মৌরীফুল 7

বড়দের রোম্যান্টিক গল্প, ধারাবাহিক/ পার্ট-০৭

[পার্ট ০৬, শেষ অংশ হতে.....]

 

 

কলিকাতার বউটি বলিল—এসো ভাই, আমরা একটা কিছু পাতাই। কেমন?

সুশীলা খুশি হইয়া বলিল—খুব ভালো ভাই, কি পাতাব বলো?…

—এক কাজ করি এসো—আসতে আসতে নদীর ধারে যে মৌরীফুল দেখে এলাম, এসো আমরা দুজনে পাতাই। কেমন!

সুশীলা আহ্লাদের সঙ্গে এ প্রস্তাবে সম্মতি দিল। নদী হইতে অঞ্জলি করিয়া জল তুলিয়া তাহারা মৌরীফুল পাতাইল।

এমন সময় মোক্ষদা ডাকিলেন—বউমারা এদিকে এসো।

তাহারা গিয়া দেখিল গাছতলায় অনেক লোক—সেদিন পূজা দিতে অনেক লোক আসিয়াছিল। প্রকাণ্ড বটগাছ, তলায় ভাঙা ইটের মন্দির। গাছতলা হইতে একটু দূরে এক বুড়ি নানা ঔষধ বিক্রয় করিতেছে। সুশীলা ও তাহার সঙ্গিনী সেখানে গিয়া জিজ্ঞাসা করিয়া জানিল, রোগ সারা, ছেলে হওয়া হইতে শুরু করিয়া সকল রকমের ঔষধই আছে, গোরু হারাইলে খুঁজিয়া বাহির করিবার পর্যন্ত। মেয়েরা সেখানে ভিড় করিয়া দাঁড়াইয়া ঔষধ কিনিতেছে। সুশীলারসঙ্গিনী হাসিয়া তাহার হাত ধরিয়া টানিয়া তাহাকে সেখান হইতে মন্দিরের দিকে লইয়া চলিল, বলিল—চলো মৌরীফুল, দেখিগে কেমন পুজো হচ্ছে।

একটুখানি মন্দিরে দাঁড়াইয়া সুশীলা একটা ছুতায় সেখান হইতে বাহির হইয়া আসিয়া ঔষধ-বেচা বুড়ির নিকট দাঁড়াইল। সেখানে তখন কেহ ছিল না, বুড়ি বলিল—কী চাই?

সুশীলার মুখ লজ্জায় আরক্ত হইয়া উঠিল।

বুড়ি বলিল—আর বলতে হবে না মা-ঠাকরুন। তা তোমার তো এখনও ছেলে পিলে হবার বয়েস যায়নি, ও বয়েসে অনেকের…

সুশীলা সলজ্জভাবে বলিল—তা নয়।

বুড়ি বলিল—এবার বুঝলাম মা-ঠাকরুন—তা যদি হয়, তাহলে তোমার সোয়ামীর বারমুখো টান আছে। একটা ওষুধ দিই, নিয়ে যাও, একমাসের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে—সব ঠিক হয়ে যাবে—ও-রকম কত হয় মা-ঠাকরুন।

বুড়ি একটা শিকড় তুলিয়া বলিল—এই নাও, বেটে খাইয়ে দিয়ো। যেন কেউ টের না-পায়, টের পেলে আর ফল হবে না। আট আনা লাগবে।

স্বামীর বার-মুখো টান আছে—এ-কথা শুনিয়া সুশীলা খুব দমিয়া গেল। তাহার আঁচলে একটা আধুলি বাঁধা ছিল, আজকার দিনে জিনিসটা-আসটা কিনিবার জন্যে সে ইহা বাড়ি হইতে শাশুড়িকে লুকাইয়া আনিয়াছিল। বাড়ির বার হওয়া তো বড়ো ঘটে না, কাজেই এটা তাহার পক্ষে একটা উৎসবের দিন। আধুলিটি শাশুড়িকে লুকাইয়া আনিবার কারণ—মোক্ষদা ঠাকরুন জানিতে পারিলে ইহা এতক্ষণ তাহার আঁচলে থাকিত না। সুশীলা আঁচল হইতে আধুলিটি খুলিয়া বুড়িকে দিল এবং খাওয়াইবার প্রণালী জানিয়া লইয়া শিকড়টি কাপড়ের মধ্যে গোপনে

বাঁধিয়া লইল।

পূজা দেওয়া সাঙ্গ হইয়া গেল। সকলে আবার আসিয়া নৌকায় উঠিল। গ্রামের ঘাটের কাছাকাছি আসিলে সুশীলা বলিল—ভাই, তুমি এখন দিনকতক আছ তো?

—না ভাই, আমি কাল কী পরশু চলে যাব। তাহলেও তোমায় ভুলব না মৌরীফুল, তোমার মুখখানি আমার মনে থাকবে ভাই—চিঠিপত্র দেবে তো? এবার পাড়াগাঁয়ে এসে তোমায় কুড়িয়ে পেলাম—তোমায় কখনো ভুলব না।

সুশীলার চোখে জল আসল, এত মিষ্ট কথা তাহাকে কে বলে? সে কেবল শুনিয়া আসিতেছে সে দুঙ্কু, একগুঁয়ে ঝগড়াটে।


Fahad Alim

19 Blog posts

Comments