আহকামে শরা'র শ্রেণীবিভাগ

শরীঅতে যতগুলি হুকুম আছে, তা মোট ৮ ভাগে বিভক্ত। যথাঃ

১। ফরয, ২। ওয়াজিব, ৩। সুন্নত, ৪। মোস্তাহাব, ৫। হারাম, ৬। মাকরূহে তাহরীমী, ৭। মাকরূহ তানযিহী, ৮। মোবাহ বা জায়েয।

১। যে কাজে আল্লাহর পক্ষ থেকে সুনিশ্চিতরূপে করার আদেশ করা হয়েছে তাকে ফরয বলে। ফরয কাজ যে না করবে দুনিয়াতে তাকে ফাছেক বলা হবে এবং আখেরাতে সে শাস্তির উপযুক্ত হবে। ফরয অস্বীকারকারী কাফের। ফরয কাজ যথা: কালেমা, নামায, রোযা, যাকাৎ, হজ্জ, অঙ্গীকার (ওয়াদা) পালন করা, আমানতের হেফাযত করা, সত্য কথা বলা, রুযী হালাল খাওয়া, এলমেদ্বীন শিক্ষা করা, তবলীগ করা, জেহাদ করা ইত্যাদি। ফরয দুই প্রকার, যথা: ফরযে-আইন ও ফরযে-কেফায়া। ফরযে-আইন তাকে বলে যে কাজ প্রত্যেক বালেগ বুদ্ধিমান নর-নারীর উপর সমভাবে ফরয। যেমন, পাঞ্জেগানা নামায পড়া, আবশ্যক পরিমাণ এলমে- দ্বীন শিক্ষা করা, জুমুআর নামায পড়া ইত্যাদি। ফরযে কেফায়া তাকে বলে, যা কিছু লোক পালন করলে সকলেই গোনাহ হতে বেঁচে যাবে; কিন্তু যদি কেউই পালন না করে, তাহলে সকলেই ফরযতরকের জন্য গোনাহগার হবে। আর যারা পালন করবে তারা ফরযেরই ছওয়াব পাবে। যেমন, জানাযার নামায পড়া, মৃত ব্যক্তিকে কাফন-দাফন করা, আবশ্যক পরিমাণ অপেক্ষা অতিরিক্ত এলমে-দ্বীন শিক্ষা করা, ইসলাম প্রচার করা, ইসলামী খেলাফত স্থাপন করা, ইসলামী নেযাম রক্ষার্থে ইমাম বা আমীরুল মু'মিনীন নিযুক্ত করা ইত্যাদি।

২। ওয়াজিব কাজ ফরযের মত অবশ্য কর্তব্য। ফরয তরক করলে যেমনফাছেক ও গোনাহগার হতে হবে এবং শাস্তির উপযুক্ত হবে, ওয়াজিব তরককরলেও তদ্রূপ ফাছেক ও গোনাহগার হতে হবে এবং শাস্তির উপযুক্ত হবে। শুধু পার্থক্য এতটুকু যে, ফরয অস্বীকার করলে কাফের হবে, কিন্তু ওয়াজিব অস্বীকার করলে কাফের হবে না, ফাছেক হবে। যেমন, বেতরের নামায পড়া, কোরবানী করা, ফেতরা দেওয়া ইত্যাদি।৩। যে কাজ হযরত রসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা তার আছহাবগণ করেছেন, তাকে 'সুন্নত' বলে। সুন্নত দুই প্রকার: সুন্নতে মোয়াক্কাদা এবং সুন্নতে গায়ের মোয়াক্কাদা। যে কাজ রসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অথবা তার আছহাবগণ সব সময় করেছেন, বিনা ওযরে কোন সময় ছাড়েন নাই, তাকে সুন্নতে মোয়াক্কাদা বলে। যেমন আযান, একামত, খতনা, নেকাহ ইত্যাদি। সুন্নতে মোয়াক্কাদা আমলের দিক দিয়ে ওয়াজিবেরই মত। অর্থাৎ, যদি কেউ বিনা ওযরে সুন্নতে মোয়াক্কাদা ত্যাগ করে অথবা তরক করার অভ্যাস করে, সে ফাসেক ও গোনাহগার হবে এবং হযরতের খাছ শাফাআত থেকে বঞ্চিত থাকবে। কিন্তু ওয়াজিব তরকের গোনাহ অপেক্ষা কম গোনাহ হবে এবং কখনও ওযরবশতঃ ছুটে গেলে তা কাযা করতে হবে না। ওয়াজিব ওযরবশতঃ ছুটলে কাযা করতে হবে। যে কাজ হযরত রসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অথবা তাঁহার আছহাবগণ করেছেন, কিন্তু ওযর ছাড়াও কোন কোন সময় তরক করেছেন, তাকে সুন্নতে গায়রে মোয়াক্কাদা বলে। (সুন্নতে যায়েদা, সুন্নতে আদীয়াওবলে) সুন্নতে গায়রে মোয়াক্কাদা করলে ছওয়াব আছে, কিন্তু না করলে আযাব নাই।

