরিচালনা করতেও ততটা বেগ পেতে হয় না। খুব সহজে অনেকগুলো মানুষের কর্মসংস্থানে করতে এ ব্যবসায়ের কোন বিকল্প নেই।


Salma Akter

233 Blog posts

Comments