একদিন বৃষ্টির দিনে একটি ছোট গ্রামে, দুইজন পরিচিত হলো—রূপা ও আরিফ। রূপা ছিল এক শান্তশিষ্ট মেয়ে, আর আরিফ ছিল বেপরোয়া। তা

রূপা এবং আরিফ একই কলেজের ছাত্র। তারা প্রথম দেখা করে কলেজের লাইব্রেরিতে, যেখানে রূপা একটি বই পড়ছিল। আরিফ তার ক

রূপা আর আরিফ: প্রেমের একটি গল্প

 

একটি ছোট শহরে, যেখানে প্রকৃতির রূপের কোন শেষ নেই, সেখানে বাস করত রূপা। সে ছিল এক প্রাণবন্ত মেয়ে, যার হাসি ছিল চাঁদের আলোয় রোদ ঝলমলে। রূপা প্রতিদিন সকালে কলেজের দিকে হাঁটতে বের হতো। তার চোখে ছিল স্বপ্ন, আর সে স্বপ্ন ছিল একজন শিল্পীর মতো।

 

আরিফ ছিল এক প্রতিভাবান ছেলের নাম। সে ছিল একজন সৃজনশীল শিল্পী, যার ক্যানভাসে রঙের খেলা ছিল অসাধারণ। তার ভালোবাসা ছিল চিত্রাঙ্কন এবং স্বপ্ন দেখার। কলেজে তার আগমন ঘটেছিল সদ্য, আর সে একদিন রূপাকে প্রথম দেখেছিল লাইব্রেরিতে।

 

একদিন, রূপা লাইব্রেরিতে একটি বই পড়ছিল, হঠাৎ করে আরিফ এসে বলল, “তুমি কি জানো, বই পড়া আমাদের জীবনের সেরা শিক্ষা?” রূপা তাকিয়ে বলল, “হ্যাঁ, কিন্তু মাঝে মাঝে বই পড়ার চেয়ে জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”

 

এই কথায় দুজনের মধ্যে কথোপকথন শুরু হলো। প্রথমে তাদের সম্পর্কটা বন্ধুত্ত্ব ছিল, কিন্তু ধীরে ধীরে তা বদলে যেতে লাগল। আরিফ যখন তার আঁকা ছবি রূপাকে দেখাতো, রূপা মুগ্ধ হয়ে বলত, “তুমি সত্যিই অসাধারণ!”

 

আরিফ বলত, “তোমার উৎসাহ আমাকে আরও ভালো কাজ করতে সাহায্য করে।” সেই সময় থেকেই তাদের মধ্যে একটি অদ্ভুত বন্ধন গড়ে উঠতে শুরু করে। তারা কলেজের পরে একসাথে পার্কে হাঁটতে যেত।

 

একদিন, পার্কের বেঞ্চে বসে তারা অনেক কথা বলছিল। রূপা বলল, “তুমি জানো, আমি একজন শিল্পী হতে চাই।” আরিফ উত্তরে বলল, “তুমি যদি চেষ্টা করো, তুমি অবশ্যই সফল হবে। আর আমি তোমাকে সাহায্য করব।”

 

এরপর থেকে রূপা ও আরিফ একে অপরের সঙ্গে সময় কাটাতে লাগল। তারা একসঙ্গে সান্ধ্যকালীন ক্লাসে যোগ দিত, একে অপরের সঙ্গে নাচের ক্লাস করত, আর তাদের সম্পর্ক আরও গাঢ় হতে লাগল।

 

একদিন, কলেজের বার্ষিক উৎসবে, আরিফ রূপার জন্য একটি বিশেষ পরিকল্পনা করেছিল। সে তার সবচেয়ে প্রিয় ছবিগুলোর একটি রূপাকে উপহার দিতে চেয়েছিল। সে একটি সুন্দর ফ্রেমে ছবিটি রাখলো এবং রূপার সামনে উপস্থাপন করলো।

