শহীদ শেখ আসহাবুল ইয়ামিন: এক নতুন প্রজন্মের কিংবদন্তি

শহীদ ইয়ামিনের গল্প

আপনারা  নিশ্চই দেখেছেন রায়ট কার (সাঁজোয়া যান) উপর থেকে ফেলা মানুষটিকে যে হয়তো তখনও বেঁচে ছিলো! সে তার স্বপ্ন পূরণের জন্য বুয়েট ও রংপুর মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েও পড়েননি। সেই মানুষটির নাম "শহীদ শেখ আসহাবুল ইয়ামিন"

 

ইয়ামিনের জন্ম ২০০১ সালের ১২ ডিসেম্বর। দুই ভাইবোনের মধ্যে ইয়ামিন ছোট। বড় বোন শেখ আসহাবুল জান্নাত শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। বাবা মো. মহিউদ্দিন সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা বর্তমানে ব্যবসায়ী।

 

ইয়ামিন ২০১৮ সালে সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল থেকে এসএসসি, ২০২০ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অসাধারণ ফলাফল করে সুনাম অর্জন করেন। ইয়ামিন মিরপুরের মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (MIST) কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল(CSE) বিভাগের অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

 

নতুন প্রজন্মের কিংবদন্তীঃ

বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) দুপুরে আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পুলিশের হামলায় আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করা জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস অভিমুখে অগ্রসর হলে পাকিজা, রেডিও কলোনীসহ বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় লাঠিহাতে হেলমেট পরা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরাও যোগ দেয় পুলিশের সঙ্গে। দফায় দফায় সংঘর্ষ,ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার বিপরীতে চলতে থাকে বৃষ্টির মতো পুলিশের রাবার বুলেট,কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ ও লাঠিপেটা। এই সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয় দেড় শতাধিক। 

 

ইয়ামিনকে শুধু গুলি করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি হায়েনা বাহিনী, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে রায়ট কারের উপর থেকে টেনে হিচড়ে রাস্তায় ফেলে দেয়। তখনো আমাদের ভাই বেঁচে ছিলেন। চিৎকার করছিল, কিন্তু কে বাঁচাতে যাবে এই মুহূর্তে? হায়েনা বাহিনীর দল তাকে রাস্তার একপাশ থেকে অপরপাশে ফেলে দেয়। আহ! কি নির্মম দৃশ্য। মানুষ হয়ে একজন মানুষের সাথে এতটা নিকৃষ্ট আচরন করতে পারে?

 

বেলা পৌনে ৩টার দিকে ইয়ামিনকে সাভার এনাম মেডিকেল হাসপাতালে আনার পর তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। তাঁর পকেটে থাকা এমআইএসটির পরিচয়পত্র পেয়ে তাঁর পরিচয় নিশ্চিত হয়। খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন ইয়ামিনের পরিবার ও স্বজনরা। এ সময় তাদের আর্তনাদে ভারি হয়ে ওঠে সেখানকার বাতাস। মারা যাওয়ার পরেও তাকে দেয়া হয় নি যথাযথ সম্মান। বাবা-মা'র ইচ্ছে ছিলো গ্রামের বাড়িতে কবর দেয়ার। প্রশাসনিক চাপে তাও সম্ভব হয় নি।

 

ইয়ামিন মৃত্যুর ১২ ঘণ্টা আগে একটি পোস্ট দেন। সেখানে লেখা, ‘শুধু কোটা নয়; গোটা দেশটাই সংস্কার প্রয়োজন।’

 

পিতামাতা ও বন্ধুদের অভিব্যাক্তঃ

বাবা মহিউদ্দিন বলেন, "আমার ছেলেকে কেউ রাজনৈতিক দলের দাবার ঘুঁটি বানাক, তা আমরা চাই না। আমার ছেলে রাজনীতিসচেতন ছিল। আমিও রাজনীতিসচেতন। তবে কোনো দল করি না। ছেলে বুয়েট ও রংপুর মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েও পড়েনি। ছোটবেলায় পড়েছে সাভার ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজে। পরে ভর্তি হয় এমআইএসটিতে। এই দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনোটিতেই রাজনীতি করার সুযোগ নেই।"

 

তার এক বন্ধু বলেন, ইয়ামিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো, আমি না পড়লে টেনে নিয়ে যাইতো ও সুন্নাত পালনের জন্য রোজাও রাখতো ছাত্র অবস্থাতেই। ইয়ামিন সেদিন জোহরের নামায মসজিদে পড়ে ছাত্রদের বাঁচাতে যেয়ে নিজে গুলি খেয়ে শহীদ হয়। আপন সাথীরা তাঁর ব্যাপারে কল্যাণের সাক্ষ্য দিচ্ছে।আল্লাহ তাকে মাফ করুন, জান্নাতবাসী করুন।

 

আমিন।


Adeel Hossain

242 Blog posts

Comments