সর্বাত্মক বয়কট
(মুহাররম ৭ম নববী বর্ষ)
এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ঘটে যাওয়া পরপর চারটি ঘটনায় মুশরিক নেতাদের মধ্যে যেমন আতংক সৃষ্টি হয়, তেমনি মুহাম্মাদ ও তার সাথীদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত আঘাত হানার জন্য তারা মরিয়া হয়ে ওঠে। ঘটনাগুলি ছিল যথাক্রমে-
(১) মুহাম্মাদকে প্রদত্ত আপোষ প্রস্তাব ও লোভনীয় প্রস্তাব সমূহ নাকচ হওয়া।
(২) হামযার ইসলাম গ্রহণ ও সরাসরি আবু জাহ্লের উপরে হামলা করা।
(৩) উমরের ইসলাম গ্রহণ ও সরাসরি আবু জাহলের বাড়ীতে গিয়ে তার মুখের উপর তার ইসলাম গ্রহণের সংবাদ দেওয়া। অতঃপর মুসলমানদের নিয়ে প্রকাশ্যে ধর্মীয় বিধি-বিধান সমূহ পালন শুরু করা এবং
(৪) সবশেষে আবু ত্বালিবের আহবানে সাড়া দিয়ে বনু হাশেম ও বনু মুত্ত্বালিবের মুসলিম-কাফির সকলের পক্ষ হতে মুহাম্মাদকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দানের অঙ্গীকার ঘোষণা করা। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে মুশরিক নেতৃবৃন্দ মুহাছছাব(وادى المحصّب) উপত্যকায় সমবেত হয় এবং বিস্তারিত আলোচনার পর বনু হাশেম ও বনু মুত্ত্বালিব গোত্রদ্বয়ের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক বয়কটের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন (বুখারী হা/১৫৯০, মুসলিম হা/১৩১৪)।
সিদ্ধান্ত মোতাবেক সকলে এই মর্মে প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করেন যে, (১) বনু হাশেম ও বনু মুত্ত্বালিবের সাথে বিয়ে-শাদী বন্ধ থাকবে (২) তাদের সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ও যাবতীয় লেন-দেন বন্ধ থাকবে (৩) তাদের সাথে উঠাবসা, মেলা-মেশা, কথাবার্তা ও তাদের বাড়ীতে যাতায়াত বন্ধ থাকবে- যতদিন না তারা মুহাম্মাদকে হত্যার জন্য তাদের হাতে তুলে দিবে।
৭ম নববী বর্ষের ১লা মুহাররমের রাতে সম্পাদিত উক্ত অঙ্গীকারনামাটি কা‘বাগৃহের ভিতরে টাঙিয়ে রাখা হল। উক্ত অঙ্গীকারনামার লেখক বাগীয বিন ‘আমের(بَغِيضُ بْنُ عَامِرِ) এর প্রতি রাসূল (সাঃ) বদ দো‘আ করেন। ফলে তার হাতটি অবশ ও অকেজো হয়ে যায়।[1]
শে‘আবে আবু ত্বালিবে তিন বছর :
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
উপরোক্ত অন্যায় চুক্তি সম্পাদনের ফলে বনু হাশেম ও বনু মুত্ত্বালিব উভয় গোত্রের আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা নিদারুণ কষ্টের সম্মুখীন হল। সঞ্চিত খাদ্যশস্য ফুরিয়ে গেলে তাদের অবস্থা চরমে ওঠে। ফলে তারা গাছের ছাল-পাতা খেয়ে জীবন ধারণে বাধ্য হন। নারী ও শিশুরা ক্ষুধায়-তৃষ্ণায় উচ্চৈঃস্বরে ক্রন্দন করত। তাদের ক্রন্দন ধ্বনি গিরি-সংকটের বাইরের লোকেরা শুনতে পেত। ফলে কেউ কেউ অতি সংগোপনে তাদের কাছে খাদ্য পৌঁছাতো। একবার হাকীম বিন হেযাম স্বীয় ফুফু খাদীজা (রাঃ)-এর নিকটে গম পৌঁছাতে গিয়ে আবু জাহলের হাতে ধরা পড়ে যান। কিন্তু আবুল বাখতারীর হস্তক্ষেপে অবশেষে সমর্থ হন। হারামের চার মাস ব্যতীত অবরুদ্ধ গোত্রদ্বয়ের লোকেরা বের হতে