ঠিক আছে মা। কিন্তু এই ছেলে এত বড় লোক। সে কি আমার মত কালো মেয়েকে বিয়ে করবে?
: ছেলে তার বাবা মায়ের পছন্দে বিয়ে করবে আর ছেলের বাবা মায়ের তোকে পছন্দ হয়েছে।
: মা আর একবার একটু চেষ্টা করা যাবে না? আমি খুব ইচ্ছে একজন আলেমকে বিয়ে করার
: তোর বাবা আর কোন ছেলে দেখতে চাইছে না। এই ছেলেকেই পছন্দ করেছে। আচ্ছা তুই একটু সময় নিয়ে ভেবে দেখ। জোড় করে চাপিয়ে দিবো না।
এত সময় যেই মেয়ের বিয়ের কথা চলতে ছিল তার নাম তিসা। এবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ছে। কলেজে পড়লেও দ্বীনদার মেয়ে। কলেজে কখনো বেপর্দা হয়ে যায় নি। নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে। ওর বাবা হার্টের রুগী। এর আগে একবার ব্রেন স্টোর্ক করেছিল। তিসার বড় ২ টা বোন আছে তাদের বিয়ে হয়ে গেছে। তিসার অনেক ভালো জায়গা থেকে বিয়ে আসে কিন্তু ও কালো এজন্য কেউ বিয়ে করতে চাইনা। কালো হলেও তিসার চেহারা অনেক মায়াবী। বড় পাপড়ি বিশিষ্ট টানাটানা চোঁখ, ঘন কালো লম্বা লম্বা চুল তার চেহারাকে আরো আকর্ষণীয় করেছে। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষের চাহিদা ফর্সা মেয়েদের প্রতি। তাই তিসাকে প্রথম দেখাতে কেউ পছন্দ করেনা। অথচ রাসুলুল্লাহ (সা) বিয়ের ক্ষেত্রে দ্বীনদারিতাকে প্রাধান্য দিতে বলেছেন। এজন্য তিসা একজন দ্বীনদার আলেমের জীবণসঙ্গীনি হতে চায়।
: মুরাদ
: জ্বি আব্বু
: তোমার আর তিসার বিয়ের কথা চলছে এটা কি জানো?
: আব্বু জানি কিন্তু আমার ইচ্ছে কওমি মাদ্রাসার মেয়েকে বিয়ে করার। আর একটু উজ্জ্বল বর্ণ হলেই হবে। কিন্তু তিসা কলেজে পড়ে আর তোমরাই বললে যে তিসা দেখতে কালো। আমার এই বিয়েতে মত নেই।
: তিসা কলেজে পড়লেও অনেক দ্বীনদার পরহেজগার মেয়ে। আর কালো হওয়া তো কোন দোষের নয়।
: তাও আব্বু আমার তো কোন কিছুর অভাব নেই। আমি একটা নেককার পরহেজগার মেয়ে চাই। কিন্তু তিসাতো কালো এইটা আমি মেনে নিতে পারছিনা।
: মুরাদ তুমি কোরআন হাদিস পড়ো কিন্তু এই বিষয়ে এমন করছো কেন?
তুমি জান না হাদিসে বিয়ের জন্য মেয়ে নির্বাচনের জন্য দ্বীনদারিতাকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আর রূপ ক্ষণস্থায়ী তাই এইটাকে প্রাধান্য দেয়া হয়নি। আমি চাই তুমি এই মেয়েকেই বিয়ে করো।
: ঠিক আছে তোমাদের কথায় মেনে নিলাম। একটু কালো হলে সমস্যা নেই।
এত সময় মুরাদ আর ওর আব্বুর কথা চলছিলো। মুরাদের বাবার বিরাট বড় বিজনেস। মাসে লাখ লাখ টাকা ইনকাম করে। কোন কিছুর অভাব নেই মুরাদের। বিরাট বড় আলিশান বাড়ি। আর মুরাদএর চেহারা দেখলে যে কেউ তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যায়। এত দিন বিজনেসের উপর পড়াশোনা করতে ছিলো। কিছু দিন আগে শেষ হয়েছে। মুরাদ কলেজে পড়াশোনা করলেও নামাজ, রোজা, আলেমদের সাথে উঠা বসা করে। তাই হয়তো ওর কওমি মাদ্রাসার মেয়েকে বিয়ে করার ইচ্ছে ছিলো। আর মুরাদ দেখতেও সুদর্শন পুরুষ, এজন্য একটা ফর্সা মেয়ে বিয়ে করতে চেয়েছে। কিন্তু বাবা মায়ের পছন্দে বিয়ে করার ইচ্ছে থাকায় তিসার সাথে বিয়ের মত দিলো।
ফজরের আজান হচ্ছে। সাইমা ঘুম থেকে উঠে পড়লো। অজু করে সালাত আদায় করলো তারপর কোরআন তেলাওয়াত করতে বসলো। পড়তে শুরু করলো সূরা নিসা। প্রথম আয়াতেই পড়লো
"হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গীনীকে সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী। আর আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাঞ্চা করে থাক এবং আত্নীয় জ্ঞাতিদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন কর। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে সচেতন রয়েছেন।"
সাইমা রাফির সাথে বিয়েতে সম্মতি দিয়েছে। ২ দিন পরে ইসলামিক আইন অনুযায়ী ঘরোয়া ভাবে বিয়ে হবে। ওর ২টা বোন চলে এসেছে। সাইমা শুধু ওর বেস্ট ফ্রেন্ড রাইসাকে বিয়ের কথা জানিয়েছে। হঠাৎ করে বিয়ে ঠিক হওয়ায় কাউকে জানাতে পারিনি।
আজকে বিয়ের দিন। সকাল থেকেই বাড়িতে দাওয়াত করা মেহমান আসতে শুরু করেছে। মধ্যবিত্ত পরিবার হওয়ার খুব বেশি আয়োজন করতে পারিনি।
রাফির বাড়িতে বিয়ের ধুম ধাম আয়োজন চলছে। তবে সেটা ইসলামিক নিয়মের মধ্যেই আছে। বিয়েতে অপচয় আর ইসলাম পরিপন্থি কোন কাজ না হয় এ দিকে রাফির বাবা লক্ষ্য রেখেছেন।
সাইমার খালাতো বোনরা খুব একটা ধার্মিক না। বিয়েতে এমন আনুষ্ঠানিকতা তাদের পছন্দ হয়নি। ওরা চেয়েছিল আতশবাজি- পটকা ফোটাতে কিন্তু এই গুলো করা বেদআত তাই ওদের কেউ করতে দেয় নি।
সাইমাকে ওর বড় ২ বোন গোসল করাতে নিয়ে গেলো। এখানেও সাইমার খালাতো বোন মারুফার আপত্তি।
: আপু সাইমাকে গাঁয়ে হলুদ দিলে না?(মারুফা)
: কেন? এসবের কি দরকার আছে?(সাইমার বোন)
: এই গুলো না করলে কি আর বিয়ের মজা আসে? এখনকার প্রতিটা বিয়েতেই এসব অনুষ্ঠান করা হয়। আর আপনারা তো আরো অন্য কিছুও করতে দিলেন না
: কি কি করতে চাও তোমরা??
: এইযে গাঁয়ে হলুদের অনুষ্ঠান, সারা বাড়ি লাইটিং, মিউজিক, জামাই যখন আসবে তখন গেটে টাকা ধরবো, তার হাত ধুয়ে দিবো আরো কত্ত কিছু করা যায়। কিন্তু আপনারা এই গুলো করতে আগেই নিষেধ করে দিলেন।
: শোন মারুফা! ইসলামে এই গুলো করার কথা বলা হয়নি। এই গুলো বিয়ের জন্য বেদআত। আর এসব খরচ করে কোন লাভ নেই। বিয়ে সল্প খরচে করার কথা এসেছে। আর এই কাজ গুলোতে গোনাজ ছাড়া কোন সাওয়াব হবে না।
: আপনাদের সাথে কথা বলে পারবোনা। যা ভালো হয় করেন
সাইমাকে সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে সাইমার বোন। এর মধ্যে সাইমার বেস্ট ফ্রেন্ড রাইসা চলে এসেছে। হাতে অনেক গুলো বই। আর ১টা নীল ডায়েরি।
সাইমা: কিরে এত দেরী করলি কেন?
রাইসা: ইসস একটু দেরী হয়ে গেলো। প্লিজ কিছু মনে করিস না।
সাইমা: এত্ত গুলো বই!
রাইসা: হুম তোর জন্য নিয়ে আসলাম। এই বই গুলো অনেক ভালো দাম্পত্য জীবন সুখী করার জন্য ইসলামিক ভাবে অনেক সুন্দর সুন্দর টিপস দেয়া।
সাইমা: বাহ খুব খুশি হলাম
রাইসা: আমি তো জানি আমার ফ্রেন্ড বই পড়তে খুব ভালোবাসে। আর শোন এই যে এই নীল ডায়েরী, শুধু তোর জন্য। ডায়েরী লিখতে ভালোবাসিস তাই অনেক খুজেঁ কিনলাম।
সাইমা: মাশা আল্লাহ। এর আগের গোলাপী ডায়েরীর থেকেও এটা বেশি সুন্দর।
রাইসা: এই ডায়েরীতে আজ থেকে লিখা শুরু করবি। বিয়ের পর লিখার জন্য এইটা দিলাম। অন্য গুলোতে লিখলেও এই ডায়েরীতে শুধু বিয়ের পরের দাম্পত্য জীবনের কথা গুলো লিখবি। এটা আমার আবদার
সাইমা: ঠিম আছে।
কিছু সময় পরেই বর যাত্রী চলে আসলো। অল্প সময়ের মধ্যে বিয়ের কাজ শেষ হয়েছে। এবার পিতার বাড়ি থেকে বিদায় নেয়ার পালা। সাইমাকে কালো বোরকা আর হিজাব পড়িয়ে দেয়া হয়েছে। রাইসা ওর হাত ধরে রুম থেকে বের করে নিয়ে গেলো।
বাইরে যেয়ে সাইমা রাফিকে চিনতে পারেনি। এর আগে রাফিকে কোন দিন দেখেনি। রাইসা রাফিকে চিনিয়ে দিলো। সাইমা তো রাফিকে দেখে আকাশ দেখে পড়ল। মাশা আল্লাহ। এত সুন্দর ছেলে। তাও আবার জুব্বা পড়েছে সাথে পাগড়ীও আছে। আলহামদুলিল্লাহ। আমি তো এমনই একজন চেয়েছিলাম। আল্লাহর কাছে হাজারো শুকরিয়া। কলেজে পড়া ছেলে হলেও সুন্নতি লেবাস।
রাফিরকে প্রথম দেখেই সাইমার ভালো লেগে গিয়েছে। কিন্তু তার মনে অনেক প্রশ্ন রাফি কি তার মতো কালো মেয়েকে মেনে নিবে?
বিদায় পর্ব শেষে সাইমাকে নিয়ে চলে আসা হলো। রাফির নিজের একটা প্রাইভেট কার আছে। সেই কারেই বিয়ে হলো। অনেক সুন্দর করে সাজানো ছিল যেমনটা সাইমা চাইতো। গোলাপ আর গাঁদা ফুল দিয়ে কার সাজানো। না চাইতেই এত কিছু পেয়ে সাইমা আল্লাহর কাছে বার বার শুকরিয়া জ্ঞাপন করছে। কিন্তু রাফির হয়তো সাইমার প্রতি কোন আগ্রহ নেই। এই পর্যন্ত একটা বারও সাইমার দিকে তাঁকিয়েও দেখিনি। এই সব ভাবতে ভাবতে সাইমা একসময় বিরাট একটা বাড়ির সামনে চলে আসলো। দেখতে যেন রাজপ্রাসাদ। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এত বড় বাড়িতে তার বিয়ে হয়েছে সে ভাবতেও পারছেনা।
(বিদ্রঃঃ তিসার নাম অধরা রাখা হইছে।)
পর্ব-২
মাগরিবের নামাজের পর বাসর ঘরে অধরাকে নিয়ে মুরাদের চাচাতো বোনরা আর ভাবিরা বসে আছে। অনেক সুন্দর করে বাসর ঘর সাজানো হয়েছে। গোলাপ আর গাঁদা ফুলে সব কিছু ঢেকে গেছে। এমনিতেও মুরাদের রুম বিলাশ বহুল। বিছানার পাশে একটা টেবিল রাখা আছে। সেখানেও ফুলের তোড়া রাখা। রুমের একটা দেয়ালে অনেক সুন্দর বইয়ের তাক আছে। ইসলামিক বই, গল্পের বই, উপন্যাস আরো হরেক রকমের বইয়ের সমাহার সেখানে। দেখতে বেশ ভালোই লাগছে। দীর্ঘ সময় ধরে অধরা এসব দেখতে ছিলো।
বিকাল থেকে অনেক প্রতিবেশী এসেছিলো নতুন বউ দেখতে। কেউই অধরাকে পছন্দ করেনি। কারণ তার গায়ের রঙ। অনেকেই মুরাদকে বলেছে তোমার মতো সুন্দর ছেলের সাথে এমন মেয়ে মানায় না। এসব শুনে মুরাদের অনেক খারাপ লেগেছে। কাউকেই কিছু বলেনি।
এশার নামাজের পর অধরাকে অনেক সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে মুরাদের ভাবীরা। মুরাদের ভাবীদের প্রথমে অধরাকে পছন্দ না হলেও অধরার কথা বার্তা, আচার-আচরণে ভালো লেগে গেছে।
_____________________________________________
রাত ১০টা বেজে গেছে। এখনো মুরাদ আসছেনা কেন? কি হলো কি জানি একা একা এভাবে থাকতে আর ভালো লাগছে না। বিছানায় বসে এসব ভাবছি আর হঠাৎ দরজায় টোকা লাগার শব্দ হলো।
মুরাদ: আসসালামু আলাইকুম। আসতে পারি?
অধরা: ওয়া আলাইকুমুস সালাম। জ্বি অবশ্যই। ভিতরে আসেন।
মনের সব সংকোচ কাটিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলাম। অধরা বিছানায় বসে আছে। চারিদিকে ফুল তার মাঝে লাল শাড়ি পড়ে একটা মেয়ে বসে আছে। এত দিন এই দিনটার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। আজ সেই দিন চলে আসলো। কিন্তু আগের মতো সেই ফিলিংস কাজ করছে না। রুমের মধ্যে এসে দাঁড়িয়ে গেলাম। এর আগে কোন মেয়ের কাছে যায় নি। আজকে যাবো তাও আবার মনের বিরুদ্ধে যেয়ে। সবাই যেভাবে অধরার চেহারার দূর্ণাম করলো না জানি ও দেখতে কেমন। এই ভেবে বিছানায় বসে পড়লাম। ২জন অনেক সময় চুপচাপ বসে আছি। অনেক সংকোচ কাটিয়ে ওর সাথে কথা শুরু করলাম।
মুরাদ: রাতে খেতে কোন সমস্যা হয়নি তো?
