অর্থাৎ মহান আল্লাহ তাআলার যাবতীয় আদেশ এবং নিষেধসমূহ, আল্লাহর প্রেরিত নবী রাসূল, তাঁর ফেরেশতা, আখেরাত প্রভৃতির উপর বিশ্বাস রাখা এবং নিজের কাজেকর্মে তার বাস্তবায়ন ও প্রতিফলন ঘটানো। ঈমান ছাড়া মুসলমান হওয়া যায় না। ঈমান তথা ইসলামের বিশ্বাস্য বিষয়গুলোর বিস্তারিত বিবরণ অনেকটা নিম্নানুরূপ- আমি ঈমান আনছি আল্লাহ তাআলার উপর, তাঁর সকল ফেরেশতার উপর, সকল কিতাবের উপর এবং তাঁর সকল নবী-রাসূলের উপর, যাদের মধ্যে প্রথম নবী আবুল বাশার হযরত আদম (আঃ) আর সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ)। তিনি হলেন আবদুল্লাহর ছেলে, আবদুল্লাহ আবদুল মুত্তালিবের ছেলে, আবদুল মুত্তালিব হাশেমের ছেলে এবং হাশেম আবদে মানাফের ছেলে। আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) সর্বশেষ নবী ও রাসূল। নবীদের মধ্যে তিনি হলেন শ্রেষ্ঠ এবং সমস্ত নবী-রাসূলের সরদার বা নেতা। তিনি তাঁর উম্মতের প্রতি বড় দয়াশীল মেহেরবান। আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর ইন্তেকালের পরে যদি কোন ব্যক্তি নবুওয়ত দাবী করে, তবে সে মিথ্যাবাদী। তার মত ও পথ বাতিল। তাঁর প্রচারিত ইসলাম কেয়ামত পর্যন্ত প্রচলিত থাকবে। আর কেয়ামত দিবসের উপরও আমি বিশ্বাস স্থাপন করছি। এবং এও বিশ্বাস করছি, পুণ্য ও পাপের সৃষ্টিকর্তা একমাত্র আল্লাহ্ তা'আলা। আল্লাহ তাআলা সর্বদা ঈমান, বন্দেগী ও নেক কার্যের প্রতি খুশী আর কুফর ও গুনাহের কার্যাবলীর উপর সর্বদা নাখোশ থাকেন। মৃত্যুর পরে পুনরুজ্জীবিত হওয়ার উপরও আমি বিশ্বাস স্থাপন করছি। আমাদের (আহলে সুন্নাত ওয়াল-জামাতের) নিকট, মুমিন হওয়ার জন্য শুধু ঈমানে মুজমাল বা মোটামুটি সংক্ষিপ্ত ঈমানই যথেষ্ট। ঈমানে মুফাচ্ছাল-বিস্তারিত বর্ণনা না হলেও চলে, এটা শর্ত নয়। কিন্তু ওলামায়ে কেরামের কারো কারো নিকট ঈমানে মুফাচ্ছালের উপর ঈমান আনা হলে সকল দলের মতেই ঈমান সঠিক বলে বিবেচিত হয়।আমাদের মনে রাখা উচিত, ঈমানের আসল রোকন হল হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর পক্ষ হতে যা কিছু নিয়ে এসেছেন তা সবই সত্য ও বাস্তব, এ কথা অন্তরে বিশ্বাস করা। কিন্তু মৌখিক স্বীকারোক্তি পার্থিব জগতে ইসলামী হুকুম-আহকাম ও শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য শর্ত। কেননা, ঈমানের মৌখিক স্বীকারোক্তি ছাড়া তা সম্ভব নয়। আর যদি কোন ব্যক্তি অন্তরে বিশ্বাস রাখে কিন্তু মৌখিক স্বীকার না করে, সে আল্লাহর নিকট মুমিন হবে। তবে সমাজ ও সরকারের নিকট মুমিন বলে গণ্য হবে না; বরং কাফেরই থাকবে। আর যে ব্যক্তি মুখে স্বীকার করে কিন্তু আন্তরে বিশ্বাস নাই, সে সমাজ ও রাষ্ট্রের নিকট মুমিন বলে বিবেচিত হবে, কিন্তু আল্লাহর নিকট মুমিন হবে না, বরং কাফেরই থাকবে। এমন ব্যক্তিকে ইসলামের পরিভাষায় মুনাফিক বলা হয়। আর যার নিকট মৌখিক স্বীকার ও আন্তরিক বিশ্বাস উভয়টি পাওয়া যাবে, সে ব্যক্তিই হবে প্রকৃত মুমিন। নিঃসন্দেহে সে আল্লাহর প্রিয় মুমিন বান্দা। সত্যিকারের মুমিন হওয়ার জন্য মানুষের মৌখিক স্বীকারোক্তি ও আন্তরিক বিশ্বাস থাকা উচিত। তখনই সে আসল মুমিন হতে পারে। ঈমানের শর্তাবলীর মধ্যে আর একটি শর্ত হচ্ছে, আল্লাহর উপর এবং কেয়ামতের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা। আর আল্লাহ তাআলা যে সকল বস্তু হালাল বা হারাম করেছেন তা সত্য বলে বিশ্বাস রাখা। যে ব্যক্তি আল্লাহ কৃত হালাল বস্তুকে হারাম অথবা হারাম বস্তুকে হালাল মনে করে সে কাফের হয়ে যায়। (নাউজু বিল্লাহ) ঈমানের হুকুম বা তার উপকারিতা হল, যখন কোন কাফের ঈমান এনে মুসলমান হবে, তখন হতে সে হত্যা বা তাকে গোলাম বানাবার বিপদ হতে মুক্তি পাবে। তার জান মালের উপর হস্তক্ষেপ করা কারো জন্য জায়েয হবে না। তাকে দুঃখ-কষ্ট দেওয়াও হারাম হবে। পরিশেষে সে দোযখের কঠিনতম আযাব হতে চিরন্তন মুক্তি লাভ করে জান্নাতবাসী হবে।
Kader 11
42 Blog posts