মৌরীফুল 2

বড়দের রোম্যান্টিক গল্প, ধারাবাহিক/ পার্ট-০২

[শেষ অংশ হতে.......]

 

এমন সময় মুখুয্যে মহাশয়ের ছেলে কিশোরী বাড়ি আসিল। তাহার বয়স পঁচিশ-ছাব্বিশ হইবে, বেশি লেখাপড়া না-শেখায় সে চৌধুরীদের জমিদারি কাছারিতে ন-টাকা বেতনে মুহুরিগিরি করিত।

কিশোরীলাল নিজের ঘরে প্রবেশ করিয়া দেখিল ঘরে আলো দেওয়া হয় নাই, অন্ধকারেই জামাকাপড় ছাড়িয়া সে বাহিরে হাত-পা ধুইতে গেল। তারপর ঘরে ঢুকিয়া শুনিল, ঘুটঘুটে অন্ধকার ঘরে সুশীলা তাহার সম্মুখের বাতাসকে সম্বোধন করিয়া বলিতেছে যে, এ সংসারে থাকিয়া সংসার করা তাহার শক্তিতে কুলাইবে, অতএব কাল সকালেই যেন গোরুরগাড়ি ডাকাইয়া তাহাকে বাপেরবাড়ি পাঠাইয়া দেওয়া হয়।

কিশোরী সে-কথার কোনো বিশেষ জবাব না-দিয়া লণ্ঠন জ্বালিয়া, বাঁশের লাঠিগাছা ঘরের কোণ হইতে লইয়া বাহির হইয়া গেল। ও-পাড়ায় রায়-বাড়িতে চণ্ডীমণ্ডপে গ্রামের নিষ্কর্মা যুবকদিগের যাত্রার আখড়াই ও রিহার্সেল চলিত সেইখানে অনেকক্ষণ কাটাইয়া অনেক রাত্রে বাড়ি ফিরিয়া আসা তাহার নিত্যকর্মের ভিতর।

রামতনু মুখুয্যে মহাশয়ও অনেকক্ষণ বাহিরের ঘরে কাটাইলেন। প্রতিবেশী হরি রায় তামাকের খরচ বাঁচাইবার জন্য সকাল-সন্ধ্যায় মুখুয্যে মহাশয়ের চণ্ডীমণ্ডপ আশ্রয় করিতেন; তাঁহাকে রামতনু জানাইলেন যে তিনি খুব শীঘ্রই কাশী যাইতেছেন, কারণ আর এ-বয়সে, ইত্যাদি।…

তাঁহার এ বানপ্রস্থ অবলম্বনের আকাঙ্ক্ষার জন্য দায়ী একমাত্র তাঁহার পুত্রবধূ সুশীলা। সুশীলা সকাল নাই সন্ধ্যা নাই একটা কিছু না-বাধাইয়া থাকিতে পারে না। সে অত্যন্ত আনাড়ি, কোনো কাজই গুছাইয়া করিতে পারে না, অথচ দোষ দেখাইতে যাইলে ক্ষেপিয়া যায়। তাহার জন্য রামতনু মুখুয্যের বাড়িতে কাক চিল বসিবার উপায় নাই। শ্বশুর-শাশুড়িকে সে হঠাৎ আঁটিয়া উঠিতে পারে না বটে, কিন্তু এজন্য তাহার চেষ্টার ত্রুটি দেখা যায় না।

অনেক রাত্রে কিশোরী বাড়ি ফিরিয়া আসিয়া দেখিল, তাহার ঘরে খাবার ঢাকা আছে এবং স্ত্রী ঘুমাইতেছে। খাবারের ঢাকা খুলিয়া আহারাদি শেষ করিয়া সে শুইতে গিয়া দেখিল, স্ত্রী ঘুম-জড়ানো চক্ষে বিছানার উপর উঠিয়া বসিয়াছে। স্বামীকে দেখিয়া একটু অপ্রতিভের সুরে বলিল—কখন এলে? তা আমায় একটু ডাকলে না কেন?

কিশোরী বলিল—আর ডেকে কী হবে? আমার কী আর হাত-পা নেই! নিতে জানিনে?

হঠাৎ তাহার স্ত্রী রাগিয়া উঠিল—নিতে জানেনা তো জেনো। কাল থেকে আমার এখানে আর বনবে না। এ যেন হয়েছে শক্রপুরীর মধ্যে বাস—বাড়িসুদ্ধ লোক আমার পেছনে এমন করে লেগেছে কেন শুনতে চাই। না-হয় বরং…

কান্নায় ফুলিয়া সে বালিশের উপর মুখ গুঁজিল।

কিশোরী দেখিল স্ত্রী রাতদুপুরের সময় গায়ে পড়িয়া ঝগড়া করিয়া একটা বিভ্রাট বাধাইয়া তোলে বুঝি। এরকম করিয়া আর সংসার করা চলে না—ভাত ঢাকা ছিল, খুলিয়া লইয়া খাইয়াছে, ইহাতেও যদি স্ত্রী চটিয়া যায় তাহা হইলে আর পারা যায় না; কিছু না, ওই একটা ছল; ওই সামান্য সূত্র ধরিয়া এখনি সে একটা রাম রাবণের যুদ্ধ বাধাইয়া তুলিবে।

কিশোরী বলিল—যা খুশি কালকে কোরো—এখন একটু ঘুমুতে দাও। ঘুমুচ্ছিলে বলেই আর ডাকিনি এই তো অপরাধ? তা বেশ, কাল থেকে ওঠাব, চুলের নড়া ধরে ওঠাব।

সুশীলা কথাও বলিল না, মুখও তুলিল না, বালিশে মুখ গুঁজিয়া পড়িয়া রহিল।

পরদিন সকালে উঠিয়া রামতনু মুখুয্যে শুনিলেন, চৌধুরীরা খবর পাঠাইয়াছে কয়েকটি নতুন সাক্ষীর তালিম দিতে হইবে। যাইবার সময় তিনি বলিলেন—ও বউমা। একটু সকাল সকাল ভাত দিয়ো, কোর্টে যেতে হবে।


Fahad Alim

19 Blog posts

Comments