স্বপ্ন ও লক্ষ্যের মধ্যে পার্থক্য

'স্বপ্নপূরনই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নয়, তাই বলে স্বপ্নকে ত্যাগ করে নয়, তাকে সঙ্গে নিয়ে চলো। স্বপ্ন ছাড়া জ

আমরা প্রায়ই স্বপ্ন আর লক্ষ্যকে এক মনে করি, অথবা স্বপ্ন আর লক্ষ্যের মধ্যে তালগোল পাকিয়ে ফেলি। প্রকৃতপক্ষে স্বপ্ন আর লক্ষ্যের মধ্যে বেশ পার্থক্য রয়েছে। এই ধরো, তোমার স্বপ্ন বড় একজন উদ্যোক্ত হওয়া। আর এই উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য যদি তুমি কি কি লাগে তা জেনে নাও, তারপর তুমি যে সেক্টরে উদ্যোক্তা হতে চাও, সেই সেক্টর সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নাও এবং প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করো, তাহলে এভাবে ধীরে ধীরে তোমার স্বপ্নটি লক্ষে পরিণত হবে। স্বপ্ন থাকে কেবল ভাবনায় আর লক্ষ্য নির্ধারিত হয় কাজের মাধ্যমে। 

 

আরেকটু স্পষ্ট করা যাক। ধরো, তোমার স্বপ্ন লন্ডনের কোন নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে পড়াশুনা করা । এখন তুমি যদি লন্ডনে গিয়ে পড়াশুনা করার এই স্বপ্নটিকে লক্ষ্যে পরিণত করতে চাও, তাহলে তোমাকে প্রথমে জেনে নিতে হবে লন্ডনে গিয়ে পড়াশোনা করতে কি কি লাগে। এরপর তুমি জানলে যে, লন্ডনে গিয়ে নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে হলে IELTS- এ কমপক্ষে ৬.৫ স্কোর লাগবে ৯ - এর  মধ্যে। এখন তুমি ‌IELTS - এ ভালো স্কোর করার জন্য পড়াশুনা শুরু করে দিতে পারো এবং সেটা অর্জনের আগ পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যেতে পারো। কিন্তু লন্ডনের কোন নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে পড়াশোনা করাটা যদি কেবল তোমার ভাবনায়ই থাকে, সেটাই কর্মে রূপান্তর করতে না পারো, সেটা কেবল তোমার স্বপ্ন। 

 

এখন পরের পৃষ্ঠার টেবিলে তোমার এমন দশটি স্বপ্নের কথা লিখে রাখো এবং সেগুলোর মধ্যে যেগুলো তোমার লক্ষ্যে পরিণত করতে পেরেছ, যেগুলো প্রক্রিয়াধীন এবং যেগুলো লক্ষ্যে পরিণত করতে পারোনি, সেগুলোর পাশে নির্দিষ্ট ঘরে টিক চিহ্ন দাও। 

 

যারা স্বপ্নকে লক্ষ্যে পরিণত করতে পারে, তারাই সফলতা অর্জন করতে পারে। মানুষ ঘুমালেও অবচেতন মনে স্বপ্ন দেখে; কিন্তু সফল হতে গেলে চেতন মনে বিচার বিশ্লেষণ করে জুতসই স্বপ্নকে লক্ষ্য বানাতে হয়। লক্ষ্য কি ঠিক রেখে মানুষের করা ছোট ছোট কাজ যেমন একদিন অনেক বড় অর্জনে রূপান্তরিত হয়; ঠিক তেমনি ভাবে লক্ষ্যহীন ছোট ছোট অলস সময় একদিন বড় ব্যর্থতায় রূপান্তরিত হয়। মানুষ যেমন একদিনে সফলতা অর্জন করতে পারে না; ঠিক একই ভাবে মানুষ একদিনে ব্যর্থ হয় না। মানুষের সফলতা কিংবা ব্যর্থতা হলো তার ছোট ছোট কাজের যোগফল মাত্র। তাই বড় কাজের মাধ্যমে স্বপ্নকে লক্ষ্যে পরিণত করার সক্ষমতা না থাকলেও হতাশ না হয়ে ছোট ছোট কাজের মাধ্যমে স্বপ্নকে লক্ষ্যে পরিণত কর। 

 

তুমি হয়তো প্রায়ই ভাবো, 'আমি যদি কাজ করি তাহলে লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো তো?'

আচ্ছা, তুমি কি দিনশেষে ভেবে দেখো,'আজ তুমি লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য কতটুকু কাজ করেছ?"

