ত্রিশ মিনিট - ভালবাসার গল্প

আমার স্ত্রীর বিয়ের আগে অন্য একজনের সাথে সম্পর্ক ছিল। যেদিন আমি ওকে দেখতে গিয়েছিলাম সেদিন অনেকক্ষন বসে ছিলাম ??

সকাল বেলা একটা স্নিগ্ধ শিতল আভা ছড়ালো তখন আমি মগ্ন হয়ে বারান্দার চেয়ারটায় বসে চুপসে যাওয়া শহরটা দেখি। ইদানিং প্রায় আমার ইচ্ছে করে এই রকম ভিজা শহরের বুকে জেনিয়ার সাথে নীল রঙ্গা অনুভূতিতে জড়াতে। তার চোখে চোখ রেখে আমার অন্তরালের কথা তার অন্তরালে সমর্পন করতে। কিন্তু আমি কেন যেন পারি না। আমার ভিতরটায় একটা জড়াতা এসে ভর করে। এই জড়তা আমাকে জব্দ করে আমার সমস্থ দেহকে ক্লান্তিময় করে তুলে। এই চুপসে যাওয়া শহরটা দেখার ত্রিশ মিনিট পর জেনিয়া এসে ইতস্তত হয়ে বললো "অফিসে যাবেন না?" আমি তাকে বলি "না। আজ আর যেতে ইচ্ছে করছে না।" সে আচ্ছা বলে আর কিছু না বলে চলে যাচ্ছিল। আমি তাকে বললাম "শুনো।" সে আমার দিকে ফিরে তাকায়। আমি বললাম "তোমাকে আজকে সব বলা দরকার। তুমি এখনো বিষয়টার মূল কারণ জানো না। আবিদকে আমার অফিসের ম্যানেজারকে বলে চাকরি দিয়েছিলাম ঠিকই। চাকরি দেওয়ার পর আমার চিন্তা ভাবনায় অন্য কিছু ছিল। আবিদের ভালোবাসার পরীক্ষা করার। অফিসের কলিগ নাদিয়াকে যখন বিষয়টা খুলে বলেছিলাম তার ঠিক দু দিন পর নাদিয়া আমার কথা মত কাজ করতে রাজি হয়। এরপর শুরু হয় নাদিয়ার কাজ। আবিদের সাথে ন্যাকামো করে কথা বলা, লাঞ্চ আওয়ারে তার সাথে লাঞ্চ করা। যদিও আবিদ প্রথমে রাজি হতো না। এরপর বাহিরে ঘুরতে যাওয়া, রিকশায় চড়া। এক পর্যায়ে তাদের ভাব আদান প্রদান করা ভেরে যাচ্ছিল। তবে আমি নাদিয়াকে খুব শতর্ক থাকতে বলেছিলাম যাই করো খুব সাবধানে করবে। এইভাবে এক মাস অতিক্রম হয়। এই এক মাস মানে ত্রিশ দিন পর তুমি আমাকে ফোন করলে। বললে তোমার মন ভালো না। আবিদ তোমার সাথে এখন কথা কম বলে। যখনই ফোন করো তখনই নাকি আবিদ বলে ব্যস্ত আছি। আমি তোমাকে শান্তনা দিয়েছিলাম। ঐদিকে আমি নাদিয়াকে কনগ্রাচুলেশন জানিয়ে বললাম তোমার কাজ চালিয়ে যাও মেয়ে। এরপর আরও একটা মাস কাটার পর কাঙ্ক্ষিত সময় আসলো। আবিদ নাদিয়াকে প্রপোজ করলো। বিষয়টা যে এতো দ্রুত কার্যকর হবে আমি ভাবিনি। বেশির ভাগ পুরুষই নারীর প্রতি দুর্বল বুঝলে। নাদিয়া যখন আবিদকে বললো তোমার গার্লফ্রেন্ড আছে তার কি হবে? আবিদ কি বলেছিল জানো? তুমি নাকি একদম সাধাসিদে একটা মেয়ে। তুমি নাকি লুকিয়ে লুকিয়ে তার সাথে ফোনে কথা বলতে, লুকিয়ে দেখা করতে। ঠিকমত সময় দিতে পারতে না। কোথাও যেতে বললে যেতে পারতে না। নাদিয়ার সাথে মিশে যে অনুভূতিটা পেয়েছে সে অনুভূতিটা তোমার কাছ থেকে পায়নি। এরপর আবিদ তোমাকে ইগনর করতে লাগলো। ফিরিয়ে দিল তোমাকে। তারপর আমি আর একটুও দেরি করিনি। নাদিয়াকে ফাইনাল চালটা দিতে বললাম। নাদিয়াও ফাইনাল চালটা ঠিকঠাক মত দিল। আবিদ কে বলে দিয়েছিল একজন ভালো বন্ধু, ভালো কলিগ হয়ে তার সাথে মিশতে চেয়েছে লাভার হয়ে নয়।" 

.

