আব্দুল্লাহ্`র মৃত্যুঃ পিতা আব্দুল্লাহ ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে তদীয় পিতা আব্দুল মুত্ত্বালিবের হুকুমে ইয়াছরিব (মদীনা) গেলে সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং মাত্র ২৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। সেখানে তিনি নাবেগা জা‘দীর গোত্রে সমাধিস্থ হন। এভাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর জন্মের পূর্বে তাঁর পিতার মৃত্যু হয়ে যায়। উল্লেখ্য যে, মদীনার বনু নাজ্জার গোত্রে আব্দুল মুত্ত্বালিবের পিতা হাশেম বিবাহ করেন। ফলে তারা ছিলেন আব্দুল মুত্ত্বালিবের নানার গোষ্ঠী।
মৃত্যুকালে আব্দুল্লাহ যেসব সহায়-সম্পদ রেখে গিয়েছিলেন তা ছিল যথাক্রমে পাঁচটি উট, এক পাল ছাগল এবং একটি নাবালিকা হাবশী দাসী বারাকাহ ওরফে উম্মে আয়মান। যিনি রাসূল (ছাঃ)-কে শিশুকালে লালন-পালন করেন। ইনি পরে যায়েদ বিন হারেছার সাথে বিবাহিতা হন এবং উসামা বিন যায়েদ তাঁর পুত্র ছিলেন। তিনি রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পাঁচ মাস পরে মৃত্যুবরণ করেন’।[1]
হাশেম ও হাশেমী বংশঃ নবী (ছাঃ)-এর বংশ হাশেমী বংশ হিসাবে পরিচিত। যা তাঁর দাদা হাশেম বিন ‘আব্দে মানাফের দিকে সম্পর্কিত। হাশেম পূর্ব থেকেই ‘সিক্বায়াহ’ ও ‘রিফাদাহ’ অর্থাৎ হাজীদের পানি পান করানো ও মেহমানদারীর দায়িত্বে ছিলেন। হাশেম ছিলেন ধনী ও উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তি। তিনিই প্রথম কুরায়েশদের জন্য শীতকালে ইয়ামানে ও গ্রীষ্মকালে শামে দু’টি ব্যবসায়িক সফরের নিয়ম চালু করেন। তিনি এক ব্যবসায়িক সফরে শাম যাওয়ার পথে মদীনায় যাত্রা বিরতি করেন এবং সেখানে বনু ‘আদী বিন নাজ্জার গোত্রে সালমা বিনতে আমরকে বিবাহ করেন।
অতঃপর সেখানে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে রেখে ফিলিস্তীনের গাযায় চলে যান এবং সেখানে মৃত্যুবরণ করেন। এদিকে তার স্ত্রী একটি পুত্র সন্তান প্রসব করেন ৪৯৭ খ্রিষ্টাব্দে (আর-রাহীক্ব ৪৯ পৃঃ)। সাদা চুল নিয়ে ভূমিষ্ট হওয়ার কারণে মা তার নাম রাখেন শায়বাহ (شَيْبَةٌ)। এভাবে তিনি ইয়াছরিবে মায়ের কাছে প্রতিপালিত হন। মক্কায় তার পরিবারের লোকেরা যা জানতে পারেনি। যৌবনে পদার্পণের কাছাকাছি বয়সে উপনীত হ’লে তার জন্মের খবর জানতে পেরে চাচা কুরায়েশ নেতা মুত্ত্বালিব বিন ‘আব্দে মানাফ তাকে মক্কায় নিয়ে আসেন।
লোকেরা তাকে মুত্ত্বালিবের ক্রীতদাস মনে করে তাকে ‘আব্দুল মুত্ত্বালিব’ বলেছিল। সেই থেকে তিনি উক্ত নামে পরিচিত হন। যদিও তাঁর আসল নাম ছিল ‘শায়বাহ’ অর্থ ‘সাদা চুল ওয়ালা’ (ইবনু হিশাম ১/১৩৭-৩৮)।
মুত্ত্বালিব ও আব্দুল মুত্ত্বালিবঃ ইয়ামনের ‘বিরাদমান’ (بِرَدْمَانَ) এলাকায় চাচা গোত্রনেতা মুত্ত্বালিব পরলোক গমন করলে ভাতিজা আব্দুল মুত্ত্বালিব তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন (ইবনু হিশাম ১/১৩৮, ১৪২)। কালক্রমে আব্দুল মুত্ত্বালিব নিজ সম্প্রদায়ের মধ্যে এত উঁচু মর্যাদা লাভ করেন যে, তাঁর পিতা বা পিতামহ কেউই উক্ত মর্যাদায় পৌঁছতে পারেননি। সম্প্রদায়ের লোকেরা সবাই তাঁকে আন্তরিকভাবে ভালোবাসত ও সমীহ করে চলত’ (ইবনু হিশাম ১/১৪২)।
আব্দুল মুত্ত্বালিবের উচ্চ মর্যাদা লাভের অন্যতম কারণ ছিল আল্লাহর পক্ষ হ’তে স্বপ্নযোগে তাঁকে ‘যমযম’ কূয়া খননের দায়িত্ব প্রদান করা এবং তাঁর নেতৃত্বকালে আল্লাহর বিশেষ রহমতে ইয়ামনের খ্রিষ্টান গবর্ণর ‘আবরাহা’ কর্তৃক কা‘বা আক্রমণ ব্যর্থ হওয়া। এই মর্যাদা তাঁর বংশের পরবর্তী নেতা আবু ত্বালিব-এর যুগেও অব্যাহত ছিল। যা রাসূল (ছাঃ)-এর আগমনে আরও বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে বিশ্ব মর্যাদায় উন্নীত হয়।