কিশোর মুহাম্মাদ ও ব্যবসায় গমন

১০ বা ১২ বছর বয়সে চাচার সাথে ব্যবসা উপলক্ষে তিনি সর্বপ্রথম সিরিয়ার বুছরা (بُصْرَى) শহরে গমন করেন। সেখানে জিরজীস (ج

আবু ত্বালেব বললেন, কিভাবে আপনি একথা বুঝলেন? তিনি বললেন, গিরিপথের অপর প্রান্ত থেকে যখন আপনাদের কাফেলা দৃষ্টি গোচর হচ্ছিল, তখন আমি খেয়াল করলাম যে, সেখানে এমন কোন প্রস্তরখন্ড বা বৃক্ষ ছিল না, যে এই বালকের প্রতি সিজদায় পতিত হয়নি। আর নবী ব্যতীত এরা কাউকে সিজদা করে না। তাছাড়া মেঘ তাঁকে ছায়া করছিল। গাছ তার প্রতি নুইয়ে পড়ছিল। এতদ্ব্যতীত ‘মোহরে নবুঅত’ দেখে আমি তাকে চিনতে পেরেছি, যা তার (বাম) স্কন্ধমূলে ছোট্ট ফলের আকৃতিতে উঁচু হয়ে আছে। আমাদের ধর্মগ্রন্থে আখেরী নবীর এসব আলামত সম্পর্কে আমরা আগেই জেনেছি। অতএব হে আবু ত্বালেব! আপনি সত্বর একে মক্কায় পাঠিয়ে দিন। নইলে ইহূদীরা জানতে পারলে ওকে মেরে ফেলতে পারে’। অতঃপর চাচা তাকে কিছু গোলামের সাথে মক্কায় পাঠিয়ে দিলেন। এ সময় পাদ্রী তাকে পিঠা ও তৈল উপহার দেন।[1] 

 

  ইবনু ইসহাক বলেন, পাদ্রী বাহীরা তাকে পৃথকভাবে ডেকে নিয়ে লাত ও ‘উযযার দোহাই দিয়ে কিছু প্রশ্ন করেন। তখন তরুণ মুহাম্মাদ তাকে বলেন, আমাকে লাত ও ‘উযযার নামে কোন প্রশ্ন করবেন না। আল্লাহর কসম! আমি এদু’টির চাইতে কোন কিছুর প্রতি অধিক বিদ্বেষ পোষণ করি না। অতঃপর তিনি তাকে তার নিদ্রা, আচরণ-আকৃতি ও অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। সেগুলিতে তিনি তাদের কিতাবে বর্ণিত গুণাবলীর সাথে মিল পান। অতঃপর তিনি আবু তালিবকে বলেন, ছেলেটি কে? আবু তালিব বলেন, এটি আমার বেটা। তিনি বললেন, না। এটি আপনার পুত্র নয়। এই ছেলের বাপ জীবিত থাকতে পারেন না। তখন আবু তালিব বললেন, এটি আমার ভাতিজা। বাহীরা বললেন, তার পিতা কি করেন? জবাবে আবু তালিব বলেন, তিনি মারা গেছেন এমতাবস্থায় যে তার মা গর্ভবতী ছিলেন। বাহীরা বললেন, আপনি সত্য বলেছেন। আপনি ভাতিজাকে নিয়ে আপনার শহরে চলে যান এবং ইহূদীদের থেকে সাবধান থাকবেন। ... আপনার ভাতিজার মহান মর্যাদা রয়েছে’ (ইবনু হিশাম ১/১৮২)।

 

