হযরত আবু বকরের রা. আরেকটি অবদান পবিত্র কুরআনের সংকলন ও সংরক্ষণ। তাঁর খিলাফতকালের প্রথম অধ্যায়ে আরবের বিভিন্ন স্থানে বিদ্রোহ দেখা দেয়। সেইসব বিদ্রোহ দমন করতে গিয়ে কয়েকশত হাফেজে কুরআন শাহাদাত বরণ করেন। শুধুমাত্র মুসায়লামা কাজ্জাবের সাথে যে যুদ্ধ হয় তাতেই সাত শ’ হাফেজ শহীদ হন। অতঃপর হযরত উমারের পরামর্শে হযরত আবু বকর রা. সম্পূর্ণ কুরআন একস্থানে গ্রন্থাকারে সংকলন করেন এবং কপিটি নিজের কাছে সংরক্ষণ করেন। ইতিহাসে কুরআনের এই আদি কপিটি ‘মাসহাফে সিদ্দীকী’ নামে পরিচিত। পরবর্তীকালে হযরত ‘উসমানের রা. যুগে কুরআনের যে কপিগুলি করা হয় তা মূলতঃ ‘মাসহাফে সিদ্দীকীর’ অনুলিপি মাত্র। পবিত্র কুরআন ও রাসূলের বাণীতে আবু বকরের সীমাহীন মর্যাদা ও সম্মানের কথা বহুবার বহু স্থানে ঘোষিত হয়েছে।
হযরত আবু বকর রা. রাসূলুল্লাহ সা. থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। আল্লামা জাহাবী ‘তাজকিরাতুল হুফফাজ’গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সতর্ক। অত্যধিক সতর্কতার কারণে তাঁর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা অন্যদের তুলনায় খুব কম। উমার, উসমান, আবদুর রহমান ইবন আউফ, ইবন মাসউদ, ইবন উমার, ইবন আমর, ইবন আব্বাস, হুজাইফা, যায়িদ ইবন সাবিত, উকবা, মা’কাল, আনাস, আবু হুরাইরা, আবু উমামা, আবু বারাযা, আবু মুসা, তাঁর দু’কন্যা আয়িশা ও আসমা প্রমুখ সাহাবী তাঁর থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। বিশিষ্ট তাবেয়ীরাও তাঁর থেকে বর্ণনা করেছেন।
১৩ হিজরীর ৭ জমাদিউল উখরা হযরত আবু বকর রা. জ্বরে আক্রান্ত হন। ১৫ দিন রোগাক্রান্ত থাকার পর হিজরী ১৩ সনের ২১ জামাদিউল উখরা মুতাবিক ৬৩৪ খৃস্টাব্দের আগস্ট মাসে ইনতিকাল করেন। হযরত আয়িশার রা. হুজরায় রাসূলুল্লাহর সা. পাশে একটু পূব দিকে তাঁকে দাফন করা হয়। তিনি দু’বছর তিন মাস দশ দিন খিলাফতের দায়িত্ব পালন করেন।