তিন পা এগুতেই মেয়েটা আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। দেখতে অনেক সুন্দর বটে কিন্তু আমি তো এই মেয়েটাকে চিনি না। এর আগে দেখছি বলে মনে হয় না। আমি বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলামঃ আপনি কি আমায় ডাকছেন? মেয়েটা মুখটা ভেংচি দিয়ে বললোঃ আপনাকে ছাড়া আর কাকে ডাকবো? এখানে এই নামে আর কেউ আছে বলে মনে হয় না। আমি মেয়েটার কথা শুনে আকাশ থেকে পড়লাম। চিনি না জানি না হঠাৎ কোথ থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসলো। আমি নরম মৃদু স্বরে বললামঃ আপনি আমাকে কিভাবে চিনেন? যেভাবেই হোক চিনি কিন্তু বলবো না। কি ঝামেলারে বাবা চিনে কিন্তু বলবে না। সেদিনের মত কথা শেষ করে বাসায় আসলাম। রাত ১২ টার দিকে আমার ফোনে একটা কল আসে। অচেনা নাম্বার দেখে প্রথমে ধরি নাই। বারবার কল দেওয়াতে বিরক্ত হয়ে ফোনটা ধরলাম।
*.এইযে কে আপনি? বারবার ফোন দিচ্ছেন কেনো? ফোনের ওপাশ থেকে কাঁদোকাঁদো কন্ঠে বললোঃ আমি। আমি রেগে গিয়ে বললামঃ আমি কে? নাম নাই নাকি? এবার মেয়েটা স্বাভাবিক ভাবে বললোঃ ঐ যে রাস্তায় দেখা হইলো। রাস্তায় তো আমার অনেক মেয়ের সাথে দেখা হয় আপনি কোনটা? এই কথা বলার পর মেয়েটা বাচ্চা পোলাপানের মত কাঁদতে লাগলো। আমিও বুঝে গেছি এইটা কোন মেয়ে। কি করবো বুঝতেছি না। আমি ধমক দিয়ে বললামঃ এইযে বাচ্চা পোলাপানের মত কাঁদছেন কেন? ভাবছি ধমক দিলে কান্না থেমে যাবে কিন্তু তার উল্টো হলো। তাই এবার আর ধমক না দিয়ে সুন্দর করে বুঝালামঃ আচ্ছা আপনি আমার কাছে কি চান? উত্তরে বললো আপনাকে। আমি অবাক হয়ে বললামঃ কিহ?? না মানে আপনার কণ্ঠে গান চাই । আমি মনেমনে বললাম যাক বাবা বাঁচা গেলো একটা গান শুনিয়ে বিদায় করে দেই। একটা গান শুনার পর মেয়েটা বায়না ধরে বসে প্রতি রাতে গান শুনাতে হবে যতক্ষণ ঘুম না আসে ততক্ষণ। আমি অনেক্ষণ চুপ করে রইলাম। মেয়েটা রীতিমত আমাকে থ্রেড দিয়ে বসলো যদি আমি প্রতি রাতে গান না শুনায় তাহলে রাস্তাঘাটে জড়িয়ে ধরে বলবে 'আই লাভ ইউ' আমি ভয় পেয়ে মেয়েটার কথায় রাজি হয়ে গেলাম। ভাবলাম প্রতি রাতে গান শুনালে খারাপ কি। আমারই ভালো গলাটা চালু থাকলো।
.
