বাংলাদেশের পোশাক শিল্প

পোশাক শিল্প বাংলাদেশ বেশ খ্যাতি অর্জন করেছে। এদেশের তৈরি পোশাক শিল্প রপ্তানি বাণিজ্যের শীর্ষে অবস্থান করে এ?

পোশাক শিল্পে বাংলাদেশ বেশ খ্যাতি অর্জন করেছে। এদেশের তৈরি পোশাক শিল্প রপ্তানি বাণিজ্যে শীর্ষে অবস্থান করে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বেকার সমস্যার সমাধানে এবং কর্মসংস্থানে পোশাক শিল্পের অবদান অনস্বীকার্য। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এই শিল্পের অবদান উৎসাহজনক। 

পোশাক শিল্পের অবস্থা: 

১৯৭৭ সালে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় এ দেশে পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৫ সালে তৈরি পোশাক শিল্পের ব্যাপক সম্প্রসারণ শুরু হয়। তখন ১২৫টি ৭৫ তৈরীর কারখানা নিয়ে এই শিল্পীর যাত্রা। বিগত বছরগুলোতে আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা দেশীয় উদ্যোগে সক্রিয় ভূমিকার ফলে বর্তমানে কারখানার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪০০০ টিতে। বর্তমানে প্রায় ১২ লক্ষ নরনারী পোশাক শিল্পে কর্মরত। তার মধ্যে ৮৫% মহিলা। এর মধ্যে অর্ধশিক্ষিত অথবা অশিক্ষিতের সংখ্যায় বেশি। দেশের তৈরি পোশাক শিল্প জাতীয় আয়ের চৌষট্টি শতাংশ সরবরাহ করছে। ১৯৯৫ সালে তৈরি পোশাক রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে ১৮৫ কোটি মার্কিন ডলার। ১৯০৯ সালে ১২২টি দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করে আয় হয় ৭৬ হাজার ৬১ কোটি টাকা। বাংলাদেশের পোশাক শিল্প ১০০ ভাগই রপ্তানি মুখী। রপ্তানিতে বাংলাদেশের স্থান পঞ্চম। সুতরাং এই খাত যে বিপুল সম্ভাবনাময় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু আমাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা বিশেষ করে রাজনৈতিক ও স্থিতিশীলতা দুর্নীতি আইনশৃঙ্খলা অবনতি ও মুক্ত বাজারের প্রবল চাপ এ শিল্পের ভবিষ্যৎ কে অনিশ্চিত করে তুলছে। তাই এখন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে আমরা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা থেকে যে পিছিয়ে করব তাতে কোন সন্দেহ নেই। 

পোশাক শিল্পের বাজার 

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের সবচেয়ে বড় ক্রেতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তারপরেই ইউরোপ ও কানাডা। বাংলাদেশ ২০০৮ ও ২০০৯ অর্থবছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৫০ লাখ মার্কিন ডলার সমমূল্যের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়ে থাকে। যুক্তরাজ্য ফ্রান্স জার্মানি বেলজিয়াম ও মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলোতেও বাংলাদেশ থেকে পোশাক রপ্তানি হয়ে থাকে। জাপান অস্ট্রেলিয়া রাশিয়া প্রভৃতি দেশে বাজার সম্প্রচারিত হচ্ছে। উল্লেখ্য যে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশী পোশাকের বেশ পদও রয়েছে। আমি এর বাজার যেমন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে তেমনি এর উদ্বোধন ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আশা করা যায় অর্থনৈতিক উন্নয়নে পোশাক শিল্প বিরাট অবদান রাখবে এবং দেশের বেকার সমস্যার সমাধানে ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। 

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পোশাক শিল্পের অবদান 

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পোশাক শিল্পের শুধু প্রসারী অবদান রেখে চলেছে এ খাতের অবদানের প্রধান দিকগুলো নিম্নরূপ: 

1। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও রপ্তানি বৃদ্ধি: পোশাক শিল্প বিকশিত হওয়ার ফলে দেশের রপ্তানি কৃত আইটেমের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের দেশের প্রায় ১০০ টি বাইন হাউস গার্মেন্টস সামগ্রী ক্রয় বিক্রয় নিয়োজিত। জাতীয় আয়ের প্রায় ৬৪% আসে এইখান থেকে। তবে এই আই নির্ভর করে আছে রপ্তানি বাণিজ্যের ওপর। 

2। বেকার সমস্যার সমাধান: এই খাতে বিদ্রহীন নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের প্রায় ১০ লাখেরও বেশি মহিলার শ্রমিকের কর্মসংস্থান সম্ভব হওয়া জাতীয় জীবনে বেকারত্ব রাশে ও স্বাবলম্বী জীবন ব্যবস্থায় এই শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। 

3। দ্রুত শিল্পায়ন: দ্রুত শিল্পায়নে পোশাক শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এর ফলে এ দেশে বিভিন্ন কলিং উইভিং নিটিং ডাইং ফিনিশিং প্রিন্টিং ইত্যাদি শিল্প প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। এছাড়া গার্মেন্টস থ্রিজিপার বোতাম বা ক্লাস ইত্যাদি শিল্পীরাও প্রসার ঘটছে। 

