[পার্ট-০৪]
ভোরের আলোর ছিটে ফোঁটা গ্রামে আসতে গ্রামের সমস্ত লোকেরা একে অপরের খোঁজ নিতে থাকে, কারোর বাড়িতে কোনো অঘটন কিছু হয়েছে কিনা। গ্রামের মানুষের কোনো অঘটন কিছু ঘটেনি, সবাই ভালো আছে। তারপরেই গ্রামে সকলে আনন্দের উল্লাসে মেতে ওঠে। আজ থেকে যে নিশ্চিন্তা গ্রামে ঘরে ঘরে সুখ শান্তি ফিরে পাবে। হায়রে গ্রামবাসী বিধাতার লেখন যে অন্য কিছু। একটু বেলা গড়াতে গ্রামের প্রায় সকলেই মনের আনন্দে নীল পাহাড়ের উদ্দেশে রওনা দিলো।
নীল পাহাড়ের গুহায় আসা মাত্রই সবাই ভয়ঙ্কর আতঙ্কে ঠিকরে উঠল। আবার কেউ কেউ তাড়াহুড়ো করে কোনোক্রমে পাহাড় থেকে নেমে গেল। নীল পাহাড়ের গুহার কাছে আসতেই দেখলো সেই যোগীর রক্তাক্ত নিথর দেহটা পড়ে আছে।
চোখ দুটোকে কোনো এক শিকারি নেকড়ে খুবলে নিয়েছে, আর সেখান থেকে রক্ত গড়িয়ে হা করে থাকা মুখটার ভেতরে পড়ছে। বুকের মধ্যে খুবলে খুবলে মাংস তুলে নিয়েছে। অবলা প্রাণীটার গলা,ধর দুদিকে হয়ে গেছে। পাহাড়ের গুহার চারপাশে রক্ত, তন্ত্র সাধনার দ্রব্য সামগ্রীগুলো চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে।
গ্রামবাসীরা কেউ কিছুই বুঝতে পারলো না। ভয়ঙ্কর অবস্থা দেখে, শুধুই সবার চোখে মুখে গভীর আতঙ্কের ছাপ। ওই অবস্থায় গুহার মধ্যে যোগীকে ফেলে
রেখে যে যার মরণ দৌড়ে বাড়ির দিকে পালাতে লাগল।
নীল পাহাড়ের গুহায় এমন ঘটনা প্রথম, তাই গ্রামের মানুষেরা ভয়ে জড়সড় হয়ে থাকতে লাগলো। কিন্তু পাহাড়ের গুহার এইরকম মর্মান্তিক ঘটনার কোপ নিশ্চিন্তার গ্রামের ওপর পড়লো কিছু দিন পর থেকে।একের পর এক গ্রামের মানুষ থেকে পশু কেউ বাদ গেল না, এমন ভয়ঙ্কর মৃত্যু থেকে।
বৃদ্ধ ব্রজ সুবুদ্ধি কথাগুলো আধা ওড়িয়া আর বাংলা মিশিয়ে বললেন।
রজত জিজ্ঞাস করলো “তারপর, তারপর কী হলো?”
“সেদিনও ঠুয়ো লোকোমানে মরিবারে লাগি ছন্তি। সবাই প্রায় গ্রাম ছেড়ে দিয়েছে। বাপ ঠাকুরদার ভিটে, ছেড়ে যাই কেমনে তাই কামড়ে পরে আছি।” ব্রজবাবু বললেন।
রজত নীলপাহাড়ে যাবার জন্য প্রস্তুতি নিতে লাগলো। বৃদ্ধ ব্রজবাবু বললো, “তুমারও হাত ধরিথি কুহুছি সেঠিকি যাও নি বিপদ আছি।”
রজত বললো কিচ্ছু হবে না আমার। আমি আজীবন এই সবের সন্ধানে ঘুরে বেরিয়েছি। বিপদ আমাকে সহজে গ্রাস করে না। মা চামুন্ডা সর্বদা আমায় রক্ষা করেন।
সেই দিন গভীর রাতে রজত রওনা দিল নীল পাহাড়ের গুহায়। রজত গুহায় আসার পর স্পষ্ট বুঝতে পারলো ওর আশেপাশে অদৃশ্য ভাবে কেউ একজন আছে। নিঃশব্দ রাতের অন্ধকারে গুহায় কে থাকতে পারে তা এতটুকু বুঝতে অসুবিধা হল না রজতের। স্বয়ং চামুন্ডা যার সহায় তার আবার কিসের ভয়।
রজত বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে গুহার সামনে তাড়াতাড়ি করে একটা যজ্ঞ কুন্ডু তৈরি করে নিলো, ওর নিয়ে আসার সমস্ত দ্রব্য সামগ্রী ব্যাগ থেকে বের করে যজ্ঞ কুন্ডুর সামনে রাখলো। হঠাৎ করে ভয়ঙ্কর চিৎকার নিস্তব্ধ বাতাসে পাহাড়ের প্রতিধ্বনিত হতে থাকে। রজত কুমুন্ডলের গঙ্গাজল নিয়ে গুহার চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিলো।