আর একটু আগে যিনি আমার ঘুম ভাঙানো তিনি হলেন আমার কলিজার টুকরা আম্মু এবং বেস্ট ফ্রেন্ড।
ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে গেলাম। খাবার টেবিলে বসতেই আম্মু এসে খাবার বেড়ে দিল।আমি আম্মুকে
জিজ্ঞাসা করলামঃ আম্মু ভাইয়া আর আব্বু কে তো দেখতেছি না।
আম্মুঃ তোর আব্বু আর ভাইয়া অফিসে গেছে।আজকে নাকি জরুরী মিটিং আছে তাই সকালে গেছে।
আমিঃ ওহহ।
নাস্তা শেষ করে আম্মুকে বলে কলেজে যাওয়ার জন্য বের হলাম। বাসা থেকে বের হয়ে আমার বন্ধু রাফিকে ফোন দিলাম,,,,
আমিঃহ্যালো, কোথায় আছিস?
রাফিঃ বাসা থেকে বের হয়েছি। তুই কোথায়?
আমিঃ আমি রাস্তায় আছি।
রাফিঃ আচ্ছা ওয়েট কর।
আমিঃ তাড়াতাড়ি আসিস।
এরপর সিফাত কে ফোন দিয়ে আসতে বললাম।
সিফাত রাফি এবং আমি এই তিন জন হলাম বেস্ট ফ্রেন্ড। ফ্রেন্ড বললে ভুল হবে আমরা তিনজন হলাম একেঅপরের ভাইয়ের মতো।
আমাদের তিনজনের মধ্যে যদি কারো সমস্যা হয় তাহলে আমরা তিনজন মিলে সমাধান করি।
এছাড়া আমাদের তিনজনের একটি সংগঠন আছে। যেটার মাধ্যমে গরিব,এতিম, ভিক্ষুক দের সাহায্য করি।
যাইহোক, তিনজন একত্রে হওয়ার পর একটা রিকশা ডাকলাম। রিকশায় তিনজন ধরবেনা। এজন্য সিফাত আমাকে কোলে নিলো।
তাদের তুলনায় আমার ওজন কম হওয়াতে আমি আর না করিনি। আমাদের বাসা থেকে কলেজ বেশি দুরে নয়।
রিকশা করে আসলে আধাঘণ্টা সময়ের মধ্যে আসা যায়।
কলেজের গেটের সামনে রিকশা দাঁড় করালো। আমি নামিয়ে ভাড়া দিলাম। কলেজে ঢুকে দেখলাম বেশ ভালোই কলেজ।
যাজ্ঞে, আমরা এখানে লেখাপড়া করতে এসেছি। কলেজে দেখতে নয়।
তিনজন মিলে ক্লাসে গেলাম।যাইয়ে সামনের একটি বেঞ্চে বসে পড়লাম। আসলে আমার প্রথম বেঞ্চ ছাড়া ভালো লাগেনা।
একটু পর স্যার আসলেন। স্যার এসে সবার সাথে পরিচিত হয়ে আমাদেরও পরিচয় নিলেন।এভাবে প্রতিটা স্যারের সাথে পরিচিত হওয়ার পর ক্লাস থেকে বের হয়ে ক্যান্টিনে গেলাম কিছু খাওয়ার জন্য।অতঃপর তিনজন কলেজ থেকে বাসায় আসলাম।
বাসায় আসার পর,,,,আমিঃ পরে দিবো আগে ক্লাসে চল।
ক্লাস করার পর ক্যান্টিনে তিনজন মিলে নাস্তা করতেছি।
এমন সময়,,,,, ক্লাস করার পরে তিনজন মিলে ক্যান্টিনে গিয়ে নাস্তা করতেছি এমন সময় মেয়েটি মানে আমার ক্রাশ আসলো???
এসে সোজায় আমার পাশে বসলো, আমার হাত পা কাঁপতে শুয়ে করে দিয়েছে।আসলে মেয়েদের প্রতি আমার এলার্জি আছে,, কাছে থাকলেই কেমন জানি ভয় ভয় লাগে???
যাইহোক, মেয়েটি কে আমার পাশে বসতে দেখে রাফি আর সিফাত অন্য টেবিলে বসলো।
আমার হাত কাঁপছে দেখে মেয়েটি বললঃ এই যে,মশাই কাপতেছো কেন???
আমিঃ কই নাতো,,,(সত্যি টা বললে মন সম্মান আর থাকবে না)
মেয়েটিঃ বাই দা ওয়ে,, তোমার নাম কি?
আমিঃ সাহিদ হাসান সাহি। আপনার?