পরেরদিন……
আজকে ভার্সিটি যাওয়ার সময় দেখলাম মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে ঠিক সেই জায়গাতে। আমি আমার কাঁধ থেকে ব্যাগটা খুলে মুখ ঢেকে হাটতে লাগলাম। কিন্তু মেয়েটার কাছ থেকে বাঁচতে পারলাম না। পথ আটকে দাঁড়ালো। তারপর বললোঃ লুকিয়ে কই যান? মুখে হালকা একটু হাসি দিয়ে বললামঃ ছাতাটা আনতে ভুলে গেছি। মাথায় রোদ লাগছে তাই ব্যাগটা দিয়ে মুখ ঢেকে রাখছিলাম। মেয়েটা আমার দিকে হা করে তাকিয়ে বললোঃ আমার কাছে ছাতা আছে চলেন আমি আপনাকে ভার্সিটি পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসি। কি আর করা মেয়েটার কথামত ভার্সিটি পর্যন্ত গেলাম। মেয়েটা বললোঃ এতদূর পর্যন্ত আপনার মাথায় ছাতা দিয়ে আসলাম একটা থ্যাংকস পর্যন্ত দিলেন না? এমন কেন আপনি?? আমি কোনোকিছু না বলে চুপচাপ মেয়েটার কথা শুনছিলাম। তারপর একেবারে অনেকগুলা থ্যাংকস দিলাম। পরেরদিন ভার্সিটি শেষ করে বাসায় এসে মেসেঞ্জারে ঢুকলাম। অচিন পাখি নামের আইডি থেকে নতুন একটা মেসেজ রিকুয়েস্ট আসছে। চেক করে দেখলাম একটা মেয়ের আইডি। মেসেজে লেখা আপনার গান গুলা হেব্বি। আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আবার দেখলাম। এবার আর বুঝতে বাকি রইলো না এইটা ঐ মেয়ের কাজ। আজকে ফোন দিলে ইচ্ছেমত ঝাড়ি দিবো যাতে আর জীবনেও না ফোন দেয়। অপেক্ষা করতে লাগলাম মেয়েটির ফোনের আসায়। কিন্তু রাত ১২ বাজে অথচ এখনো মেয়েটির ফোন আসলো না আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম। তাড়াহুড়ো করে মেসেঞ্জারে ঢুকলাম। দেখলাম মেয়েটার আইডি কালো হয়ে গেছে। তারপর আমি নিজ থেকে মেয়েটিকে ফোন দিলাম। ফোন বন্ধ। আমি অনেকটা চিন্তায় পড়ে গেলাম। মেয়েটির কিছু হলো নাকি? নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলাম আমি এই মেয়েটিকে নিয়ে ভাবছি কেন? তারপর সবকিছু বাদ দিয়ে ঘুমাতে গেলাম। কিছুতেই ঘুম আসছে না। অনেক চেষ্টার পর হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে দেরি করে ঘুম থেকে উঠার কারণে নাস্তা না করেই ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। প্রতিদিন যেখানে ঐ মেয়েটির সাথে দেখা হত ঠিক সেখানে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে আছি। কিন্তু ঐ মেয়েটিকে আর আসতে দেখলাম না। মেয়েটির জন্য প্রায় ১ ঘন্টা দাঁড়িয়ে ছিলাম আসেনি। এদিকে ভার্সিটির সময়ও শেষ। তাই আর ভার্সিটিতে না গিয়ে বাসার ফিরে আসলাম। প্রচণ্ড মন খারাপ। সেদিনের পর থেকে প্রতি রাতে মেয়েটি যে টাইমে ফোন দিতো ঠিক সেই টাইমে মোবাইলে স্কিনের দিকে তাকিয়ে থাকি। মেসেঞ্জারে ঢুকে প্রতিদিন মেয়েটার আইডি চেক করি আর মেসেজ রিকুয়েস্ট চেক করি। কিন্তু ঐ মেয়েটিকে আর পাইনি। আজোও সেই মেয়েটির অপেক্ষায় আছি। মেয়েটি যখন আমার সাথে পাগলামো করতো তখন খুব বিরক্ত লাগতো কিন্তু এখন খুব মিস করছি। যখন ছিলো তখন তার মর্ম বুঝিনি এখন চলে গেছে তাই খুব আফসোস করছি। যেকোনো কিছু কাছে থাকলে তার মর্ম বুঝিনা কিন্তু সেটা চলে গেলে তখন খুব মিস করি।