আমাদের শৈশবের দিনগুলো ছিল এক অসাধারণ অধ্যায়, যেখানে আনন্দ, আবেগ, এবং খেলার উল্লাস ছিল সর্বত্র। সেই সময়টাতে আমরা ছিলাম নিঃস্বার্থভাবে খুশি, যখন জীবনের চিন্তা ভাবনা ছিল কেবল খেলার মাঠ, বন্ধুদের সাথে সময় কাটানো এবং মা-বাবার আদরের মাঝেই সীমাবদ্ধ। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে, প্রথমে জানালায় সূর্যের আলো পড়ে উঠত। সেই রোদে উঠতে উঠতে আমরা সবাই খেলার জন্য প্রস্তুত হতো।
বাড়ির সামনে খেলার মাঠ ছিল আমাদের সবচেয়ে প্রিয় জায়গা। সেখানে বন্ধুরা মিলে লুকোচুরি, ধাক্কা-ধাক্কি, আর ক্রিকেট খেলতে শুরু করতাম। আমাদের খেলার সময়ের শেষে কখনও ক্লান্তি আসতো না, বরং আরো বেশি খেলার জন্য উৎসাহ বেড়ে যেত। আমরা সবাই একসাথে সাইকেল চালাতাম, কখনও কখনও পাড়া-প্রতিবেশীদের সাইকেলে নিয়ে রাস্তায় দৌড়ঝাঁপ করতাম।
স্কুলে যাওয়া ছিল এক নতুন অভিজ্ঞতা। প্রিয় শিক্ষকদের মুখ দেখে দিন শুরু হতো। নতুন বইয়ের গন্ধে আমাদের মুখে এক ভিন্ন ধরনের খুশি ফুটে উঠতো। পাঠ্যবইয়ের বাইরে গল্পের বই পড়ার জন্য আমরা কখনো কখনো বিদ্যালয়ে গোপনে গিয়ে পড়তে বসতাম। বইয়ের পাতা উল্টাতে উল্টাতে আমাদের চোখে ভেসে উঠত সেসব কল্পনালোক। সহপাঠীদের সঙ্গে চকলেট ভাগাভাগির মধ্যে যে আনন্দ ছিল, তা আর কিছুতেই মেলানো যেত না।
আমাদের বাড়ির আঙ্গিনায় বৃষ্টির দিনে খেলতে যাওয়ার এক বিশেষ উপলক্ষ ছিল। যখন বৃষ্টি শুরু হতো, তখন আমরা কাগজের নৌকা বানিয়ে জলাশয়ে ভাসাতাম। ছোট ছোট নদীতে এই নৌকাগুলো ভাসানো দেখতে খুব মজার লাগতো। গরমের দিনে আম, জাম, লিচুর স্বাদ আমাদের মুখে মিষ্টির অনুভূতি এনে দিত।
প্রতিবেশীদের সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী মেলার আনন্দ ছিল এক অন্যরকম। আমাদের পাড়ায় যখন বৈশাখী মেলা বসতো, তখন আমরা একত্রিত হয়ে সেখানকার উৎসব উদযাপন করতাম। মেলার ঘুরে বেড়ানো, নানারকম খেলনা কেনা, আর পছন্দের খাবার খাওয়া ছিল আমাদের প্রধান আকর্ষণ।
অন্যদিকে, সন্ধ্যার সময় গাছের নিচে বসে গল্প করা ছিল আমাদের আড্ডার একটি অংশ। আমরা দারুণ সব কল্পনা নিয়ে একে অপরের কাছে গল্প বলতাম। মায়ের কাছে শোনা পুরনো গল্পগুলো আমাদের মধ্যে বিশেষভাবে স্থান করে নিত। মায়ের স্নেহের পরশ ও বাবার আদর্শ আমাদের জীবনের মূল ভিত্তি গড়ে তুলেছিল।
শৈশবের সেই সাদাসিধে সময়গুলো আমাদের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আজকের প্রতিযোগিতামূলক জীবনে যখন আমরা নানা দুশ্চিন্তা ও চাপের সম্মুখীন হই, তখন শৈশবের সেই খুশির মুহূর্তগুলো আমাদের মনে পড়ে।
শৈশবের সব স্মৃতি মনের আঙিনায় গেঁথে আছে। আজও যখন সেই মুহূর্তগুলো মনে পড়ে, তখন আমাদের মনে এক আশ্চর্য সুখের অনুভূতি সৃষ্টি হয়। শৈশবের সময়গুলি চিরকাল আমাদের মনে গেঁথে থাকবে, কারণ সেগুলোই আমাদের জীবনের মূল ভিত্তি তৈরি করেছে। সময়ের পরিবর্তন হলেও, সেই আনন্দের স্মৃতিগুলো চিরকাল আমাদের সঙ্গে থাকবে।