৪। যে কাজ হযরত রসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা তার আছহাবগণ করেছেন, কিন্তু সব সময় বা অধিকাংশ সময় করেন নাই, কোন কোন সময় করেছেন তাকে 'মোস্তাহাব' বলে। এটা করলে ছওয়াব আছে না করলে গোনাহ বা আযাব নাই। মোস্তাহাবকে নফল বা মন্দুবও বলা হয়।

৫। হারাম ফরযের বিপরীত। যদি কেউ হারাম কাজ অস্বীকার করে অর্থাৎ যদি কেউ হারাম কাজকে হালাল এবং জায়েয মনে করে, সে কাফের। আর যদি বিনা ওযরে হারাম কাজ করে কিন্তু অস্বীকার না করে অর্থাৎ হারামকে হালাল মনে না করে, তাহলে সে কাফের হবে না, ফাসেক হবে, শাস্তির উপযুক্ত হবে। হারাম কাজ যথা: শূকর, শরাব, ঘুষ, যিনা, চুরি, ডাকাতি, আমানতে খেয়ানত, মিথ্যা বলা, অঙ্গীকার ভঙ্গ করা, অন্যায় অত্যাচার করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া, স্বামীর অবাধ্য হওয়া, স্ত্রী- পুত্রের বা মা-বাপের, ভাই-বোনের হক আদায় না করা, এলমে-দ্বীন শিক্ষা না করা, নামায না পড়া, যাকাত না দেওয়া, হজ্জ না করা ইতাদি।

৬। মাকরূহ তাহরীমী ওয়াজিবের বিপরীত। মাকরূহ তাহরীমী অস্বীকার করলে কাফের হবে না, ফাসেক হবে। যদি কেউ বিনা ওযরে মাকরূহ তাহরীমী কাজ করে, সে ফাসেক হবে এবং আযাবের উপযুক্ত হবে।৭। মাকরূহ তানন্যিহী না করলে ছওয়াব আছে করলে আযাব নাই।

৮। মোবাহ্ কাজে আল্লাহ তাআলা মানুষকে স্বাধীনতা এবং এখতিয়ার দানকরেছেন, অর্থাৎ তা ইচ্ছাধীন। ইচ্ছা করলে করতে পারে, ইচ্ছা না করলে না করতে পারে, করলেও ছওয়াব নাই, না করলেও আযাব নাই। মোবাহ কাজ যথাঃ মাছ মাংস খাওয়া, পানাহার করা, শাদী বিবাহ করা, কৃষিকর্ম করা, ব্যবসায়-বাণিজ্য করা, দেশ ভ্রমণ করা, আল্লাহর সৃষ্টি দর্শন করা ইত্যাদি। মোবাহ কাজের সঙ্গে যদি ভাল নিয়ত ও ভাল ফল সংযুক্ত হয়, তবে তাছওয়াবের কাজ হয়ে যায়, আর যদি মন্দ ফল সংযুক্ত হয়, তবে তা গোনাহর কাজ হয়ে যায়। যথা-যদি কেউ এলম হাছেল করবার জন্য, ইসলামের খেদমত করবার জন্য, জেহাদ ও তবলীগ করবার জন্য, পুষ্টিকর খাদ্য খেয়ে ব্যায়াম করে শরীর মোটাতাজা ও স্বাস্থ্য ভাল করে, তবে সে ছওয়াব পাবে। আর যদি কেউ পরস্ত্রী দর্শন করবার জন্য ভ্রমণ করে বা নাজায়েয খেলায় যোগদান করে, তাতে গোনাহ্ হবে। শরীয়ত ও তরীকতের যত হুকুম আহকাম আছে, সব চারটি দলীলের দ্বারা প্রাণিত হয়েছে; যথাঃ

১। কোরআন। ২। হাদীস। ৩। এজমা। ৪। কিয়াস। এই চারটি দলীলের বাইরে কোন দলীল নাই।


Kader 11

42 Blog posts

Comments