[পার্ট-০২]
এর আগে এমন ঘটনা আগে কখনো হয়েছে বলে কারোর মনে পড়ছে না। তাই গ্রামের মানুষের চোখে মুখে চাপা আতঙ্কের ছাপ। গ্রামের লোকেরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ঠিক করলো ওই নীল পাহাড়ের গুহায় তারা যাবে। সেই মত পরের দিন গ্রামের সমস্ত লোকজনেরা একজোট হয়ে নীল পাহাড়ের রওনা দিলো।
পাহাড়ের চূড়াতে রয়েছে এই সেই গুহা, আর পাহাড়টাও বেশ উঁচু বলে, গ্রামের লোকেরা সচরাচর খুব একটা কেউ আসে না এই গুহার কাছে। একে একে করে সবাই অতি কষ্টে গুহায় কাছে এসে পৌঁছায়।
গুহায় দিনের বেলায় সূর্যের আলো ঢোকে না বলে বেশ অন্ধকারাছন্ন হয়ে রয়েছে। নিজেদের মধ্যে একটা অজানা ভয়ে একে অপরকে আতঙ্কের চোখে দেখলো।
কিছুক্ষণ পর সবাই গুহার মধ্যে চোখ রাখতে দেখতে পেল আবছা অন্ধকার গুহার ভেতরে মাথা ভর্তি চুলে জটা, মুখ ভর্তি দাঁড়ি গোঁফ, চোখ দুটো ধূসর লাল,গলায় রুদ্রাক্ষর মালা, আর কোমরে একটা লাল কাপড় জড়ানো এক সিদ্ধ পুরুষকে। যাকে দেখে গ্রামের সবাই চমকে ওঠে।
তৎক্ষণাৎ কয়েক পা পিছিয়ে এসে, নিজেদের মধ্যে ফিসফিস করে বলাবলি করতে লাগলো নিশ্চয় কিছু উদ্দেশ্যে এখানে এসেছেন। কিন্তু কেউ আর সাহস করে ওই যোগীকে কেউ জিজ্ঞাসা করতে পারছে না কেন এই গুহায় এসেছে বা কি তাঁর উদ্দেশ্য। সাহস করে গ্রামের মোড়ল জিজ্ঞাসা করে ফেললো “আপনি কে? কেনই বা এখানে এসেছেন?”
একসাথে এতগুলো প্রশ্নবান, এতটুকুও বিচলিত করলো না ওই যোগী কে। বরং নীরব হয়ে স্থির ভাবে তাকিয়ে রয়েছে গ্রামের লোকেদের দিকে। বেশ খানিকক্ষণ বাদে যোগী বললেন, “আমি এক বিশেষ তন্ত্র সাধনার জন্য এই পাহাড়ে এসেছি। এই পাহাড়টা খুব শান্ত নিরিবিলি পাহাড় আর স্বয়ং মহাদেবের অবস্থান এই পাহাড়ে।”
যোগী কথাগুলো বলে শেষ করতে পারলো না গ্রামের লোকেরা একসাথে বলে “এখানে কোনো তন্ত্র সাধনা হবে না।” সেই মুহূর্তে কাপালিক বলে উঠে, “তোদের গ্রামে প্রত্যেকের ঘরে ঘরে ঝগড়া অশান্তি প্রতিদিন লেগে থাকে। আর প্রত্যেকের ঘরে অভাব অনটন আছেই। তোরা চাস না তোদের গ্রামে একটু সুখ শান্তি ফিরে আসুক।”
এই কথা শোনার পর গ্রামের লোকেরা সবাই চুপ হয়ে গেল সেইমুহূর্তে। গ্রামের সমস্ত লোকের সরল মনে কয়েকটা কথা ঘুরপাক খাচ্ছে, এই যোগী আমাদের গ্রামে সমস্ত কিছুই বলে দিলো কিভাবে? যেন কোনো স্বয়ং বিধাতা ওদের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। নিজেদের গ্রামে সুখ শান্তি কে বা না চায়, তাই সবাই এক সাথে বলে “আপনি এর প্রতিকার করুন, আপনি তো একজন সিদ্ধ পুরুষ। আপনি এর প্রতিকার করতে পারবেন।”
তখনই যোগী বলল “বেশ আমি এই গ্রামে সুখ শান্তি ফিরিয়ে আনব, তবে একটা কথা তোদের কে রাখতে হবে।”
গ্রামের সমস্ত লোকজনেরা বলে ওঠে “কি কথা?”
যোগী বলল, “গ্রামের সুখ শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য আমার সাধনার জন্য একটা জীবের প্রাণ সমর্পন করতে হবে।”