পথিক জীবনচক্রে আবর্তনকারী মহা জীবনের রথ। সে গতির প্রতীক। পথিকের পদচিহ্নে অঙ্কিত হয় পথরেখা। এ পথের নির্মাতাব স্রষ্টা মানুষ নিজেই।
প্রীতি মানুষ তার জীবনের গতিময় পথ নিজেই সৃষ্টি করে নেয়। অপরের সৃষ্ট পথ তার জন্য অনুসরণযোগ্য নয়। নিজের সাধনা ও কর্মকৌশলতার সহায়তায় মানুষকে এগিয়ে যেতে হয় নিজের পথের সন্ধান করে। মানুষকে নানা অজানা অধ্যায় অতিক্রম করার জন্য নিত্য নতুন পথ তৈরি করতে হয়। বাঁধা পথের সফলতার সম্ভাবনা নেই বলে, উদ্যোগী পথিক তার গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য নিজেই পথের সৃষ্টি করে নেন। তার সৃষ্ট পথে তাকে নতুন দিগন্তের সন্ধান দেয়।
পথ তৈরি হয়েছে পথিকের অগ্রগমনের জন্য। যাত্রা যাতে সহজ ও তার হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে পথিকের পথের সৃষ্টি। কিন্তু এ পথেই যে জীবনের গন্তব্যে পৌঁছে দেবে এমন কোন নিশ্চয়তা নেই। জীবনের লক্ষ্য অর্জনের জন্য পূর্ব প্রতিষ্ঠিত পথ সহায়ক নাও হতে পারে। গতানুগতিক পথে চললে জীবনের প্রাপ্য অনেক সময় সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। তাই সে পথ পরিহার করে নতুন পথের খোঁজ করতে হবে। তাই জীবন সন্ধানে পথিকের পথ হয় স্বতন্ত্র সে তার সাধনা দিয়ে নতুন পথের সৃষ্টি করে নেয়। যে মানুষ নতুন পথের খোঁজ পায় তার পক্ষে জীবনকে অর্থপূর্ণ ও সফল করে তোলা সম্ভব হয়। তাই বাধা পথের চলে জীবনকে সফল করা যায় না। কালে কালান্তরে মানুষ দেশান্তরে সমাজ ও সভ্যতার অজস্র পথ তৈরি করেছে।
নতুন পথের সন্ধান করি পথ তৈরি করা আবশ্যক। তবে জীবন ধন্য হবে, সার্থক হবে, জীবনের সফলতা আসবে।
তীর্থ হল পূর্ণক্ষেত্র মানুষের কল্পনায় সৃষ্টিকর্তা সেখানে অধিষ্ঠিত। উন্নতি মানুষ পবিত্র তীর্থকে জীবনের পরম লক্ষ্য বলে মনে করেন তাদের ধারণা এখানে পরম কারণে স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভ সম্ভব। তীর্থ বাসে পুণ্যপ্রাশী মানুষের জীবন চরিতার্থ হয়। পথের প্রান্তে লোকালয় থেকে কোন দূরতর নির্জন তাই মন্দিরের সূচি শুভ্র প্রাঙ্গণে ভক্ত হৃদয় আপ্লুত হয়ে ওঠে। মনে হয় বুঝি ভক্ত ভগবানের মিলনের এই হলো উপযুক্ত পুণ্য ক্ষেত্র। কিন্তু বস্তুত তা নয়।
পৃথিবীতে কোন মানুষই সৌভাগ্য নিয়ে জন্মগ্রহণ করে তা। সৌভাগ্য সকলেরই কাম্য। কিন্তু এই সৌভাগ্য অনায়াসে লগ্ নয়। একে অর্জন করতে হয় নিরদর্শন ও একনিষ্ঠ সাধনায়। পরিশ্রমী সৌভাগ্যের জন্মদাতা। ইংরেজিতে প্রভাত রয়েছে; 'The man is maker of his own fortune.'
পৃথিবীতে এমন একটি জিনিসও নেই যা আশ্রম লব্ধ নয়। তীর বিচ্ছিন্ন পরিশ্রমের ফলে অর্জিত হয়েছে সমাজের সভ্যতার নিরন্তন অগ্রগতি। ব্যক্তিগত ও জাতীয় উন্নতির মনে রয়েছে পরিশ্রম। তাই জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত শ্রমের কোন বিকল্প নেই। জীবনের সফলতা অর্জনের জন্য শ্রম অপরিহার্য। চঞ্চল নদীর চাবিকাঠি বলা হয়। প্রতিষ্ঠা খ্যাতি প্রতিপত্তি যশ সুনাম মর্যাদা এসবের জন্য প্রয়োজন শ্রম ও কঠোর সাধনা। অন্যথায় ব্যর্থতা এসে জীবনকে অক্টোপাসের মতো ঘিরে ফেলে। কথায় বলে পরিশ্রমে ধন আসে পূর্ণ আনে সুখ। এ কথা তরকা তেতোভাবে সত্য। শ্রম বিমুখতা ও অলসতা জীবনে বয়ে আনে নিদারুণ অভিশাপ। ভাগ্য নেমে আসে হতাশার কালরাত্রি। নিরন্তর ও নিরলস শ্রমিক জীবন আকাশ থেকে দারিদ্র্যের ঘটনা দূর হয়ে সফলতা নবীন সূর্যালোকে উদাসিক্ত হয়ে ওঠে। জীবনে অর্থবিদ্যার যশ প্রতিপত্তি অর্জন করতে হলে পরিশ্রম অবশ্যই করতে হয়। কর্ম সাধনার মাধ্যমিক জীবনের সফলতার স্বর্ণ দুয়ারে পৌঁছানো সম্ভব। তাই শ্রমের সফলতা শ্রমেই সুখ শ্রমই জীবন। বাস্তব জীবনে আপাত দৃষ্টিতে যাকে সৌভাগ্য বলে মনে হয় তা আসলে মানুষের উদ্যান চেষ্টা ও সমীর এই সমারো হোক।। আধুনিক বিশ্বের প্রত্যেকটি উন্নত জাতির উন্নয়নের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় তারা প্রত্যেকেই নিরন্তর প্রচেষ্টা ও শ্রম সাধনায় বিনিময়ে উন্নতির চরম শিখরে আহরণ করতে সক্ষম হয়েছে। একমাত্র শ্রম শক্তির মাধ্যমেই জীবন অর্জিত হয় কাঙ্খিত সাফল্য স্থিতি ও পরিপূর্ণতা। নিরালা আশ্রম সাধনায় সাফল্য অর্জন করে জীবন জগতের মধ্যে মানুষ শ্রেষ্ঠত্বের আসন দখল করেছে। সুতরাং জীবনকে সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বাঁচিয়ে রাখার জন্য শ্রম ব্যতীত অন্য কোন সহজ পথ নেই। নিজের পথকে নিজেই সৃষ্টি করতে হবে।
যে জাতি পৃথিবীতে যত বেশি পরিশ্রমী সে জাতি ততো উন্নত সে তার পথকে তাড়াতাড়ি চিনতে পারবে। ব্যক্তিগত ও সমস্তিগত পরিশ্রম এবং সাধনায় জাতির সৌভাগ্যের নিয়ামক। সৌভাগ্যের সূচনার জন্য এটাই মানুষের নিরন্তর পরিশ্রম করা প্রয়োজন তবে তুমি সঠিক পথ খুঁজে পাবে।