মৌরীফুল 9

বড়দের রোম্যান্টিক গল্প, ধারাবাহিক/ পার্ট-০৮

[পার্ট ০৮, শেষ অংশ হতে......]

 

 

কাঠ নাই দেখিয়া সুশীলা অত্যন্ত চটিয়া গেল। এদিকে বাড়িতেও এমন কেহ নাই যাহাকে বকিয়া গায়ের ঝাল মিটায়, কাজেই সে আপন মনে চীৎকার করিতে লাগিল—পারব না, রোজ রোজ এমন করে সংসার করা আমায় দিয়ে হয়ে উঠবে না—আজ দু-মাস ধরে বলছি কাঠ নেই কাঠ নেই—এদিকে রান্নার বেলা ঠিক আছেন সব, তার একটু এদিক-ওদিক হবার জো নেই—কী দিয়ে রাঁধবে? হাত পা উনুনের মধ্যে দিয়ে রাঁধবে নাকি? রোজ রোজ কাঠ কাটো, কেটে রাঁধো—অত সুখে আর কাজ নেই—থাকল হাঁড়ি পড়ে, যিনি যখন আসবেন, তিনি তখন করে নেবেন…

রাঁধিবার কোনো আয়োজন সে করিল না। খানিকটা বসিয়া বসিয়া তাহার মনে হইল ততক্ষণ মশলাগুলা বাটিয়া রাখা যাক। সে মাঝে মাঝে কাজের সুবিধার জন্য কয়েকদিনের মশলা একসঙ্গে বাটিয়া রাখিত।

বেলা প্রায় দশটার সময় একটি অল্পবয়সি ফুটফুটে বউ, পরনে একখানা পুরোনো চেলীর কাপড়, হাতে থাকিবার মধ্যে দু-গাছি শাঁখা—একটি বাটি হাতে রান্নাঘরের দোরের কাছে ভয়ে ভয়ে উঁকি মারিয়া বলিল—দিদি আছ নাকি?

সুশীলা মশলা বাটিতে বাটিতে মুখ তুলিয়া চাহিয়া বলিল—আয় আয় ছোটো বউ—আয় না ঘরের মধ্যে—ঠাকরুন নেই…

বউটি ঘরে ঢুকিয়া বলিল—একি দিদি, এত বেলা হল এখনও রান্না চড়াওনি যে!

সুশীলা মুখ ঘুরাইয়া বলিল—রান্না চড়াব! হাঁড়িকুড়ি ভেঙে ফেলিনি এই কত!…

বউটির চোখে ভয়ের চিহ্ন পরিস্ফুট হইল, সে বলিল—না দিদি, ওসব কিছু কোরো না, ভাত চড়িয়ে দাও লক্ষ্মীটি, নইলে জানো তো কীরকম লোক সব…

—দেব—দেখবে সব আজ কীরকম মজা, রোজ রোজ কাঠ কাটব আর ভাত রাঁধব, উঃ!

—কাঠ নেই বুঝি? আচ্ছা, দা-খানা দাও দিদি, আমি দিচ্ছি কেটে।

—তোর কী দায় তুই দিতে যাবি? বোস ঠান্ডা হয়ে—যাদের গরজ আছে তারা নিজেরা বুঝুক গিয়ে…।

—তোমার পায়ে পড়ি দিদি, দাও রান্নাটা চড়িয়ে, জানো তো ওরা…

—তুই বোস দেখি ওখানে চুপ করে, দেখিস এখন মজা—আজ দু-মাস ধরে রোজ বলছি কাঠ নেই, কথা কানে যায় না কারুর—আজ মজাটি দেখাব…

সুশীলার একগুঁয়েমিতে বউটি কিছু ভীতা হইল, কারণ মজা কোন পক্ষ দেখিবে এ সম্বন্ধে তাহার একটু সন্দেহ ছিল। কিন্তু সাহস করিয়া আর কিছু বলিতে না পারিয়া সে চুপ করিয়া রহিল।

এই বউটি রামতনু মুখুয্যের জ্যাঠতুতো ভাই রামলোচন মুখুয্যের পুত্রবধূ। পাশেই এদের বাড়ি। রামলোচনের অবস্থা খুবই খারাপ—তা সত্বেও তিনি বছর দুই হইল ছেলের বিবাহ দিয়েছেন—রামলোচনের স্ত্রী ছিল না, পুত্রবধূই গৃহিণী। দুরবস্থায় সংসারে ছেলেমানুষ বউকে সংসার করিতে অত্যন্ত বেগ পাইতে হইত, সে সময়ে-অসময়ে বাটি হাতে খুঁচি হাতে এ বাড়িতে হাত পাতিয়া তেলটা নুনটা লইয়া যাইত, চাউল না-থাকিলে আঁচলে করিয়া চাউল লইয়া যাইত—ধার বলিয়াই লইয়া যাইত—কখনও শোধ করিতে পারিত, কখনও পারিত না।


Fahad Alim

19 Blog posts

Comments