 

“এটি তোমার জন্য,” আরিফ বলল। রূপা ছবিটি দেখে মুগ্ধ হলো। ছবিটি ছিল একটি সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য, যেখানে একটি নদী বয়ে যাচ্ছে এবং দুই পাশে ফুলের বাগান। রূপা বলল, “এটি অসাধারণ! তুমি সত্যিই প্রতিভাবান।”

 

আরিফ হাসল। “কিন্তু, রূপা, এটি তোমার জন্য আঁকা হয়েছে, কারণ তুমি আমার জীবনের আলো।”

 

এই কথা শুনে রূপার হৃদয়ে আলোর ঝলকন শুরু হলো। তারা পাশাপাশি বসে ছিল, আর কিছুক্ষণের জন্য সমস্ত কিছু ভুলে গেল। তাদের মধ্যে একটি বিশেষ সংযোগ তৈরি হলো।

 

একদিন, রূপা আরিফকে বলল, “আমার মনে হয়, আমাদের মধ্যে কিছু আছে।” আরিফ একটু লজ্জা পেল। “আমিও তাই মনে করি, কিন্তু আমি জানি না, তুমি কি ভাবো?”

 

রূপা বলল, “আমি মনে করি, আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বের চেয়ে বেশি কিছু হয়েছে।” আরিফ এক মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল, তার চোখে আশা ছিল।

 

“তাহলে, তুমি কি আমার সঙ্গে থাকতে চাও?” আরিফ বলল। রূপা বলল, “আমি চাই, কিন্তু তুমি কি নিশ্চিত?”

 

“আমি নিশ্চিত, আমি তোমাকে ভালোবাসি,” আরিফ বলল। রূপা তার হাত ধরল এবং বলল, “আমি জানতাম, আমি তোমাকেও ভালোবাসি।”

 

এই কথার পর তাদের সম্পর্ক এক নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করল। তারা একে অপরের সঙ্গে অনেক বেশি সময় কাটাতে লাগল। তারা শহরের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াত, সিনেমা দেখতে যেত, আর কফি শপে বসে গল্প করত।

 

তাদের সম্পর্কের গভীরতা বাড়তে লাগল, কিন্তু একদিন একটি ঘটনা তাদের প্রেমের পথে বাধা সৃষ্টি করল। আরিফের পরিবার একটি বড় সিদ্ধান্ত নিল। তাদের পরিকল্পনা ছিল, আরিফকে বিদেশে পাঠানো।

 

এটি শুনে রূপার হৃদয়ে এক গভীর হতাশা নেমে এলো। সে ভাবল, “কিভাবে আমি তাকে ছেড়ে দিতে পারি?” আরিফও একই রকম অনুভব করছিল। তারা একদিন পার্কে বসে একে অপরকে বলল, “আমি তোমাকে ছেড়ে যেতে পারব না।”

 

কিন্তু আরিফ জানত, তার পরিবারের সঙ্গে থাকতে হবে। সে বলল, “রূপা, আমি তোমাকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আমি ফিরে আসব।” রূপা কাঁদতে কাঁদতে বলল, “কিন্তু তুমি কি জানো, আমি তোমাকে মিস করব?”

 

আরিফ তার হাত ধরে বলল, “আমি তোমাকে সবসময় মনে রাখব। আমাদের প্রেম কখনও ম্লান হবে না।”

 

সেখানে তারা কিছু সময় কাটালো, একে অপরের চোখে চোখ রেখে। পরে আরিফ বিদেশে চলে গেল, আর রূপা তার কলেজে পড়াশোনা চালিয়ে গেল।

 

কিন্তু তাদের হৃদয়ে এক গভীর শূন্যতা তৈরি হলো। তারা একে অপরকে খুব মিস করছিল। ফোনে কথা বলার সময়, তারা একে অপরের প্রতি তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করত।

 