পারতেন না। যেসব কাফেলা বাহির থেকে মক্কায় আসত, তাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় খাদ্য-শস্য ক্রয়ে বাধা ছিল না। কিন্তু সেক্ষেত্রেও মক্কার ব্যবসায়ীরা জিনিষ-পত্রের এমন চড়া মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছিল যে, তা ক্রয় করা প্রায় অসম্ভব ছিল। অন্যদিকে আবু তালিবের দুশ্চিন্তা ছিল রাসূল (সাঃ)-এর জীবন নিয়ে। রাতের বেলা সকলে শুয়ে যাওয়ার পর তিনি রাসূলকে উঠিয়ে এনে তার বিশ্বস্ত নিকটাত্মীয়দের সাথে বিছানা বদল করাতেন। যাতে কেউ তাকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ না পায়। উক্ত কঠোর অবরোধ চলাকালীন সময়েও হজ্জের মওসুমে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বহিরাগত কাফেলা সমূহের তাঁবুতে গিয়ে তাওহীদের দাওয়াত দিতেন। ওদিকে চাচা আবু লাহাব তাঁর পিছে পিছে গিয়ে লোকদেরকে তাঁর কথা না শোনার জন্য বলতেন (আর-রাহীক্ব ১১০ পৃঃ)।
অঙ্গীকারনামা ছিন্ন ও বয়কটের সমাপ্তি :
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
প্রায় তিন বছর পূর্ণ হতে চলল। ইতিমধ্যে মুশরিকদের মধ্যে অসন্তোষ ও দ্বিধা-বিভক্তি প্রকাশ্য রূপ নিল। যারা এই অন্যায় চুক্তিনামার বিরোধী ছিল, তারা ক্রমেই সংগঠিত হতে লাগল। বনু ‘আমের বিন লুওয়াই গোত্রের হেশাম বিন আমরের উদ্যোগে যোহায়ের বিন আবু উমাইয়া ও মুত্ব‘ইম বিন ‘আদী সহ পাঁচজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি হারামের নিকটবর্তী ‘হাজূন’ নামক স্থানে বসে এ ব্যাপারে একমত হন এবং তাঁদের পক্ষে যোহায়ের কা‘বাগৃহ তাওয়াফ শেষে প্রথম সরাসরি আবু জাহলের মুখের উপরে উক্ত চুক্তিনামাটি ছিঁড়ে ফেলার হুমকি দেন। সাথে সাথে বাকী চারজন পরপর তাকে সমর্থন করেন। আবু জাহ্ল বললেন, বুঝেছি। তোমরা রাতের বেলা অন্যত্র পরামর্শ করেই এসেছ’। ঐ সময়ে আবু ত্বালিব কা‘বা চত্বরে হাযির হলেন। তিনি কুরায়েশ নেতাদের উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘আল্লাহ তাঁর রাসূলকে তোমাদের চুক্তিনামা সম্পর্কে অবহিত করেছেন যে, ‘আল্লাহ ঐ অঙ্গীকারপত্রের উপরে কিছু উঁই পোকা প্রেরণ করেছেন। তারা এর মধ্যকার বয়কট এবং যাবতীয় অন্যায় ও অত্যাচারমূলক কথাগুলো খেয়ে ফেলেছে, কেবল আল্লাহর নামগুলি ব্যতীত’। অতঃপর আবু ত্বালেব বললেন,فَإِنْ كَانَ كَاذِبًا خَلّيْنَا بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُ وَإِنْ كَانَ صَادِقًا رَجَعْتُمْ عَنْ قَطِيعَتِنَا وَظُلِمْنَا ‘যদি সে মিথ্যা বলে থাকে, তাহলে তোমাদের ও তার মধ্য থেকে আমরা সরে দাঁড়াব। আর যদি তার কথা সত্য প্রমাণিত হয়, তাহলে তোমরা আমাদের প্রতি বয়কট ও যুলুম থেকে ফিরে যাবে’। আবু ত্বালিবের এই সুন্দর প্রস্তাবে সকলে সমস্বরে বলে উঠল,قَدْ أَنْصَفْتَ ‘আপনি ইনছাফের কথাই বলেছেন’। ওদিকে আবু জাহল ও মুত্ব‘ইম এবং অন্যান্যদের মধ্যে বাকযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে মুত্ব‘ইম বিন ‘আদী কা‘বাগৃহে প্রবেশ করে অঙ্গীকারনামাটি ছিঁড়ে ফেলার উদ্দেশ্যে