অধরা: না কোন সমস্যা হয় নি।
মুরাদ: বাবা- মায়ের সাথে কথা বলেছো এখানে এসে?
অধরা: জ্বি বলেছি। আম্মুর মোবাইল থেকে কথা হয়েছে।
মুরাদ: আমি কি তোমার মুখ দেখতে পারি?
অধরা: এখন থেকে আমার উপর আপনার সম্পূর্ন অধিকার আছে। আপনি অবশ্যই দেখতে পারেন।
মুখের উপর থেকে ওড়নাটা সরিয়ে দিলাম। অধরা খুব লজ্জা পেয়েছে। ও দেখতে সত্যি অনেক কালো। এত কালো মেয়ে আমি বিয়ে করলাম? এসব ভেবে মন খারাপ হয়ে গেলো। কিন্তু ওর চেহারায় একটা মায়া আছে।
মুরাদ: আচ্ছা চলো আমরা ২ রাকাত নামাজ পড়ি।
অধরা: আমার ওজু আছে।
মুরাদ: আচ্ছা তাহলে আসো
নামাজ শেষ করে অধরাকে রুমে থাকতে বলে বাইরে চলে আসলাম। অজানা একটা অবহেলা কাজ করছে মনে। তারপরেও অধরাকে আজ রাতে কোন কিছু বলতে দিতে চাইনি। আবার রুমে গেলাম।
আলমারিটা খুলে অধরাকে আসতে বললাম।
মুরাদ: অধরা এদিকে আসো।
অধরা: জ্বি
মুরাদ: এই নাও এটা তোমার।
অধরা: এটা কি?
মুরাদ: খুলে দেখো
অধরা হাত থেকে প্যাকেট নিয়ে খুলে দেখে অনেক গুলো চুড়ি, কানের দুল আর পায়ের তোড়া।
অধরা: এত কিছু আমার জন্য? অনেক সুন্দর লাগছে এই গুলো। আমার অনেক পছন্দ হয়েছে।
মুরাদ: আমি এই গুলো ১ বছর আগে কিনেছিলাম। ভেবেছিলাম যাকে বিয়ে করবো তাকে দিয়ে দিবো। তাই তোমাকে দিলাম।
অধরা: আমার অনেক পছন্দ হয়েছে এই গুলো।
মুরাদ: অনেক রাত হয়েছে। আর আমি অনেক ক্লান্ত। এখন ঘুমিয়ে যাবো। তুমিও ঘুমিয়ে যাও।
অধরা: আপনি যা বলবেন তাই হবে
মনে অনেক অবহেলা কাজ করতে ছিলো তাই অধরার সাথে ভালো করে কথা না বলেই ক্লান্ত হওয়ার অজুহাত দেখিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম।
বিয়ের ৭ দিন হয়ে গেছে। এই কয় দিনে মুরাদ অধরার সাথে খুব একটা ভালো করে কথা বলেনা। কোন কিছু জিজ্ঞাসা করলে শুধু উত্তর দেয়। নিজে ইচ্ছে করে কোন কথায় বলে না। রাতে ঘুমানোর সময় ও অন্য দিক ঘুরে ঘুমিয়ে পরে। একবারে খাবার খেতে ডাকে না।
কিন্তু অধরার শশুড় -শাশুড়ি অধরাকে অনেক ভালো বাসছে। আগে পড়াশোনায় ব্যস্ত থাকতো তাই অনেক কাজ অধরা পারে না। সেইগুলো অধরার শাশুড়ি সব শিখিয়ে দেয়। নিজের মেয়ে নেই তাই মেয়ের মতোই যত্ন করে। আর অধরাও নিজের মায়ের মত ভাবে। অধরাকে ওর শশুর একটা মোবাইল কিনে দিয়েছে যাতে সবার সাথে যোগাযোগ করতে পারে।
অনেক সময় ধরে চিন্তা ভাবনা করছি। আমি কালো বলে কি মুরাদ আমার সাথে কথা বলেনা? ও তো সবার সাথেই হাসি মুখে কথা বলে। তাহলে আমার সাথে কথা বলেনা কেন? আজ আমি নিজেই সাহস করে জিজ্ঞাসা করবো। রাতে বাসায় আসুক
রাত ৯ টায় মুরাদ বাসায় আসলো। সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া শেষ করলো। এবার মুরাদ আর অধরা রুমে।
অধরা: আমি আপনাকে একটা কথা বলতে চাই। আপনি কি ব্যস্ত আছেন?
মুরাদ: না বলো।
অধরা: আমি এই কয় দিন লক্ষ্য করেছি আপনি আমাকে এড়িয়ে চলা ফেরা করেন। ঠিক মত কথাও বলেন না। আমি কি কোন ভুল কাজ করেছি যার জন্য আপনি এমন করছেন?
