বাইতুল হিকমা মুসলমানদের জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চার কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার

বায়তুল হিকমা শুধু জ্ঞান অন্বেষণের কেন্দ্রস্থল ছিল না; এটি একটি মহাকাশ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র হিসেবেও কাজ করত। সে

বায়তুল হিকমা ছিল ইসলামী স্বর্ণযুগের (৮ম থেকে ১৩শ শতাব্দী) এক বিশাল জ্ঞানকেন্দ্র এবং গ্রন্থাগার, যা বাগদাদে আব্বাসীয় খলিফা হারুন আল রশিদের শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি বিশেষ করে খলিফা আল মামুনের সময়ে (৮১৩-৮৩৩ খ্রিষ্টাব্দ) উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নতি লাভ করে। বায়তুল হিকমা ছিল বিশ্ববিখ্যাত পণ্ডিতদের সমাগমস্থল, যেখানে বিজ্ঞান, গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, চিকিৎসাশাস্ত্র, দর্শন, ভূগোলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণা ও অনুবাদের কাজ চলত।

এই জ্ঞানকেন্দ্রে গ্রীক, পারসিক, ভারতীয় এবং সিরিয়াক ভাষার গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থসমূহ আরবিতে অনুবাদ করা হতো, যা পরে ইউরোপীয় পুনর্জাগরণকালে ইউরোপের জ্ঞান-বিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপন করে। যেমন, গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল এবং প্লেটোর রচনাবলি, চিকিৎসাবিদ হিপোক্রেটস ও গ্যালেনের রচনা, এবং ভারতীয় গণিতজ্ঞ আর্যভট্ট ও ব্রহ্মগুপ্তের কাজের আরবি অনুবাদ বায়তুল হিকমায় করা হয়েছিল।

বায়তুল হিকমা শুধু জ্ঞান অন্বেষণের কেন্দ্রস্থল ছিল না; এটি একটি মহাকাশ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র হিসেবেও কাজ করত। সেখানে জ্যোতির্বিদরা সূর্য, চন্দ্র ও গ্রহের গতিবিধি নিয়ে গবেষণা করতেন। এছাড়াও, আল-খারিজমির মতো বিখ্যাত গণিতজ্ঞরা এখানে তাদের কাজ সম্পাদন করতেন, যা আজকের আধুনিক বীজগণিত ও অ্যালগরিদমের ভিত্তি স্থাপন করেছে।

দুর্ভাগ্যক্রমে, ১২৫৮ সালে মঙ্গোলদের বাগদাদ আক্রমণের সময় বায়তুল হিকমা ধ্বংস হয়। গ্রন্থাগারের অসংখ্য মূল্যবান পাণ্ডুলিপি ও বই ইউফ্রেটিস নদীতে ফেলে দেওয়া হয়, যা জ্ঞান-বিজ্ঞানের এক বিশাল ক্ষতি সাধন করে।

বায়তুল হিকমা ইসলামী সভ্যতার গৌরবময় ইতিহাসের অংশ, যা প্রাচীন বিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল এবং আধুনিক বিশ্বের অনেক বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক ধারণার ভিত্তি স্থাপন করেছে।

 


Kawsar Hossen

50 Blog posts

Comments