বাইরে নিয়ে এলেন। দেখা গেল যে, সত্য সত্যই তার সব লেখাই পোকায় খেয়ে ফেলেছে কেবলমাত্র ‘বিসমিকা আল্লা-হুম্মা’ (‘আল্লাহ তোমার নামে শুরু করছি’) বাক্যটি এবং অন্যান্য স্থানের আল্লাহর নামগুলি ব্যতীত। এভাবে আবু ত্বালিবের মাধ্যমে প্রেরিত রাসূল (সাঃ)-এর প্রাপ্ত অহীর সংবাদ সত্যে পরিণত হল। কুরায়েশ নেতারা অবাক বিস্ময়ে তা অবলোকন করল। অতঃপর অঙ্গীকারনামাটি মুত্ব‘ইম বিন ‘আদী সর্বসমক্ষে ছিঁড়ে ফেললেন এবং এভাবে বয়কটের অবসান ঘটল ঠিক তিন বছরের মাথায় ১০ম নববী বর্ষের মুহাররম মাসে’।[2]
নবুঅতের সত্যতার এ চাক্ষুষ প্রমাণ দেখেও নেতাদের মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার অহংকারী প্রবণতার প্রতি ইঙ্গিত করে আল্লাহ বলেন,وَإِن يَّرَوْا آيَةً يُّعْرِضُوا وَيَقُولُوا سِحْرٌ مُّسْتَمِرٌّ ‘আর যদি তারা কোন নিদর্শন দেখে, তখন তারা এড়িয়ে যায় আর বলে এসব চলমান জাদু’ (ক্বামার ৫৪/২)।
বলা বাহুল্য সকল যুগের হঠকারী নাস্তিক ও মুনাফিকের চরিত্র একই রূপ।
বয়কট পর্যালোচনা :
━━━━━━━━━━━━
(১) ইবনু শিহাব যুহরীর হিসাব মতে বয়কট শুরু হয় ৭ম নববী বর্ষের শেষ দিকে। ফলে তাঁর হিসাবে মেয়াদ হয় দু’বছর। কিন্তু মূসা বিন উক্ববা দৃঢ়তার সাথে বলেন, এর মেয়াদ ছিল তিন বছর। কেননা ইবনু ইসহাক বলেছেন, ৭ম নববী বর্ষের মুহাররম মাসের শুরু থেকে বয়কটের সূচনা হয়।
(২) বয়কট সম্পর্কিত বিস্তারিত বর্ণনা সমূহের কোনটাই সহীহ সনদে প্রমাণিত নয়। তবে এটা যে অবশ্যই ঘটেছিল তার মূল সূত্র পাওয়া যায় আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত সহীহ হাদীছে। যেখানে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মক্কা বিজয়ের প্রাক্কালে বলেন,مَنْزِلُنَا غَدًا إِنْ شَاءَ اللهُ بِخَيْفِ بَنِى كِنَانَةَ حَيْثُ تَقَاسَمُوا عَلَى الْكُفْرِ ‘আগামীকাল ইনশাআল্লাহ আমরা বনু কিনানাহ্র খায়েফ অর্থাৎ মুহাছ্ছাব উপত্যকায় অবতরণ করব। যেখানে তারা কুফরীর উপরে পরস্পরে কসম করেছিল’ (বুখারী হা/১৫৮৯)। এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, কুরায়েশ ও কিনানাহ গোত্র বনু হাশেম ও বনু মুত্ত্বালিবের বিরুদ্ধে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিল যে, তাদের সঙ্গে বিবাহ-শাদী, ব্যবসা-বাণিজ্য সবই বন্ধ থাকবে, যতদিন না তারা মুহাম্মাদকে আমাদের হাতে সোপর্দ করবে’ (বুখারী হা/১৫৯০)।
(৩) দীর্ঘ তিন বছর বয়কট অবস্থায় থেকে গাছের ছাল-পাতা খেয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে বার্ধক্য জর্জরিত দেহ নিয়ে চাচা আবু ত্বালিব ও স্ত্রী খাদীজাতুল কুবরা (রাঃ) চূড়ান্ত অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছিলেন। একই অবস্থায় উপনীত হয়েছিলেন বনু হাশেম ও বনু মুত্ত্বালিবের মুমিন-কাফির শত শত আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা। কত নারী-শিশু ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সে বয়কটে না খেয়ে ও বিনা চিকিৎসায় মারা গিয়েছিল, তার হিসাব কে বলবে?