মেয়েটিঃ সামিয়া জাহান।
আমিঃ আহা কি নামরে যেমন চেহারা তেমন নাম।আবার ক্রাশ খেলাম,,(বিড়বিড় করে)
সামিয়াঃ কিছু বললে।
আমিঃ কইইই ন নাতো।
সামিয়াঃ তোমার নাম্বার দেও।
আমিঃহোয়াট,,, আমি কেন আপনার মতো ডাইনিকে নাম্বার দিতে যাবো। আমাকে কি ঐ রকম ছেলে মনে হয়,,।( ভাব নিয়ে)
সামিয়াঃ কি বললি,????
আমিঃকইই কিছু না।এই নিন নাম্বার,০১৭৬৪৪৯****
( এহেরে ভাব নিতে যাইয়ে একটু বেশি রাগাইয়া ফেলেছি,,)
সামিয়াঃ আর শোন কোন মেয়ের সাথে কথা বলবি না এবং চোখ তুলে তাকাবি না।
আমিঃ ঠিক আছে আপু।
সামিয়াঃ আপু বলে ডাকবি না।বুঝলি??
আমিঃ তাহলে কি বলবো।
সামিয়াঃ নাম ধরে ডাকবি।
আমিঃ ঠিক আছে।
সামিয়া কে বিদায় দিয়ে রাফি দের টেবিলে দেখি ওরা দুজন নাই,,
আমি বিল দিতে চাইলে বলল, সামিয়া নাকি দিয়ে গেছে।
ক্যাম্পাসের বকুল গাছের নিচে দেখি ওরা দুজন বসে আছে।
ওদের কাছে যাতেই রাফি বললঃ মামা এতো দেরী হলো কেন?
আমি ওদের কে সব কিছু বললাম।
সিফাতঃ মামা সামিয়া আপি মনে হয় তোকে ভালোবাসে।
আমিঃ তাই যেন হয় মামা দোয়া কর।
ওদের সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দেওয়ার পর বাসায় আসলাম।
রোটিং অনুযায়ী আবার সন্ধ্যায় আম্মু ঘুম থেকে জাগিয়ে দিলো।
ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে একটু ঘুরাঘুরি করতেই আজান দিলো।
নামাজ পড়ে বাসায় এসে পড়তে বসলাম।রাতে ডিনার করে ঘুমাতে যাবো এমন সময় ফোনটা বেজে উঠলো।
দেখি অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন এসেছে। প্রথমে ধরলাম না।পরে আবার দিলো ধরলাম না।
আবার দিলো এবার ধরলাম,,,
আমিঃ আসসালামুয়ালাইকুম।কে বলতেছেন?
অপরিচিতঃ ওয়ালাইকুমুস সালাম। আমি সামিয়া।
আমিঃ এতো রাতে কি জন্য ফোন দিয়েছেন?
সামিয়াঃ কথা বলার জন্য।
আমিঃ আজব তো, আমি এই প্রশ্ন করলাম,।
সামিয়াঃ ওসব বাদ দাও। ডিনার করেছো?
আমিঃ হ্যাঁ। আপনি করেছেন?
সামিয়াঃ হুমম।
এভাবে কিছুক্ষণ কথা বলে রাখে দিলাম।
পরের দিন ক্যাম্পাসে বসে তিনজন মিলে আড্ডা দিচ্ছিলাম এমন সময় একটা মেয়ে এসে বললো,,,,,বলতেছি, তোমাকে অন্য কোন মেয়ের পাশে দেখলে আমার সহ্য হয়না। তোমাকে অন্য মেয়ের পাশে দেখলে আমার মনে হারানোর ভয় থাকে। এসবের কারণ কি জানো? কারণ টা হলো, আমি তোমাকে ভালবাসি। ( এক নিঃশ্বাসে)
আমিঃ এতো দেখছি মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি ???।,(মনে মনে)
আমিঃ কবে থেকে আমাকে ভালবাসেন?
