এডারসন সান্তানা দে মোরায়েস, বা সংক্ষেপে এডারসন, একজন বিশ্ববিখ্যাত ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক, যিনি ম্যানচেস্টার সিটি এবং ব্রাজিল জাতীয় দলের হয়ে খেলেন। ১৯৯৩ সালের ১৭ আগস্ট ব্রাজিলের ওসাসকো শহরে জন্মগ্রহণকারী এডারসন তার অসাধারণ প্রতিভা, বল নিয়ন্ত্রণের দক্ষতা, এবং তার দলের আক্রমণের শুরুতে ভূমিকা রাখার জন্য সুপরিচিত। ব্রাজিলের গোলরক্ষকদের মধ্যে তিনি অন্যতম সেরা হিসেবে বিবেচিত হন এবং বিশ্বের শীর্ষ গোলরক্ষকদের মধ্যেও তার নাম রয়েছে।
শৈশব এবং ফুটবলের শুরু:
এডারসনের শৈশব কেটেছে ব্রাজিলের ওসাসকো শহরে, যেখানে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও তিনি ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা গড়ে তোলেন। ছোটবেলায় এডারসন কখনো কল্পনাও করেননি যে তিনি একদিন বিশ্বের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক হবেন। তার পরিবারও ফুটবলকে তার পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে খুব বেশি উৎসাহ দিচ্ছিল না। তবে ফুটবলের প্রতি এডারসনের ভালোবাসা এবং তার খেলার প্রতি অদম্য সংকল্প তাকে এই পথেই এগিয়ে নিতে থাকে। শৈশবকালেই তিনি সাও পাওলোতে স্থানীয় একাডেমিতে খেলা শুরু করেন, যা তার ফুটবল যাত্রার প্রথম ধাপ ছিল।
ব্রাজিলে ক্যারিয়ারের সূচনা:
এডারসনের ফুটবলের যাত্রা শুরু হয় সাও পাওলো যুব একাডেমিতে, যেখানে তিনি প্রথমে একজন আক্রমণাত্মক খেলোয়াড় হিসেবে খেলতেন। তবে পরবর্তীতে তার কোচরা তার গোলরক্ষক হওয়ার সম্ভাবনা দেখতে পান, এবং এডারসন গোলের নিচে দাঁড়ানো শুরু করেন। সেখানেই তার প্রকৃত প্রতিভা প্রকাশ পায়, এবং তিনি ধীরে ধীরে একজন প্রতিশ্রুতিশীল গোলরক্ষক হিসেবে বিকশিত হতে শুরু করেন।
ইউরোপীয় ফুটবলে পদার্পণ:
এডারসনের ইউরোপীয় ক্যারিয়ার শুরু হয় পর্তুগালের ক্লাব রিবেইরাওতে। তবে তিনি দ্রুতই বড় ক্লাবগুলোর নজরে আসেন এবং ২০১৫ সালে পর্তুগালের বিখ্যাত ক্লাব বেনফিকাতে যোগ দেন। বেনফিকার যুব দলে খেলার পর তিনি দ্রুতই সিনিয়র দলে জায়গা করে নেন। বেনফিকায় তার পারফরম্যান্স ছিল অসাধারণ। ২০১৬-১৭ মৌসুমে তিনি ক্লাবের প্রথম গোলরক্ষক হিসেবে নিয়মিত খেলতে শুরু করেন এবং বেনফিকাকে পর্তুগিজ লিগ শিরোপা জেতাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
ম্যানচেস্টার সিটিতে যোগদান:
২০১৭ সালে এডারসন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষ ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটিতে যোগ দেন, যেখানে তার প্রতিভা নতুনভাবে বিকশিত হয়। পেপ গার্দিওলার অধীনে তিনি দ্রুতই দলের অপরিহার্য অংশ হয়ে ওঠেন। ম্যানচেস্টার সিটিতে এডারসনের ভূমিকা শুধু গোল রক্ষা করার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; তিনি দলের আক্রমণেরও একটি বড় উৎস। তার পাসিং দক্ষতা এবং বল নিয়ে খেলার সক্ষমতা সিটি দলের খেলার ধরনকে আরও গতিশীল করে তুলেছে।