একদিন, রূপা একটি চিঠি লিখে পাঠাল। চিঠিতে সে লিখেছিল, “আমি তোমাকে মিস করি, আমার জীবন তোমাকে ছাড়া অসম্পূর্ণ।” আরিফের হৃদয়ে রূপার কথাগুলো বেজে উঠল।

 

তিনি রূপাকে জানালেন যে, তিনি দ্রুত ফিরে আসতে চান। কিন্তু সময় কাটতে লাগল, আর তাদের যোগাযোগ কমতে লাগল।

 

রূপা অনুভব করতে লাগল, আরিফ যেন ধীরে ধীরে দূরে চলে যাচ্ছে। সে তাকে ফোন করল, কিন্তু আরিফের সাড়া আসছিল না। অবশেষে, রূপা একটি সিদ্ধান্ত নিল। সে নিজেই আরিফের কাছে যাবে।

 

রূপা কয়েকদিনের জন্য একটি টিকিট কিনে যাত্রা শুরু করলো। সে জানত, সে যদি আরিফের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে, তাহলে তাদের মধ্যে দূরত্ব কমবে।

 

বহু প্রত্যাশা নিয়ে রূপা আরিফের শহরে পৌঁছাল। সে আরিফের বাড়ির ঠিক সামনে গিয়ে দাঁড়াল। মনে মনে বলল, “এখনই সময়!”

 

সে সাহস করে দরজায় টোকা দিল। কিছুক্ষণ পরে, আরিফের মা দরজা খুললেন। রূপার উপস্থিতি দেখে তিনি অবাক হলেন।

 

“রূপা! তুমি এখানে?” আরিফের মা তাকে জড়িয়ে ধরলেন। “আরিফ তো তোমার জন্য খুব মিস করছে।”

 

এটি শুনে রূপার চোখে জল চলে এলো। কিছুক্ষণের মধ্যে, আরিফ বেরিয়ে এল। তাকে দেখে রূপার হৃদয় যেন আনন্দে ভরে গেল।

 

“তুমি এখানে?” আরিফ জিজ্ঞেস করল। রূপা বলল, “হ্যাঁ, আমি তোমার সঙ্গে কথা বলতে এসেছি।”

 

“তুমি কি জানো, আমি তোমাকে কতটা মিস করেছি?” আরিফ বলল। তারা একে অপরকে জড়িয়ে ধরল, এবং সেই মুহূর্তে সবকিছু ভুলে গেল।

 

এরপর তারা একে অপরকে নিয়ে অনেক কথা বলল। রূপা বলল, “আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করেছি।” আরিফ বলল, “আমার জন্য তুমি কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা আমি বুঝতে পারিনি।”

 

এই কথাগুলো শুনে রূপার মনে হলো, সবকিছু এখন ঠিক হতে চলেছে। তারা আবার কলেজের কথা বলল, পুরানো দিনের স্মৃতিচারণ করল।

 

কিছু সময় পরে, আরিফ বলল, “আমি ফিরে আসার পর তোমাকে আরো বেশি সময় দিতে পারব।” রূপা হাসল, “এটি আমার জন্য সবচেয়ে বড় উপহার।”

 

অবশেষে, তারা একসঙ্গে নতুন শুরু করার জন্য প্রস্তুত হলো। আরিফ বলল, “আমি জানি, আমাদের প্রেম শক্তিশালী।” রূপা মাথা নেড়ে বলল, “এবং আমি তোমার জন্য সবকিছু করতে প্রস্তুত।”

 

এভাবেই রূপা এবং আরিফের প্রেমের গল্প নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করল, যেখানে তারা একসঙ্গে স্বপ্ন দেখার সাহস পেয়ে গেল। তাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে একে অপরের পাশে থাকার

প্রতিজ্ঞা করলো, কারণ তারা জানত, প্রেমের শক্তি সব বাধা অতিক্রম করতে পারে।

 


Dipto Hajong

71 Blog posts

Comments