সামিয়াঃ মনে আছে, একদিন তুমি একটা এতিম খানায় গিয়েছিলে বাচ্চাদের খাবার আর পোশাক দিতে। আমি কোন সেখানে গিয়েছিলাম।
তোমার এই কাজ আমার খুবই ভালো লাগে।তারপর ম্যানেজারের কাছে থেকে জানতে পারি চুমু এখানে নিয়মিত আসো।তখন থেকেই তোমাকে নিয়ে ভাবতে থাকি।
তার কয়েক দিন পরে তোমাকে দেখি, একটা ভিক্ষুকে রেস্টুরেন্টে নিয়ে যাইয়ে লাঞ্চ করাতে। তারপর থেকে তোমার প্রতি আমার ভাবনা কে আরো গভীর করে তুলেছে।আর আস্তে আস্তে এই ভাবনা টাই ভালোবাসা য় পরিণত হয়েছে।আর যখন জানতে পারলাম যে এই কলেজেই তুমি ভর্তি হয়েছো।তখন,,,সামিয়াঃ আমি যখন জানতে পারলাম তুমি এই কলেজেই ভর্তি হয়েছো,তখন যে আমি কি পরিমাণ খুশি হয়েছিলাম তা তোমাকে বোঝাতে পারবোনা। প্লিজ তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিয়ো না।( লক্ষ্য করলাম সামিয়ার চোখের কোনে পানি এসেছে)
আমি ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে বললামঃ আমিও যে ভালোবাসি আমার সিনিয়র ক্রাশকে।
সামিয়াঃ সত্যি।আই লাভ ইউ।
বলেই জড়িয়ে ধরলো।
আমিও জড়িয়ে ধরে বললামঃ আই লাভ ইউ টু।
সামিয়া জড়িয়ে ধরে কান্না করতেছে।
আমিঃ এই পাগলি কান্না করতেছেন কেন?
সামিয়াঃ কখনো ছেড়ে যাবে না তো।
আমিঃ যাবো না।আল্লাহ ছাড়া কেউ আমাদের আলাদা করতে পারবে না।
দুজন জড়িয়ে ধরে কথা বলতেছি। হঠাৎ করে কে যেন গলা ঝাড়া দিলো। পিছনে ফিরে দেখি রাফি আর সিফাত দাঁড়িয়ে আছে।
আমি আর সামিয়া ওদের দেখে সাথে সাথে ছেড়ে দিয়ে মাথা নিচু করে আছি।
রাফিঃ হয়েছে থাক আপনাকে আর লজ্জা পেতে হবেনা স্যার।
সিফাতঃ আমরা তোর জন্য কতো চিন্তা করেছিলাম।আর তুই এখানে। কর মামা কর সমস্যা নেই।
রাফিঃ ভাবি আমাদের বন্ধু টাকে দেখে রাখেন।
সামিয়াঃ সেটা আর তোমাদের বলতে হবে না।
সিফাতঃ আচ্ছা। কিরে দোস্ত তুই আজকে ক্লাস করবি।
আমিঃ না আজকে আর ক্লাস করব না। ঘুরতে যাব।
রাফি ও সিফাতঃ ঠিক আছে যা।
ওরা চলে গেল।আর আমি সামিয়া কে বললামঃ চলেন পার্কে যাই।
সামিয়াঃ এখনো কি আপনি করে বলবে? তুমি করে বলবা।
আমিঃ ঠিক আছে চলো।
সামিয়া কে নিয়ে একটা পার্কে আসলাম। কোনদিন কোনো মেয়ে সাথে আসিনি। নিজেকে কেমন কেমন মনে হচ্ছে।
যাইহোক, সামিয়া কে নিয়ে অনেক ঘুরলাম।ওকে ওর বাসায় রেখে আমিও আমার বাসায় আসলাম।
রাতে শুয়ে আছি তখন সামিয়া ফোন দিলো।ওর সাথে কথা বলে ঘুমিয়ে গেলাম।
লেখাপড়া করা, আড্ডা দেওয়া, সামিয়া কে ঘোরাফেরা করা এভাবে চলে গেল একবছর। সামিয়া আর আমার ভালোবাসা টা অনেক গভীর হয়েছে।
আমাদের সম্পর্ক টা আমাদের বাবা মা জেনে গেছে।
আগামীকাল থেকে আমার ইয়ার চেন্জ পরিক্ষা।
আল্লাহর রহমতে এক একে সব পরিক্ষা ভালো ভাবেই দিয়েছি।
আজকে আমার রেজাল্ট দিয়েছে। আমি ফার্স্ট হয়েছি।
আর সামিয়া ওদের ডিপার্টমেন্টে ফার্স্ট হয়েছে।
এজন্য আমাদের বাসায় সকলেই খুশি। তাদের কথা যাইহোক, লেখাপড়া ঠিকমতো হচ্ছে তো।
আরেকটা কথা, আমাদের রিলেশনের কথা কলেজের কেউ জানে না। শুধু আমার আর সামিয়ার বান্ধুরা জানে।
আজকে আমার কলেজে আসতে একটু দেরি হয়ে গেছে।
কলেজে ঢুকতেই আমার মাথায় রক্ত উঠে গেলো। কেননা, কলেজের মাঠে,,,,,