বাংলাদেশের গ্রামীণ ও শহরের মেলায় এক সময় সার্কাসের আনাগোনা ছিল স্বাভাবিক ঘটনা। হাস্যরস, অবাক করা কৌশল এবং বিস্ময়কর কারনামা দিয়ে দর্শকদের মন মাতাতো সার্কাস। কিন্তু আজকাল এই জনপ্রিয় বিনোদন মাধ্যমটি প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের সার্কাসের উত্থান, পতন এবং এর পেছনের কারণগুলি তুলে ধরা হয়েছে।
বাংলাদেশের সার্কাসের ইতিহাস খুব পুরনো নয়। ব্রিটিশ শাসনামলে ভারতীয় উপমহাদেশে সার্কাসের আগমন ঘটে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশেও সার্কাসের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়তে থাকে। গ্রামীণ মেলা থেকে শুরু করে শহরের বিভিন্ন স্থানে সার্কাসের তাঁবু গড়ে উঠত। সার্কাসের মূল আকর্ষণ ছিল অ্যাক্রোব্যাটিক্স, মজার কৌতুক, জাদু এবং বিভিন্ন প্রাণীর কারনামা। সার্কাসের কলাকুশলীরা তাদের দক্ষতার মাধ্যমে দর্শকদের মন মাতাত। ছোট-বড় সবাই মিলে সার্কাস উপভোগ করত। সার্কাস ছিল এক সময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিনোদন মাধ্যম।
কিন্তু কেন হারিয়ে গেল সার্কাস? কয়েকটি কারণে সার্কাসের জনপ্রিয়তা হ্রাস পেয়েছে। প্রথমত, আধুনিক বিনোদন মাধ্যমের আগমন। টেলিভিশন, ইন্টারনেট এবং মোবাইল ফোনের আগমনের সাথে সাথে মানুষের বিনোদনের ধরন বদলে গেছে। সার্কাসের তুলনায় এই আধুনিক বিনোদন মাধ্যমগুলি মানুষের কাছে বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। দ্বিতীয়ত, অর্থনৈতিক কারণ। সার্কাস চালানো খুবই ব্যয়বহুল। প্রাণীদের খাবার, কলাকুশলীদের বেতন, ভ্রমণ খরচ ইত্যাদি মিলে সার্কাসের মালিকদের জন্য লাভ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তৃতীয়ত, সামাজিক পরিবর্তন। সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেছে। অনেকেই প্রাণীদের উপর নির্যাতনের অভিযোগে সার্কাসের বিরোধিতা করে।
সার্কাসের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকেই চিন্তিত। বাংলাদেশে সার্কাস প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেলেও বিশ্বের অনেক দেশে এখনও সার্কাস জনপ্রিয়। বাংলাদেশেও নতুন করে সার্কাসকে জনপ্রিয় করার চেষ্টা করা যেতে পারে। তবে এটির জন্য আধুনিকতার সাথে খাপ খাওয়ানো এবং প্রাণীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি।
সার্কাসের এই ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সকলের প্রচেষ্টা প্রয়োজন। সরকার, বেসরকারি সংস্থা এবং সাধারণ মানুষ সবাই মিলে সার্কাসকে নতুন রূপ দিতে পারে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সার্কাসকে আরও আকর্ষণীয় করা যেতে পারে। প্রাণীদের পরিবর্তে মানুষের দক্ষতা এবং কৌশলকে কেন্দ্র করে সার্কাস তৈরি করা যেতে পারে।
এক সময়ের জনপ্রিয় এই বিনোদন মাধ্যমটি যাতে সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত না হয় সেদিকে সকলকে সচেতন হওয়া জরুরি।