স্বপ্নকে ছুঁয়ে দেখার অপেক্ষা

আগামীকাল থেকে অবন্তীর ফাইনাল এক্সাম। মন না চাইলেও রাত ২টায়ও তাকে দেখা যাচ্ছে গভীর মনোযোগে বইয়ে মুখ ডুবিয়ে

‘আসছি অবন্তী, শাহবাগে আমি...। ’

 

হাঁটতে হাঁটতেই রিপ্লাই করে অবন্তী...

 

‘স্বপ্নকে ছুঁয়ে দেখার অপেক্ষায় পথ চেয়ে আছি’...

 

পাবলিক লাইব্রেরিতে প্রবেশ করে কিছুটা দূর থেকেই তমাল দেখে, অবন্তী সিঁড়ির একপাশে চুপচাপ বসে আছে। মেয়েটি...মেয়েটি আসলেই সুন্দরী...হলুদ রঙের শাড়িতে ওকে একটু বেশিই মানিয়েছে।

 

অবন্তী তমালকে বলেছিল কালো রঙের পাঞ্জাবি পরতে অথচ ও পরে এসেছে সাদা রঙের ক্যাজুয়াল শার্ট।

 

সিঁড়ি বেয়ে অবন্তীকে পাশ কাটিয়ে একটু দ্রুতই পাবলিক লাইব্রেরির ভেতর চলে যায় তমাল। এর একটু পরই অবন্তীর পেছনে এসে দাঁড়ায়...

 

হঠাৎ করেই ডেকে ওঠে অবন্তী বলে...

 

অবন্তী পেছন ফিরে তাকাতেই ভীষণ চমকে ওঠে! একি, তমালের পাশে রূপক কেন!

 

এই ছেলেটা অবন্তীর ক্লাসমেট। দীর্ঘ দুই বছর ধরে ওকে বিরক্ত করে যাচ্ছে...একে দেখলেই অবন্তীর ভীষণ রাগ হয়।

 

অবন্তী কোনো প্রশ্ন করার আগেই তমাল বলে ওঠে, ‘রূপক আমার ছোট ভাই। ওর ধারণা ছিল, তুমি নাকি ভালোবাসতেই জানো না। ওর সঙ্গে আমি চ্যালেঞ্জ করেছিলাম, তোমাকে ভালোবাসতে শেখাব আমি। তোমার সঙ্গে সম্পর্কের শুরুটাই ছিল একটা জেদ। তোমাকে আমি শুধু বোঝাতে চেয়েছিলাম, ভালোবাসার অনুভূতিটা কেমন হয়...ভালোবাসা আসলে কী...’

 

দীর্ঘ সময় নির্বাক হয়ে তমালের কথাগুলো শোনে অবন্তী। চোখ দুটি কখন যেন নিজের অজান্তেই অশ্রুসজল হয়ে ওঠে...

 

তমালের কথার প্রত্যুত্তরে অবন্তী শুধু একটি কথাই বলে...‘তমাল, আপনি আমাকে ভালোবাসতে শিখিয়েছেন? আমার কল্পনায় যে ভালোবাসা ছিল তা আসলে ভালোবাসা নয়, শুধুই প্রতারণা। ভালোবাসা কী, তা হয়তো আর এ জন্মে বোঝা হলো না...’

 

কথাগুলো শেষ করেই অবন্তী হাঁটতে শুরু করে, পাবলিক লাইব্রেরির গেট থেকে বেরিয়ে দ্রুত রিকশা নেয়। রিকশা চলতে শুরু করে সন্ধ্যার আবছা আলো-আঁধারি পথ ধরে। রিকশা এগিয়ে যায় সামনে...

 

পেছনে পড়ে থাকে অনেক কল্পনায় আঁকা কিছু স্বপ্ন...

 

স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণায় এত দিনের রঙিন স্বপ্নে বিভোর দুটি চোখ বেয়ে অপমানের, দুঃখের আর হতাশার জল গড়িয়ে পড়ে। তবু মন মানে না। নিজের মনকে বিশ্বাস করতে পারে না।

 

শাহবাগ পেরিয়ে রিকশা বাংলা একাডেমির সামনে যেতেই একটি মোটরবাইক অবন্তীর রিকশার সামনে এসে থামল...

 

চমকে উঠল অবন্তী। বাইক থেকে নেমে তমাল রিকশার সামনে দাঁড়াল...

 

‘আপনি আমার পিছু নিয়েছেন কেন? ভালোবাসা কী, তা শেখাতে চেয়েছিলেন! আমি তো ভালোবাসতে শিখে গেছি...’

 

কথাগুলো বলতে গিয়ে রাগে-অপমানে কেঁদে ফেলল অবন্তী।

 

তমাল হাত জোড় করে ওর রিকশার সামনে দাঁড়াল...‘ক্ষমা করে দাও অবন্তী...আমিও যে ভালোবাসতে শিখে গেছি তোমার পাশে থেকে...তোমার অভিমানী চোখ বলে দিয়েছে, আমি কতটা অপরাধী...নিজের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলেছি তোমায়... তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না...প্লিজ! ফিরিয়ে দিয়ো না। ’


Shohag333

79 Blog posts

Comments