ভালোবাসার পুনর্বাসন
ক্যাম্পাসের তিন নম্বর গেটে মালিহাকে প্রথম দেখেছিল সামি। হাতে সিগারেট, চড়া গলায় এক লোককে কঠিনভা

কৌতূহলবশত এগিয়ে গিয়ে ঘটনা জানা গেল, মালিহাকে সিগারেট টানতে দেখে লোকটা পাশ থেকে বলেছে, ‘মেয়েমানুষ এভাবে বি??

মেয়েটা শূন্য দৃষ্টিতে মালিহার দিকে তাকিয়ে থাকল। একটু থেমে বলল,

 

‘এটা একটা মাদক পুনর্বাসন কেন্দ্র। ’

 

মালিহা বিস্মিত হয়ে বলল,

 

‘কে এখানে নিয়ে এসেছে আমাকে? কাল রাতেও আমার বিছানায় ঘুমাতে গিয়েছি। ’

 

‘আজকে সকালে তোমার বাবা রেখে গেছে তোমাকে। ’

 

মালিহার মাথার ভেতরটা ফাঁকা লাগছিল।

 

প্রায় জীবন্মৃতের মতো থেকে এক মাস কেটে গেছে এখানে। এখন মালিহার প্রতিদিনের ঘুম ভাঙে জীবনের প্রতি অসহ্য বিতৃষ্ণা নিয়ে। তার মনে হয়, এই কালো গহ্বর থেকে সে কোনো দিন মুক্তি পাবে না।

 

একদিন তার মা-বাবা দেখা করতে এলো। মা কাঁদছিল। মালিহা পাথরের মতো মুখ করে বলল,

 

‘শুধু শুধু কাঁদার দরকার নেই। বাসায় গিয়ে ঘুমাও। ’

 

মা-বাবা চোখ বড় বড় করে তাকাল যেন ওদের সামনে একটা উন্মাদ বসে আছে।

 

পাশের বিছানার নিশা নামের মেয়েটা এখন তার একমাত্র সঙ্গী। মেয়েটা অধিকাংশ সময় ফাঁকা চোখে তাকিয়ে থেকে তাও কেন জানি মালিহার মনে হয় মেয়েটা ওকে শুধু বুঝতে পারে।

 

বুধবার মালিহার মেডিটেশন ক্লাস। রাত ১০টায় সবাই ছাড়া পেল। ক্লান্ত হয়ে সে দরজা ঠেলে ঢুকল। লাইট নেভানো ছিল। করিডর থেকে আসা আলোয় রুমের ভেতরে আবছায়ায় মালিহা তার জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ দৃশ্যটা দেখল। গলায় ওড়না পেঁচানো নিশার মৃতদেহটি ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছে।

 

চিত্কার দেওয়ার মতো ক্ষমতাও মালিহার নেই। মনে হলো অদৃশ্য কিছু তার মুখ চেপে রেখেছে, নিঃশ্বাস নিতে দিচ্ছে না।

 

এবার মালিহা সত্যিই মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে গেল। তাকে আর চেনা যায় না। শরীর ভেঙে গেছে। চোখ বসে গেছে। সেখানে প্রাণের কোনো ছায়া নেই। সে দিনরাত ফ্যানের দিকে তাকিয়ে থেকে নিশার ঝুলে থাকার ছবিটা মন থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করে। তার মনে হয় যত দিন নিজে ফ্যানে ঝুলে না পড়বে, তত দিন এই ছবি মন থেকে যাবে না।

 

মনে মনে ভাবে—আচ্ছা সামি কি জানে যে সে এখানে বন্দি? জানলে নিশ্চয়ই সে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যেতে আসতো। সামির জন্য অপেক্ষা করার শক্তিও একসময় ফুরিয়ে আসে মালিহার। একদিন রাতে সে জীবনের চরম সিদ্ধান্তটি নিয়ে ফেললো। কি আশ্চর্য!! সে রাতেই তার চমত্কার ঘুম এলো। 

 

সে স্বপ্নে দেখল, অনেক ঝড়ের মধ্যে এক নৌকায় সে আর সামি বসে আছে। সামি শক্ত করে তার হাত ধরে বলল, ‘hold onto our love’।

 

পরদিন খুব ভোরে খালি পায়ে পুর্নবাসন কেন্দ্রের ছাদে ওঠে মালিহা। ভাবছে যদি এখন সামিকে দেখতে পেত; জীবনের এই ইচ্ছেটাই তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে এখন পর্যন্ত। মালিহার মনের ভেতরে ঝড় ও যুদ্ধ দুটোই। এক সময়ে হেরে যায় সে।

 

সকাল ৭টার মধ্যেই পূর্নবাসন কেন্দ্রের সামনের রাস্তায় অনেক ভীড়। সবাই জটলা পাকিয়ে কি যেন একটা দেখছে। পাশেই পুলিশের গাড়ি। সামি যখন ভীড় ঠেলে সেই জটলার মাঝে এলো ততক্ষণে মালিহার রক্তমাখা নিথর দেহটি পূর্নবাসনের শেষ যাত্রার জন্য প্রস্তুত। পোষ্টমার্টেমের কাগজে সই নেওয়ার জন্য পুলিশের তরুণ অফিসারটি এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছে।

 

  1. সামির চোখের সামনেই মালিহাকে একটি নোংরা মলিন চাদর ও চটে মুড়িয়ে একটি ভ্যানগাড়িতে তোলা হয়। গাড়ি ছুটতে থাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের পথে।

Shohag333

79 Blog posts

Comments