4। পরিবহন ও বন্দর ব্যবহার: পোশাক শিল্পের সামগ্রী আমদানি ও রপ্তানির ফলে বন্দর থেকে ফ্যাক্টরি পর্যন্ত পরিবহন শিল্পের অগ্রগতি হয়েছে এবং এসবের সঠিক ব্যবহার হচ্ছে। 

5। অন্যান্য অবদান: গার্মেন্টস শিল্পে বিনিয়োগ করে ব্যাংক লাভবান হচ্ছে। বীমা কোম্পানির প্রিমিয়াম এর পরিমাণ বাড়ছে। বাংলাদেশের নতুন নতুন প্রযুক্তির আগমন ঘটছে। 

পোশাক শিল্পের সমস্যা 

২০০৫ সালের ১ই জানুয়ারি থেকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা প্রবর্তিত ব্যবস্থা কার্যকর হয়েছে। বিলুপ্ত হয়েছে এমএফই। ফলে পোশাক শিল্পকূটা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। বস্তুত কোটা মুক্ত বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য যে সকল প্রস্তুতি থাকা দরকার তা আমাদের দেশে এখনো গড়ে ওঠেনি যেখানে সিঙ্গাপুর থাইল্যান্ড চীন ইন্দোনেশিয়া ইত্যাদি দেশ কম খরচে গুণগতমান সম্পন্ন পোশাক তৈরি করছে সেই তুলনায় বাংলাদেশ এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছে। এ পিছে থাকার মূলে বহুবিট সমস্যা বিদ্যামান। 

সমস্যার সমাধানের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ 

বিশ্ব অর্থনীতির দ্রুত পদ পরিবর্তন উন্নয়নশীল বিষের জন্য একই সঙ্গে চ্যালেঞ্জ ও নতুন নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছে। নতুন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রাখার স্বার্থে বিশেষত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার চুক্তি সমূহ ও অদ্ভুত সুবিধাদি ব্যবহারের প্রয়োজনে দ্রুত অর্থ সামাজিক ক্ষেত্রে বিদ্যমান জাতীয় কাঠামোকে সংহত করতে হবে। পোশাক শিল্পের উন্নয়নে সর্বপ্রথম প্রয়োজন সরকারি সহযোগিতা তথা বাণিজ্যিক সুবিধা। বানানো দিক গুলোর মধ্যে রয়েছে। নতুন নতুন স্পোটিং ও উইভিং নেট শিল্প স্থাপন করতে হবে। বোতাম বক্রম ইত্যাদি উপাদান স্থানীয়ভাবে সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। পোশাক শিল্পকে সর্বাধুনিক করার লক্ষ্যে আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করতে হবে। প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটাতে হবে। উৎপাদিত পোশাকের গুণগত মান বজায় রাখতে হবে এবং প্রয়োজনে মান আরো বৃদ্ধি করতে হবে। উৎপাদন ব্যয় কমানোর জন্য উন্নত কাঁচামাল সরবরাহ করতে হবে। নির্বিঘ্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়ানোর লক্ষ্যে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। শ্রমিকদের আবাসন সমস্যা দূর করতে হবে। বন্দর ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে। রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে। আমদানিকৃত কাঁচামালের ওপর ট্যাক্স কমাতে হবে। প্রয়োজনের টাক্সমুক্ত রাখতে হবে। দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও প্রযুক্তিবিদ নিয়োগ করতে হবে। অর্থনৈতিক কূটনীতি জোরদার করতে হবে। নিজস্ব ফ্যাশন ও ডিজাইনকে উন্নত করণ করতে হবে। 

বাংলাদেশের বস্ত্র শিল্পের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল বলা যায় তবে বর্তমানে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে হলে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পকে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে এজন্য আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহ কে আই এস ও সনগ্রহণ করতে হবে যেহেতু কে তারা এ বিষয়টির উপর গুরুত্ব দিচ্ছে সর্বোপরি দক্ষতা বৃদ্ধি ও আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে আমাদের বস্ত্র ও পোশাকের মাননীয় মূল্য রাজ করে চ্যালেঞ্জ কে সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে সেই লক্ষ্যে এগিয়ে আসতে হবে সরকার উদ্যোক্তা ও ব্যাংকগুলোকে। 

বাংলাদেশের পোশাক শিল্পসহ অবাধ বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে বর্তমান সরকার রপ্তানিকারদের প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় বিভিন্ন প্রকারের সুবিধা উৎসাহ প্রদান বাণিজ্য মেলার আয়োজন ব্যবসায়ীদের সিআইপি মর্যাদা প্রদান এবং বাংলাদেশকে এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত করা সহ নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। 

মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও দেশের বেকার সমস্যার সমাধানের জন্য তৈরি পোশাক শিল্পের ভূমিকা অনন্য। এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা ও সম্প্রসারণ করা দরকার। ২০০৫ সালের পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশকে প্রদত্ত কোটা ব্যবস্থা প্রত্যাহার করবে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে অন্যান্য দেশের সঙ্গে প্রবল প্রতিযোগিতা করেই আমাদের টিকে থাকতে হবে।


S Litu

11 Blog posts

Comments