[পার্ট-০১]
পেপারটা খুলতেই খবরের শিরোনাম “নীল পাহাড়ে আতঙ্ক।” রজত কফির কাপটা নিয়ে নড়েচড়ে বসলো। ভালো করে খবরটা পড়তে শুরু করলো।
উড়িষ্যার ময়ূরভঞ্জ জেলার ছোট্ট একটা গ্রাম নিশ্চিন্তা। গত তিন মাস ধরে অদ্ভুত ভাবে মানুষের মৃত্যু শিহরণ জাগাচ্ছে গোটা জেলায়। ভয় পেয়ে গ্রাম থেকে মানুষ পালিয়ে আসছে। আশ্রয় নিচ্ছে অন্য গ্রামে। রাত হলেই ভয়ংকর বিভীষিকা গ্রাস করছে গোটা গ্রামকে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো বাড়ি নিশানায়। মৃত্যু হচ্ছে পরিবারের সকলের।
রহস্যের গন্ধ পেলো রজত। রজত ভট্টাচার্য পেশায় একজন জ্যোতিষী। নেশায় তান্ত্রিক। আবার ভূতান্বেষীও বলা যেতে পারে। খবর কাগজটা রেখে নিজের সাধনার ঘরে বসে একাগ্র চিত্তে ধ্যানে মগ্ন হলো রজত। চোখের সামনে নিশ্চিন্তায় ঘটে যাওয়া ভয়ংকর ঘটনা ভেসে উঠতে লাগলো। প্রচন্ড সাহসী রজতও শিউড়ে উঠলো।
প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে রওনা দিলো নিশ্চিন্তার উদ্দেশ্যে। নেশায় ভূতান্বেষী তাই বিভিন্ন রাজ্য ঘুরে আঞ্চলিক ভাষা ওর রপ্ত।
আজও গাঢ় অন্ধকারের মধ্যে একদল মানুষ হৈ হৈ চিৎকার করে ছুটে এল পাহাড়ের কাছে। কিন্তু যেই না নীল পাহাড়ের সামনে এলো নিঃশব্দে বোবা হয়ে গেল সবাই। কারোর মুখে কোনো কথা নেই। রাতের অন্ধকারে জ্বলন্ত মশালের আলো ছাড়া আর কোথাও কোনো আলোর চিহ্ন নেই।
গ্রামের নাম নিশ্চিন্তা, উড়িষ্যার ময়ূরভঞ্জ জেলায় এই গ্রাম। গোটা গ্রামটাকে ঘিরে এই নীল পাহাড়। অপূর্ব সুন্দর এই পাহাড়। নীল পাহাড় নাম এই কারণেই বহু বহু যুগ আগে স্বয়ং নীলকন্ঠ এই পাহাড়ে সাধনা করেছিলেন। গ্রামের মানুষজন তাদের পূর্বপুরুষের থেকে এই গল্প শুনে আসছে। নিশ্চিন্তা গ্রামে বেশ কিছু আদিবাসী সম্প্রদায় মানুষ বসবাস করে।
খুব গরীব এই গ্রামটা, প্রত্যেকের ঘরে ঘরে গোরু, ছাগল, মুরগি পোষে। আর কিছু চাষ করে কোনো রকমে দিন কেটে যায় গ্রামের মানুষের। অভাব অনটনের জন্যে প্রত্যেক দিন সবার বাড়িতে ঝগড়া অশান্তি লেগেই থাকতো। অথচ কিছু বছর আগে গ্রামের পরিবেশটাই অন্য রকম ছিল। সুখ ছিল শান্তি ছিল। অর্থাভাব থাকলেও নিজেদের মধ্যে বড় মিলমিশ ছিল।
এই ভাবে দিন মাস বছর পার হয়, গ্রামের লোকেরা দিন গুনত, কবে সুদিন আসবে এই গ্রামে। গ্রামে লোকেদের সেই ভাবনার অবসান হলো একদিন।
মাস তিনেক আগের কথা, গ্রামের প্রত্যেকটা লোকের মুখে মুখে বলাবলি হতে লাগল যে ওই নীল পাহাড়ের গুহার মধ্যে কোনো এক সিদ্ধ পুরুষ এসেছেন। কিন্তু সেই যোগী কোথা থেকে এসেছেন, কি উদ্দেশ্যে এসেছেন, তা কারোর জানা নেই, এমন কি কেউই তাকে কখনো দেখেনি।