মুরাদ: না করো নি।
অধরা: তাহলে আমার সাথে এমন করেন কেন?
মুরাদ: জানতে চাও?
অধরা: জ্বি জানতে চাই।
মুরাদ: বাইরে অনেক সুন্দর চাঁদের আলো। চলো বারান্দায় যায়। বাইরে বসে বলি।
অধরা: আচ্ছা ঠিক আছে।
২জন বারান্দায় চলে গেলো। অধরার মনে অজানা ভয় কাজ করছে। না জানি কি বলে।
পর্ব-৩
পূর্নিমার রাত। আকাশে মিটিমিটি তারা জ্বলছে। পাশের বাগান থেকে বিভিন্ন ধরনের শব্দ ভেসে আসছে। হালকা হালকা বাতাস হচ্ছে। বিয়ের পরে জীবনসঙ্গীর সাথে সময় কাটানোর স্বপ্ন কে না দেখে? সাইমাও দেখেছিলো। আজ সেটা হলো তবুও মনেও মধ্যে অজানা কোন ভয় কাজ করছে। রাফি কিসের জন্য এমন করে। কি জানি কি বলে বসে।
২ জনই চুপচাপ। অবশেষে রাফি নিরবতা ভেঙে কথা বললো
রাফি: তুমি কলেজে ক্লাস করা শুরু করবে কবে থেকে?
সাইমা: আপনি এখনো ক্লাস করার অনুমতি দেন নি। অনুমতি দিলে কিছু দিন পর থেকেই শুরু করবো।
রাফি: কিছু দিন পর থেকেই ক্লাস করা শুরু করো।
সাইমা: বিয়ের সময় আব্বু যদি পড়ানোর কথা বলে না দিতো তাহলে কি আমাকে পড়াতেন?
রাফি:
সাইমা: আচ্ছা যায় হোক। এখন আপনি বলেন কেন আমার সাথে এমন করছেন।
রাফি: এসব শুনলে তুমি হয়তোবা মিন খারাপ করবে তবুও যখন জানতে চেয়েছো তখন বলবো। কিন্তু আমার শর্ত আছে।
সাইমা: কি শর্ত?
রাফি: তুমি আমার আব্বু আর মা কে এই কথা বলতে পারবে না।
সাইমা: আচ্ছা ঠিক আছে।
রাফি: তুমি তো জানো আমি জেনারেল লাইনে পড়াশোনা করেছি। কিন্তু আমার মনমানসিকতা হঠাৎ পরিবর্তন হয়ে যায়। আমি আলেমদের সাথে উঠা বসা শুরু করি। রাসুলে(সা) সুন্নত হিসেবে মুখে দাঁড়িও রেখেছি। আবার সুন্নতি পোশাক ও পড়ি। কিন্তু মাদ্রাসায় পড়িনি তাই অনেক কিছুই জানিনা।
সাইম: ওও
রাফি: আমার খুব ইচ্ছে ছিলো কওমী
মাদ্রাসার কোন আলেমাকে বিয়ে করার। আর একটু উজ্জল বর্ণের। আমার তো কোন কিছুর অভাব নেই। শুধু একজন মনের মানুষের অভাব ছিলো। বাড়িতে বিয়ের কথা বললে তোমার কথা আব্বু বলেছিলো। কিন্তু তোমার সাথে বিয়েতে আমার কোন মত ছিল না। কি হলো কি ভাবছো?
সাইমা: কই কিছু না তো। আপনার কথায় শুনছি। তারপর
রাফি: আব্বুকে বলেছিলাম কিন্তু কোন কাজ হয়নি। তোমার সাথে বিয়ে এক প্রকার জোড় করেই দিলো। আমি তোমাকে বিয়ে করেছি কিন্তু মন থেকে মেনে নিতে পারছিনা। আমি জানি তুমি অনেক কষ্ট পাচ্ছো কিন্তু যা সত্যি তাই বলে দিলাম।
সাইমা: ( বুক ফেটে কান্না আসছে কিন্তু কাঁদছে না)
রাফি: তোমার এখনো পড়াশোনা শেষ হয়নি। আপতত এইচএসসি পরিক্ষা দাও। কয়েক মাস পর পরিক্ষা আছে। মন দিয়ে পড়।
সাইমা: কিন্তু আমার কি দোষ? আপনি কি আমাকে মেনে নিবেন না কোন দিন?
রাফি: এ বিষয়ে তুমি ভেবে দেখো। আমি তোমাকে সব জানিয়ে দিলাম। যদি এর পরেও আমার খারাপ ব্যবহার সহ্য করে থাকতে পারো তো থাকো। আমার কিছুই বলার নেই।
এই বলে রাফি রুমে চলে গেলো। সেই আগের মতো ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে। আর সাইমা এখনো সেই বারান্দাতেই আছে। চোঁখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছে। সাইমা কি করবে এখন? রাফিকে ছেড়ে দিয়ে চলে যাবে বা থাকবে?