এডারসনের বল নিয়ে খেলার দক্ষতা আধুনিক গোলরক্ষকদের মধ্যে বিশেষভাবে মূল্যায়িত হয়। তিনি তার পায়ে অত্যন্ত স্বচ্ছন্দ এবং যে কোনো মুহূর্তে দলের আক্রমণ শুরু করতে সক্ষম। তার লং পাসগুলো প্রতিপক্ষের ডিফেন্সকে ভেঙে আক্রমণ গড়ে তুলতে সহায়ক। ম্যানচেস্টার সিটির আক্রমণাত্মক ফুটবলে তার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তিনি গোলরক্ষক হওয়া সত্ত্বেও অনেক সময় দলের প্রথম আক্রমণের সূচনা করেন।
প্রিমিয়ার লিগে সাফল্য:
ম্যানচেস্টার সিটিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে এডারসন একাধিক প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা জিতেছেন। তিনি প্রতিটি মৌসুমে সিটির রক্ষণের একটি শক্তিশালী স্তম্ভ হিসেবে কাজ করেছেন এবং একাধিক ক্লিন শিট ধরে রেখেছেন। তার অসাধারণ পারফরম্যান্স তাকে প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষ গোলরক্ষকদের তালিকায় স্থান দিয়েছে। বিশেষ করে ২০১৯ এবং ২০২১ সালে তিনি প্রিমিয়ার লিগের গোল্ডেন গ্লোভ পুরস্কার জয় করেন, যা তাকে এই সময়ের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক হিসেবে প্রমাণ করেছে।
ব্রাজিল জাতীয় দল:
এডারসন ব্রাজিলের জাতীয় দলে ২০১৭ সালে অভিষেক করেন। যদিও ব্রাজিলের গোলরক্ষকের ভূমিকায় আলিসন বেকারের সঙ্গে তার প্রতিযোগিতা থাকে, তবুও এডারসন জাতীয় দলে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছেন। কোপা আমেরিকা এবং বিশ্বকাপের মতো বড় টুর্নামেন্টে তিনি ব্রাজিলের স্কোয়াডে থাকেন এবং জাতীয় দলের হয়ে সাফল্যের অংশীদার হয়েছেন। ব্রাজিলের ফুটবলে গোলরক্ষকদের একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে, এবং এডারসন সেই উত্তরাধিকারকে সম্মানিত করছেন।
খেলার স্টাইল:
এডারসনের খেলার স্টাইল তাকে অন্যান্য গোলরক্ষকদের থেকে আলাদা করে। তার পায়ে বল নিয়ন্ত্রণ এবং দীর্ঘ পাস দেওয়ার ক্ষমতা তাকে বিশেষভাবে আলাদা করে তুলেছে। তিনি প্রায়ই মাঠে মাঝমাঠ পর্যন্ত উঠে আসেন এবং দলের আক্রমণ শুরু করেন, যা তাকে একজন ‘সweeper-keeper’ হিসেবে পরিচিত করেছে। এডারসন শুধু একটি রক্ষণাত্মক গোলরক্ষক নন, বরং একজন আক্রমণাত্মক খেলোয়াড় হিসেবে দলের সঙ্গে সংযুক্ত থাকেন।
তাছাড়া এডারসনের শট-স্টপিং দক্ষতা অসাধারণ। দ্রুত প্রতিক্রিয়া এবং শারীরিক সক্ষমতা তাকে কঠিন পরিস্থিতিতেও প্রতিপক্ষের শট আটকাতে সাহায্য করে। তার গোলরক্ষার পদ্ধতি তাকে ব্রাজিলিয়ান এবং ইউরোপীয় ফুটবলে শীর্ষে স্থান দিয়েছে।
ব্য
ক্তিগত জীবন:
এডারসন মাঠের বাইরেও