গ্রামে জন্মগ্রহণ করার একটা খুব বড় সুবিধে হলো এই যে, বড়। হয়ে এক সময় শহরে চলে যাওয়া যায়। কিন্তু শহরে জন্মালে, এক সময় বড় হয়ে তার পক্ষে আর গ্রামে যাওয়া হয়ে ওঠে না। যারা গ্রামে জম্মায়, তাদের সামনে গ্রাম এবং শহর দুটোই খোলা। থাকে। কিন্তু যারা শহরে জন্মগ্রহণ করতে বাধ্য হয়, তাদের জন্য গ্রামের জগৎ-পথ আর খোলা থাকে না।
ভাগ্য আমার ভালো। আমার জন্ম হয়েছে একটি চমৎকার। ছায়া-সুনিবিড় গ্রামে। তার জন্য আমি খুবই খুশি। গ্রাম-জীবনের স্বাদ যারা পায়নি, তাদের জন্য আমার দুঃখের অন্ত নেই। নগরজাতকরা হয়তো বলবেন, আমাদের হয়ে আপনার দুঃখ প্রকাশ করার কোনো দরকার নেই। আমরা বেশ ভালো আছি। আমাদের কোনো দুঃখ নেই। আয়ার পক্ষে তা সত্য বলে মানা কঠিন। তারা তো জানেই না তারা কী হারিয়েছে। কবি হিসেবে তাদের জন্য শোক প্রকাশ করাটা আমি কর্তব্য জ্ঞান করি। আমার জীবনের প্রথম ১৬ বছর গ্রামে কেটেছে। আমি
মাটির মধ্যে পা ফেলে ফেলে ধীরে ধীরে বড় হয়েছি: গাছের মতো, সবুজ লতার মতো। আমি খুব কাছ থেকে আকাশ দেখেছি। দেখেছি তার নানা রঙের খেলা। দেখেছি গাঁয়ের পথে ছুটে বেড়ানো দুরন্ত বাতাসের রূপ। দেখেছি বারো মাসের তেরো পার্বণ আর বাংলার ষড়ঋতুর আসা-যাওয়া; মেঘ-বৃষ্টি-ঝড়। দেখেছি সাদা আকাশে কালো মেঘের কামুক থাবা। দেখেছি মিলনের তিয়াস-জাগানিয়া বসন্তের মাতাল বাতাস। আমাকে ফাঁকি দিয়ে কোনো ঋতুর আগমন ঘটেনি সেখানে।
আমার কবিতায় গ্রামবাংলার দুই প্রবল ঋতু বর্ষা ও বসন্ত। তাই খুব সঙ্গত কারণেই একটা বড় জায়গা দখল করে নিয়েছে। শুধু ঋতুই নয়, বর্ষা ও বসন্তের আমার কবিতায় বিচিত্ররূপে প্রকাশিত হয়েছে আকাশও। আকাশকে নিয়ে আমি এত্ত কবিতা লিখেছি, বুঝতেই বুঝতেই পারিনি!... লক্ষ্য করা গেল, চারটি বিষয় আমার কবিতায় বারবার ফিরে এসেছে। ওই চারটি বিষয় হচ্ছে- বর্ষা, বসন্ত, আকাশ এবং শেখ মুজিব।...
নিজের তৈরি কাশবনের পথে কবি নির্মলেন্দু গুণ