_____________________________________________
আজ সকালে সাইমা প্রথম রান্না করতে গেলো। শাশুড়ির সাথে মিলে অনেক কিছুই রান্না করলো। ৯টার আগেই রাফি আর রাফির আব্বু অফিসে চলে গেছে। পুরো বাড়িতে এখন সাইমা, ওর শাশুড়ি আর ২টা কাজের বুয়া।
এই কয়দিনে একবারো বাড়িটা ভালো করে ঘুরে দেখেনি সাইমা। আজকে কেন জানি খুব ইচ্ছে হচ্ছে দেখার। নিজের রুম থেকে বের হয়ে পড়ার জন্য ঠিক করে দেয়া রুমে গেলো। এই রুমটা সাইমার বেড রুমের সামনা সামনি। পাশে আরো ৫/৬ টা রুম আছে কিন্তু কিসের রুম সেইগুলো দেখা হয়নি। পড়ার রুমে খুব বেশি কিছু না থাকলেও একটা উন্নত মানে টেবিল চেয়ার, একটা বুক শেল্ফ, একটা বিছানা আর পাশে একটা টেবিল ল্যাম্প আছে। এই রুমের পিছনে একটা বারান্দাও আছে। এর আগে যাওয়া হয়নি তাই সেখানে গেলো। দরজা খুলতেই বুঝতে পারলো এই অংশটা বাড়ির পিছনের দিকে।বাড়ির পিছনের দিক হলেও একটা বাগান আছে। আম, জাম, লিছু, বেল, আরো অনেক গাছ। আর এক পাশে একটা পুকুর। পুকুরের শেষ সীমানায় একটা ফ্লাট বাড়ি আছে। তারাও হয়তো এদের মতো বড় লোক।
এসব ভাবতে ভাবতে এই রুম থেকে বের হলো। পাশের আরেকটা রুম এ গেলো। এই রুমটা বিলাশ বহুল রুম। সোফা থেকে শুরু করে অনেক দামী দামী আসবাব পত্র রাখা। দেয়ালেও অনেক সুন্দর সুন্দর ওয়াল পেপার দিয়ে সাজানো।
বাড়ির বিভিন্ন অংশে বড় বড় ফুল দানি রাখা। আবার অনেক সুন্দর পর্দাও দেয়া। এক কথায় রাজপ্রাসাদতুল্য। এই গুলো দেখে সাইমার আরো মন খারাপ হয়ে যায়। নিজেকে ছোট মনে হতে থাকে। সত্যি তো এত বড় বাড়ির বউ হওয়ার যোগ্যতা তার নেই, চলে যায় এখান থেকে। এসব খারাপ কথা ভাবতে থাকে। এমন সময় বড় বোনের কল আসে।
সাইমা বলবে না ভেবেই কান্না থামাতে না পেরে বলে দিলো।
সাইমা: আপু আমি এখন কি করবো বলো? আব্বুকে বলো আমাকে যেন নিয়ে যায়। রাফি তো আমাকে ভালোবাসবে না
সাইমার বোন: সংসার জীবনে এমন অনেক কিছুই হয়। তুমি ধৈর্য্য ধরো। আর সবে মাত্র বিয়ে হয়েছে এখন আব্বুকে কি করে এইসব জানাবে? আব্বু যদি বেশি চিন্তা করে কিছু করে ফেলে তো তখন কি হবে?
সাইমা: তাহলে আমি এখন কি করতে পারি আপু?
সাইমার বোন: তুমি রাফির কাছ থেকে সময় চেয়ে নাও ওর মনের মতো হওয়ার জন্য। তারপরেও যদি না হয় তবে তখন কিছু একটা করা যাবে।
সাইমা: আচ্ছা ঠিক আছে আপু। কাল থেকে ক্লাশ করবো।
সাইমার বোন: হুম। আর তোমাকে একটা আমল শিখিয়ে দিচ্ছি এইটা করবে। আর নিয়মিত নামাজ পড়বে সাথে তাহাজ্জুত ও। আর মাঝে মাঝে রাফিকে নিয়ে পড়বে।
সাইমা: কি আমল আপু?
