নীল পাহাড়ে আতঙ্ক-5

আজকে আমি আপনাদের সঙ্গে Bengali Ghost Story For Child. গল্পটির নাম “নীল পাহাড়ে আতঙ্ক” আশাকরি আপনারা সকলে গল্পটি মনোযোগ সহকারে পড়?

[পার্ট-০৫]

 

 

তারপর ওই যজ্ঞ কুন্ডুর সামনে বসে মা চামুন্ডা কে আহ্বান করলো মনে মনে। পরমুহূর্তে রজতের আহ্বান পেয়ে মা চামুন্ডা স্বয়ং রজতের রক্ষা কবজ হয়ে বিরাজ করলো এই গুহায়।তারপর মন্ত্র উচ্চারণ করতে করতে জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ডুতে ঘি, বেলপাতার আহুতি দিতে থাকে। কিছুক্ষণ পর পাহাড় কাঁপিয়ে প্রচন্ড বেগে একটা ঝোড়ো হাওয়া রজতসহ যজ্ঞ কুন্ডুকে তছনছ করতে চায়। 
 
কিন্তু তা হওয়ার নয়, যেখানে স্বয়ং মা চামুন্ডা বিরাজমান। পরক্ষণে পাহাড়ে একটা ভয়ঙ্কর আর্তনাদ বাতাসে ভেসে এল। যেন কোনো পাহাড় ভেঙে গেলো। তারপরেই যজ্ঞ কুন্ডুর লেলিহান শিখার ওপর একটা অবয়ব দেখতে পেলো রজত। আর সেই অশরীরী অবয়ব বলতে আরম্ভ করলো “মু দেবী, এই গাঁরো ঝিও। মু বয়সো পনেরো।”
 
 
 
দেবীর কথাগুলোর বাংলা করলে দাঁড়ায়, “আমি দেবী, এই গ্রামেরই মেয়ে। আমার বয়স পনেরো। আমার বাবা খুব গরীব, আর আমাদের গোরু ছিল, প্রত্যেকদিন আমি গোরু নিয়ে এই পাহাড়ে কোলে চড়াতে আসতাম। সেদিনও এই পাহাড়ে গোরু চড়াতে এসেছিলাম আর সেইদিন পাহাড়ের ঘুরতে এসেছিল চারজন শয়তান ,আর ওই চারজন হায়না আমার শরীরটাকে ছিঁড়ে খেয়েছিল। আমার আকুতি ওদের কানে পৌঁছায় নি সেদিন। শরীর থেকে প্রাণ না বেরোনো পর্যন্ত উল্লাস চলেছিল। 
 
সেদিন আমার চিৎকার,আর্তনাদ কেউ শুনতে পায় নি এই গ্রামে। তারপর সেই নিথর দেহটা ফেলে দিল পাহাড়ের এক খাঁজে। আজও পর্যন্ত কেউ খোঁজ করে নি আমি কোথায়? নিজের বাবা মাও না। আর এই যোগী কিনা আমাকে দিয়ে নিজের সিদ্ধিলাভ করবে। তাই যোগীর প্রাণ আমি নিয়েছি, গ্রামের মানুষেরও প্রাণ আমি নেব। এই গ্রামটাকে শেষ করে দেব। কেউ যদি আমার রাস্তায় আসে তাকেও শেষ করব। আমার শরীরের শেষ অবশিষ্ট অংশ টুকু পাহাড়ের খাঁজে এখনো পড়ে আছে।” 
 
দেবীর কথা শেষ হতেই বিকট জোরে হাসি। তারপরেই যজ্ঞ কুন্ডুর অবয়বটা কোথায় মিলিয়ে গেল।
পরের দিন সকালে গ্রামে ব্রজবাবুর বাড়িতে এসে রজত দেখলো, ব্রজ বাবু কিসের যেন আতঙ্কে রয়েছেন। ‘কি বসতে বলবেন না?”
“এইঠি তুমহে বসো, এবে এই টাইমেরে, এতে সকারু।( ও তুমি বসো, এখন এই সময় এত ভোরে)
রজত বলে আসলে একটা কথা জানার ছিল।
 
“কড় কথা( কী কথা)?”
“আচ্ছা ব্রজ বাবু এই গ্রামে দেবী নামে কি কোনো মেয়ে ছিল?”
রজতের কথা শোনার সাথে সাথে ব্রজ বাবুর দুচোখ জলে ভরে গেল। রজতের হাত দুটো ধরে বললেন ব্রজবাবু ওড়িয়া আর বাংলা মিশিয়ে যা বললেন তার বাংলা করলে “দেবী আমারই মেয়ে। সেদিন অনেক সন্ধ্যা হয়ে গেলেও ও বাড়ি ফেরেনি। 
 
আমি খুঁজতে বেরিয়েছিলাম। রাস্তায় চার শহরের বাবুর সাথে দেখা হয়। ওদেরকে আমার মেয়ের কথা জিজ্ঞাস করি। আমার হাতে কিছু টাকা দিয়ে বলে মুখ বন্ধ রাখতে। গ্রামের মোড়লকেও ওরা হাত করে। তাই এতদিন চুপ করে থেকেছি, শুধু স্বপ্নে দুটো হাত আমার গলা জড়িয়ে বাবা বাবা বলে ডেকেছে। ও কোথায় আপনি জানেন?”
 
ব্রজ বাবুকে একটু শান্ত করিয়ে রজত বলে নীল পাহাড়ের গুহায় আর কেউ নয় আপনার মেয়ের অতৃপ্ত আত্মা ওখানে আছে ,আর সে সবাইকে মারবে কারণ তার প্রতি যে অত্যাচার হয়েছিল তা ক্ষমার যোগ্য নয়। কিন্তু আমাদের দেবীর আত্মাকে মুক্তি দিতে হবে। আর সেই জন্য আপনার সাহায্য লাগবে রজত বলে থামলো। তৎক্ষণাৎ ব্রজ বাবু বলেন কি করতে হবে বলুন, রজত বললো “আমি আপনাকে নিয়ে যাব নীল পাহাড়ের গুহায় কাছে, সেখানেই পাহাড়ের খাঁজে একটা কঙ্কাল দেখতে পাবেন, ওটাই দেবীর শরীরের শেষ অংশ। 
 
তারপর আমার দেওয়া গঙ্গাজল,বেলপাতা ওই কঙ্কালের ওপর দেবেন তাহলে আপনার মেয়ে মুক্তি পাবে। কেবল মাত্র আপনাকেই এই কাজটা করতে হবে। আর খুব সাবধানে করতে হবে এই কাজটা। কারন ও চায় না ওর শরীরের শেষ অংশ টুকু কেউ স্পর্শ করুক। ও আপনাকে অনেক প্রলোভন দেখাবে আপনি কিন্তু বিন্দু মাত্র বিচলিত হবেন না । না হলে বিপদের শেষ থাকবে না।”
ব্রজবাবু বললেন ঠিক আছে তাই হবে।
আজ রাতের মধ্যেই এই কাজটা করতে হবে।

Fahad Alim

19 Blog posts

Comments