এইটুকু বলে আমি থামলাম। জেনিয়া চুপ করে থাকলো। আমি চেয়ার থেকে উঠে আবার বললাম "বিশ্বাস করো আবিদ যদি এই পরীক্ষায় জিতে যেত আমি সত্যি সত্যি তোমাদের বিয়ের ব্যবস্থাটা করে দিতাম। যার জন্য এতো কিছু করতে যাবো তাকে তো একটু পরীক্ষা করতেই পারি তাই নয়কি?। নাদিয়া যখন আবিদকে ফিরিয়ে দিল সে কি করবে ভেবে পাচ্ছিল না। অফিসে তার অনুপস্থিত বাড়তে লাগলো। আর এই অনুপস্থিতির জন্য তাকে চাকরি থেকে নক আউট করলো। " আমার এতো গুলা কথা শুনার পর জেনিয়া একটা দীর্ঘশ্বাস নিল। তারপর বললো "সে আমাকে ভালোবেসেছে ঠিক আছে। কিন্তু আমার প্রতি তার ভালোবাসাটা মজবুত ছিল না।" আমি তাকে বললাম "চাইলে আমি তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিব। আবিদের কাছে চলে যেতে পারো। আমি চাইনা আমাদের জীবনটা এভাবে ধূসর ভাবে কাটুক। যে জীবনে আমি আলপনা খুঁজে পাই না।" সে বললো "এমন কথা আর কখনো মুখে আনবেন না। আমি সাদাসিধে একটা মেয়ে ঠিকাছে। কিন্তু আমার জীবনটা এতো সস্তা না। নাস্তা খেতে আসুন।" এইটা বলেই ও ভিতরে চলে যায়। আর আমি ভাবছি জেনিয়ার ভালোবাসার মানুষ হয়ে উঠতে পারবো কি আমি?

.

"কি ব্যাপার হ্যা? জনাবের লেখা কি শেষ হয়নি? একটু পর আসছি। পাঁচ মিনিট পর আসছি। এই তো আর একটু করে করেই ত্রিশ মিনিট হয়ে গিয়েছে। খাবে না নাকি? আমি আর কতক্ষন বসে থাকবো? আমি আর খাবার গরম করতে পারবো না।"

.

আমি পিসি থেকে মুখ সরিয়ে জেনিয়ার দিকে তাকালাম তারপর বললাম "ম্যাডাম আর একটু বাকি।" জেনিয়া আমার হাত ধরে বললো "আর একটুও না। উঠো তুমি। তোমার এই "ত্রিশ মিনিট" এর গল্পের বাকি অংশ পরে লিখিও। আর আমি বুঝি না, তোমার গল্পের চরিত্রে আমার নাম কেন দাও তুমি?" আমি ওর কথা শুনে হাসলাম। আসলে আমি গল্প লিখছিলাম। অফিস থেকে এসেই কিছুক্ষন সময় কাটানোর পর ভাল্লাগছিল না। ভাবলাম কিছু একটা লিখি। আর লিখার শুরুতে জেনিয়া আমার পাশে বসেছিল। গল্পে ওর নাম দেখে ও আমাকে বকে চলে গিয়েছিল। আমার হাসি দেখে ও আবার বললো "কি উঠবে না তুমি? আমার কিন্তু ক্ষিধে লেগেছে। তুমি না খেলে আমারও যে খেতে ইচ্ছে করে না, এইটা কি জনাব বুঝে নাহ।" আমি একটু চুপ করে থেকে বললাম "আজ নিজ হাতে খেতে ইচ্ছে করছে না। তুমি খাইয়ে দিও।" সে বলে "ঠিকাছে জনাব এবার চলেন।" আমি ওর সাথে খেতে গেলাম। ও আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে আর নিজেও খাচ্ছে। ও গল্পের কাহিনী জানতে চাইলে আমি খেতে খেতে শোনাতে থাকি। জেনিয়া আমাকে বললো "তাহলে বেচারা আবিদের কি হবে?" আমি বললাম "চাকরিতে জয়েন করে আবার নতুন করে জীবনকে নিয়ে ভাববে। আমাদের জীবনটাই না এমন।" জেনিয়া চুপ করে আমাকে লোকমা দিয়ে খাইয়ে দিতে থাকে। আর আমি ওর চোখের মাঝে তাকিয়ে খেতে থাকি। সে বলে "এমন করে কি দেখো হ্যাঁ?" আমি কিছু বলিনা। আমি সেই চোখের মাঝে আমাকে নিয়ে তার ভয়ংকর সুন্দর ভালোবাসাকে দেখতে পাই। এমন ভয়ংকর সুন্দর ভালোবাসা গুলোর মাঝে আমার জড়িয়ে থাকতে খুব ইচ্ছে করে। এমন মায়া মায়া ভালোবাসাকে আমার হারাতে একটুও ইচ্ছে করে না...


Shohag333

53 Blog posts

Comments