সাইমার বোন: স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অমিল হলে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আল্লাহ তাআলার এ পবিত্র গুণবাচক নাম (اَلْمَانِعُ) ‘আল-মানিয়ু’ ২০ বার পাঠ করলে তাদের রাগ-গোস্বা দূর হয়ে মিল সৃষ্টি হয়। তাই তুমি এই আমলটা করবে।
সাইমা: ঠিক আছে আপু। জাযাকিল্লাহ।
সাইমার বোন: আচ্ছা পরে কথা হবে আবার। কোন সমস্যা হলে আমাকে জানাবে। এখন রাখি। আসসালামু আলাইকুম।
সাইমা: ওয়ালাইকুমুস সালাম
পর্বঃ ৪
বিয়ের পরে আজকেই প্রথম পড়ার টেবিলে বসলাম। কাল থেকে ক্লাস করতে হবে। কিন্তু একটুও পড়তে ইচ্ছে হচ্ছে না। বিভিন্ন চিন্তায় পড়ার মনমানসিকতাও নষ্ট হয়ে গেছে। হঠাৎ রাইসার দেয়া বই গুলো চোঁখে পড়লো। একটা নিয়েই দেখি আমার বান্ধবী কি বই দিলো। সবার উপর থেকে একটা বই নিলাম। বইটা খুলেই মাঝের একটা পেজে নজর বন্ধি হলো। একটা হাদিস লেখা
রাসুল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি রাত্রে ঘুম থেকে জেগে তাহাজ্জুদের নামায পড়ে এবং সে তার স্ত্রীকেও ঘুম থেকে জাগিয়ে নামায পড়ায় এমনকি সে যদি জেগে না উঠে, তবে তার মুখে খানিকটা পানি ছিটিয়ে দেয় তাহলে তার প্রতি আল্লাহ রহমত বর্ষণ করে থাকেন ।
অনুরুপ কোন মহিলা যদি রাত্রিকালে জাগ্রত হয়ে তাহাজ্জুদ নামায পড়ে এবং সে তার স্বামীকে নামাযের জন্য জাগায় এমনকি স্বামী না জাগলে স্ত্রী তার মুখে পানি ছিটিয়ে তার ঘুম ভাঙ্গিয়ে দেয় তাহলে তার প্রতিও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হতে থাকে (আবু দাউদ, নাসায়ী, মেশকাত ১০৯ পৃঃ)
আবার লেখা
রাসুল (সাঃ) বলেন, আমাদের প্রভু পরওয়ারদিগার তাবারাকা ওয়া তা’আলা প্রত্যেক রাত্রে দুনিয়ার আসমানে (যা আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়) নেমে আসেন যখন রাত্রের এক তৃতীয়াংশ বাকী থাকে । অতঃপর তিনি বলেন, তোমাদের কে আমাকে ডাকবে! আমি তার ডাকে সাড়া দেব । কে আমার কাছে কিছু চাইবে আমি তাকে তা দেব, কে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে আমি তাকে ক্ষমা করে দেব (মুসলিম, মেশকাত ১০৯ পৃঃ)
আর একটা কোরানের আয়াত
আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদের নামায পড়তে থাক। এ নামায তোমার জন্যে আল্লাহর অতিরিক্ত ফযল ও করম। শীঘ্রই আল্লাহ তোমাকে উভয় জগতে বাঞ্ছিত মর্যাদায় ভূষিত করবেন [বণী ইসরাইল :৭৯]
আহ কি মজা। মাথায় এখন শুধু দুষ্টু বুদ্ধি আসছে। আজ রাতেই দুষ্টুমি শুরু করবো। রাফি কথা না বললে কি হবে আমি জোড় করেই কথা বলবো।
সবাই এক সাথে খাওয়া দাওয়া করছি। রাফির দিকে তিন বার তাকালাম কিন্তু আমার দিকে তাকাচ্ছেনা একবারো। না তাকালেও সমস্যা নেই। আজ রাত থেকেই আমার মিশন শুরু। এখন থেকে আমিই জোড় করে কথা বলবো। খাওয়া দাওয়া শেষ করে রুমে চলে গেলো রাফি। আর আমি পড়ার রুমে গেলাম। হঠাৎ করে রাফি ডাকলো। দ্রুত গেলাম।
সাইমা: কি হয়েছে??
রাফি: বিছানা ঠিক করে দিতে পারো না?(ধমকের সুরে)
সাইমা: আচ্ছা এখনো দিচ্ছি। পরে আর এমন হবে না ইনশাআল্লাহ।
বিছানা ঠিক করতে করতে নিজেই ওর সাথে কথা বললাম
সাইমা: আপনাকে একটা কথা বলতে পারি?
রাফি: বলো
সাইমা: আপনি তো আমাকে পছন্দ করেন না। আবার ছেড়েও দিবেন না। আমি যদি আপনার মনের মতো হতে পারি শুধু চেহারা বাদে তাহলে কি আমাকে মেনে নেবেন?
রাফি: আমার মনের মতো?
সাইমা: জ্বি আপনার মনের মতো হতে চাই। আপনি যেভাবে আমাকে চান আমি সেইভাবে হতে চাই।
রাফি: ঠিক আছে। তুমি যদি আমার মনের মতো হতে পারো তবে আমি মেনে নিতে পারি।
সাইমা: আমাকে কত দিন টাইম দিবেন?