সমালোচকরা বলবেন, তারা জাহেলী যুগের লোক ছিল বলেই এই নিষ্ঠুরতা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু আধুনিক যুগের তথাকথিত ভদ্র নেতারা সে যুগের চাইতে উন্নত কিসে? বর্তমান যুগের গণতন্ত্রী ও মানবাধিকারের মোড়ল রাষ্ট্র আমেরিকা ও বৃটেন প্রভাবিত জাতিসংঘের অবরোধ আরোপের কারণে ১৯৯০ থেকে ২০০৩ পর্যন্ত ইরাকে অন্যূন ১৫ লাখ মুসলিম নর-নারী ও শিশু খাদ্য ও চিকিৎসার অভাবে মারা যায়। অতঃপর ২০০৩ সালে ইরাকে ও আফগানিস্তানে সশস্ত্র হামলার মাধ্যমে ইরাকে ১০ লাখ ও আফগানিস্তানে তারা বেহিসাব নর-নারী ও শিশুদের হত্যা করেছে। এখনও তাদের কথিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অভিযানে হাযার হাযার বনু আদম নির্দয়ভাবে বিভিন্ন দেশে নিহত, পঙ্গু ও গৃহহারা হচ্ছে। সাথে সাথে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উপর তাদের বয়কট, অবরোধ ও হামলার মাধ্যমে এবং সার্বক্ষণিক চক্রান্তের মাধ্যমে সর্বত্র মানবতাকে ভূলুণ্ঠিত করে চলেছে। উদ্দেশ্য, স্রেফ ঐসব দেশের সম্পদ লুট করা এবং তাদের উপর প্রভুত্ব চাপিয়ে দেওয়া। অথচ এত বড় পশুত্ব ও হিংস্রতাকেও তারা অবলীলাক্রমে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও সন্ত্রাস দমনের মহান সংগ্রাম বলে চালিয়ে যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে তাদের নিয়োজিত শত শত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া সেই মিথ্যাগুলোকে হাযারো কণ্ঠে প্রচার করছে। সেই সাথে তাদের বশংবদ রাষ্ট্রগুলো এইসব যুলুম ও অত্যাচারের পক্ষে সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।
বিভিন্ন দেশের উপর পরাশক্তিগুলির প্রতারণাপূর্ণ বয়কটকে একদিকে রাখুন, আর চৌদ্দশত বৎসর পূর্বে মক্কার এই বয়কটকে আরেক দিকে রাখুন। দু’টির মধ্যে আসমান ও যমীনের পার্থক্য দেখতে পাবেন। যেমন (ক) আধুনিক বিশ্বের অধিকাংশ বয়কটের উদ্দেশ্য স্রেফ লুটপাট ও পররাজ্য গ্রাস এবং সাথে সাথে খৃষ্টানীকরণের ঘৃণ্য অপচেষ্টা। পক্ষান্তরে জাহেলী যুগের ঐ বয়কটের একমাত্র কারণ ছিল নীতি ও আদর্শের সংঘাত এবং শিরক ও তাওহীদের সংঘর্ষ। সেখানে লুটপাট, খুনোখুনি বা নারী নির্যাতনের নাম-গন্ধ ছিল না।
(খ) ইরাকের বিরুদ্ধে বয়কটের সময় মুসলিম ও আরব রাষ্ট্র গুলির প্রায় সকলে প্রকাশ্যে বা গোপনে যালেম ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে সমর্থন দেয়। কথিত আরব জাতীয়তাবাদের বন্ধন বা ইসলামী জাতীয়তার আকর্ষণ কোনটাই সেখানে কার্যকর হয়নি। অথচ বনু হাশেম ও বনু মুত্ত্বালিব-এর প্রায় সবাই কাফের-মুশরিক হওয়া সত্ত্বেও কেবলমাত্র বংশীয় টানে নবী মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর সমর্থনে এগিয়ে আসে এবং বয়কটের সময় অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট বরণ করে নেয়। আত্মীয়তার বন্ধনের প্রতি তাদের এই আনুগত্য ও নৈতিকতা বোধ আধুনিক বিশ্বের নীতিহীন শাসকদের জন্য চপেটাঘাত বৈ-কি! অতএব সেই যুগের চাইতে আজকের তথাকথিত সভ্য যুগকেই সত্যিকার অর্থে ‘জাহেলী যুগ’ বলা উচিত।
[1]. ইবনু ইসহাক বলেন, লেখকের নাম ছিল মানছূর বিন ইকরিমা বিন ‘আমের বিন হাশেম। ইবনু হিশাম বলেন, তার নাম ছিল নাযার বিন হারেছ’ (ইবনু হিশাম ১/৩৫০)। ইবনু কাছীর বলেন, মানছূর বিন ইকরিমা নামটি অধিক প্রসিদ্ধ। কেননা কুরায়েশরা তাকে দেখিয়ে বলত, انْظُرُوا إِلَى مَنْصُورِ بْنِ عِكْرِمَةَ ‘তোমরা মানছূর বিন ইকরিমার দিকে তাকাও’। তিনি বলেন, ওয়াক্বেদী বলেছেন, তার নাম ছিল ত্বালহা বিন আবু ত্বালহা ‘আবদাভী’ (আল-বিদায়াহ ৩/৮৬)। তবে ইবনুল ক্বাইয়িম বলেন, ‘বাগীয বিন ‘আমের বিন হাশেম’ নামটিই সঠিক’ (যাদুল মা‘আদ ৩/২৭)। হতে পারে মূল লেখকের সাথে অন্যেরা সহযোগী ছিলেন। -লেখক।
[2]. ইবনু হিশাম ১/৩৭৪-৭৭। বর্ণনাগুলির সনদ যঈফ (তাহকীক ইবনু হিশাম ক্রমিক ৩৬৮)। আল-বিদায়াহ ৬/১৮৬; যাদুল মা‘আদ ৩/২৬-২৮; আর-রাহীক্ব ১০৯-১১২।