যদি লক্ষ্যে পৌঁছাতে চাও, তাহলে প্রতিদিন বেশি না পারলে একটু করে হলেও কাজ কর। মনে রেখো, যে যত বেশি সঠিক উপায় কাজ করতে পারবে, সে ততো দ্রুত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে। কাজ ছাড়া স্বপ্ন দেখলে, কেবল স্বপ্নই দেখা হবে, লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে না । কারণ, স্বপ্ন প্রায় সবাই দেখে; যারা লক্ষ্যে পৌঁছাতে কাজ করে, তারাই পৌঁছাতে পারে। তবে কাজ করেও অনেকে লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনা, এমন অনেক নজিরও আছে। লক্ষীপুর পৌঁছাতে তোমার একটি সুন্দর পরিকল্পনা দরকার আর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য শুধু পরিশ্রম করলেই হবে না; পরিশ্রম করার ক্ষেত্রে কার্যকর কৌশল অবলম্বন করতে হবে। লক্ষ্য অর্জনে অনেকেই পরিশ্রম করে, কিন্তু কৌশলের অভাবে সবাই লক্ষে পৌঁছাতে পারেনা। 

আমি এমন অনেকেই দেখেছি যারা প্রায়ই কোন না কোন পরীক্ষা দিয়ে পরীক্ষার হল থেকে বের হয়ে বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে প্রশ্নের সমাধান মিলিয়ে আফসোস করে বলে, ইস্! আরেকটু যদি হতো। ইস! আরেকটু যদি ভালো করতে পারতাম! আরেকটু বেশি যদি উত্তর করতে পারতাম! আরেকটু যদি ভালো করে পড়তে পারতাম আরো কিছুদিন আগে যদি পড়া শুরু করতে পারতাম! ইস! অল্পের জন্য হলো না! 

তুমি যদি সারাজীবন 'আরেকটু' 'আরেকটু' - এর মধ্যে আটকে থাকো, তাহলে তোমার সফলতা ও কিন্তু এই আরেক্টুর মধ্যে আটকে থাকবে; চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেনা! 

আমি মনে করি, পরীক্ষার পরে এমন আফসোস না করে পরীক্ষার আগেই এমন আফসোস করা দরকার। তাহলে পরীক্ষায় ভালো করার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তোমার এসব আফসোসের সহজ সমাধান হতে পারে একটাই---তুমি এখন থেকে আর একটু ভালো করে পড়ো, এখন থেকেই পড়ার সময় আরেকটু বেশি মনোযোগী হও, যেন পরীক্ষার পর 'আরেকটুর জন্য' আফসোস করতে না হয়। সফল ও অসফল শিক্ষার্থীর মধ্যে পার্থক্য হল, সফল শিক্ষার্থীরা পরিকল্পনা অনুযায়ী সারা বছর সিরিয়াসলি পড়াশোনা করে; আর অসফল শিক্ষার্থীরা কেবল পরীক্ষার আগে সিরিয়াসলি পড়াশোনা করে। যদিও পরীক্ষার আগ মুহূর্তে পড়ে কখনো কখনো পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করা যায়, কিন্তু ভালো শিক্ষার্থী হওয়া যায় না। দিনশেষে কিন্তু ভালো শিক্ষার্থীরাই সফল হয়। 

তোমার চেষ্টা টুকু এমনই হওয়া উচিত যেন তোমার চেষ্টা অল্পের জন্য বৃথা না হয়ে যায়। যেন অল্পের জন্য আফসোস করতে না হয়! তুমি 'আজ না, কাল পড়বো' বলে পড়া শুরু করতে করতেই সময় চলে যায়। আর পরীক্ষার কিছুদিন আগে তুমি অনেক সিরিয়াস! এই সিরিয়াস টা আরো আগেই হওয়া যেত না? পরীক্ষার আগে থেকেই পড়া শুরু করলে আরেকটু বেশি পরা যেত না? কেন পরীক্ষার পর 'ইস! আরেকটু'-এর জন্য আফসোস করতে হয়? 

পরীক্ষার পর আফসোস করতে না চাইলে আজ এই এবং এই মুহূর্তে বই নিয়ে পড়া শুরু করে দাও। আজি তোমার পড়া শুরু করার দিন। এই মুহূর্ত থেকেই তোমার আফসোস দূর করার সময়। 

আজ একদিন হেলাফেলা করে সময় কাটিয়ে দিলে কিন্তু জীবন থেকে এই একদিনই চলে গেল! তুমি তোমার সময়কে হেলাফেলা করে বাজে ভাবে নষ্ট করবে না। এটা শুধু পরীক্ষার পরেই নয়, তোমার সারা জীবনের আফসোসের কারণ হতে পারে! 

তাহলে ভালো কিছু করার নতুন উদ্যম নতুন করে শুরু হোক আজ এবং এখন থেকেই!


S Litu

11 Blog posts

Comments