রাফি: আমি তোমাকে ডিভোর্জ দিতে পারবো না কারণ আব্বু পছন্দ করে এনেছে। তুমি যেই দিন আমার মনের মতো হতে পারবে সেই দিন মেনে নিবো। কিন্তু তুমি আমাকে কোন বিষয়ে জোড় করতে পারবে না বলে দিলাম।
সাইমা: আচ্ছা আমি রাজি আছি।
এবার আমার একটা যুদ্ধ করতে হবে। কারোর মন পাওয়ার যুদ্ধ। পড়ার রুম থেকে মোবাইলটা নিয়ে এসে এল্যার্ম দিয়ে রাখলাম। রাফির থেকে একটু দূরে শুয়ে পড়লাম। জানালা দিয়ে চাঁদের আলো রুমে আসছে। এসব দেখতে দেখতে কখন যেন ঘুমিয়ে গেলাম।
রাত তিনটাই এল্যার্ম এর শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো। আস্তে আস্তে বিছানা থেকে নেমে বাথরুম এ যেয়ে অজু করে আসলাম। ওকে ডাকতেও ইচ্ছে হচ্ছে আবার ভয়ও লাগছে। একবার ডাকবো আসতে আসতে কাছে গেলাম। ডাকতে সাহস পাচ্ছিনা। যদি বকা বকি করে তখন কি করবো?
না একবার ডেকেই দেখি যা হবার হবে। বুকে সাহস জমিয়ে ডাকলাম
হায় আল্লাহ এ কি ঘুম পারছে রে বা বা ডেকে কাজ হলো না । এবার একটু মুখে পানি ছিটিতে দিবও। যদি রেগে যায় তখন কি করবো। না একটু দিয়েই দেখি।
অল্প একটু পানি নিয়ে মুখে ছিটিয়ে দিলাম। আর হুর মুর করে উঠে পড়লো।
রাফি: কি হলো? এত রাতে মুখে পানি দিয়ে ডাকলে কেন?
সাইমা: সরি। তাহাজ্জুতের সময় হয়েছে। নামাজ পড়ার জন্য ডাকলাম। আমি পড়বো তাই ভাবলাম আপনি ও পড়েন।
রাফি: ও আচ্ছা। মুখে ডাকলেই পারতে। এভাবে পানি দিলে ভয় পেয়েছি তো
সাইমা: হাদিসে পড়েছি তাহাজ্জুতের সময় স্ত্রী যদি তার স্বামীকে যদি ঘুম থেকে না জাগাতে পারে তখন মুখে পানি ছিটিয়ে জাগিয়ে দেয় তবে তার প্রতি আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়। আমি আপনাকে ডেকেছিলাম কিন্তু আপনি উঠেননি তাই হাদিস অনুযায়ী জাগিয়েছি।
রাফি: ও আচ্ছা। ঠিক আছে। তুমি কি রেগুলার পড়ো?
সাইমা : আগে পড়তাম না তবে এখন থেকে পড়বো। আর আপনি চাইলে আপনাকে রোজ এইভাবে ডেকে দিবো। ( মুচকি হেসে)
রাফি: হুম দিও
দুজনে মিলে তাহাজ্জুতের নামাজ পড়লাম। খুব ভালো লাগছে।
সকালে প্রাইভেট কারে করে কলেজে দিয়ে গেলো। ভাবতেও পারছিনা আমি প্রাইভেট কারে করে কলেজে আসবো। কলেজে এসেই রাইসাকে একটা কল দিলাম।
অনেক দিন পর দেখা হলো। দুজনে মিলে অনেক গল্প করলাম। কিন্তু নিজের পেরেশানি আর নিরে পারছিলাম না তাই রাইসার সাথে আমার আর রাফির বিষয়টা শেয়ার করলাম। রাইসা সারা জীবণ আমাকে ভালো পরামর্শ দেয়।
রাইসা: তুই রাফির মন জয় করার চেষ্টা কর। আর ওর বিষয়ে আপুকে কিছুই বলার দরকার নেই। আপু অযথা চিন্তা করবে। আমার সাথে সব শেয়ার করিস।
সাইমা: আচ্ছা। কিন্তু এখন আপাতত কিছু বল।
রাইসা: আজকে কিছুই বলবো না। শুধু এইটুকুই বলবো রাফি যদি তোকে রাগ করে বা বকে তুই কিছুই বলবিনা। চুপ থাকবি। আর তোকে যেই বই দিয়েছি সেই বইতে এই গুলো নিয়ে অনেক কিছু আছে। আর আমি তোকে কাল আরো অনেক সুন্দর সুন্দর টিপস দিবো ইনশাল্লাহ।
সাইমা: আমাকে নিয়ে কার চলে এসেছে। এখন যায়। আল্লাহ হাফেজ
রাইসা: আল্লাহ হাফেজ
#পর্ব -৫
আমাকে আজ এত কাজ দিলো কেন হঠাৎ! এত কাজ কি একা একা করা যায়! বাবা রে কখন এসব করবো
সব কাজ শেষ করে পড়তে বসতে রাত ৮টা বেজে গেলো। এখনো কত কিছু পড়া লাগবে। যায় হোক এবার মন দিয়ে পড়ি।
আব্বু খেতে ডাকছে। খেতে যায়। ইশরে রাফি রেগে আছে কেন? কিছু আবার ভুল করলাম নাকি? আল্লাহ বাঁচাও তুমি এভাবে রেগে রেগে তাকাচ্ছে কেন?
রাফি খেয়ে রুমে চলে গেলো। আমি