  কিছু কিছু খ্রিষ্টান প্রাচ্যবিদ এই ঘটনা থেকে নবী চরিত্রের উপরে অপবাদ দিতে চেষ্টা করেছেন যে, তিনি পাদ্রী বাহীরা-র নিকট থেকে তাওরাত শিখেছিলেন। যা থেকে তিনি কুরআন বর্ণনা করেছেন।[2] অথচ তখন তাওরাত বা ইনজীল আরবীতে অনূদিত হয়নি। তাছাড়া মুহাম্মাদ (ছাঃ) তখন ছিলেন মাত্র ১০/১২ বছরের বালক। যিনি মাতৃভাষা আরবীতেই লেখাপড়া জানতেন না (আনকাবুত ২৯/৪৮)। তিনি ও তাঁর বংশের সবাই ছিলেন উম্মী বা নিরক্ষর। তাহ’লে কিভাবে এই সংক্ষিপ্ত সাক্ষাতে তিনি পাদ্রীর নিকট থেকে তাওরাত শিখলেন, যা হিব্রু ভাষায় লিখিত। কিভাবে তিনি তার অর্থ বুঝলেন? অতঃপর সেগুলি কিভাবে সাক্ষাতের ২৮/৩০ বছর পর আরবীতে পরিবর্তন করে ‘কুরআন’ আকারে পেশ করলেন?

 

[1]. ইবনু হিশাম ১/১৮০-৮৩; তিরমিযী হা/৩৬২০; অত্র হাদীছে বেলালের সাথে তাঁকে মক্কায় ফেরৎ পাঠানোর কথা এসেছে, যেটা ‘মুনকার’ (منكر وغير محفوظ)। এ অংশটুকু বাদে হাদীছ ছহীহ। আলবানী, মিশকাত হা/৫৯১৮ টীকা-১। রাযীন-এর বর্ণনায় এসেছে যে, আলী (রাঃ) তাঁর পিতা আবু ত্বালিব সূত্রে বলেন যে, আমি তাকে একদল লোক সহ মক্কায় ফেরৎ পাঠাই, যাদের মধ্যে বেলাল ছিল’ (মিরক্বাত হা/৫৯১৮-এর আলোচনা)।

 

[2]. সীরাহ নববিইয়াহ ছহীহাহ ১/১১০; গৃহীত : গোস্তাফ লুবূন, আরব সভ্যতা পৃঃ ১০২; মন্টোগোমারী ওয়াট, মক্কায় মুহাম্মাদ পৃঃ ৭৫।

তরুণ মুহাম্মাদ ও ‘ফিজার’ যুদ্ধঃ তিনি যখন পনের কিংবা বিশ বছর বয়সে উপনীত হন, তখন ‘ফিজার যুদ্ধ’ (حَرْبُ الْفِجَارِ) শুরু হয়। এই যুদ্ধে একপক্ষে ছিল কুরায়েশ ও তাদের মিত্র বনু কিনানাহ এবং অপর পক্ষে ছিল ক্বায়েস আয়লান। যুদ্ধে কুরায়েশ পক্ষের জয় হয়। কিন্তু এ যুদ্ধের ফলে ‘হারাম’ মাস (যে মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ) এবং কা‘বার পবিত্রতা বিনষ্ট হয় বলে একে ‘হারবুল ফিজার’ বা দুষ্টুদের যুদ্ধ বলা হয়।

 

  তরুণ মুহাম্মাদ এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং চাচাদের তীর যোগান দেবার কাজে সহায়তা করেন বলে যে বর্ণনা বিভিন্ন ইতিহাস গ্রন্থে রয়েছে, তা বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত নয়।[1] বরং এটাই সঠিক যে, আল্লাহপাক তাঁকে হারাম মাসে যুদ্ধে অংশগ্রহণের পাপ থেকে রক্ষা করেন। যেমন জন্ম থেকেই আল্লাহ তাঁকে সকল মন্দকর্ম থেকে রক্ষা করেছেন (সীরাহ ছহীহাহ ১/১১৪)।

 

[1]. ইবনু হিশাম ১/১৮৬; আর-রাহীক্ব ৫৯ পৃঃ; সীরাহ ছহীহাহ ১/১১১; মা শা-‘আ ১৬ পৃঃ।


Salma Akter

233 Blog posts

Comments