মৌরীফুল 10

বড়দের রোম্যান্টিক গল্প, ধারাবাহিক/ পার্ট-১০

[পার্ট ০৯, শেষ অংশ হতে.....]

 

পাশের বাড়ির বউটি তখন শ্বশুর ও স্বামীকে খাওয়াইয়া সবে নিজে খাইতে বসিতেছিল, হঠাৎ এ-বাড়ির মধ্যে মারের শব্দ শুনিয়া সে খাওয়া ফেলিয়া সুশীলাদের খিড়কিতে ছুটিয়া আসিয়া উঁকি মারিয়া দেখিল—সুশীলা উঠানে দাঁড়াইয়া আছে, বাটনার পাত্রের উপর পড়িয়া গিয়াছিল, কাপড়ে-চোপড়ে হলুদের ছোপ; মাথার খোঁপা একেবারে খুলিয়া কতক চুল মুখের উপর কতক পিঠের উপর পড়িয়াছে; গাঙ্গুলী-বাড়ি হইতে দুটো ছেলে ব্যাপার দেখিবার জন্য ছুটিয়া আসিয়াছে, আরও দু-একজন পাড়ার মেয়ে সামনের দরজা দিয়া উঁকি মারিতেছে —ওদিকে পাঁচিলের উপর দিয়া মুখ বাড়াইয়া তাহার নিজের শ্বশুর রামলোচন মজা দেখিতেছেন।

চারিদিকের কৌতূহলদৃষ্টির মাঝখানে, সর্বাঙ্গে হলুদের ছোপ ও ধূলিমাখা বিস্ৰস্তকুন্তলা, অপমানিতা দিদিকে অসহায়ভাবে উঠানে দাঁড়াইয়া থাকিতে দেখিয়া তাহার বুকের মধ্যে কীরকম করিয়া উঠিল—কিন্তু সে একে ছেলেমানুষ তাহাতে অত্যন্ত লজ্জাশীলা, শ্বশুর ভাসুর এবং এক-উঠান লোকের মধ্যে বাড়ির ভিতর ঢুকিতে না-পারিয়া প্রথমটা সে খিড়কির বাহিরে আকুলি-বিকুলি করিতে লাগিল।

কিন্তু গাঙ্গুলী-বাড়ির প্রৌঢ় গাঙ্গুলী মহাশয়ও যখন হুকা হাতে—কী হে রামতনু, বলি ব্যাপারখানা কী শুনি—বলিয়া বাড়ির মধ্যের উঠানে আসিয়া হাজির হইলেন, তখন সে আর থাকিতে না-পারিয়া বাড়ির মধ্যে ঢুকিয়া পড়িল এবং সুশীলার হাত ধরিয়া খিড়কি-দোর দিয়া বাহিরে লইয়া গিয়াই হঠাৎ ফুপাইয়া কাঁদিয়া উঠিয়া বলিল—কেন ও-রকম করতে গেলে দিদিমণি, লক্ষ্মীটি, তখনই যে বারণ করলাম?…

তার পরদিন দুপুরবেলা সুশীলা রান্নাঘরে রাঁধিতেছিল। কিশোরী খাইতে বসিয়াছে, মোক্ষদা ঠাকরুন কী প্রয়োজনে রান্নাঘরে ঢুকিয়া দেখিলেন, সুশীলা পিছনে ফিরিয়া ভাত বাড়িতে বাড়িতে স্বামীর ডালের বাটিতে কী গুলিতেছে, পাশে একটা ছোটো বাটি। মোক্ষদার কীরকম সন্দেহ হইল, তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন— বউমা, তোমার বাটিতে কী?—কি মেশাচ্ছ ডালের বাটিতে?

সুশীলা পিছন ফিরিয়াই শাশুড়িকে দেখিয়া যেন কেমন হইয়া গেল। তাহার চোখমুখের ভাব দেখিয়া মোক্ষদার সন্দেহ আরও বাড়িল—তিনি বাটিটা হাতে তুলিয়া লইয়া দেখিলেন তাহাতে সবুজ মতো কী একটা বাটা।

তিনি কড়াসুরে জিজ্ঞাসা করিলেন—কী বেটেছ এতে?

তিনি দেখিলেন পুত্রবধূ উত্তর দিতে পারিতেছে না, তাহার মুখ লাল হইয়া উঠিয়াছে।

ইহার পর একটা ভয়ানক কাণ্ড ঘটিল। মোক্ষদা ঠাকরুন বাটি হাতে—ওমা কী সর্বনাশ! আর একটু হলেই হয়েছিল গো,—বলিয়া উঠানে আসিয়া চীৎকার করিয়া হাট বাধাইলেন।

কিশোরী দালান হইতে উঠিয়া আসিল, রামতনু আসিলেন, গাঙ্গুলী-বাড়ির মেয়ে-পুরুষ আসিল, আরও অনেকে আসিল।

মোক্ষদা সকলের সামনে সেই বাটিটা দেখাইয়া বলিতে লাগিলেন, দ্যাখো তোমরা সকলে, তোমরা ভাব শাশুড়ি-মাগি বড়ো দুষ্টু—নিজের চোখে দেখে নাও ব্যাপার, কী সর্বনাশ হয়ে যেত এখনি, যদি আমি না-দেখতাম—দোহাই বাবা তারকনাথ, কী ঠেকানই আজ ঠেকিয়েছ…

এক-উঠান লোক—সকলেই শুনিল রামতনুর দুরন্ত পুত্রবধূ স্বামীর ভাতে বিষ না কী মিশাইয়া খাওয়াইতে গিয়া ধরা পড়িয়াছে। কেউ অবাক হইয়া গেল, কেউ মুচকি হাসিয়া বলিল—ও-সব আমরা অনেককাল জানি, আমরা রীত দেখলেই মানুষ চিনি, তবে পাড়ার মধ্যে বলে এতদিন…


Fahad Alim

19 Blog posts

Comments