নদীর তীরে বসবাসকারী বেদে সম্প্রদায়: সভ্যতার স্রোতে হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কা

অবহেলিত ইতিহাস ও বর্তমান চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশের নদী-নালায় বসবাসকারী বেদে সম্প্রদায় দীর্ঘকাল ধরেই আমাদের সমাজের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদের জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি এবং ইতিহাস অনন্য। কিন্তু আজকের দিনে এই সম্প্রদায়টি বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হয়ে দিনাতিপাত করছে।

 

ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যায়, বেদে সম্প্রদায়ের উৎপত্তি নিয়ে বিভিন্ন মতবাদ রয়েছে। একাংশের মতে, তারা আরাকান রাজ্যের মনতং আদিবাসী গোত্রের দেশত্যাগী অংশ। অন্যদিকে, অনেকে মনে করেন তারা প্রাচীন ভারতের বৈদ্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। বাংলাদেশে বেদেদের আগমন নিয়েও বিভিন্ন মত রয়েছে। ১৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে শরণার্থী আরাকানরাজ বল্লাল রাজার সাথে এরা ঢাকায় আসে বলে অনেকে মনে করেন।

 

ঐতিহাসিকভাবে বেদেরা নদীতে বসবাস করে, ভ্রমণ করে এবং তাদের জীবিকা অর্জন করে, তাই তারা "জল যাযাবর" বা "নদী যাযাবর" নামে পরিচিত। তাদের প্রধান পেশা ছিল সাপ ধরা, সাপের ঝাঁপি, ঔষধি গাছপাতা সংগ্রহ ইত্যাদি। কিন্তু আজকের দিনে বেদে সম্প্রদায়ের অবস্থা খুবই দুর্বিষহ। তারা সমাজের সবচেয়ে নিচু স্তরে বাস করে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এবং আর্থিক স্বচ্ছলতা তাদের জন্য অধরা।

 

সামাজিক বৈষম্য, আর্থিক দারিদ্র্য, শিক্ষার অভাব, স্বাস্থ্য সমস্যা এবং ভূমিহীনতা - এগুলোই বেদে সম্প্রদায়ের মূল চ্যালেঞ্জ। সমাজের অন্যান্য অংশ থেকে আলাদা করে রাখা, শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়া, পরিচ্ছন্নতার অভাব এবং স্বাস্থ্যসেবা না পাওয়া - এসব কারণে তাদের জীবনযাত্রা কষ্টকর। নদী ভরাট হয়ে যাওয়া এবং জমি দখলের কারণে তাদের বসবাসের জায়গা ক্রমশ কমে যাচ্ছে।

 

বেদে সম্প্রদায়ের উন্নয়নের জন্য সরকার, বেসরকারি সংস্থা এবং সচেতন নাগরিকদের যৌথ প্রচেষ্টা প্রয়োজন। বেদে শিশুদের জন্য বিশেষ শিক্ষা কর্মসূচি চালু করা, বেদেদের জন্য স্বাস্থ্য শিবির তৈরি করা, বেদেদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা এবং বেদে সম্প্রদায় সম্পর্কে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা - এসব পদক্ষেপ নিয়ে তাদের জীবনমান উন্নত করা সম্ভব।

 

বেদে সম্প্রদায়ের ইতিহাস এবং বর্তমান অবস্থা আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, সমাজের সকল স্তরের মানুষের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সকলকেই এগিয়ে এসে বেদে সম্প্রদায়ের উন্নয়নে অংশগ্রহণ করতে হবে।


Adeel Hossain

242 Blog posts

Comments